ঢাকা ০২:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা দুশ্চিন্তার সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গুর হানা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৬:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর ২০২০
  • ২২০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মহামারি করোনার সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। অক্টোবরের চেয়ে চলতি মাসে এখন পর্যন্ত দেশে প্রায় দ্বিগুণ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। বেশির ভাগই রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। তাই করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য অনেক হাসপাতালে চালু করা হয়েছে আলাদা ইউনিট।

স্বাস্থ্য অদিপ্তরের হিসাব মতে, গত অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ১৬৯ জন। আর নভেম্বরের মাসের প্রথম ১৭ দিনে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায় ২৩৯ জন।

শীত আসতে না আসতে রাজধানীতে বৃষ্টি হওয়ায় মশার উপদ্রব কিছুটা বেড়েছে। আবার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ অবস্থায় ব্যক্তিগতভাবে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি মশা নিধনের কার্যক্রম জোরদারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নিয়মিত মশকবিরোধী অভিযান চললেও অনেক এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। তাই মশা নিধনের কাজে বাড়তি জনবল চেয়ে জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ মেয়রদের কাছে অনুরোধ করছেন।

সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জনবল সংকট নেই বরং মশার সমস্যা সমাধানে নিয়মিত কাজ চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর মূল মৌসুম শেষ হলেও অক্টোবর ও নভেম্বরে এবার উল্লেখযোগ্য হারে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৯৩৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এখনো চিকিৎসাধীন আছেন ৮৪ জন।

এই অবস্থায় ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাদের করোনার সঙ্গে ডেঙ্গুও রয়েছে, তাদের ঢামেক কর্তৃপক্ষ ভর্তি করলেও নন-কোভিড রোগীদের সলিমুল্লাহ মেডিকেল ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। আর দিনের বেলা মশার কামড় থেকে বাঁচতে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন।

বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে ডেঙ্গু ভর্থি ও চিকিৎসার তথ্য নিয়েছে। ডেঙ্গ আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলেন ৫০ জন। যারা সবাই সুস্থ হয়েছেন। সোহরাওয়ার্দী ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩৯ জনের মধ্যে ৩২ জন বাড়ি ফিরেছেন। ঢাকা শিশু হাসপাতালের ৭২ জনের মধ্যে ৬২ জন বাড়ি ফিরেছেন। এ ছাড়া বিএসএমএমইউ এবং পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দুজন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন।

ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় আক্রান্ত ৪০ জনের মধ্যে ৩৮ জন সুস্থ হয়েছেন। ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬ জনের মধ্যে ১৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চট্টগ্রাম বিভাগে আক্রান্ত ১১ জনই সুস্থ হয়েছেন। রাজশাহী বিভাগের আক্রান্ত একজন ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।

খুলনা বিভাগের ৪৭ জনের মধ্যে ৪২ জন, বরিশাল বিভাগের তিনজন, সিলেট বিভাগের আক্রান্ত একজন সুস্থ হয়েছেন। তবে রংপুর বিভাগে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি বিভাগের ডেপু-প্রোগ্রাম আফসানা আলমগীর খান বলেন, ‘সারাদেশের নিয়মিত ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ঢাকাতে।

জ্বর হলে করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

মশার উৎপাতে নগরবাসী

নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে নিয়মিত মশার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তারপরও মশার উৎপাত কমেনি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা মশা নিয়ে অভিযোগ করেছেন।

উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল আসিফ আহমেদ প্রায় পাঁচ লাখ বাসিন্দার ওয়ার্ডে মশক নিধনের জন্য বাড়তি জনবল, ওষুধ চেয়ে নগর ভবনে আবেদন করেন বলে জানা গেছে।

মশার উপদ্রব বেড়েছে এই সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডেও। টাউন হল এলাকার বাসিন্দা সজিব আহমেদ বলেন, ‘সন্ধ্যার পর রাস্তায় দাঁড়ানো যায় না। প্রচুর মশা। বাসার মধ্যেও মশার উৎপাত। কয়েল ছাড়া একটা দিনও চলে না।‘

সামনে শীতের মৌসুমে কুয়াশার কারণে মশার উপদ্রব আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা এখানকার বাসিন্দাদের। একই অবস্থা ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের। কলেজগেট, মিরপুর রোড, লালমাটিয়া নিয়ে গঠিত ওয়ার্ডের মশকের উপদ্রবের কথা উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আমাদের মোহাম্মদপুর’ গ্রুপে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওয়ার্ডটির মাঠগুলোতে বিকালের পর মশার কারণে কোথাও বসা যায় না। সন্ধ্যার পর মশার উপদ্রব শুরু হয় ঘরে ঘরে।

যদিও ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ নূর ইসলাম রাষ্ট্রন এ কথা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে মশার সমস্যা নাই। নাগরিকরা আমাকে বলে তারা মশারি ছাড়া ঘুমায়। তারপরও মশা নিধনে নিয়মিত ওষুধ দেয়া হচ্ছে।’

তবে মশা বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করছে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। কর্মকর্তারা বলছেন, মৌসুমের কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছে। তবে মশক নিধনে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

ডেঙ্গু সহনীয় মাত্রায় রাখতে উত্তর সিটি কাজ করে চলেছে জানান প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু কিছু মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আমরা তাদের ঠিকানা সংগ্রহ করে তার বসবাসের পাশপাশে মশক নিধনে বেশি জোর দিচ্ছি।’

এদিকে উত্তর সিটির উত্তর খান, দক্ষিণ খান, বাড্ডা, মিরপুর, পল্লবী, গাবতলী এলাকার মশার উপদ্রব রয়েছে। সন্ধ্যার পর মশার গুনগুনানি শোনা যায় কূটনৈতিক পাড়া গুলশানেও।

দক্ষিণ সিটির বর্ধিত এলাকার পাশাপাশি কামরাঙ্গীরচর এলাকার মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড এই এলাকায় পড়েছে। তিনটি ওয়ার্ডেই মশার উপদ্রব এখন চরমে পৌঁছেছে।

কামরাঙ্গীরচরের রনি মার্কেট এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মশার ওষুধ দেওয়া হয়, তবে নিয়মিত না। সন্ধার পর মশার জ্বালায় টিকা যায় না।’

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমটা শেষে সেপ্টেম্বর পার হয়ে গেলে মশার উপদ্রব একটু বাড়ে। এটা প্রকৃতিক বিষয়। এখন কিউলেক্স মশার প্রজননটা বাড়বে। আমরা চিরুনী অভিযান করেছি। মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি।’

নগরে ডেঙ্গু দমনে সিটি করপোরেশনের নানান কার্যক্রম থাকলেও চলতি বছর বেশ কিছু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।

মশক নিধনে জনবলের ঘাটতি ও মশক নিধনের ওষুধের স্বল্পতা রয়েছে। এ বিষয়ে জনপ্রতিধিদের আপত্তির জায়গাটিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ ডিএনসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘জনবল কম বা ওষুধ কম এ বিষয়ে আমি মোটেও বিশ্বাসী নই। স্বাধীনতার পর থেকে জনবল কম। আগামী ৫০ বছর জনবল কম থাকবে। এটাকে আমি কোনোভাবেই আমলে নেই না। আমার স্বাস্থ্য বিভাগেও জনবল কম আছে। আমার যে জনবল আছে, সেটা দিয়েই আমাদের দক্ষতা দেখাতে হবে।’

ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা ও মুখমাত্র মো. আবু নাছের বলেন, ‘মশার ওষুধের গুণগত মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক নিধনে আমাদের রুটিন কার্যক্রম চলমান আছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

করোনা দুশ্চিন্তার সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গুর হানা

আপডেট টাইম : ১১:৩৬:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মহামারি করোনার সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। অক্টোবরের চেয়ে চলতি মাসে এখন পর্যন্ত দেশে প্রায় দ্বিগুণ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। বেশির ভাগই রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। তাই করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য অনেক হাসপাতালে চালু করা হয়েছে আলাদা ইউনিট।

স্বাস্থ্য অদিপ্তরের হিসাব মতে, গত অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ১৬৯ জন। আর নভেম্বরের মাসের প্রথম ১৭ দিনে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায় ২৩৯ জন।

শীত আসতে না আসতে রাজধানীতে বৃষ্টি হওয়ায় মশার উপদ্রব কিছুটা বেড়েছে। আবার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ অবস্থায় ব্যক্তিগতভাবে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি মশা নিধনের কার্যক্রম জোরদারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নিয়মিত মশকবিরোধী অভিযান চললেও অনেক এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। তাই মশা নিধনের কাজে বাড়তি জনবল চেয়ে জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ মেয়রদের কাছে অনুরোধ করছেন।

সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জনবল সংকট নেই বরং মশার সমস্যা সমাধানে নিয়মিত কাজ চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর মূল মৌসুম শেষ হলেও অক্টোবর ও নভেম্বরে এবার উল্লেখযোগ্য হারে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৯৩৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এখনো চিকিৎসাধীন আছেন ৮৪ জন।

এই অবস্থায় ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাদের করোনার সঙ্গে ডেঙ্গুও রয়েছে, তাদের ঢামেক কর্তৃপক্ষ ভর্তি করলেও নন-কোভিড রোগীদের সলিমুল্লাহ মেডিকেল ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। আর দিনের বেলা মশার কামড় থেকে বাঁচতে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন।

বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে ডেঙ্গু ভর্থি ও চিকিৎসার তথ্য নিয়েছে। ডেঙ্গ আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলেন ৫০ জন। যারা সবাই সুস্থ হয়েছেন। সোহরাওয়ার্দী ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩৯ জনের মধ্যে ৩২ জন বাড়ি ফিরেছেন। ঢাকা শিশু হাসপাতালের ৭২ জনের মধ্যে ৬২ জন বাড়ি ফিরেছেন। এ ছাড়া বিএসএমএমইউ এবং পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দুজন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন।

ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় আক্রান্ত ৪০ জনের মধ্যে ৩৮ জন সুস্থ হয়েছেন। ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬ জনের মধ্যে ১৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চট্টগ্রাম বিভাগে আক্রান্ত ১১ জনই সুস্থ হয়েছেন। রাজশাহী বিভাগের আক্রান্ত একজন ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।

খুলনা বিভাগের ৪৭ জনের মধ্যে ৪২ জন, বরিশাল বিভাগের তিনজন, সিলেট বিভাগের আক্রান্ত একজন সুস্থ হয়েছেন। তবে রংপুর বিভাগে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি বিভাগের ডেপু-প্রোগ্রাম আফসানা আলমগীর খান বলেন, ‘সারাদেশের নিয়মিত ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ঢাকাতে।

জ্বর হলে করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

মশার উৎপাতে নগরবাসী

নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে নিয়মিত মশার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তারপরও মশার উৎপাত কমেনি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা মশা নিয়ে অভিযোগ করেছেন।

উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল আসিফ আহমেদ প্রায় পাঁচ লাখ বাসিন্দার ওয়ার্ডে মশক নিধনের জন্য বাড়তি জনবল, ওষুধ চেয়ে নগর ভবনে আবেদন করেন বলে জানা গেছে।

মশার উপদ্রব বেড়েছে এই সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডেও। টাউন হল এলাকার বাসিন্দা সজিব আহমেদ বলেন, ‘সন্ধ্যার পর রাস্তায় দাঁড়ানো যায় না। প্রচুর মশা। বাসার মধ্যেও মশার উৎপাত। কয়েল ছাড়া একটা দিনও চলে না।‘

সামনে শীতের মৌসুমে কুয়াশার কারণে মশার উপদ্রব আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা এখানকার বাসিন্দাদের। একই অবস্থা ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের। কলেজগেট, মিরপুর রোড, লালমাটিয়া নিয়ে গঠিত ওয়ার্ডের মশকের উপদ্রবের কথা উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আমাদের মোহাম্মদপুর’ গ্রুপে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওয়ার্ডটির মাঠগুলোতে বিকালের পর মশার কারণে কোথাও বসা যায় না। সন্ধ্যার পর মশার উপদ্রব শুরু হয় ঘরে ঘরে।

যদিও ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ নূর ইসলাম রাষ্ট্রন এ কথা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে মশার সমস্যা নাই। নাগরিকরা আমাকে বলে তারা মশারি ছাড়া ঘুমায়। তারপরও মশা নিধনে নিয়মিত ওষুধ দেয়া হচ্ছে।’

তবে মশা বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করছে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। কর্মকর্তারা বলছেন, মৌসুমের কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছে। তবে মশক নিধনে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

ডেঙ্গু সহনীয় মাত্রায় রাখতে উত্তর সিটি কাজ করে চলেছে জানান প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু কিছু মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আমরা তাদের ঠিকানা সংগ্রহ করে তার বসবাসের পাশপাশে মশক নিধনে বেশি জোর দিচ্ছি।’

এদিকে উত্তর সিটির উত্তর খান, দক্ষিণ খান, বাড্ডা, মিরপুর, পল্লবী, গাবতলী এলাকার মশার উপদ্রব রয়েছে। সন্ধ্যার পর মশার গুনগুনানি শোনা যায় কূটনৈতিক পাড়া গুলশানেও।

দক্ষিণ সিটির বর্ধিত এলাকার পাশাপাশি কামরাঙ্গীরচর এলাকার মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড এই এলাকায় পড়েছে। তিনটি ওয়ার্ডেই মশার উপদ্রব এখন চরমে পৌঁছেছে।

কামরাঙ্গীরচরের রনি মার্কেট এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মশার ওষুধ দেওয়া হয়, তবে নিয়মিত না। সন্ধার পর মশার জ্বালায় টিকা যায় না।’

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমটা শেষে সেপ্টেম্বর পার হয়ে গেলে মশার উপদ্রব একটু বাড়ে। এটা প্রকৃতিক বিষয়। এখন কিউলেক্স মশার প্রজননটা বাড়বে। আমরা চিরুনী অভিযান করেছি। মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি।’

নগরে ডেঙ্গু দমনে সিটি করপোরেশনের নানান কার্যক্রম থাকলেও চলতি বছর বেশ কিছু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।

মশক নিধনে জনবলের ঘাটতি ও মশক নিধনের ওষুধের স্বল্পতা রয়েছে। এ বিষয়ে জনপ্রতিধিদের আপত্তির জায়গাটিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ ডিএনসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘জনবল কম বা ওষুধ কম এ বিষয়ে আমি মোটেও বিশ্বাসী নই। স্বাধীনতার পর থেকে জনবল কম। আগামী ৫০ বছর জনবল কম থাকবে। এটাকে আমি কোনোভাবেই আমলে নেই না। আমার স্বাস্থ্য বিভাগেও জনবল কম আছে। আমার যে জনবল আছে, সেটা দিয়েই আমাদের দক্ষতা দেখাতে হবে।’

ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা ও মুখমাত্র মো. আবু নাছের বলেন, ‘মশার ওষুধের গুণগত মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক নিধনে আমাদের রুটিন কার্যক্রম চলমান আছে।