ঢাকা ১০:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

নৌকাবাসীর বিয়ে-বাসর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৩:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ৩৩০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাট এলাকার মেঘনা নদীতে মানতা (ভাসমান জেলে) সম্প্রদায়ের একটি বহর রয়েছে। এই বহরে শতাধিক মানতা পবিবার প্রায় ৪০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছে।

এই বহরের ১৫ বছর বয়সী কিশোরী মুন্নি আক্তারের সম্প্রতি একই সম্প্রদায়ের নূর নবীর (২২) সঙ্গে বিয়ে হয়েছে।

এই বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল ভিন্নরকম। মানতাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে বহরের সবাই অংশ নেয়। এ দিন মাছ ধরা বন্ধ রেখে তারা উৎসব করে।

বিয়ের আয়োজন ও অনুষ্ঠান সম্পর্কে মুন্নি আক্তার বলেন, বিয়েতে সাজসজ্জা, গান-বাদ্য বা পোলাও, কোরমা ছিল না। তাদের উৎসব হলো সবাই মিলে একসঙ্গে ভাত ও মাছ রান্না করে খাওয়া। তাদের উৎসবে ডাঙায় বসবাসকারীদের অংশগ্রহণ থাকে না বললেই চলে।

মুন্নি জানান, ইসলামি রীতিতে একজন কাজী তাদের বিয়ে পড়ান। রাতে একটি নৌকায় তাদের বাসর হয়। বাসরঘর সাজানো হয়নি।

মুন্নি আক্তার স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এক সময় সে পড়ালেখার পাশাপাশি বাবা-মায়ের সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতো। পরে আর্থিক সংকট ও সামাজিক নানা বাধার কারণে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই বিয়ে হয় তার।

মানতা মেয়েদের বয়স ১২ থেকে ১৫ বছর এবং ছেলেদের ১৭ থেকে ২২ বছরের মধ্যে বিয়ে হয়ে যায়। এটাই উত্তম বলে তারা মনে করেন। মানতা ছেলে-মেয়েদের বিয়ে নৌকায় হয়। বিয়েতে বহরের সবাই মিলে এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার মাধ্যমে আনন্দ করে তারা।

আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যেই বেশিরভাগ বিয়ে হয়। এদের বিয়েতে যৌতুক প্রথা নেই বললেই চলে। তবে অনেকে মেয়ের সুখের জন্য স্বেচ্ছায় জামাতাকে মাছ ধরার জাল অথবা নৌকা উপহার দেন। বিবাহবিচ্ছেদ মানতাদের মধ্যে একেবারেই কম। তবে বহুবিবাহ প্রথা চালু রয়েছে।

স্বামী নূর নবী তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘‘আমরা আমাদের মতো করে ভালো আছি।’’

তবে বিয়েতে কিছুটা সাজসজ্জা, ভালো খাবার এবং সাজানো-গোছানো একটা বাসরঘর প্রত্যেক মানতা দম্পতি প্রত্যাশা করেন বলে জানান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ক্যাটরিনার হাতে ২০ বার থাপ্পড় খেয়েছিলেন ইমরান খান

নৌকাবাসীর বিয়ে-বাসর

আপডেট টাইম : ১২:৪৩:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাট এলাকার মেঘনা নদীতে মানতা (ভাসমান জেলে) সম্প্রদায়ের একটি বহর রয়েছে। এই বহরে শতাধিক মানতা পবিবার প্রায় ৪০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছে।

এই বহরের ১৫ বছর বয়সী কিশোরী মুন্নি আক্তারের সম্প্রতি একই সম্প্রদায়ের নূর নবীর (২২) সঙ্গে বিয়ে হয়েছে।

এই বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল ভিন্নরকম। মানতাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে বহরের সবাই অংশ নেয়। এ দিন মাছ ধরা বন্ধ রেখে তারা উৎসব করে।

বিয়ের আয়োজন ও অনুষ্ঠান সম্পর্কে মুন্নি আক্তার বলেন, বিয়েতে সাজসজ্জা, গান-বাদ্য বা পোলাও, কোরমা ছিল না। তাদের উৎসব হলো সবাই মিলে একসঙ্গে ভাত ও মাছ রান্না করে খাওয়া। তাদের উৎসবে ডাঙায় বসবাসকারীদের অংশগ্রহণ থাকে না বললেই চলে।

মুন্নি জানান, ইসলামি রীতিতে একজন কাজী তাদের বিয়ে পড়ান। রাতে একটি নৌকায় তাদের বাসর হয়। বাসরঘর সাজানো হয়নি।

মুন্নি আক্তার স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এক সময় সে পড়ালেখার পাশাপাশি বাবা-মায়ের সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতো। পরে আর্থিক সংকট ও সামাজিক নানা বাধার কারণে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই বিয়ে হয় তার।

মানতা মেয়েদের বয়স ১২ থেকে ১৫ বছর এবং ছেলেদের ১৭ থেকে ২২ বছরের মধ্যে বিয়ে হয়ে যায়। এটাই উত্তম বলে তারা মনে করেন। মানতা ছেলে-মেয়েদের বিয়ে নৌকায় হয়। বিয়েতে বহরের সবাই মিলে এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার মাধ্যমে আনন্দ করে তারা।

আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যেই বেশিরভাগ বিয়ে হয়। এদের বিয়েতে যৌতুক প্রথা নেই বললেই চলে। তবে অনেকে মেয়ের সুখের জন্য স্বেচ্ছায় জামাতাকে মাছ ধরার জাল অথবা নৌকা উপহার দেন। বিবাহবিচ্ছেদ মানতাদের মধ্যে একেবারেই কম। তবে বহুবিবাহ প্রথা চালু রয়েছে।

স্বামী নূর নবী তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘‘আমরা আমাদের মতো করে ভালো আছি।’’

তবে বিয়েতে কিছুটা সাজসজ্জা, ভালো খাবার এবং সাজানো-গোছানো একটা বাসরঘর প্রত্যেক মানতা দম্পতি প্রত্যাশা করেন বলে জানান তিনি।