রোববার বেলা সোয়া ১১টা। সেই জাহাজ বাড়ির সামনের একটি ফটক একটুখানি ফাঁক করা ছিল। বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে ফটক খুলে বেরিয়ে এলেন মাঝবয়সী এক শ্রমিক। এসময় ওই ফটক দিয়ে এ প্রতিবেদক ভেতরে ঢুকতেই এক তরুণ শ্রমিক হারুন ভাই, হারুন ভাই বলে চিৎকার করতে লাগলো। সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে এলেন সেই হারুন ভাই।
এ প্রতিবেদকের পরিচয় শুনে তিনি বাড়ি ভাঙার ঠিকাদার জাকিরের পরিচয় দিলেন। বাড়ি ভাঙার অগ্রগতি, কি চুক্তিতে ভাঙার কাজ চলছে ইত্যাদি প্রশ্নের জবাবে তিনি জাকিরের মোবাইল নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিলেন।
যোগাযোগ করা হলে জাকির নামের ওই ঠিকাদার জানান, বাড়ির মালিকের সঙ্গে পাঁচ মাসের মধ্যে বাড়ি ভেঙে খালি জমি বুঝিয়ে দেবার শর্তে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে কাজ শুরু করা হয়। শর্তানুসারে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ভবন ভাঙার কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অতিরিক্ত আরও মাস দেড়েক লেগে যাবে বলে তার ধারণা।
তিনি বলেন, টাইটানিকখ্যাত এ বাড়িটিতে মোট ৩৭টি গম্বুজ (মিনার) ছিল। মূল গম্বুজটি ১৬তলা ভবন সমান আকারের ছিল। এত উঁচু উঁচু গম্বুজ ভাঙতে বাঁশের মাচা তৈরিতে এক মাসেরও বেশি সময় লেগে গিয়েছে। আর ১০টা বাড়ির চেয়ে এ বাড়ির গাঁধুনি খুব শক্ত। ভবনটি নির্মাণে প্রচুর সিমেন্ট ও রড ব্যবহার করা হয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েও দেয়াল ভাঙতে পারছেন না শ্রমিকরা। দ্বিগুণ সময় দিয়ে ভবনটি ভাঙার কাজ করতে হচ্ছে।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, সাড়ে তিনতলা ভবনটির দ্বিতীয় তলার ছাদ পর্যন্ত ভাঙার কাজ প্রায় শেষ। ভবনটিকে দেখলে যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো ভবন বলে মনে হবে। এদিকে-সেদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইট-সুরকির স্তুুপ।
Jahazbari-
জাহাজ বাড়ি খ্যাত এ ভবনটিতে প্রবেশের দুটি ফটক। প্রথম ফটকটি দিয়ে ঢুকতেই সুইমিং পুল। সামনে এগিয়ে যেতেই দ্বিতীয় ফটক। ওই ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই বারান্দা। তার পাশেই ভবনটিতে উঠার সিঁড়ি।
বিধ্বস্ত ভবনটির দোতলায় উঠে ইট-সুরকির স্তুুপ ছাড়া অন্য কিছু চোখে না পড়লেও উজ্জ্বল নামের এক নির্মাণ শ্রমিক জানান, ভবনটি ভাঙার প্রথমদিন থেকেই তিনি কাজ করছেন। বাড়িটিতে কেউ না থাকলেও সৌন্দর্য ছিল চোখে পড়ার মতো। ভবনটিতে ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের বহু সংখ্যক কক্ষ ছিল বলে তিনি জানান।
আবদুর রউফ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, শের ই খাজার মৃত্যুর পর থেকেই বাড়িটির সৌন্দর্যহানী ঘটতে থাকে। তাদের জানা মতে এক ছেলে ও এক মেয়ে বিদেশে থাকেন। দুই বছর থেকে এ বাড়িটিতে কেয়ারটেকার ছাড়া কেউ থাকতেন না।
জানা গেছে, গুলশানের শান্তা প্রপার্টিজ নামে এক ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে বহুতল ভবন (১৪তলা) নির্মাণের চুক্তিতে বাড়িটি ভাঙা হয়েছে।