সদ্য বিদায়ী শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানের (এনআই খান) দাপটে বছরজুড়ে অনেকটাই অসহায় ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। মন্ত্রীকে না জানিয়েই সচিব একের পর এক বিতর্কিত প্রজ্ঞাপন জারি করেন। অধিনস্তদের চাপিয়ে দেন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। অপরদিকে মন্ত্রী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা বাস্তাবায়নে অনিহা দেখান সচিব।
তবে শিক্ষামন্ত্রী সচিবের বিতর্কিত সব সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। এক পর্যায়ে সবিবের সকল ক্ষমতা কেড়ে নেন। কিন্তু মন্ত্রী-সচিবের দ্বন্দ্বের শিকার হন শিক্ষার্থীসহ শিক্ষা পরিবারের সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষা করে একক সিদ্ধান্তে ২ জুন অনলাইনের মাধ্যমে কলেজে ভর্তি নীতিমালা জারি করেন শিক্ষাসচিব। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। ভোগান্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, ছেলেদের কলেজে মেয়েরা মেয়েদের কলেজে ছেলেরা ভর্তি তালিকায় স্থান পায়।
এ নিয়ে মন্ত্রী-সচিব দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। শিক্ষামন্ত্রী সচিবকে বদলাতে জোর তদবিরে করেও ব্যর্থ হন। পরে মন্ত্রীর অগোচরে সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তাকে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে নির্দেশনা জারি করেন তিনি।
অনলাইনে ভর্তির দুর্ভোগের জন্য ৬ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমা চান শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান। এসময় তিনি বলেন, ‘ছক্কা মারার চেষ্টা করছি, ছক্কা মারতে গেলে অনেক সময় জিরোতেও আউট হয়, আবার রান আউটও হয়। আমিও সেটা হতে পারি।’ তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ‘কারও সঙ্গে বিরোধ না খোঁজার’ অনুরোধ করেন সাংবাদিকদের।
সূত্র মতে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাজার মেয়াদ বাড়ানোর দাবি ছিলো সর্বস্তরের মানুষের। কিন্তু মন্ত্রীকে না জানিয়ে সচিবের নির্দেশে সাজার মেয়াদ চার বছর রেখে ২০ অক্টোবর শিক্ষা আইনের খসড়া মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। সমালোচনার মুখে সাত দিনের মাথায় তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এরপর সচিবের সকল ক্ষমতা খর্ব করে ২৬ অক্টোবর একটি নির্দেশনা জারি করেন মন্ত্রী।
নির্দেশনায় বলা হয়, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যেকোনো পরিপত্র, নীতিমালা, আইন ইত্যাদি জারি, জনমতের জন্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শন এবং মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রাণাধীন ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অধিদফতর/দফতর ও শিক্ষা বোর্ডসমূহে প্রথম শ্রেণির যেকোনো পদে পদায়নের ক্ষেত্রে মন্ত্রী পর্যায়ে অনুমোদন গ্রহণের জন্য মাননীয় মন্ত্রী সদয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন।’
কিন্তু এরপরেও দমে যাননি শিক্ষা সচিব। শিক্ষামন্ত্রী বিদেশে অবস্থাকালে ৩ নভেম্বর শিক্ষা সচিব দুই জন সহকারী অধ্যাপককে বদলি করেন। ইউনেস্কো সম্মেলনে যোগদিতে ফ্রান্সে অবস্থানকালে এনিয়ে সচিব তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে উম্মা প্রকাশ করেন। তার নেয়া সিদ্ধান্তগুলো পরবর্তী সচিবদের কাজে সহায়তা করবে বলে তিনি দাবি করেন।
জানা গেছে, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর নজরুল ইসলাম খান সচিব হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পরই মন্ত্রীকে না জানিয়েই একের পর এক প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এর মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি ফলাফলের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়ে শুধু ক্লাসে ৭০ শতাংশ উপস্থিতির হার নিয়ে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, ছাত্রী হোস্টেলে বিউটি পারলার বাধ্যতামূলক করা, শিক্ষার্থীদের সাঁতার শেখানোসহ বেশ কিছু পরিপত্র জারি করেন।
এনিয়ে মন্ত্রী সচিব দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। তবে সচিবের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বাতিল করেন মন্ত্রী। মন্ত্রীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিয়েই গত ৩০ নভেম্বর অবসরে গেছেন এনআই খান।