ঢাকা ০৯:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের করোনা ভ্যাকসিন ভাবনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪২:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অগাস্ট ২০২০
  • ২০৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মহামারী বিশ্বে নতুন কিছু অবিশ্বাস জন্ম দিতে শুরু করেছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মাঝে পুরনো বন্ধুত্বের অনেকটা ফাটল ধরেছে বা জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনিশ্চিত ভ্যাকসিন পরিস্থিতির মাঝে থেকেও তাদের জনগণের জন্য ভ্যাকসিন সহজলভ্যতার বিষয় পূর্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করে রাখছেন। যদিও ইতোমধ্যে রাশিয়া ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে বলে প্রকাশ করলেও তারা বিশ্ব মহলে পুরোপুরি আস্থা অর্জন করতে পারেনি।

১৪ আগস্ট ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভ্যাকসিন দৌড়ে অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান (Astra Zeneca) এসট্টা যেনেকার সঙ্গে ৪০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন ক্রয়ের বিষয়ে চুক্তি সম্পাদন করেছে। এরমধ্যে ৩০০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্ম এবং ১০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষে ক্রয় করার একটি সুযোগ রেখেছেন।

তাছাড়া গত ১৩ আগস্ট ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্ভাব্য ভ্যাকসিন ক্রয় করার জন্য আমেরিকান কোম্পানি জনসন এন্ড জনসনের সঙ্গে ভ্যাকসিন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০০ মিলিয়ন ডোজ এবং সকল সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষে ২০০ মিলিয়ন ডোজ ক্রয় করার বিষয়ে আলোচনা চূড়ান্ত করে এবং গত ১ জুলাই সকল সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষে ৩০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন ক্রয় করার জন্য সানোফি জিএসকে সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত করেছেন।

তাছাড়া জার্মান কোম্পানির CureVac কে ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি ৭৫ মিলিয়ন ইউরোপ ঋণ প্রদান করেছে তাদের ভ্যাকসিন তৈরির কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য। তাছাড়া ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ১৩টি কোম্পানিকে ৩১৬ মিলিয়ন ঋণ সহায়তা প্রদান করেছে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন এবং প্রতিষেধক গবেষণার জন্য।

করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি Gilead এর সঙ্গে Veklury ভেলকুরি ডোজ নিশ্চিত করার জন্য ৬৩ মিলিয়ন ইউরো একটি চুক্তি সম্পাদন হয়েছে।

ভেলকুরি হচ্ছে Remdesivir ব্র্যান্ডের একটি ওষুধ যা এই প্রথম ইইউ দ্বারা অনুমোদিত করোনা রোগীদের চিকিৎসা ওষুধ। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন রোগী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে প্রদান করা হবে। পরবর্তী সহজলভ্যতায় সকলের জন্য ব্যবহার করা হবে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ১২৮ মিলিয়ন ইইউরও অর্থায়নে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত ২৩টি গবেষণা প্রকল্পকে সহযোগিতা করছে। এই তহবিল ইইউ-এর বাইরে ১৬টি দেশের ৩৪ জন অংশগ্রহণকারীসহ ৪০টি দেশের প্রায় ৩৪৭টি গবেষণা দলকে সহযোগিতা করবে।

তাছাড়া সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জরুরি চাহিদা পূরণের করার জন্য সমন্বিত ইউরোপিয়ান স্বাস্থ্য সংহতি প্রকল্প হিসেবে ইউরোপিয়ান স্বাস্থ্য সংস্থাকে সহযোগিতা করার জন্য ৬ বিলিয়ন ইউরো তহবিল ঘোষণা করা হয়েছে।

ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উর্সুলা ভন ডের লেয়েন গত ১৪ আগস্ট তার বক্তব্যে নতুন আরও সম্ভাব্য করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন এবং ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সঙ্গে নতুন চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়াও তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিশ্বের সকল মানুষের কল্যাণে এবং মহামারী থেকে রক্ষা করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এসকল ভ্যাকসিন তার সদস্য রাষ্ট্র এর মাঝে বণ্টন করা হবে তা নয়। এই ভ্যাকসিনগুলো ইউরোপের এবং বিশ্বের অন্যান্য অনগ্রসর অর্থনীতির দেশের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বণ্টন করা হবে।

শুরুতে বলেছিলাম অবিশ্বাসের কথা, তবে ইউরোপের বেলায় তা ভিন্ন। কেননা ইউরোপের হাজার বছরের ইতিহাস তদেরকে সভ্য এবং মানবিক করে তুলেছে। তাছাড়া তাদের পূর্বের উপনিবেশিক কর্মকাণ্ডের জন্য বিশ্বের প্রতি দায়িত্বশীলতার অংশ হিসেবে তারা অনগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোকে বিভিন্ন মানবিক সহজ্য সহযোগিতা করে থাকে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের করোনা ভ্যাকসিন ভাবনা

আপডেট টাইম : ০৬:৪২:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অগাস্ট ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মহামারী বিশ্বে নতুন কিছু অবিশ্বাস জন্ম দিতে শুরু করেছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মাঝে পুরনো বন্ধুত্বের অনেকটা ফাটল ধরেছে বা জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনিশ্চিত ভ্যাকসিন পরিস্থিতির মাঝে থেকেও তাদের জনগণের জন্য ভ্যাকসিন সহজলভ্যতার বিষয় পূর্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করে রাখছেন। যদিও ইতোমধ্যে রাশিয়া ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে বলে প্রকাশ করলেও তারা বিশ্ব মহলে পুরোপুরি আস্থা অর্জন করতে পারেনি।

১৪ আগস্ট ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভ্যাকসিন দৌড়ে অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান (Astra Zeneca) এসট্টা যেনেকার সঙ্গে ৪০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন ক্রয়ের বিষয়ে চুক্তি সম্পাদন করেছে। এরমধ্যে ৩০০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্ম এবং ১০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষে ক্রয় করার একটি সুযোগ রেখেছেন।

তাছাড়া গত ১৩ আগস্ট ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্ভাব্য ভ্যাকসিন ক্রয় করার জন্য আমেরিকান কোম্পানি জনসন এন্ড জনসনের সঙ্গে ভ্যাকসিন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০০ মিলিয়ন ডোজ এবং সকল সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষে ২০০ মিলিয়ন ডোজ ক্রয় করার বিষয়ে আলোচনা চূড়ান্ত করে এবং গত ১ জুলাই সকল সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষে ৩০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন ক্রয় করার জন্য সানোফি জিএসকে সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত করেছেন।

তাছাড়া জার্মান কোম্পানির CureVac কে ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি ৭৫ মিলিয়ন ইউরোপ ঋণ প্রদান করেছে তাদের ভ্যাকসিন তৈরির কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য। তাছাড়া ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ১৩টি কোম্পানিকে ৩১৬ মিলিয়ন ঋণ সহায়তা প্রদান করেছে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন এবং প্রতিষেধক গবেষণার জন্য।

করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি Gilead এর সঙ্গে Veklury ভেলকুরি ডোজ নিশ্চিত করার জন্য ৬৩ মিলিয়ন ইউরো একটি চুক্তি সম্পাদন হয়েছে।

ভেলকুরি হচ্ছে Remdesivir ব্র্যান্ডের একটি ওষুধ যা এই প্রথম ইইউ দ্বারা অনুমোদিত করোনা রোগীদের চিকিৎসা ওষুধ। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন রোগী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে প্রদান করা হবে। পরবর্তী সহজলভ্যতায় সকলের জন্য ব্যবহার করা হবে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ১২৮ মিলিয়ন ইইউরও অর্থায়নে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত ২৩টি গবেষণা প্রকল্পকে সহযোগিতা করছে। এই তহবিল ইইউ-এর বাইরে ১৬টি দেশের ৩৪ জন অংশগ্রহণকারীসহ ৪০টি দেশের প্রায় ৩৪৭টি গবেষণা দলকে সহযোগিতা করবে।

তাছাড়া সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জরুরি চাহিদা পূরণের করার জন্য সমন্বিত ইউরোপিয়ান স্বাস্থ্য সংহতি প্রকল্প হিসেবে ইউরোপিয়ান স্বাস্থ্য সংস্থাকে সহযোগিতা করার জন্য ৬ বিলিয়ন ইউরো তহবিল ঘোষণা করা হয়েছে।

ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উর্সুলা ভন ডের লেয়েন গত ১৪ আগস্ট তার বক্তব্যে নতুন আরও সম্ভাব্য করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন এবং ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সঙ্গে নতুন চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়াও তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিশ্বের সকল মানুষের কল্যাণে এবং মহামারী থেকে রক্ষা করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এসকল ভ্যাকসিন তার সদস্য রাষ্ট্র এর মাঝে বণ্টন করা হবে তা নয়। এই ভ্যাকসিনগুলো ইউরোপের এবং বিশ্বের অন্যান্য অনগ্রসর অর্থনীতির দেশের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বণ্টন করা হবে।

শুরুতে বলেছিলাম অবিশ্বাসের কথা, তবে ইউরোপের বেলায় তা ভিন্ন। কেননা ইউরোপের হাজার বছরের ইতিহাস তদেরকে সভ্য এবং মানবিক করে তুলেছে। তাছাড়া তাদের পূর্বের উপনিবেশিক কর্মকাণ্ডের জন্য বিশ্বের প্রতি দায়িত্বশীলতার অংশ হিসেবে তারা অনগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোকে বিভিন্ন মানবিক সহজ্য সহযোগিতা করে থাকে।