বহুল আলোচিত,পঠিত ও সমাদৃত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’এবার চীনা ভাষায় প্রকাশিত হলো।
এর আগে বইটি বাংলা, ইংরেজি, উর্দু ও জাপানি ভাষায় প্রকাশ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার গণভবনে চীনা ভাষায় অনুদিত বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অনুবাদক চাই সি।
চাই শি ২০০৩-২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী শুধু বাংলাদেশেরই নয়, এ উপমহাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
তিনি চীনা ভাষায় গ্রন্থটি অনুবাদ করার জন্য অনুবাদক চাই শি ও তার সহযোগীদের ধন্যবাদ জানান।
১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে বঙ্গবন্ধুর চীন সফরের প্রসঙ্গ তুলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, সেই সময়ের কিছু কথা অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর চীন সফরের বিস্তারিত নিয়ে আলাদা একটি বই প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তখন চীন সম্পর্কে যে অনুমান করেছিলেন, সেটাই এখন হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর এসব লেখার পেছনে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদানের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ সহজ করা এবং দারিদ্র দূর করার বিষয়েও কথা বলেন।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে চাই শি ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায়ও বক্তব্য দেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে ‘মহান নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
চাই শি জানান, ২০১৪ সালে চীন সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী চীনা ভাষায় অনুবাদের প্রস্তাব দেন। সে প্রস্তাবে তখন রাজিও হন এই অনুবাদক।
চাই শি বলেন, আমার মনে হয়, আমি একটা ভালো কাজ করেছি।
চীনের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, কয়েকবছর পর বাংলাদেশে এসে দেখছেন, এদেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে।
এজন্য তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসার পাশাপাশি ২০২১ সালে মধ্য আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত আয়ের দেশ হওয়ার যে লক্ষ্য রয়েছে তা অর্জন সম্ভব বলে মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল ও উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন।
১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত কারাগারে বন্দি থাকাকালে বঙ্গবন্ধু এই আত্মজীবনী লেখেন। কিন্তু লেখা শেষ করে যেতে পারেননি।
চারটি খাতায় লেখা সেই পাণ্ডুলিপি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘দি আনফিনিশড মেমোরিজ’ নামে ২০১২ সালে প্রকাশ করে দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)।
বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতির ইতিবৃত্ত রয়েছে।
পাশাপাশি দেশ বিভাগের পরবর্তী সময়ে থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে।
বইটিতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান কারাগার ও বাইরের জীবন, বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার-পরিজনের কথাও তুলে ধরেছেন।