খাদেম অর্থাৎ যারা আমাদের বাড়িতে গৃহপরিচারক বা গৃহপরিচারিকার কাজ করে তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ। হজরত আনাস (রা.) ছিলেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন খাদেম। তিনি একাধারে ১০ বছর তাঁর সঙ্গে ছিলেন। বাড়ি ও বাইরের বিভিন্ন কাজ তিনি করতেন। মানুষ মাত্রই ভুল-ত্রুটির অধিকারী। হজরত আনাস (রা.) তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। কখনো কখনো কাজ করতে গিয়ে তার ভুল হতো। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ত্রুটি হয়ে যেত। কিন্তু রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো এই খাদেমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেননি। বকাঝকা কিংবা শারীরিকভাবে প্রহার দূরের কথা, মনে কষ্ট পেতে পারে এমন আচরণও কখনো করেননি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে যেমন খাদেমদের সঙ্গে সদাচরণ করতেন তেমনি অন্যদেরও সদাচরণের উপদেশ দিতেন। ইবনে হিব্বান শরিফের হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমার গোলামের ওপর যেটুকু কাজ তুমি হালকা করে দিলে তা অবশ্যই নেকির পাল্লায় বোঝা হবে।’
খাদেম বা গৃহপরিচারকরা আমাদের জন্য অপরিসীম কষ্ট করে। আমাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তারা সচেষ্ট থাকে। বিশেষ করে যে গৃহপরিচারিকারা রান্নাবান্না করে, তাদের পরিশ্রমের বিষয়টি সহজেই অনুমেয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের খাদেম (কাজের মানুষ বা গৃহপরিচারক গৃহপরিচারিকা) যখন খাবার রান্না করে তোমাদের সামনে নিয়ে আসে, অথচ সে এতক্ষণ এর ধোঁয়া ও উত্তাপ সহ্য করেছে, তোমরা তাকে ডেকে তোমাদের সঙ্গে বসতে দাও, তাকে খেতে দাও। খাবার যদি অল্প হয়, যা তাকে পেট ভরে দেওয়ার মতো যথেষ্ট নয় তবে অন্তত তার হাতে এক দু-লোকমা উঠিয়ে দাও।’ (বোখারি)
আমাদের দেশে গৃহপরিচারিকাদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। শিশু গৃহপরিচারিকাদের সামান্য ভুলের জন্য নিষ্ঠুরভাবে প্রহার করা, খুন্তি গরম করে শরীরে ছেঁকা দেওয়া ইত্যাদি ঘটনাও ঘটে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু খাদেম নয়, কোনো মানুষের চেহারা বিকৃতি করার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি করেছেন। মুসলিম শরিফের হাদিসে বলা হয়েছে, ‘কেউ যেন অন্যের চেহারায় কখনো আঘাত না করে।’ খাদেমরা আমাদের মতোই মানুষ। তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে অনুসরণের তৌফিক দান করুন।
লেখক : ইসলামী গবেষক।