ঢাকা ০৮:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের ১২০০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:০৮:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর ২০২০
  • ১৭৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন শুরুর মধ্যেই করোনার বিস্তারে অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতি হারায়। ফলে এই সময়টিতে ফাঁকি রোধে বড় ধরনের কোনো অভিযানে নামেনি রাজস্ব বিভাগ। তবে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীরে ধীরে চালু হওয়ার পর ফাঁকি রোধে নতুন অর্থবছর থেকে মাঠ পর্যায়ের অফিসের বাইরে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির হদিস মিলছে। গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগ রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রামের বাণিজ্য অধ্যুষিত এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫১টি প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৩২ কোটি টাকার ফাঁকি উদঘাটন হয়েছে।

এ তালিকায় রছে ব্যাংক, বীমাসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে কিছু সরকারি ব্যাংকেরও ফাঁকি ধরা পড়েছে। অন্যদিকে শুল্ক গোয়েন্দার অভিযানেও আরো অন্তত বেশকিছু আমদানি চালানে মিথ্যা ঘোষণায় প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ফাঁকি বের হয়েছে। এছাড়া গোয়েন্দা অভিযানে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিপণ্য খোলাবাজারে বিক্রির তথ্যও বের হয়েছে। এসব অভিযানের কারণে ক্ষেপেছে ফাঁকিবাজদের একটি অংশ ও তাদের সহযোগীরা।

সূত্র জানায়, রাজধানীর কমলাপুর আইসিডিতে বেশ কয়েকটি শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ধরা পড়ে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে। এতে একশ্রেণির অসাধু আমদানিকারকের পাশাপাশি ভীতি ছড়িয়ে পড়ে তাদের সহযোগী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মধ্যে। এ পরিস্থিতিতে বেসামাল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা আইসিডিতে হঠাত্ করেই ধর্মঘট ডেকেছে। এর মাধ্যমে রাজস্ব বিভাগকে চাপে রেখে দাবি আদায়ের কৌশল তাদের। অবশ্য চার দিন পর গত বুধবার দুই সপ্তাহের জন্য ধর্মঘট স্থগিত করেছে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা।

ভ্যাট গোয়েন্দা অফিস সূত্র জানিয়েছে, গত দুই মাস ৩৯টি প্রতিষ্ঠানে বিশেষায়িত নিরীক্ষা কার্যক্রম চালালে ৫৯০ কোটি টাকার ফাঁকি ধরা পড়েছে। আরো ৩৮৮ কোটি টাকা সুদসহ ৯৭৮ কোটি টাকা ফাঁকি হয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দা বিভাগের। ফাঁকির এ তালিকায় রয়েছে খ্যাতনামা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও। এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা (সুদসহ), জনতা ব্যাংক প্রায় ৫০ কোটি, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ড্যানিশ কনডেন্সড মিল্ক ৩ কোটি ২৮ লাখ, ফিনিক্স ইনসিওরেন্স ৩ কোটি ১৩ লাখ, গাজীপুরের জয়দেবপুরের ডক্টর টি ফার্মাসিউটিক্যালস ৫ কোটি ৯৫ লাখ, শ্রীপুরের নাসির গ্লাস ১৯ কোটি, ইউএই বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি ৩৯ লাখ, গুলশানের হোটেল আমারি ঢাকা ২১ কোটি, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ২১ কোটি, নাভানা সিএনজি ৫০ লাখ, উত্তরার ডিপিএসএসটিএস স্কুল ২৩ কোটি, মহাখালীর হাভাস মিডিয়া ১ কোটি ৮ লাখ, মেঘনা ব্যাংক ৬৫ লাখ, হাবিব ব্যাংক ৪৫ লাখ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ১২৬ কোটি, অ্যাকটিভেটেড মিডিয়া সল্যুশন ৫০ হাজার, ওয়ান ব্যাংক ২ কোটি ৬১ লাখ, আলফা ইসলামী লাইফ ইনসিওরেন্স ১ কোটি ৬২ লাখ, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ২৬ কোটি ৩৭ লাখ, ডায়মন্ড লাইফ ইনসিওরেন্স ৭ কোটি ১৫ লাখ, এনআরবি গ্লোবাল ইনসিওরেন্স ১৩ লাখ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনসিওরেন্স ১ কোটি ১৬ লাখ, সাউথ এশয়া ইনসিওরেন্স সাড়ে ৪ কোটি, বেসিক ব্যাংক ১০০ কোটি, চার্টার্ড লাইফ ইনসিওরেন্স ২৬ লাখ, ন্যাশনাল লাইফ ইনসিওরেন্স ২ কোটি ২৭ লাখ, বাংলাদেশ রেইস ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ১ কোটি ৬৩ লাখ, আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ১ লাখ ৬৯ হাজার, তানভীর পলিমার ৬৩ লাখ, মুন্নু সিরামিক ৩ কোটি ৪৩ লাখ, ইউনিভার্সেল রিফাইনারি ২০ লাখ, পিএইচপি শিপ ব্রেকিং ২ কোটি ২২ লাখ, গ্র্যান্ড ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজ ২৫ লাখ, নারায়ণগঞ্জের বেঙ্গল মাইন্স ডেভেলপমেন্ট ৪৩ লাখ ২৯ হাজার, চট্টগ্রামের এলাহি নূর চা-বাগান ১ কোটি ১ লাখ, এলিট পেইন্ট ৮৮ লাখ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৪৬২ কোটি, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে সুদসহ ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৯৭৮ কোটি টাকা ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফাঁকি স্বীকার করে প্রায় ১৩ কোটি টাকার ভ্যাট পরিশোধও করেছে। এছাড়া আরো তাত্ক্ষণিক অভিযান চালিয়ে নথিপত্র জব্দ করে ১২টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫৪ কোটি টাকার ফাঁকি বের হয়েছে।

অন্যদিকে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন শুল্ক স্টেশনে অভিযান চালিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানিকৃত পণ্য থেকে গত তিন মাসে ১৫০ কোটি টাকার বেশি ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। এখন ফাঁকিপ্রবণ শুল্ক স্টেশনগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার কমলাপুর আইসিডি শুল্ক স্টেশনে বেশকিছু মিথ্যা ঘোষণার পণ্য ধরা পড়েছে। এরপর শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক হয়রানির অভিযোগ তুলে ধর্মঘটে নামে আইসিডির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। চার দিন ধর্মঘট শেষে বুধবার তা ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইত্তেফাককে বলেন, পণ্য খালাস পর্যায়ে অহেতুক লক করে সাত থেকে আট দিন আটকে রাখার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েন উদ্যোক্তারা। অথচ পরীক্ষা করে তেমন কিছুই পায় না। তিনি বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে তাদের দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনে নামবেন তারা।

অবশ্য শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে জানিয়েছেন, তারা গত এক মাসে আইসিডিতে প্রায় ৭৫টি আমদানি চালান খালাস স্থগিত করেন। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ পরীক্ষা করে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মিথ্যা ঘোষণা পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমদানিকারকদের একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রাম পণ্য খালাস না করে আইসিডির মাধ্যমে খালাস করে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, একশ্রেণির কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজশে রাজস্ব ফাঁকি দিতেই এই স্টেশনটিকে বেছে নেওয়া হয়। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে এই শুল্ক স্টেশন দিয়ে গত বছরের শুরুর কয়েক মাসে পণ্য খালাস বেশি হওয়ার প্রমাণও পাওয়া যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের ১২০০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন

আপডেট টাইম : ০২:০৮:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন শুরুর মধ্যেই করোনার বিস্তারে অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতি হারায়। ফলে এই সময়টিতে ফাঁকি রোধে বড় ধরনের কোনো অভিযানে নামেনি রাজস্ব বিভাগ। তবে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীরে ধীরে চালু হওয়ার পর ফাঁকি রোধে নতুন অর্থবছর থেকে মাঠ পর্যায়ের অফিসের বাইরে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির হদিস মিলছে। গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগ রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রামের বাণিজ্য অধ্যুষিত এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫১টি প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৩২ কোটি টাকার ফাঁকি উদঘাটন হয়েছে।

এ তালিকায় রছে ব্যাংক, বীমাসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে কিছু সরকারি ব্যাংকেরও ফাঁকি ধরা পড়েছে। অন্যদিকে শুল্ক গোয়েন্দার অভিযানেও আরো অন্তত বেশকিছু আমদানি চালানে মিথ্যা ঘোষণায় প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ফাঁকি বের হয়েছে। এছাড়া গোয়েন্দা অভিযানে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিপণ্য খোলাবাজারে বিক্রির তথ্যও বের হয়েছে। এসব অভিযানের কারণে ক্ষেপেছে ফাঁকিবাজদের একটি অংশ ও তাদের সহযোগীরা।

সূত্র জানায়, রাজধানীর কমলাপুর আইসিডিতে বেশ কয়েকটি শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ধরা পড়ে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে। এতে একশ্রেণির অসাধু আমদানিকারকের পাশাপাশি ভীতি ছড়িয়ে পড়ে তাদের সহযোগী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মধ্যে। এ পরিস্থিতিতে বেসামাল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা আইসিডিতে হঠাত্ করেই ধর্মঘট ডেকেছে। এর মাধ্যমে রাজস্ব বিভাগকে চাপে রেখে দাবি আদায়ের কৌশল তাদের। অবশ্য চার দিন পর গত বুধবার দুই সপ্তাহের জন্য ধর্মঘট স্থগিত করেছে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা।

ভ্যাট গোয়েন্দা অফিস সূত্র জানিয়েছে, গত দুই মাস ৩৯টি প্রতিষ্ঠানে বিশেষায়িত নিরীক্ষা কার্যক্রম চালালে ৫৯০ কোটি টাকার ফাঁকি ধরা পড়েছে। আরো ৩৮৮ কোটি টাকা সুদসহ ৯৭৮ কোটি টাকা ফাঁকি হয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দা বিভাগের। ফাঁকির এ তালিকায় রয়েছে খ্যাতনামা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও। এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা (সুদসহ), জনতা ব্যাংক প্রায় ৫০ কোটি, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ড্যানিশ কনডেন্সড মিল্ক ৩ কোটি ২৮ লাখ, ফিনিক্স ইনসিওরেন্স ৩ কোটি ১৩ লাখ, গাজীপুরের জয়দেবপুরের ডক্টর টি ফার্মাসিউটিক্যালস ৫ কোটি ৯৫ লাখ, শ্রীপুরের নাসির গ্লাস ১৯ কোটি, ইউএই বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি ৩৯ লাখ, গুলশানের হোটেল আমারি ঢাকা ২১ কোটি, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ২১ কোটি, নাভানা সিএনজি ৫০ লাখ, উত্তরার ডিপিএসএসটিএস স্কুল ২৩ কোটি, মহাখালীর হাভাস মিডিয়া ১ কোটি ৮ লাখ, মেঘনা ব্যাংক ৬৫ লাখ, হাবিব ব্যাংক ৪৫ লাখ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ১২৬ কোটি, অ্যাকটিভেটেড মিডিয়া সল্যুশন ৫০ হাজার, ওয়ান ব্যাংক ২ কোটি ৬১ লাখ, আলফা ইসলামী লাইফ ইনসিওরেন্স ১ কোটি ৬২ লাখ, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ২৬ কোটি ৩৭ লাখ, ডায়মন্ড লাইফ ইনসিওরেন্স ৭ কোটি ১৫ লাখ, এনআরবি গ্লোবাল ইনসিওরেন্স ১৩ লাখ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনসিওরেন্স ১ কোটি ১৬ লাখ, সাউথ এশয়া ইনসিওরেন্স সাড়ে ৪ কোটি, বেসিক ব্যাংক ১০০ কোটি, চার্টার্ড লাইফ ইনসিওরেন্স ২৬ লাখ, ন্যাশনাল লাইফ ইনসিওরেন্স ২ কোটি ২৭ লাখ, বাংলাদেশ রেইস ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ১ কোটি ৬৩ লাখ, আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ১ লাখ ৬৯ হাজার, তানভীর পলিমার ৬৩ লাখ, মুন্নু সিরামিক ৩ কোটি ৪৩ লাখ, ইউনিভার্সেল রিফাইনারি ২০ লাখ, পিএইচপি শিপ ব্রেকিং ২ কোটি ২২ লাখ, গ্র্যান্ড ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজ ২৫ লাখ, নারায়ণগঞ্জের বেঙ্গল মাইন্স ডেভেলপমেন্ট ৪৩ লাখ ২৯ হাজার, চট্টগ্রামের এলাহি নূর চা-বাগান ১ কোটি ১ লাখ, এলিট পেইন্ট ৮৮ লাখ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৪৬২ কোটি, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে সুদসহ ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৯৭৮ কোটি টাকা ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফাঁকি স্বীকার করে প্রায় ১৩ কোটি টাকার ভ্যাট পরিশোধও করেছে। এছাড়া আরো তাত্ক্ষণিক অভিযান চালিয়ে নথিপত্র জব্দ করে ১২টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫৪ কোটি টাকার ফাঁকি বের হয়েছে।

অন্যদিকে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন শুল্ক স্টেশনে অভিযান চালিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানিকৃত পণ্য থেকে গত তিন মাসে ১৫০ কোটি টাকার বেশি ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। এখন ফাঁকিপ্রবণ শুল্ক স্টেশনগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার কমলাপুর আইসিডি শুল্ক স্টেশনে বেশকিছু মিথ্যা ঘোষণার পণ্য ধরা পড়েছে। এরপর শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক হয়রানির অভিযোগ তুলে ধর্মঘটে নামে আইসিডির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। চার দিন ধর্মঘট শেষে বুধবার তা ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইত্তেফাককে বলেন, পণ্য খালাস পর্যায়ে অহেতুক লক করে সাত থেকে আট দিন আটকে রাখার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েন উদ্যোক্তারা। অথচ পরীক্ষা করে তেমন কিছুই পায় না। তিনি বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে তাদের দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনে নামবেন তারা।

অবশ্য শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে জানিয়েছেন, তারা গত এক মাসে আইসিডিতে প্রায় ৭৫টি আমদানি চালান খালাস স্থগিত করেন। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ পরীক্ষা করে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মিথ্যা ঘোষণা পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমদানিকারকদের একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রাম পণ্য খালাস না করে আইসিডির মাধ্যমে খালাস করে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, একশ্রেণির কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজশে রাজস্ব ফাঁকি দিতেই এই স্টেশনটিকে বেছে নেওয়া হয়। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে এই শুল্ক স্টেশন দিয়ে গত বছরের শুরুর কয়েক মাসে পণ্য খালাস বেশি হওয়ার প্রমাণও পাওয়া যায়।