ঢাকা ০৯:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অপরাধের স্বর্গরাজ্য মশিয়ালীতে গড়ে তুলেছেন তিন ভাই জাকারিয়া-জাফরিন- মিল্টন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:২০:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুলাই ২০২০
  • ২২৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খুলনার খানজাহান আলী থানাধীন মশিয়ালী গ্রামে ঘটে ভয়ঙ্কর সব অপরাধ। পুলিশ ও প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধের স্বর্গরাজ্য হিসেবে মশিয়ালীকে গড়ে তুলেছেন তিন ভাই জাকারিয়া-জাফরিন ও মিল্টন। তাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি বাহিনী। এ বাহিনীর সদস্যরা খুন-সন্ত্রাস, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা, ধর্ষণ, সুদের ব্যবসা কিংবা অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের মতো কাজ করে বেড়ায়। তাদের বিরুদ্ধে পাহাড়সমান এসব অভিযোগ থাকলেও এতদিন কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। কিন্তু জাকারিয়া বাহিনীর সন্ত্রাসীরা গুলি করে তিনজনকে হত্যার পর থেকে মুখ খুলতে শুরু করেছে ওই গ্রামের বাসিন্দারা।

নিহতদের স্বজন ও এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাকারিয়া-জাফরিন-মিল্টন তিন ভাইয়ের বাহিনীর অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। থানা পুলিশ, আটরা গিলাতলার চেয়ারম্যান এবং এলাকার মেম্বারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে সুদের কারবার, মাদক ও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, হত্যা, অন্যের সম্পদ লুট, নারীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন, অন্যের গোয়ালের গরু-ছাগল চুরিসহ এমন কোনো অপকর্ম নাই যা তারা করেনি। প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পক্ষে থাকায় তাদের অত্যাচার আর নির্যাতনে গ্রামের কেউ মুখ খুলতে বা প্রতিবাদ করতে সাহস পেত না। যারাই প্রতিবাদ করেছে তাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে অথবা নির্যাতন করা হয়েছে। আবার অনেককে দিতে হয়েছে প্রাণও। বীরদর্পে তারা তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গুলি করে তিনজনকে হত্যা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সর্বশেষ নজির। একই ঘটনায় আহতদের মধ্যে আফসার এবং খলিলের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

মশিয়ালী গ্রামের বাসিন্দারা চাইছেন, জাকারিয়া-জাফরিন এবং মিল্টনের যেন দৃষ্টান্তমূল শাস্তি হয়। তারা শান্তিতে বসবাস করতে চান।

নিহত গোলাম রসুলের স্ত্রী নাসিমা বেগম। তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ভয়মাখা চেহারা নিয়ে জাকারিয়া বাহিনীর নানা কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরেন প্রতিবেদকের কাছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার এক বছরের মেয়ে তানজিলার জন্য ওষুধ আর স্যালাইন আনতে গিয়ে সে আর ফিরে আসেনি। আমার স্বামীকে তাদের অবৈধ কাজে ব্যবহার করতে না পেরে বহুবার নির্যাতন করেছে।

‘থানা পুলিশ, গ্রামের চেয়ারম্যান, মেম্বার তাদের পক্ষে থাকায় নির্যাতন সহ্য করে কোনো প্রতিবাদ করিনি। আমার তিনটি শিশু বাচ্চা তাদের বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেছে তাতে আমার দুঃখ নাই। আমি শুধু হত্যাকারী জাকারিয়া, জাফরিন এবং মিল্টনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

নিহত নজরুলের স্বজন মুজিবরের স্ত্রী রোজিনা বেগমের সব ক্ষোভ থানা পুলিশ এবং জনপ্রতিনিধিদের প্রতি। তিনি বলেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বলেছিলাম, আমার স্বামী মিলে কাজ করে। আমরা অস্ত্র কী জিনিস তা চিনি না স্যার। আমার স্বামীকে ছেড়ে দেন। যাদের কথামতো আমার স্বামীকে ধরেছেন তারা অস্ত্রের ব্যবসা করে আপনি জানেন। তারা ষড়যন্ত্র করে অস্ত্র দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে। ওসি আমার কথা না শুনে মনিরুল চেয়ারম্যান এবং জাকারিয়ার কথা শুনে আমাকে এবং আমার স্বামীকে থানায় নিয়ে গেল।

‘সেখানে আমাদের ওপর নির্যাতন যখন করা হচ্ছে তখন খবর আসছে গ্রামে জাকারিয়া এবং তার ভাইয়েরা গুলি করে দুই জনকে মেরে ফেলেছে। তবুও আমাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করেনি পুলিশ’, বলছিলেন রোজিনা।

গুলিতে নিহত আটরা মেট্রো টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সাইফুল ইসলামের স্বজন রেহেনা বেগম বলেন, সাইফুল ফুলতলায় তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার চোখে ও নাকে দুটি গুলি লাগে। পরে হাসপাতালে সে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।

জাকারিয়া বাহিনীর কুকর্মের কথা বলতে গিয়ে রেহেনা বলেন, তাদের অত্যাচারে গ্রামের মেয়েরা বাইরে বের হতে পারতো না।  অনেক নারী তাদের হাতে নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে কিন্তু সম্মানের ভয়ে বলতে পারেনি। অনেকে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। আবার বাইরে থেকে নারীদের গ্রামে এনে অবৈধ কাজও করাতো। জাকারিয়াগং গ্রামের বিভিন্ন মানুষের গোয়াল থেকে গরু-ছাগল চুরি করে নিয়ে যেত। প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধি তার পক্ষে থাকায় গ্রামবাসী নিরবে শুধুই অত্যাচার সহ্য করে গেছে।

জানা যায়, খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক শেখ জাকারিয়া তার ভাই মহানগর ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি শেখ জাফরিন হাসান খানজাহান আলী থানার একটি হত্যা মামলার আসামি। ২০১৭ সালে মাত্তমডাঙ্গা (ডাক্তারবাড়ি) এলাকার শফিকুল ইসলাম সাইফুলকে (২৫) জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে মতপার্থক্যের জেরে ঘর থেকে বের করে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে (যার মামলা নম্বর: ২ তাং ৩/৮/১৭)। ২০১৮ সালে ১১ জানুয়ারি দেশীয় অস্ত্র, রামদা, চাপাতিসহ মো. ইমরান আলীকে আটক করে পুলিশ। এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়। মামলা নম্বর ১৫, তাং ১১/১/১৮। মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ইমরান অস্ত্রগুলো জাকারিয়া রাখতে দিয়েছে বলে স্বীকার করে। এছাড়া জাকারিয়ার ভাই মিল্টনও অস্ত্র মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

সেদিন যা ঘটেছিল

বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মুজিবর নামে এক ব্যক্তিকে অস্ত্রসহ খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া এবং তার ভাই জাফরিন ও মিল্টন পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় গ্রামের বেশ কয়েকজন জাকারিয়ার বাড়িতে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে যায়। এসময় জাকারিয়ার সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে জাকারিয়া, জাফরিন কবির ও মিল্টন তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে মৃত্যু হয় আটরা গিলাতলার মশিয়ালী এলাকার মো. নজরুল ইসলাম (৬০) ও একই এলাকার গোলাম রসুলের (৩০)। এসময় গুলিবিদ্ধ হন মো. সাইফুল ইসলাম, আফসার শেখ, শামীম, রবি, খলিলুর রহমান ও মশিয়ার রহমানসহ আরও কয়েকজন। এর মধ্যে আহত সাইফুল ইসলাম শুক্রবার রাতে মারা যান। অপরদিকে, বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় জাকারিয়া বাহিনীর সদস্য জিহাদ শেখের। এ ঘটনায় মোট ৪ জনের মৃত্যু হয়।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কানাই লাল সরকার জানান, ঘটনার মূল হোতা জাকারিয়ার অন্যতম সহযোগী ও ভাই জাফরিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার জাফরিনের ভাই গুলিবর্ষণকারী জাকারিয়ার শ্বশুর কোরবান আলী, শ্যালক আরমান ও চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তদের ধরতে অব্যাহত রয়েছে পুলিশের অভিযান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

অপরাধের স্বর্গরাজ্য মশিয়ালীতে গড়ে তুলেছেন তিন ভাই জাকারিয়া-জাফরিন- মিল্টন

আপডেট টাইম : ০৯:২০:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুলাই ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খুলনার খানজাহান আলী থানাধীন মশিয়ালী গ্রামে ঘটে ভয়ঙ্কর সব অপরাধ। পুলিশ ও প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধের স্বর্গরাজ্য হিসেবে মশিয়ালীকে গড়ে তুলেছেন তিন ভাই জাকারিয়া-জাফরিন ও মিল্টন। তাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি বাহিনী। এ বাহিনীর সদস্যরা খুন-সন্ত্রাস, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা, ধর্ষণ, সুদের ব্যবসা কিংবা অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের মতো কাজ করে বেড়ায়। তাদের বিরুদ্ধে পাহাড়সমান এসব অভিযোগ থাকলেও এতদিন কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। কিন্তু জাকারিয়া বাহিনীর সন্ত্রাসীরা গুলি করে তিনজনকে হত্যার পর থেকে মুখ খুলতে শুরু করেছে ওই গ্রামের বাসিন্দারা।

নিহতদের স্বজন ও এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাকারিয়া-জাফরিন-মিল্টন তিন ভাইয়ের বাহিনীর অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। থানা পুলিশ, আটরা গিলাতলার চেয়ারম্যান এবং এলাকার মেম্বারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে সুদের কারবার, মাদক ও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, হত্যা, অন্যের সম্পদ লুট, নারীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন, অন্যের গোয়ালের গরু-ছাগল চুরিসহ এমন কোনো অপকর্ম নাই যা তারা করেনি। প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পক্ষে থাকায় তাদের অত্যাচার আর নির্যাতনে গ্রামের কেউ মুখ খুলতে বা প্রতিবাদ করতে সাহস পেত না। যারাই প্রতিবাদ করেছে তাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে অথবা নির্যাতন করা হয়েছে। আবার অনেককে দিতে হয়েছে প্রাণও। বীরদর্পে তারা তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গুলি করে তিনজনকে হত্যা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সর্বশেষ নজির। একই ঘটনায় আহতদের মধ্যে আফসার এবং খলিলের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

মশিয়ালী গ্রামের বাসিন্দারা চাইছেন, জাকারিয়া-জাফরিন এবং মিল্টনের যেন দৃষ্টান্তমূল শাস্তি হয়। তারা শান্তিতে বসবাস করতে চান।

নিহত গোলাম রসুলের স্ত্রী নাসিমা বেগম। তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ভয়মাখা চেহারা নিয়ে জাকারিয়া বাহিনীর নানা কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরেন প্রতিবেদকের কাছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার এক বছরের মেয়ে তানজিলার জন্য ওষুধ আর স্যালাইন আনতে গিয়ে সে আর ফিরে আসেনি। আমার স্বামীকে তাদের অবৈধ কাজে ব্যবহার করতে না পেরে বহুবার নির্যাতন করেছে।

‘থানা পুলিশ, গ্রামের চেয়ারম্যান, মেম্বার তাদের পক্ষে থাকায় নির্যাতন সহ্য করে কোনো প্রতিবাদ করিনি। আমার তিনটি শিশু বাচ্চা তাদের বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেছে তাতে আমার দুঃখ নাই। আমি শুধু হত্যাকারী জাকারিয়া, জাফরিন এবং মিল্টনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

নিহত নজরুলের স্বজন মুজিবরের স্ত্রী রোজিনা বেগমের সব ক্ষোভ থানা পুলিশ এবং জনপ্রতিনিধিদের প্রতি। তিনি বলেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বলেছিলাম, আমার স্বামী মিলে কাজ করে। আমরা অস্ত্র কী জিনিস তা চিনি না স্যার। আমার স্বামীকে ছেড়ে দেন। যাদের কথামতো আমার স্বামীকে ধরেছেন তারা অস্ত্রের ব্যবসা করে আপনি জানেন। তারা ষড়যন্ত্র করে অস্ত্র দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে। ওসি আমার কথা না শুনে মনিরুল চেয়ারম্যান এবং জাকারিয়ার কথা শুনে আমাকে এবং আমার স্বামীকে থানায় নিয়ে গেল।

‘সেখানে আমাদের ওপর নির্যাতন যখন করা হচ্ছে তখন খবর আসছে গ্রামে জাকারিয়া এবং তার ভাইয়েরা গুলি করে দুই জনকে মেরে ফেলেছে। তবুও আমাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করেনি পুলিশ’, বলছিলেন রোজিনা।

গুলিতে নিহত আটরা মেট্রো টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সাইফুল ইসলামের স্বজন রেহেনা বেগম বলেন, সাইফুল ফুলতলায় তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার চোখে ও নাকে দুটি গুলি লাগে। পরে হাসপাতালে সে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।

জাকারিয়া বাহিনীর কুকর্মের কথা বলতে গিয়ে রেহেনা বলেন, তাদের অত্যাচারে গ্রামের মেয়েরা বাইরে বের হতে পারতো না।  অনেক নারী তাদের হাতে নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে কিন্তু সম্মানের ভয়ে বলতে পারেনি। অনেকে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। আবার বাইরে থেকে নারীদের গ্রামে এনে অবৈধ কাজও করাতো। জাকারিয়াগং গ্রামের বিভিন্ন মানুষের গোয়াল থেকে গরু-ছাগল চুরি করে নিয়ে যেত। প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধি তার পক্ষে থাকায় গ্রামবাসী নিরবে শুধুই অত্যাচার সহ্য করে গেছে।

জানা যায়, খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক শেখ জাকারিয়া তার ভাই মহানগর ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি শেখ জাফরিন হাসান খানজাহান আলী থানার একটি হত্যা মামলার আসামি। ২০১৭ সালে মাত্তমডাঙ্গা (ডাক্তারবাড়ি) এলাকার শফিকুল ইসলাম সাইফুলকে (২৫) জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে মতপার্থক্যের জেরে ঘর থেকে বের করে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে (যার মামলা নম্বর: ২ তাং ৩/৮/১৭)। ২০১৮ সালে ১১ জানুয়ারি দেশীয় অস্ত্র, রামদা, চাপাতিসহ মো. ইমরান আলীকে আটক করে পুলিশ। এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়। মামলা নম্বর ১৫, তাং ১১/১/১৮। মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ইমরান অস্ত্রগুলো জাকারিয়া রাখতে দিয়েছে বলে স্বীকার করে। এছাড়া জাকারিয়ার ভাই মিল্টনও অস্ত্র মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

সেদিন যা ঘটেছিল

বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মুজিবর নামে এক ব্যক্তিকে অস্ত্রসহ খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া এবং তার ভাই জাফরিন ও মিল্টন পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় গ্রামের বেশ কয়েকজন জাকারিয়ার বাড়িতে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে যায়। এসময় জাকারিয়ার সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে জাকারিয়া, জাফরিন কবির ও মিল্টন তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে মৃত্যু হয় আটরা গিলাতলার মশিয়ালী এলাকার মো. নজরুল ইসলাম (৬০) ও একই এলাকার গোলাম রসুলের (৩০)। এসময় গুলিবিদ্ধ হন মো. সাইফুল ইসলাম, আফসার শেখ, শামীম, রবি, খলিলুর রহমান ও মশিয়ার রহমানসহ আরও কয়েকজন। এর মধ্যে আহত সাইফুল ইসলাম শুক্রবার রাতে মারা যান। অপরদিকে, বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় জাকারিয়া বাহিনীর সদস্য জিহাদ শেখের। এ ঘটনায় মোট ৪ জনের মৃত্যু হয়।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কানাই লাল সরকার জানান, ঘটনার মূল হোতা জাকারিয়ার অন্যতম সহযোগী ও ভাই জাফরিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার জাফরিনের ভাই গুলিবর্ষণকারী জাকারিয়ার শ্বশুর কোরবান আলী, শ্যালক আরমান ও চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তদের ধরতে অব্যাহত রয়েছে পুলিশের অভিযান।