ঢাকা ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার চিত্র

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫০:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২১
  • ১৩৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। কিন্তু বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলো কি জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছে? দেশের নিুবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ অসুখ হলে চেয়ে থাকে সরকারি হাসপাতালগুলোর দিকে। কিন্তু দুস্থ-অসহায় মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণে সরকারি হাসপাতালগুলো কতটুকু ভূমিকা রাখছে?

গত ৩ ডিসেম্বর বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সরেজমিন ঘুরে দেখা মেলে নানা অনিয়মের চিত্র। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সচেতনতার বিকল্প নেই। তবুও কোনোভাবেই যেন সেখানে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না মাস্কের ব্যবহার। সামাজিক দূরত্বের বালাই তো নেই-ই।

‘মাস্ক নেই’ এমন অজুহাতেরও কমতি নেই! আবার কারও মালা হয়ে গলায় দুলছে মাস্ক, কারও কানে জড়িয়ে শোভা দিচ্ছে দুল হয়ে। কেউ বা আবার চিবুকের শোভা বাড়াচ্ছে মাস্ক দিয়ে। কেউ বা হাত সাজিয়েছে মাস্ক দিয়ে।

সচেতনতা নয়, এ যেন সৌন্দর্যবর্ধনের নতুন অনুষঙ্গ! মাস্কের এমন অভিনব ব্যবহার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় বাড়িয়েছে আতঙ্ক। করোনার সতর্কতা না মানছে রোগীরা, না হাসপাতালে কর্মরত স্টাফরা। এ নিয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের যেন কোনো মাথাব্যথাই নেই।

হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়েও রয়েছে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না বলে অনেক রোগীর অভিযোগ রয়েছে। জনদুর্ভোগ তো আছেই। হাসপাতালের প্রতিটি জানালা থেকে ভেসে আসছে রোগীর স্বজনদের আর্তনাদ।

আর সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দুর্ভোগের কথা বলে তো শেষ করা যাবে না। মর্জিনা নামের এক বয়োজ্যেষ্ঠ নারী জানালেন, ‘এখানে এসে জাহান্নাম দেখছি। মন ভরে পানিও খেতে পারি না। খাবার পানিটুকু হাতের কাছে পাই না, বয়সের ভারে নিচে নামার শক্তিটুকুও নেই।’

চিকিৎসা নিতে আসা সালমা জাহান নামে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর কাছে হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন, ‘বরিশাল জেলার মধ্যে এটি খুবই নামকরা হাসপাতাল। কিন্তু দিন দিন এদের চিকিৎসাব্যবস্থার মান কমে যাচ্ছে। হাসপাতালের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ নিয়ে কথা না বলাই ভালো।’

তিনি বললেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থায় রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। একজন রোগী যতটুকু চিকিৎসা সুবিধা পেতে পারে, তার চেয়ে তুলনামূলক কম চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছে। দেখা গেছে, চিকিৎসক পর্যবেক্ষণে এলে একজন রোগীকে ২-৩ মিনিটের বেশি সময় দেন না।

এমনকি কোনো রোগী বেশি প্রশ্ন করলে তাদের মুখে বিরক্তির ছাপ চলে আসে। এ জন্য রোগীরা তাদের সমস্যা নিয়ে নির্দ্বিধায় চিকিৎসকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে পারে না। যেখানে চিকিৎসকের বন্ধুসুলভ আচরণে রোগীর অর্ধেক রোগ নিরাময় হওয়ার কথা, সেখানে রোগীকে পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছেন না চিকিৎসকরা।’

দুস্থ-অসহায়সহ সব শ্রেণির মানুষের কাছে হাসপাতালের স্টাফরা চিকিৎসা শেষে বকশিশ দাবি করেন। সর্বত্রই অনিয়মের চিত্র। এসব অভিযোগের ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে দেওয়া ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অনেক রোগীর অভিযোগ, হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।

জুবাইয়া ঝুমা : শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার চিত্র

আপডেট টাইম : ০৯:৫০:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। কিন্তু বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলো কি জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছে? দেশের নিুবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ অসুখ হলে চেয়ে থাকে সরকারি হাসপাতালগুলোর দিকে। কিন্তু দুস্থ-অসহায় মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণে সরকারি হাসপাতালগুলো কতটুকু ভূমিকা রাখছে?

গত ৩ ডিসেম্বর বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সরেজমিন ঘুরে দেখা মেলে নানা অনিয়মের চিত্র। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সচেতনতার বিকল্প নেই। তবুও কোনোভাবেই যেন সেখানে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না মাস্কের ব্যবহার। সামাজিক দূরত্বের বালাই তো নেই-ই।

‘মাস্ক নেই’ এমন অজুহাতেরও কমতি নেই! আবার কারও মালা হয়ে গলায় দুলছে মাস্ক, কারও কানে জড়িয়ে শোভা দিচ্ছে দুল হয়ে। কেউ বা আবার চিবুকের শোভা বাড়াচ্ছে মাস্ক দিয়ে। কেউ বা হাত সাজিয়েছে মাস্ক দিয়ে।

সচেতনতা নয়, এ যেন সৌন্দর্যবর্ধনের নতুন অনুষঙ্গ! মাস্কের এমন অভিনব ব্যবহার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় বাড়িয়েছে আতঙ্ক। করোনার সতর্কতা না মানছে রোগীরা, না হাসপাতালে কর্মরত স্টাফরা। এ নিয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের যেন কোনো মাথাব্যথাই নেই।

হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়েও রয়েছে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না বলে অনেক রোগীর অভিযোগ রয়েছে। জনদুর্ভোগ তো আছেই। হাসপাতালের প্রতিটি জানালা থেকে ভেসে আসছে রোগীর স্বজনদের আর্তনাদ।

আর সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দুর্ভোগের কথা বলে তো শেষ করা যাবে না। মর্জিনা নামের এক বয়োজ্যেষ্ঠ নারী জানালেন, ‘এখানে এসে জাহান্নাম দেখছি। মন ভরে পানিও খেতে পারি না। খাবার পানিটুকু হাতের কাছে পাই না, বয়সের ভারে নিচে নামার শক্তিটুকুও নেই।’

চিকিৎসা নিতে আসা সালমা জাহান নামে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর কাছে হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন, ‘বরিশাল জেলার মধ্যে এটি খুবই নামকরা হাসপাতাল। কিন্তু দিন দিন এদের চিকিৎসাব্যবস্থার মান কমে যাচ্ছে। হাসপাতালের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ নিয়ে কথা না বলাই ভালো।’

তিনি বললেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থায় রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। একজন রোগী যতটুকু চিকিৎসা সুবিধা পেতে পারে, তার চেয়ে তুলনামূলক কম চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছে। দেখা গেছে, চিকিৎসক পর্যবেক্ষণে এলে একজন রোগীকে ২-৩ মিনিটের বেশি সময় দেন না।

এমনকি কোনো রোগী বেশি প্রশ্ন করলে তাদের মুখে বিরক্তির ছাপ চলে আসে। এ জন্য রোগীরা তাদের সমস্যা নিয়ে নির্দ্বিধায় চিকিৎসকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে পারে না। যেখানে চিকিৎসকের বন্ধুসুলভ আচরণে রোগীর অর্ধেক রোগ নিরাময় হওয়ার কথা, সেখানে রোগীকে পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছেন না চিকিৎসকরা।’

দুস্থ-অসহায়সহ সব শ্রেণির মানুষের কাছে হাসপাতালের স্টাফরা চিকিৎসা শেষে বকশিশ দাবি করেন। সর্বত্রই অনিয়মের চিত্র। এসব অভিযোগের ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে দেওয়া ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অনেক রোগীর অভিযোগ, হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।

জুবাইয়া ঝুমা : শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা