ঢাকা ০৮:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলা ভাষার বিশ্ব জয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৮:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ২১৪ বার

?????? ??????? ??????? ???? ?????

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সম্প্রতি ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে বাংলা ভাষাকে দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, একদিন তারা যে ভাষাভাষী জনপদের শাসনকর্তা ছিলেন, আজ সেই জনপদের ভাষাকেই তারা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।

অথচ তারাই একদিন এই ভাষাভাষী মানুষের ওপর তাদের ভাষা চাপিয়ে দিয়ে স্বীয় স্বার্থ কায়েম করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আজ তারা বাঙালি ও বাংলা ভাষার গুরুত্ব অনুধাবনে সক্ষম হয়েছেন। বাংলা ভাষার এমন মহান অর্জন শুধুই কি লন্ডনে হয়েছে? না, এর আগে ২০০২ সালে পশ্চিম আফ্রিকার ক্ষুদ্র দেশ সিয়েরা লিওন আমাদের মাতৃভাষাকে সম্মানসূচক তাদের সরকারি ভাষার মর্যাদা দিয়েছে।

১৯৫০ সালে গৃহীত ভারতীয় সংবিধানে বাংলা ভাষা অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা লাভ করেছে। এছাড়াও বাংলা ভাষার আরও একটি আন্তর্জাতিক অর্জন রয়েছে, তা হল ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ ফ্রেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা। এর মাধ্যমে মাতৃভাষার জন্য আমাদের রক্তদান এবং বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামের ইতিহাস ছড়িয়ে পড়েছে। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের বাঙালিদের জন্য এ এক মহান অর্জন।

বাংলাদেশের বাঙালিদের বললাম এই কারণে যে, কিছুদিন আগে ভারতের বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে ভ্রমণে গিয়ে সেখানে বাংলা ভাষার করুণ দশা প্রত্যক্ষ করেছি। পশ্চিমবঙ্গে এখন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে হিন্দিকরণ শুরু হয়েছে। ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দি বর্ণ ও ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কলকাতা শহরের। সেখানে সর্বত্র ইংরেজি, হিন্দি আর উর্দু ভাষার জয়জয়কার। এ নগরীর অধিবাসীদের হিন্দি ও ইংরেজি বলাটা আজ যেন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পরিতাপের বিষয় হল, আমাদের হাজারও মহাজ্ঞানী পণ্ডিত থাকা সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষা স্তরে আজও বাংলা ভাষায় লেখা ভালো একটি বই পাওয়া যায় না। অথচ এই বাংলা ভাষার রয়েছে এক সমৃদ্ধ সাহিত্য ভাণ্ডার, হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস, রয়েছে এক বিশাল ভাষাভাষী জনপদ। দুই বাংলার মানুষ চাইলে লন্ডন কেন, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে অনায়াসে প্রতিষ্ঠা করতে পারে বাংলা ভাষার মর্যাদা।

পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বাংলাভাষী। প্রচলিত ভাষার মধ্যে মাতৃভাষার বিবেচনায় বিশ্বে বাংলার স্থান চতুর্থ। আর ভাষিক বিচারে বাংলার স্থান সপ্তম। পৃথিবীতে প্রচলিত ৭ হাজারের অধিক ভাষার মধ্যে মাত্র ২০০ ভাষায় দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়, যার মধ্যে বাংলা ভাষা অন্যতম মর্যাদার আসনে আসীন। তারপরও এখনও আমরা বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের সপ্তম দাফতরিক ভাষার মর্যাদা এনে দিতে পারিনি।

বাংলা ভাষার বিশুদ্ধ ও সঠিক চর্চা বাড়ানোসহ এ ভাষাকে বিশ্বমানের মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশ সরকারের এখনই কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যুগোপযোগী মানের বাংলা ভাষায় শিক্ষাদানের নীতি গ্রহণ এবং দেশের শিক্ষাবিদদের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার পাঠ্যবইগুলো বাংলায় অনুবাদ করা দরকার। তাহলে শিক্ষার্থীরা যে কোনো বিষয় খুব সহজে আয়ত্ত করতে পারবে। এ জন্য প্রয়োজনে জাতীয় অনুবাদ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিচারব্যবস্থায় বাংলা ভাষা প্রচলন করতে হবে। ব্যাংক, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় বাংলা ভাষা প্রচলন করতে হবে। সর্বোপরি প্রত্যেক বাংলা মায়ের সন্তানকে হৃদয় হতে বাংলা ভাষাকে ধারণ করতে হবে, চর্চা করতে হবে এবং বিশ্ববাসীর কাছে এ ভাষার সৌন্দর্য তুলে ধরতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বাংলা ভাষার বিশ্ব জয়

আপডেট টাইম : ১২:৫৮:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সম্প্রতি ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে বাংলা ভাষাকে দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, একদিন তারা যে ভাষাভাষী জনপদের শাসনকর্তা ছিলেন, আজ সেই জনপদের ভাষাকেই তারা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।

অথচ তারাই একদিন এই ভাষাভাষী মানুষের ওপর তাদের ভাষা চাপিয়ে দিয়ে স্বীয় স্বার্থ কায়েম করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আজ তারা বাঙালি ও বাংলা ভাষার গুরুত্ব অনুধাবনে সক্ষম হয়েছেন। বাংলা ভাষার এমন মহান অর্জন শুধুই কি লন্ডনে হয়েছে? না, এর আগে ২০০২ সালে পশ্চিম আফ্রিকার ক্ষুদ্র দেশ সিয়েরা লিওন আমাদের মাতৃভাষাকে সম্মানসূচক তাদের সরকারি ভাষার মর্যাদা দিয়েছে।

১৯৫০ সালে গৃহীত ভারতীয় সংবিধানে বাংলা ভাষা অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা লাভ করেছে। এছাড়াও বাংলা ভাষার আরও একটি আন্তর্জাতিক অর্জন রয়েছে, তা হল ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ ফ্রেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা। এর মাধ্যমে মাতৃভাষার জন্য আমাদের রক্তদান এবং বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামের ইতিহাস ছড়িয়ে পড়েছে। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের বাঙালিদের জন্য এ এক মহান অর্জন।

বাংলাদেশের বাঙালিদের বললাম এই কারণে যে, কিছুদিন আগে ভারতের বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে ভ্রমণে গিয়ে সেখানে বাংলা ভাষার করুণ দশা প্রত্যক্ষ করেছি। পশ্চিমবঙ্গে এখন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে হিন্দিকরণ শুরু হয়েছে। ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দি বর্ণ ও ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কলকাতা শহরের। সেখানে সর্বত্র ইংরেজি, হিন্দি আর উর্দু ভাষার জয়জয়কার। এ নগরীর অধিবাসীদের হিন্দি ও ইংরেজি বলাটা আজ যেন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পরিতাপের বিষয় হল, আমাদের হাজারও মহাজ্ঞানী পণ্ডিত থাকা সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষা স্তরে আজও বাংলা ভাষায় লেখা ভালো একটি বই পাওয়া যায় না। অথচ এই বাংলা ভাষার রয়েছে এক সমৃদ্ধ সাহিত্য ভাণ্ডার, হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস, রয়েছে এক বিশাল ভাষাভাষী জনপদ। দুই বাংলার মানুষ চাইলে লন্ডন কেন, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে অনায়াসে প্রতিষ্ঠা করতে পারে বাংলা ভাষার মর্যাদা।

পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বাংলাভাষী। প্রচলিত ভাষার মধ্যে মাতৃভাষার বিবেচনায় বিশ্বে বাংলার স্থান চতুর্থ। আর ভাষিক বিচারে বাংলার স্থান সপ্তম। পৃথিবীতে প্রচলিত ৭ হাজারের অধিক ভাষার মধ্যে মাত্র ২০০ ভাষায় দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়, যার মধ্যে বাংলা ভাষা অন্যতম মর্যাদার আসনে আসীন। তারপরও এখনও আমরা বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের সপ্তম দাফতরিক ভাষার মর্যাদা এনে দিতে পারিনি।

বাংলা ভাষার বিশুদ্ধ ও সঠিক চর্চা বাড়ানোসহ এ ভাষাকে বিশ্বমানের মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশ সরকারের এখনই কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যুগোপযোগী মানের বাংলা ভাষায় শিক্ষাদানের নীতি গ্রহণ এবং দেশের শিক্ষাবিদদের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার পাঠ্যবইগুলো বাংলায় অনুবাদ করা দরকার। তাহলে শিক্ষার্থীরা যে কোনো বিষয় খুব সহজে আয়ত্ত করতে পারবে। এ জন্য প্রয়োজনে জাতীয় অনুবাদ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিচারব্যবস্থায় বাংলা ভাষা প্রচলন করতে হবে। ব্যাংক, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় বাংলা ভাষা প্রচলন করতে হবে। সর্বোপরি প্রত্যেক বাংলা মায়ের সন্তানকে হৃদয় হতে বাংলা ভাষাকে ধারণ করতে হবে, চর্চা করতে হবে এবং বিশ্ববাসীর কাছে এ ভাষার সৌন্দর্য তুলে ধরতে হবে।