ঢাকা ০৯:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এখনো মাকে খোঁজে তুবা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জুলাই ২০২০
  • ১৬৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাবা থেকেও নেই। মা তাসলিমা বেগম রেনুই ছিল সব। কিন্তু সেই মাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় গত বছরের এই দিনে। পাঁচ বছরের তুবা এখনো জানে তার মা বিদেশ গেছে। ফিরে আসবে কিছু দিনের মধ‌্যে। ঘুরে ফিরে সে মাকে খোঁজে।

২০১৯ সালের ২০ জুলাই সন্তানদের ভর্তি করার খোঁজখবর নিতে গেলে বাড্ডায় প্রাইমারি স্কুল গেটে ছেলেধরা সন্দেহে রেনুকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৫০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু।

রেনুর তাহসিন আল মাহির নামে ১২ বছরের একটি ছেলেও আছে। তুবা আর মাহির এখন তাদের খালা নাজমুন নাহার নাজমার কাছেই থাকে। মাহির বনানী বিদ্যানিকেতনে পঞ্চম শ্রেণিতে ও তুবা শিশুমেলা স্কুলে প্লেতে পড়ছে।

তুবার খালা নাজমা বলেন, ‘তুবা সব সময় তার মার কথা বলে। ঠিক মতো ঘুমায় না। মন খারাপ করে থাকে। এমন হয় যে রাত ২টা বা ৩টার সময় ঘুম থেকে উঠে মাকে খোঁজে। ওর এই কষ্ট আর সহ‌্য হয় না।’

মাহির বিষয়ে নাজমা বলেন, ‘ও বোঝে মা আর নেই। মাঝে মাঝে সেও মায়ের জন্য কান্নাকাটি করে। মাহি তো ঘটনার সব কিছু টিভিতে দেখছে। সে অনেকটা রাগি। ওকে নিয়েই চিন্তাই আছি।’

বোনের স্মৃতি মনে করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাজমা বলেন, ‘১৮ জুলাই রাতে রেনুর সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। আমরা ওই দিন সাভারে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলাম। বিয়েতে রেনুরও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আম্মা অসুস্থ থাকায় সে যেতে পারেনি। সেদিন যদি রেনু আমাদের সঙ্গে যেতো তাহলে এমন হয়তো হতো না।’

তিনি বলেন, ‘১৯ জুলাই রাতে মা আর বড় বোনের সঙ্গে রেনুর কথা হয়। বাড্ডা প্রাইমারি স্কুলে দুই ছেলে-মেয়েকে ভর্তি করার বিষয়ে কথা বলতে যাবে বলে জানায়। আমাকেও বলে, আপা স্কুলটা আমার ভালোই লাগছে। আর খরচও কম হবে। ওদের দুইজনকে স্কুলে ভর্তি করে দিব। সকালে ও হাঁটাহাঁটি করতো। ঘটনার দিন সকালে হাঁটতে যাওয়ার আগে বড় আপাকে বলে, আপা আমি সকালে রুটি খাবো না। ছোলা সিদ্ধ করে রেখেছি। বাইরে থেকে এসে রান্না করে খাবো। কিন্তু সেই ছোলা তার আর খাওয়া হলো না। সাভার থেকে এসে দেখি ছোলাগুলো টেবিলের ওপরই রয়েছে।’

নাজমা জানান, বিবাহ বিচ্ছেদের পর মায়ের সঙ্গেই ছিল রেনু। অসুস্থ মায়ের দেখাশোনা করতো সে। মাও রেনুর জন‌্য কান্নাকাটি করে। রেনুর শোকে মা আরও অসুস্থ হয়ে বিচানায় পড়ে আছে।

এ হত‌্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার চান রেনুর স্বজনরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

এখনো মাকে খোঁজে তুবা

আপডেট টাইম : ১০:৪৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জুলাই ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাবা থেকেও নেই। মা তাসলিমা বেগম রেনুই ছিল সব। কিন্তু সেই মাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় গত বছরের এই দিনে। পাঁচ বছরের তুবা এখনো জানে তার মা বিদেশ গেছে। ফিরে আসবে কিছু দিনের মধ‌্যে। ঘুরে ফিরে সে মাকে খোঁজে।

২০১৯ সালের ২০ জুলাই সন্তানদের ভর্তি করার খোঁজখবর নিতে গেলে বাড্ডায় প্রাইমারি স্কুল গেটে ছেলেধরা সন্দেহে রেনুকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৫০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু।

রেনুর তাহসিন আল মাহির নামে ১২ বছরের একটি ছেলেও আছে। তুবা আর মাহির এখন তাদের খালা নাজমুন নাহার নাজমার কাছেই থাকে। মাহির বনানী বিদ্যানিকেতনে পঞ্চম শ্রেণিতে ও তুবা শিশুমেলা স্কুলে প্লেতে পড়ছে।

তুবার খালা নাজমা বলেন, ‘তুবা সব সময় তার মার কথা বলে। ঠিক মতো ঘুমায় না। মন খারাপ করে থাকে। এমন হয় যে রাত ২টা বা ৩টার সময় ঘুম থেকে উঠে মাকে খোঁজে। ওর এই কষ্ট আর সহ‌্য হয় না।’

মাহির বিষয়ে নাজমা বলেন, ‘ও বোঝে মা আর নেই। মাঝে মাঝে সেও মায়ের জন্য কান্নাকাটি করে। মাহি তো ঘটনার সব কিছু টিভিতে দেখছে। সে অনেকটা রাগি। ওকে নিয়েই চিন্তাই আছি।’

বোনের স্মৃতি মনে করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাজমা বলেন, ‘১৮ জুলাই রাতে রেনুর সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। আমরা ওই দিন সাভারে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলাম। বিয়েতে রেনুরও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আম্মা অসুস্থ থাকায় সে যেতে পারেনি। সেদিন যদি রেনু আমাদের সঙ্গে যেতো তাহলে এমন হয়তো হতো না।’

তিনি বলেন, ‘১৯ জুলাই রাতে মা আর বড় বোনের সঙ্গে রেনুর কথা হয়। বাড্ডা প্রাইমারি স্কুলে দুই ছেলে-মেয়েকে ভর্তি করার বিষয়ে কথা বলতে যাবে বলে জানায়। আমাকেও বলে, আপা স্কুলটা আমার ভালোই লাগছে। আর খরচও কম হবে। ওদের দুইজনকে স্কুলে ভর্তি করে দিব। সকালে ও হাঁটাহাঁটি করতো। ঘটনার দিন সকালে হাঁটতে যাওয়ার আগে বড় আপাকে বলে, আপা আমি সকালে রুটি খাবো না। ছোলা সিদ্ধ করে রেখেছি। বাইরে থেকে এসে রান্না করে খাবো। কিন্তু সেই ছোলা তার আর খাওয়া হলো না। সাভার থেকে এসে দেখি ছোলাগুলো টেবিলের ওপরই রয়েছে।’

নাজমা জানান, বিবাহ বিচ্ছেদের পর মায়ের সঙ্গেই ছিল রেনু। অসুস্থ মায়ের দেখাশোনা করতো সে। মাও রেনুর জন‌্য কান্নাকাটি করে। রেনুর শোকে মা আরও অসুস্থ হয়ে বিচানায় পড়ে আছে।

এ হত‌্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার চান রেনুর স্বজনরা।