হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমার লেখা ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ বইটি নিয়ে ফিনল্যান্ডে গিয়েছিলাম। বইটি উপহার স্বরূপ দিয়েছি ড. গোলাম সারোয়ারকে। সারোয়ার ভাই হেলসিংকি আলতো প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। তিনি খুবই মজার মানুষ, মন ভরা হাসি তারপরও তার চিন্তা কিভাবে আমি এত স্বল্প সময়ে বইটি লিখলাম। শুধু কি তাই? শুনে অবাক হয়েছেন যখন বললাম আরো দুইটি বই তাড়াতাড়ি প্রকাশ হতে যাচ্ছে।
শুধু সারোয়ার ভাই নয় এমন প্রশ্ন অনেকেই করেছেন। কি রহস্য বা মিরাকেল রয়েছে এর পেছনে? আমার জীবনের ঘটে যাওয়া দেশ বিদেশের সমস্ত ঘটনা আমি একদিন লিখব এ ধারনা আমার ছিল সব সময়ই। কখন, কোথায়, কিভাবে শুরু হবে শুধু সেটাই জানা ছিল না। দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার সমন্বয়ের কারনে দ্রুত গতিতে সব কিছু হয়েছে। ভাষাগত দক্ষতা এবং বানানের ভুল সংশোধন করতে, বাংলা অভিধান থেকে শুরু করে লন্ডন প্রবাসী বন্ধু নাজমুল যথেষ্ট সাহায্য করে আসছে।
সে অনুপ্রাণীত করছে কিভাবে লেখার মান আরও উন্নত করা যায় এবং পাঠকের সঙ্গে হৃদ্যতা তৈরি করা সম্ভব ইত্যাদি। আমার সামাজিক কাজগুলোর প্রতি যারা মানবতা এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে তারা অবশ্যই আমার শুভাকাঙ্খী। ভালো কাজের মধ্যদিয়ে এভাবেই একটি পরিবার, সমাজ এবং দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
ভালো কিছু দেখা, জানা এবং তা শেয়ার করা হচ্ছে আমার নেশা। বড় জাহাজে উঠেছি অনেকবার এবং তার বর্ণনাও করেছি, যেমন এর মধ্যে শপিং থেকে শুরু করে থাকা, খাওয়াসহ নানা ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। ফিনল্যান্ড থেকে ফেরার পথে গতকাল সন্ধ্যায় হঠাৎ দেখলাম জাহাজে ক্যাসিনো খেলা চলছে। বাংলদেশে এ নিয়ে নানা ঘটনা ঘটেছে অথচ এখানে ক্যাসিনো বিনোদনের একটি মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
এখানে ক্যাসিনো খেলা বলতে গেলে একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার তবে কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে যেমন বয়সসীমা (১৮ প্লাস) তার মধ্যে অন্যতম। আমি ক্যাসিনোর দিকে এগিয়ে গেলাম। জাহাজ কর্তৃপক্ষ রাশিয়ান একটি ছেলের মাস্টার কার্ড নিতে রাজি হচ্ছে না। ক্যাসিনো পরিচালনাকারী মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম ‘তুমি তার কার্ড নিতে রাজি না হবার কারণটি কি জানতে পারি?’ মেয়েটি উত্তরে বললো ‘রাশিয়ান কার্ড গ্রহনযোগ্য নয় ক্যাসিনো খেলার জন্য।’ ছেলেটি পরে পাশের ক্যাশ মেশিন থেকে টাকা তুলে দিব্বি খেলতে শুরু করল।
ঘটনাটি দেখার পর আমার মনের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কেন এমন একটি ঘটনাকে তুলে ধরছি প্রশ্ন আসতেই পারে। কেনই বা এ সব দেশে বয়স ১৮ প্লাসের গুরুত্ব বেশি? কারণ একজন ১৮ বছরের ছেলে-মেয়ে যথেষ্ট সচেতন তার জীবনে ভালো মন্দের দায়ভার নেয়ার জন্য।
গনমাধ্যমে দেখছি বাংলাদেশে সব সময় সরকারের নানা ধরনের কাজের ওপর সমালোচনা করা হয়। জনপ্রতিনিধিদের কর্মের সমালোচনা করা হয়। একজন মন্ত্রী যখন নানা ধরনের অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়ে তখন তার নিন্দা করা হয়।
এ ধরনের অপরাধে যে বা যারা দোষী সাব্যস্ত হয় তাদেরকে তৎক্ষণাৎ পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় ইত্যাদি। সত্যিকার অর্থে বিষয়টি কি তেমন হচ্ছে দেশে? যদি তাই হয় তাহলে কিভাবে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর অপরাধী তার জায়গায় থেকে অপরাধ করে যেতে পারে? তাহলে ধরে নিতে পারি আমরা জনগণই গনতন্ত্রের দেশে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অপকর্মের জন্য দায়ী অথবা আমরা ব্যর্থ আমাদের দায়িত্ব পালনে।
আমরা কি প্রশাসন থেকে বাধাগ্রস্থ, নাকি আইন বা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত অভাগা জনগণ? নাকি আমাদের ভোটের অধিকার নেই তাই প্রতিবাদ করার অধিকারও নেই? আমরা কি তাহলে স্বাধীন দেশে পরাধীন? আমার এসব প্রশ্নের উত্তর কেও দেবে না।
কারণ এসব প্রশ্নের জবাব আমাকেই খুঁজে বের করতে হবে। বেসিক্যালি গণতন্ত্রের দেশে একজন মন্ত্রী কিন্তু জনগণকেই রিপ্রজেন্ট করে সেখানে তার ভালোমন্দ বলে কথা নেই।
আমাদেরকে শিক্ষিত জাতি হতে হবে যাতে করে কেও আমাদের ব্যক্তিত্বকে ধুলিস্যাৎ করতে না পারে। আর কত দিন দেরি করতে হবে নাগরিক অধিকার পেতে?
যদি অধিকার না পাওয়া যায় তবে তা আদায় করতে হবে এবং তার জন্যই আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার তার জন্য রয়েছে বিচার। এখন সে বিচার যেন ন্যায় বিচার হয় সে দিকে সচেতন থাকতে হবে। জাতি সচেতনতা অর্জন করে জানার মাধ্যমে। আমার লেখা শুধু বিনোদন দেয়ার জন্য নয়, আমার লেখা জাগ্রত জনতার জন্য এক সতর্কবার্তা। প্লিজ পড়ুন, জানুন এবং তা প্রয়োগ করুন।