হাওর বার্তা ডেস্কঃ আলজাজিরা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেয়ার ঘটনায় গ্রেফতার বাংলাদেশি যুবক মো. রায়হান কবিরকে ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ।
শনিবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমির হামজা জয়নুদ্দিন জানান, তদন্তে সহায়তা করার জন্য রায়হানের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। একই দিন ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক জানান, ডকুমেন্টেশন ও টিকিট ক্রয়ের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিবাসন ডিটেনশন ডিপোতে তাকে রাখা হবে।
নিজ দেশে তাকে ফেরত পাঠাতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। এদিকে রায়হানকে গ্রেফতারের নিন্দা ও তার মুক্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের অভিবাসন খাতের ২১টি সংগঠন।
চলতি লকডাউনে মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সে দেশে বসবাসরত অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক ও বর্ণবাদী আচরণ করেছে বলে আলজাজিরা টেলিভিশনকে জানিয়েছেন রায়হান কবির (২৫)।
‘লকড আপ ইন মালয়েশিয়াস লকডাউন’ শিরোনামে ২৫ মিনিটের ডকুমেন্টারিটি আলজাজিরা টেলিভিশনে ৩ জুলাই প্রচারিত হলে মালয়েশিয়াজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর মালয়েশিয়া সরকার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রতিবেদনটিকে ‘ভিত্তিহীন ও মিথ্যাচার’ বলে অভিহিত করে। শুক্রবার বিকালে পুলিশ ও ইমিগ্রেশন স্পেশাল ব্রাঞ্চ কুয়ালালামপুরের একটি কনডোমোনিয়ামে অভিযান চালিয়ে রায়হানকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারের নিন্দা ও মুক্তি দাবিতে ২১ সংগঠনের যৌথ বিবৃতি : আলজাজিরায় কথা বলার অপরাধে বাংলাদেশি তরুণ রায়হান কবিরের গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের অভিবাসন খাতের ২১টি সংগঠন।
রায়হানের নিরাপত্তা নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত তার মুক্তি দাবি করেছে সংগঠনগুলো। এ ব্যাপারে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন, ঢাকার পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। শনিবার সংগঠনগুলোর একটি যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়- আলজাজিরার প্রতিবেদনে অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়ার নিপীড়নের যে ছবি উঠে এসেছে সেটা নিন্দনীয় ও গভীর উদ্বেগের। ১১ জুলাই এক বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি এ ধরনের অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করলাম রায়হানের ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে সমন জারি ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলো।
গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেয়া কোনো অন্যায় নয়। আর রায়হান কোনো অপরাধও করেননি। মালয়েশিয়ার সব মানবাধিকার সংস্থা, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের আমরা সরব হওয়ার অনুরোধ করছি।
যৌথ বিবৃতি দেয়া সংগঠনগুলো হল- রামরু, ওয়ারবি, ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ), ওকাপ, বিএনএসকে, আইআইডি, আসক, বমসা, বাসুগ, ইনাফি, কর্মজীবী নারী, বিএনপিএস, ডেভকম, ইমা, আওয়াজ ফাউন্ডেশন, রাইটস যশোর, বিলস, বাস্তব, ফিল্ম সফর ও পিস ফাউন্ডেশন।
২০১৪ সালে সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন রায়হান। এরপর মালয়েশিয়ায় গিয়ে পার্টটাইম চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করছিলেন তিনি। সেখানে বিএ পাস করার পর ঈদুল ফিতরের আগে একটি কোম্পানিতে স্থায়ী চাকরি হয় তার।
গ্রেফতারের দুই দিন আগেও ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল বলে জানান তার বাবা শাহ্ আলম। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদ করত রায়হান।
তিনি জানান, রায়হানের গ্রেফতারের খবর শুনে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানি জানান, জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন রায়হান।
মালয়েশিয়া ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন রায়হান। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। সানি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রায়হানের কণ্ঠ ছিল সোচ্চার। জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন।