ঢাকা ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে নারীর কারণেই ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী কারাগারে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৯:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০১৯
  • ২৫৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘স্বামী’ পরিচয়েই ইন্দ্রাণীর সঙ্গে একই বাড়িতে থাকতেন সিদ্ধার্থ। তাদের বিয়ে হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই। ধীরে ধীরে সিদ্ধার্থের প্রতি মোহ কাটতে থাকে ইন্দ্রাণীর। তখন আরও সামনের দিকে তাকাতে চাইছেন এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী।

একদিন বাড়ি থেকে কলকাতা চলে গেলেন ইন্দ্রাণী। ভুলে গেলেন প্রেমিক সিদ্ধার্থকে। বাবা মায়ের কাছে ফেলে এলেন দুই শিশুসন্তান শিনা ও মিখাইলকে। তাদের দত্তক নিলেন দাদু-দিদিমা, উপেন্দ্রনাথ ও দুর্গারানি। সিদ্ধার্থ-ইন্দ্রাণীর সন্তানরা বড় হলেন ‘বরা’ পরিচয়ে। কলকাতায় প্রথমে পেয়িং গেস্ট থাকতেন ইন্দ্রাণী। ক’দিনের মধ্যেই শহরের উঁচু মহলে সপ্রতিভ ইন্দ্রাণীর অনায়াস গতি। বিয়ে করলেন আলিপুরের ব্যবসায়ী সঞ্জীব খান্নাকে।

একদিন সঞ্জীবের সঙ্গে দাম্পত্যও পুরনো হয়ে গেল ইন্দ্রাণীর কাছে। একঘেয়ে মনে হল কলকাতাকে। যদিও নব্বইয়ের দশকের শেষে কলকাতাতেই নিজের চলার পথে লম্বা লাফ দিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। এরপর তাঁর গন্তব্য, মুম্বাই।

বিভিন্ন পার্টিতে চেনা মুখ, এইচ আর কনসালটেন্সি ফার্ম চালানো ইন্দ্রাণীর বেশি সময় লাগেনি বাণিজ্যনগরী জয় করতে। এক পার্টিতে ইন্দ্রাণীর সঙ্গে আলাপের তিনদিনের মধ্যে প্রেমে পাগল হন পিটার মুখোপাধ্যায়। তিন মাসের মধ্যে তৎকালীন মিডিয়া-সম্রাট পিটারের ঘরনি হয়ে গেলেন ইন্দ্রাণী। গুয়াহাটির সুন্দরপুরের মেয়ের রূপ-গুণ এবং হাতের রান্নায় মুগ্ধ পিটার। তিনি দত্তকও নিয়ে নেন ইন্দ্রাণী-সঞ্জীবের মেয়ে বিধিকে।

১৯৯৬ সালে কলকাতায় ইন্দ্রাণী শুরু করেছিলেন ‘আইএনএক্স সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড’। মাত্র দশজনকে নিয়ে পথ চলা শুরু এই রিক্রুটমেন্ট সংস্থার। সেই সংস্থাই মহীরুহ হয়ে দেখা দিল ২০০৬ সালে। স্বামী পিটারকে নিয়ে ইন্দ্রাণী তখন সংস্থার কর্ণধার। সেই আইএনএক্স-শামুকেই পা কাটল চিদম্বরমের। মূলত ইন্দ্রাণীর বয়ানেই চিদম্বরমকে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই।

ইউপিএ জমানায় আইএনএক্স মিডিয়া ৩০৫ কোটি টাকার বিদেশি লগ্নি আনে। যদিও ৪.৬২ কোটি টাকা লগ্নির অনুমতি ছিল। অভিযোগ, ঘুরপথে বাড়তি লগ্নি আনার উপায় বলে দিয়েছিলেন চিদম্বরম। তবে বিনিময়ে চিদম্বরম তাঁর ছেলে কার্তির সংস্থাকে সাহায্য করতে বলেন বলে অভিযোগ। কার্তিকে সাড়ে তিন কোটি টাকা ঘুষও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এই মর্মে চিদম্বরমের দাবি, তাঁর বা তাঁর পরিবারের নামে অভিযোগ নেই। তা সত্ত্বেও ধারণা ছড়ানো হয়েছে, তাঁরা অপরাধ করেছেন। বক্তব্য প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর।

মেয়ে শিনা বরাকে খুনের অভিযোগে ইন্দ্রাণী নিজেও গত চার বছর ধরে কারাবন্দি। তাঁর সঙ্গে ষড়যন্ত্রী হওয়ার অভিযোগে শাস্তি ভোগ করছেন পিটার মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণীর প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব খান্না ও গাড়িচালক শ্যাম রাই। তদন্তকারী পুলিশের দাবি, ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল শিনা বরাকে খুন করা হয়েছিল। সঞ্জীব খান্না ও শ্যাম রাইয়ের সাহায্যে মেয়েকে ইন্দ্রাণী খুন করেছিলেন বলে দাবি পুলিশের। ষড়যন্ত্রের কথা পিটারও জানতেন বলে প্রকাশিত হয় তদন্তে।

গোয়েন্দাদের দাবি, গাড়িতে শ্বাসরোধ করে খুন করার পরে খোপলি-পেন রোডের ধারে প্রত্যন্ত জায়গায় পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলা হয় শিনার দেহ। ফেলে দেওয়া হয় ৪০ ফুট গভীর খাদে। যদিও শিনাকে নিজের বোন বলে পরিচয় দিতেন ইন্দ্রাণী। পিটারের প্রথম পক্ষের ছেলে রাহুলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন শিনা। খুন করার পরেও শিনাকে ‘জীবন্ত’ প্রমাণ করার জন্য চেষ্টার কমতি করেননি ইন্দ্রাণী। সবাইকে বলেছিলেন শিনা আমেরিকায় পড়তে গিয়েছে। নিজে চালু রাখতেন মেয়ের ইমেইল আইডি। মেয়ের নামে মেইল পাঠাতেন তিনি।

তবে তাঁর জারিজুরি বেশিদিন চলল না। ২০১২ সালের মে মাসে রায়গড়ের জঙ্গল থেকে একটি দগ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুর্ঘটনার মামলা দায়ের করা হয়। দাবিদারহীন লাশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য। সেই রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই ঘটনার প্রায় সাড়ে তিন বছর পরে গ্রেপ্তার করা হয় অতীতের মিডিয়া ব্যারন পিটার মুখোপাধ্যায় ও তাঁর প্রভাবশালী, সুন্দরী, সপ্রতিভ স্ত্রীকে।

কলকাতায় যে কয়েকটা বছর ইন্দ্রাণী ছিলেন, পার্টি করে, নেচে-গেয়ে জীবন কাটিয়েছেন। কলকাতার তাঁর সঙ্গে মিশেছেন এমন মানুষদের কথায়, ইন্দ্রাণীর নজর ছিল সমাজের উচ্চ স্তরের দিকে। পার্টিতে কোনও ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার সময়ে যদি উঁচুতলার কাউকে ঢুকতে দেখতেন, বন্ধুকে পিছনে ফেলে তাঁর সঙ্গে যেচে আলাপ করতে বিশেষ সময় লাগত না ইন্দ্রাণীর। ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, পুরুষদের আকর্ষণ করার সহজাত ক্ষমতাও ছিল তাঁর। পার্টিতে তাঁর সঙ্গে নাচার জন্য পুরুষদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত।

১৯৯৩ সালে সঞ্জীবের সঙ্গে একটি কম্পিউটার ক্লাসে আলাপ হয়েছিল ইন্দ্রাণীর। তখন তিনি মিডলটন স্ট্রিটে থাকতেন। সুপুরুষ, বিত্তবান, সমাজের উচ্চস্তরে মেলামেশা করা সঞ্জীবের সঙ্গে আলাপের কিছু দিনের মধ্যেই বিয়ে হয় তাঁদের। বিধি জন্মায় এর কয়েক বছরের মধ্যেই। এই সময় সঞ্জীব থাকতেন হেস্টিংসের চ্যাপেল রোডে মামাবাড়িতে।

তাঁর মামা গৌরমোহন কপূর প্রতিষ্ঠিত স্থপতি। এ দিন তাঁদের প্রতিবেশী মধুকর সিংহ বলেন, ‘‘গৌরবাবুকে আমরা খুবই শ্রদ্ধা করি।’’ তিনিই জানান, সঞ্জীব প্রথম জীবনে একটি ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। পরে চাকরি ছেড়ে নিজের ব্যবসা শুরু করেন। মামাবাড়িতে বিধবা মা-কে নিয়ে থাকতেন। পরে ইন্দ্রাণীকে বিয়ে করে মামাবাড়ি ছেড়ে চলে যান শিবপুরের একটি ফ্ল্যাটে। কলকাতার একটি অভিজাত ক্লাবের সদস্য ছিলেন সঞ্জীব। স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে প্রায় নিয়মিতই যেতেন তিনি।

আর এভাবেই একজন ইন্দ্রাণীর উত্থান, যার কারণে পতন হলো একজন সাবেক অর্থমন্ত্রীর।  ইন্দ্রাণী মুখার্জীর বয়ানের ভিত্তিতেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদাম্বরম এবং তাঁর পুত্র কার্তি চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে মামলাটি সাজানো হয়েছে। ওই দুজনেই তখন আইএনএক্স মিডিয়া নামক টেলিভিশন সংস্থাটির প্রধান ছিলেন, এবং ওই সংস্থার জন্যেই পি চিদাম্বরম ইউপিএ সরকারের অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন বৈদেশিক তহবিলের অনুমোদনে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে কার্তি চিদাম্বরম এই চুক্তির বিনিময়ে বিরাট অঙ্কের ঘুষ পেয়েছিলেন।

দিল্লি হাইকোর্টে এই মামলাটির পরিপ্রেক্ষিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট যুক্তি দেখায় যে ইন্দ্রাণী মুখার্জীর বয়ানের ভিত্তিতেই পি চিদাম্বরম এবং তার ছেলের বিরুদ্ধে এই মামলাটি গঠিত হয়েছে। ফলে, আদালত প্রাক্তন মন্ত্রীর আগাম জামিন প্রত্যাখ্যান করে।  বুধবার সন্ধেবেলাতেই গ্রেপ্তার করা হয় পি চিদাম্বরমকে। সূত্র- এনডিটিভি, আনন্দবাজার

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

যে নারীর কারণেই ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী কারাগারে

আপডেট টাইম : ১২:১৯:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘স্বামী’ পরিচয়েই ইন্দ্রাণীর সঙ্গে একই বাড়িতে থাকতেন সিদ্ধার্থ। তাদের বিয়ে হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই। ধীরে ধীরে সিদ্ধার্থের প্রতি মোহ কাটতে থাকে ইন্দ্রাণীর। তখন আরও সামনের দিকে তাকাতে চাইছেন এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী।

একদিন বাড়ি থেকে কলকাতা চলে গেলেন ইন্দ্রাণী। ভুলে গেলেন প্রেমিক সিদ্ধার্থকে। বাবা মায়ের কাছে ফেলে এলেন দুই শিশুসন্তান শিনা ও মিখাইলকে। তাদের দত্তক নিলেন দাদু-দিদিমা, উপেন্দ্রনাথ ও দুর্গারানি। সিদ্ধার্থ-ইন্দ্রাণীর সন্তানরা বড় হলেন ‘বরা’ পরিচয়ে। কলকাতায় প্রথমে পেয়িং গেস্ট থাকতেন ইন্দ্রাণী। ক’দিনের মধ্যেই শহরের উঁচু মহলে সপ্রতিভ ইন্দ্রাণীর অনায়াস গতি। বিয়ে করলেন আলিপুরের ব্যবসায়ী সঞ্জীব খান্নাকে।

একদিন সঞ্জীবের সঙ্গে দাম্পত্যও পুরনো হয়ে গেল ইন্দ্রাণীর কাছে। একঘেয়ে মনে হল কলকাতাকে। যদিও নব্বইয়ের দশকের শেষে কলকাতাতেই নিজের চলার পথে লম্বা লাফ দিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। এরপর তাঁর গন্তব্য, মুম্বাই।

বিভিন্ন পার্টিতে চেনা মুখ, এইচ আর কনসালটেন্সি ফার্ম চালানো ইন্দ্রাণীর বেশি সময় লাগেনি বাণিজ্যনগরী জয় করতে। এক পার্টিতে ইন্দ্রাণীর সঙ্গে আলাপের তিনদিনের মধ্যে প্রেমে পাগল হন পিটার মুখোপাধ্যায়। তিন মাসের মধ্যে তৎকালীন মিডিয়া-সম্রাট পিটারের ঘরনি হয়ে গেলেন ইন্দ্রাণী। গুয়াহাটির সুন্দরপুরের মেয়ের রূপ-গুণ এবং হাতের রান্নায় মুগ্ধ পিটার। তিনি দত্তকও নিয়ে নেন ইন্দ্রাণী-সঞ্জীবের মেয়ে বিধিকে।

১৯৯৬ সালে কলকাতায় ইন্দ্রাণী শুরু করেছিলেন ‘আইএনএক্স সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড’। মাত্র দশজনকে নিয়ে পথ চলা শুরু এই রিক্রুটমেন্ট সংস্থার। সেই সংস্থাই মহীরুহ হয়ে দেখা দিল ২০০৬ সালে। স্বামী পিটারকে নিয়ে ইন্দ্রাণী তখন সংস্থার কর্ণধার। সেই আইএনএক্স-শামুকেই পা কাটল চিদম্বরমের। মূলত ইন্দ্রাণীর বয়ানেই চিদম্বরমকে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই।

ইউপিএ জমানায় আইএনএক্স মিডিয়া ৩০৫ কোটি টাকার বিদেশি লগ্নি আনে। যদিও ৪.৬২ কোটি টাকা লগ্নির অনুমতি ছিল। অভিযোগ, ঘুরপথে বাড়তি লগ্নি আনার উপায় বলে দিয়েছিলেন চিদম্বরম। তবে বিনিময়ে চিদম্বরম তাঁর ছেলে কার্তির সংস্থাকে সাহায্য করতে বলেন বলে অভিযোগ। কার্তিকে সাড়ে তিন কোটি টাকা ঘুষও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এই মর্মে চিদম্বরমের দাবি, তাঁর বা তাঁর পরিবারের নামে অভিযোগ নেই। তা সত্ত্বেও ধারণা ছড়ানো হয়েছে, তাঁরা অপরাধ করেছেন। বক্তব্য প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর।

মেয়ে শিনা বরাকে খুনের অভিযোগে ইন্দ্রাণী নিজেও গত চার বছর ধরে কারাবন্দি। তাঁর সঙ্গে ষড়যন্ত্রী হওয়ার অভিযোগে শাস্তি ভোগ করছেন পিটার মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণীর প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব খান্না ও গাড়িচালক শ্যাম রাই। তদন্তকারী পুলিশের দাবি, ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল শিনা বরাকে খুন করা হয়েছিল। সঞ্জীব খান্না ও শ্যাম রাইয়ের সাহায্যে মেয়েকে ইন্দ্রাণী খুন করেছিলেন বলে দাবি পুলিশের। ষড়যন্ত্রের কথা পিটারও জানতেন বলে প্রকাশিত হয় তদন্তে।

গোয়েন্দাদের দাবি, গাড়িতে শ্বাসরোধ করে খুন করার পরে খোপলি-পেন রোডের ধারে প্রত্যন্ত জায়গায় পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলা হয় শিনার দেহ। ফেলে দেওয়া হয় ৪০ ফুট গভীর খাদে। যদিও শিনাকে নিজের বোন বলে পরিচয় দিতেন ইন্দ্রাণী। পিটারের প্রথম পক্ষের ছেলে রাহুলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন শিনা। খুন করার পরেও শিনাকে ‘জীবন্ত’ প্রমাণ করার জন্য চেষ্টার কমতি করেননি ইন্দ্রাণী। সবাইকে বলেছিলেন শিনা আমেরিকায় পড়তে গিয়েছে। নিজে চালু রাখতেন মেয়ের ইমেইল আইডি। মেয়ের নামে মেইল পাঠাতেন তিনি।

তবে তাঁর জারিজুরি বেশিদিন চলল না। ২০১২ সালের মে মাসে রায়গড়ের জঙ্গল থেকে একটি দগ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুর্ঘটনার মামলা দায়ের করা হয়। দাবিদারহীন লাশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য। সেই রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই ঘটনার প্রায় সাড়ে তিন বছর পরে গ্রেপ্তার করা হয় অতীতের মিডিয়া ব্যারন পিটার মুখোপাধ্যায় ও তাঁর প্রভাবশালী, সুন্দরী, সপ্রতিভ স্ত্রীকে।

কলকাতায় যে কয়েকটা বছর ইন্দ্রাণী ছিলেন, পার্টি করে, নেচে-গেয়ে জীবন কাটিয়েছেন। কলকাতার তাঁর সঙ্গে মিশেছেন এমন মানুষদের কথায়, ইন্দ্রাণীর নজর ছিল সমাজের উচ্চ স্তরের দিকে। পার্টিতে কোনও ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার সময়ে যদি উঁচুতলার কাউকে ঢুকতে দেখতেন, বন্ধুকে পিছনে ফেলে তাঁর সঙ্গে যেচে আলাপ করতে বিশেষ সময় লাগত না ইন্দ্রাণীর। ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, পুরুষদের আকর্ষণ করার সহজাত ক্ষমতাও ছিল তাঁর। পার্টিতে তাঁর সঙ্গে নাচার জন্য পুরুষদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত।

১৯৯৩ সালে সঞ্জীবের সঙ্গে একটি কম্পিউটার ক্লাসে আলাপ হয়েছিল ইন্দ্রাণীর। তখন তিনি মিডলটন স্ট্রিটে থাকতেন। সুপুরুষ, বিত্তবান, সমাজের উচ্চস্তরে মেলামেশা করা সঞ্জীবের সঙ্গে আলাপের কিছু দিনের মধ্যেই বিয়ে হয় তাঁদের। বিধি জন্মায় এর কয়েক বছরের মধ্যেই। এই সময় সঞ্জীব থাকতেন হেস্টিংসের চ্যাপেল রোডে মামাবাড়িতে।

তাঁর মামা গৌরমোহন কপূর প্রতিষ্ঠিত স্থপতি। এ দিন তাঁদের প্রতিবেশী মধুকর সিংহ বলেন, ‘‘গৌরবাবুকে আমরা খুবই শ্রদ্ধা করি।’’ তিনিই জানান, সঞ্জীব প্রথম জীবনে একটি ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। পরে চাকরি ছেড়ে নিজের ব্যবসা শুরু করেন। মামাবাড়িতে বিধবা মা-কে নিয়ে থাকতেন। পরে ইন্দ্রাণীকে বিয়ে করে মামাবাড়ি ছেড়ে চলে যান শিবপুরের একটি ফ্ল্যাটে। কলকাতার একটি অভিজাত ক্লাবের সদস্য ছিলেন সঞ্জীব। স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে প্রায় নিয়মিতই যেতেন তিনি।

আর এভাবেই একজন ইন্দ্রাণীর উত্থান, যার কারণে পতন হলো একজন সাবেক অর্থমন্ত্রীর।  ইন্দ্রাণী মুখার্জীর বয়ানের ভিত্তিতেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদাম্বরম এবং তাঁর পুত্র কার্তি চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে মামলাটি সাজানো হয়েছে। ওই দুজনেই তখন আইএনএক্স মিডিয়া নামক টেলিভিশন সংস্থাটির প্রধান ছিলেন, এবং ওই সংস্থার জন্যেই পি চিদাম্বরম ইউপিএ সরকারের অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন বৈদেশিক তহবিলের অনুমোদনে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে কার্তি চিদাম্বরম এই চুক্তির বিনিময়ে বিরাট অঙ্কের ঘুষ পেয়েছিলেন।

দিল্লি হাইকোর্টে এই মামলাটির পরিপ্রেক্ষিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট যুক্তি দেখায় যে ইন্দ্রাণী মুখার্জীর বয়ানের ভিত্তিতেই পি চিদাম্বরম এবং তার ছেলের বিরুদ্ধে এই মামলাটি গঠিত হয়েছে। ফলে, আদালত প্রাক্তন মন্ত্রীর আগাম জামিন প্রত্যাখ্যান করে।  বুধবার সন্ধেবেলাতেই গ্রেপ্তার করা হয় পি চিদাম্বরমকে। সূত্র- এনডিটিভি, আনন্দবাজার