হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্পেনে অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিতকরণসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে ২৩ দিন পর আবারো বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানী মাদ্রিদের বন্কো দে ইস্পানিয়া থেকে শুরু হয়ে জিরো পয়েন্ট খ্যাত সোলে গিয়ে শেষ হয়।
পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী রোববার বিকেল ৬টায় মাদ্রিদের বন্কো দে ইস্পানিয়া এলাকায় দলে দলে লোক ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে সমাগম হতে থাকে। হাজারো মানুষের অংশগ্রহণ আর স্লোগানে মুখরিত হয় বন্কো দে ইস্পানিয়া এলাকা।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা এক নাগাড়ে স্লোগান দিতে থাকেন। তারা বলেন, সবাইকে নিয়মিত করা হোক, আমরা যারা নিয়মিত, আমাদের যাদের কাগজ আছে তারাও একাত্মতা প্রকাশ করছি সবাইকে নিয়মিত করা হোক।
এ বিক্ষোভে অন্য দেশের অভিবাসীদের সঙ্গে বাংলাদেশি কমিউনিটির সংগঠন বাংলাদেশ আসোসিয়েশন ইন স্পেন, বাংলাদেশি মানবাধিকার সংগঠন ভালিয়েন্তে বাংলাসহ বিভিন্ন দেশী ও স্প্যানিশ মানবাধিকার সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অভিবাসীরা আন্দোলনে অংশ নেন।
সমাবেশ শেষে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। এ সময় বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আসোসিয়েশন ইন স্পেনের সভাপতি কাজী এনায়েতুল করিম তারেক, সিনিয়র সহ সভাপতি আলামীন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সুন্দর, বাংলাদেশি মানবাধিকার সংগঠন ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে এলাহী, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেনের ক্রীড়া সম্পাদক সায়েক মিয়া, সদস্য আব্দুল মজিদ সুজন, বদরুল হক মিল্লাত, গ্রেটার সিলেট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব আবু জাফর রাসেল, কমিউনিটি নেতা জাহাঙ্গীর আলম ইব্রাহীম, জাহিদ হাসান প্রমুখ।
এছাড়া ভালিয়েন্তে বাংলার সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মো. হাবীব, জুলহাস উদ্দীন, আল আমীম পালওয়ান, ইমন আসাদ, মানিক আহমদ, মুজিবুর রহমান, শাহ আলম প্রমুখ।
সূত্র মতে, স্পেনে ১০ হাজার বাংলাদেশিসহ অবৈধ হয়ে পড়া মোট অনিয়মিত বা অভিবাসীর সংখ্যা দুই লাখ। তারা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, আলজেরিয়া, মরক্কো, সোমালিয়া, তিব্বত ও আফ্রিকার অভিবাসী।
মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় ইউরোপের দেশগুলো ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত। এর মধ্যে ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল ও ফ্রান্স উল্লেখযোগ্য। আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে অনেক দেশ এরইমধ্যে অনিয়মিত অভিবাসীদের বৈধকরণের ঘোষণা দিয়েছে। স্পেনে বসবাসরত অনিয়মিত অভিবাসীরাও ভেবেছিলেন, অন্যান্য দেশের মতো স্পেন সরকারও অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিতকরণের ঘোষণা দেবে।
করোনার এ সংকট সময়ে স্পেনে অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিতকরণের জন্য স্পেনের পার্লামেন্টের সদস্য, মেয়র, কমিশনার, ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সরকারকে অনুরোধ করেন। গত ১৯ মে থেকে স্পেনের সংসদ অধিবেশনে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতাকরণে সরকারের সহযোগীদল পোদেমোস এর কয়েকজন সদস্যও সংসদে প্রস্তাব তুলেন।
তবে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সন্তোষজনক সাড়া না পাওয়ায় মাদ্রিদে অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা প্রায় ১৩টি সংগঠনসহ স্প্যানিশ আরো ৪২৯টি বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন এ আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে। গত ৯ জুলাই এ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়।
বাংলাদেশ আসোসিয়েশন ইন স্পেনের সভাপতি কাজী এনায়েতুল করিম তারেক বলেন, স্পেনে বাংলাদেশিরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে আসছেন বছরের পর বছর এবং স্পেনে রয়েছে বাংলাদেশিদের আলাদা সুনাম। কাজেই শর্তহীন বৈধতা দিতে হবে। বিগত সময়ে বাংলাদেশিসহ অন্য দেশের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতারা অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করে আদায় করে নিয়েছিলেন বৈধভাবে বসবাসের অনুমতিসহ ব্যবসা করার অনুমতি।
এছাড়া অভিবাসীদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করে যাওয়া বাংলাদেশি মানবাধিকার সংগঠন ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে এলাহী অবৈধদের বিনা শর্তে বৈধতা দেয়ার জন্য দাবি জানান।
এদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, বছরের পর বছর অবৈধ অভিবাসীরা ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের পেশায় নিয়োজিত থেকে অর্থ উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। অথচ এসব অবৈধ অধিবাসীর বৈধতা দিলে বৈধ কাজ করে নিয়মিত সরকারকে ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে স্পেনের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। অভিবাসীরা সব সময়ই স্পেনের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু।
দেশটির বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন জানায়, স্পেনে সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকার অভিবাসীবান্ধব সরকার হিসেবেই পরিচিত। বর্তমান সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকারের আমলে ২০০৫ সালে অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা ও সহজ শর্তে বৈধতা দেয়া হয়। বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা সোশ্যালিস্ট পার্টি অভিবাসননীতি নমনীয় করবে, এমনটি প্রত্যাশা করছেন স্পেনের অভিবাসীরা।
অতীতে দেখা গেছে, সোশ্যালিস্ট পার্টি যখন স্পেনের রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকে, তখন অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ে। ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান খসে লুইস রদ্রিগেজ জাপাতেরো প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অবৈধ অভিবাসীরা সহজ শর্তে স্পেনে বসবাসের বৈধতা পেয়েছেন। বিশেষ করে ২০০৫ সালে সাধারণ ক্ষমা ও সহজ শর্তে বৈধতা পেয়েছেন কয়েক হাজার অনিয়মিত অভিবাসী।