হাওর বার্তা ডেস্কঃ জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রীয়াজের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দলটির স্থানীয় এক নেতা।
এ নিয়ে জার্মান বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় একটি আলোচনার আয়োজন করেছিল জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ অনুষ্ঠানে তার সদ্য প্রকাশিত ‘ভোটিং ইন হাইব্রিড রিজিম, এক্সপ্লেইনিং দ্য ২০১৮ বাংলাদেশি ইলেকশন’ বই এর ওপর বক্তব্য রাখেন। এটি সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. রাহুল মুখার্জী।
আলী রীয়াজ তার বক্তৃতায় বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের পর এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে রাষ্ট্র ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মধ্যে আর কোনো পার্থক্য নেই।’
বাংলাদেশের সবশেষ জাতীয় নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের জোট সঙ্গীদের অনেকেই এখন তা স্বীকার করছে।’
ডয়চে ভেলের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচনা অনুষ্ঠানের শেষ দিকে সেখানে উপস্থিত হন বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ সমর্থক। আলী রীয়াজের বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে তাদের আপত্তিতে এক পর্যায়ে সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘‘ইংরেজিতে লেখা মাত্র ১০৭ পৃষ্ঠার একটা বই নিয়ে একটা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনার ও আমন্ত্রিত লেখকের প্রশ্ন-উত্তর অনুষ্ঠানে দল বেঁধে এসে ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে, উদ্যোক্তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে বলছেন যে ‘দেশে গণতন্ত্র আছে, ভিন্নমত প্রকাশ করার স্বাধীনতা আছে’। অনেক লেখালেখি করেও এতো সহজে বোঝানো যেত না কী আছে আর কী নেই।”
হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নামিয়া। তিনি বলেন, কোনো ধরনের নিয়ম কানুন না মেনে বহিরাগত আওয়ামী লীগ সমর্থকরা অনুষ্ঠানে প্রবেশ করে এবং হট্টগোল করতে থাকে। তাদের যদি কোনো প্রশ্ন থাকতো তাহলে অনুষ্ঠানে প্রথম থেকে উপস্থিত থেকে নিয়ম মেনে আলোচনায় অংশ নিতে পারত। কিন্তু তাদের আচরণ ছিল দুঃখজনক ও আতঙ্কজনক।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (পলিটিক্যাল) এম মুর্শিদ হক খান বলেন, ‘অধ্যাপক আলী রীয়াজ আসার খবরে এই আলোচনা শুনতে ফ্রাঙ্কফুর্টসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা কর্মীরা এসেছিলেন। তিনি যে বই লিখেছেন, যে কথাগুলো বলেছেন – সেটা হয়তো আওয়ামী লীগের পছন্দ হয় নাই।’
জার্মানিতে বসবাসরত আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুর রহমান খসরুও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তার দাবি, সেখানে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি। তিনি বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বানোয়াট অভিযোগ।’
তবে অনুষ্ঠানটির আয়োজক ড. ডিটার রাইনহার্ড বলেছেন, ‘আয়োজনটি ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু তারা সুনির্দিষ্ট নিয়ম মানেননি, যা ছিল আমাদের জন্য বিব্রতকর।’ এই আচরণের জন্য তারা ক্ষমা চেয়েছেন বলেও জানান তিনি।