ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে যা দরকার এর সবই আছে ইসলামে। ইসলামী সমাজব্যবস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে মানুষের কল্যাণ সাধন করা। সামাজিক জীবনে একজন মানুষের অসংখ্য দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। একজন মুসলমানের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হলো নিজেকে গঠন করা। নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে না তুললে অন্যের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করা যায় না। ইসলামী সমাজে সন্তান-সন্তুতিকে উপযুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা পিতামাতার প্রধান দায়িত্ব। আর সন্তানের দায়িত্ব হলো মা-বাবার প্রতি সদাচারণ করা। তাদের খেদমত করা। কোরআনে সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে, ‘পিতামাতার প্রতি উত্তম আচরণ কর।’
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের কিছু অধিকার যেমন আছে, তেমনি আছে বেশ কিছু দায়িত্ব কর্তব্য। কোরআনে স্ত্রীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তারা তোমাদের পোশাক, তোমরাও তাদের পোশাক। দায়িত্ব-কর্তব্যের পরিধিতে আরেকটি বড় বিষয় হলো বড়দের সম্মান করা আর ছোটদের স্নেহ করা। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যারা বড়দের সম্মান করে না আর ছোটদের স্নেহ করে না তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। মুসলমানের রয়েছে তার আত্মীয়-স্বজনের হক। হাদিসে আছে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না। প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ, তাদের খোঁজখবর নেয়া, বিপদে পাশে দাঁড়ানোও ইসলামের দায়িত-কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেট পুরে খায় আর প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাত যাপন করে।’
একজন ঈমানদারের কর্তব্য হলো তার দেশকে ভালোবাসা। হাদিসে আছে, দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। দুস্থ মানুষের সেবা করা, নিরন্নকে অন্ন দেয়া, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দেয়া ঈমানদারের কর্তব্য। ইসলামি সমাজব্যবস্থায় একজন মুসলমানের অন্যতম দায়িত্ব হলো সৃষ্টির সেবা করা। এর মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিজন, সুতরাং সৃষ্টিকুলের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই বেশি প্রিয় যে তার সৃষ্টির প্রতি বেশি অনুগ্রহশীল।’ সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করাও ইসলামের নির্দেশনার অন্তর্ভুক্ত। হাসিমুখে কারো সঙ্গে কথাও বলাও ইসলামে সওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য। মুসলমান হিসেবে একজন মানুষের ওপর যে দায়িত্ব কর্তব্য বর্তায় তা যথাযথভাবে পালন করলে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন সুন্দর হয়। এজন্য প্রতিটি নাগরিকের উচিত তার ওপর অর্পিত দায়িত্বগুলো যথাভাবে পালন করা।