রসের স্বাদ গুড়ে

ফোঁটা ফোঁটা শিশিরে সিক্ত হয়ে আসে শীত। শিশিরের সঙ্গে শীতের সম্পর্ক। এ শীতের সঙ্গে খেজুরের রসেরও গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আবহমান গ্রাম-বাংলার এ সম্পর্ক ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। একসময় গ্রামাঞ্চলের নারীরা খেজুরের রস দিয়ে নানা ধরনের পিঠা তৈরি করলেও কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেছে। খেজুরের রসের ফিরনি, রকমারি পিঠা-পুলি, পায়েস, পাটালি গুড়, লালী ও দানা গুড় অনেকেরই প্রিয়। ফেনীর সোনাগাজীর উপকূলীয় অঞ্চলের কোনো কোনো এলাকায় খেজুরের রস পাওয়া যায়।

রস নামার শুরুর পর থেকে গ্রামে চলে এসব খাওয়ার ধুম। অতিথি আপ্যায়নেও এর কদর রয়েছে বেশ। তবে জেলার অন্য কোথাও খেজুরের রস না পাওয়ায় গুড়ের প্রতি ঝুঁকছেন শহরের বাসিন্দারা। শহরের বড় বাজার ঘুরে জানা গেছে, পাটা গুড়, হাজারী গুড়, মছু মিঠাই, তত্বই মিঠাইসহ নানা জাতের গুড় দিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন রকমের পিঠা-পুলি। তবে ক্রেতাদের কাছে পাটা গুড় আর হাজারী গুড়ের চাহিদা বেশি বলে জানালেন বিক্রেতারা। ফরিদপুর, যশোর, নাটোর, রাজশাহী ও খুলনা থেকে ফেনীতে খেজুরের গুড় আনা হয়। মছু মিঠাই, তত্বই মিঠাই কেজিপ্রতি প্রকারভেদে ১০০ থেকে ৭০ টাকা, পাটা গুড় ১২০ থেকে ১০০ টাকা, হাজারী গুড় ১২০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

আইয়ুব আলী নামের এক বিক্রেতা জানান, খেজুরের রস দিন দিন হারিয়ে যেতে বসায় গুড় দিয়ে চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। গৃহিণী তাসলিমা আক্তার জানান, রস না পাওয়ায় গুড় দিয়ে পিঠা-পুলি তৈরি করতে হয়। এসব পিঠা-পুলি সুস্বাদু হওয়ায় পরিবারের সবার পছন্দ। উপকূলীয় এলাকার দক্ষিণ-পশ্চিম চরদরবেশ, পশ্চিম চরদরবেশ, জমাদ্দার বাজার, চরসাহাভিকারী, চরছান্দিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব চরছান্দিয়া, পূর্ব চরছান্দিয়া, মধ্যম চরছান্দিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, স্বল্প পরিসরে হলেও আজও গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস। কুয়াশা-মোড়া প্রভাতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে রস নামানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন গ্রামাঞ্চলের গাছিরা।

তারা জানান, প্রতিবছর কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) মাস থেকে গাছকে রসের জন্য প্রস্তুত করতে থাকেন। ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) মাসে গাছিরা রস সংগ্রহ করেন। প্রতি কলস রস প্রকারভেদে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা মূল্যে বিক্রি করেন। অনেকেই মনে করেন, সবাই কর্মব্যস্ত ও শহরমুখী হওয়ায় খেজুরের রসের সঙ্গে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য, গৌরব আর সংস্কৃতিও হারিয়ে যেতে বসেছে। সেদিন আর বেশি দূরে নেই, খেজুরের রস যেদিন ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর