ঢাকা ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত ভুল অস্ত্রোপচার, যা ঘটেছিল প্রিয়াঙ্কা সঙ্গে সচিবালয়ে উপদেষ্টা হাসান আরিফের তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন সাবেক সচিব ইসমাইল রিমান্ডে অবশেষে বিল পাস করে ‘শাটডাউন’ এড়াল যুক্তরাষ্ট্র চাঁদাবাজদের ধরতে অভিযান শুরু হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার নির্বাচনের পর নিজের নিয়মিত কাজে ফিরে যাবেন ড. ইউনূস ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আহত ১৬ জুলাই আন্দোলন বিগত বছরগুলোর অনিয়মের সমষ্টি: ফারুকী তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ‘সড়কে নৈরাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব জড়িত

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৬:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০১৯
  • ৩৬৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাতীয় চার নেতার অন্যতম কিশোরগঞ্জের সন্তান বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম। সৈয়দ নজরুল ইসলামের শাহাদাত বার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে কিশোরগঞ্জে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন আয়োজিত এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রোববার (৩ নভেম্বর) বাদ জোহর শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি যশোদলের বীরদামপাড়া সাহেব বাড়ি জামে মসজিদে, শহরের পাগলা মসজিদ এবং শহিদী মসজিদে পবিত্র কুরআনখানি ও দোয়া মাহফিল। জেলা সদরের মসজিদগুলোতে বিশেষ মোনাজাত। মন্দির-গির্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা।

১৭ এপ্রিল থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।  সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রধানতম পুরুষ, যার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের অস্হায়ী বাংলাদেশ সরকার নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের কবল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে। এই ঘটনাটি বাঙালি জাতিসত্তাকে বিশ্ববাসীর সামনে গর্বিত পুনরুত্থানের সুযোগ করে দেয়।

ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯২৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ জেলার (বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলা) সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নে বীরদামপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দা নাফিসা ইসলামের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে। ৪ ছেলে হচ্ছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, সৈয়দ শরিফুল ইসলাম ও সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম এবং ২ মেয়ে সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, সৈয়দা রাফিয়া নূর রুপা। তার লেখাপড়ার শুরু যশোদল মিডল ইংলিশ স্কুলে৷ এরপর কিশোরগঞ্জ আজিমুদ্দিন হাই স্কুল আর ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে অতিবাহিত করেন তার স্কুল জীবন। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ১৯৪১ সালে দুই বিষয়ে লেটার মার্কসসহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন৷ ১৯৪৩ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন৷ তারপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে।  সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৪৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে কৃতিত্বের সাথে বি.এ. (অনার্স), ১৯৪৭ সালে এম.এ এবং ১৯৫৩ সালে এল.এল.বি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৷

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছবি এর ছবির ফলাফল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৪৬-৪৭ সালে সলিমুলাহ মুসলিম হল ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন ৷ তিনি ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন ৷ ১৯৪৭ সালে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ৷ তিনি মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন ৷ ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি সর্বদলীয় একশন কমিটির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হবার পরও সরকারি চাকুরী প্রত্যাখ্যান করেন৷ তিনি ১৯৪৯ সালে ইতিহাসের প্রভাষক হিসেবে আনন্দমোহন কলেজে যোগদান করেন৷ পরে ১৯৫৫ সালে ময়মনসিংহে আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন৷ তিনি ১৯৫৭ সালে খ্যাতিমান রাজনীতিক, সু-সাহিত্যিক ও পাকিস্তানের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আবুল মনসুর আহমেদকে কাউন্সিলের মাধ্যমে হারিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং এ পদে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ছিলেন ৷ ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ তিনি আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন ৷

১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবিতে দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন শুরু হলে আইয়ুব সরকার আওয়ামীলীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করার পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন ৷ তিনি ছিলেন ডেমোক্রেটিক এ্যাকশন কমিটির (DAC) অন্যতম কর্ণধার। রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করার জন্য রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথমে ১৯৬৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং পরে ১০-১৩ মার্চ দু’দফা এ বৈঠক হয়৷ তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের অন্যতম নেতা হিসেবে এ সময় বৈঠকে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৭ আসন থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতীয় সংসদে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন।

সম্পর্কিত ছবি

তাজউদ্দীন আহমদ শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপ্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক এবং তার অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান ও অস্থায়ী সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক, নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একটা সরকারের কাঠামো তৈরি করেন এবং ১০ এপ্রিল রেডিওতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভাষণ দেন৷ বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারের তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন৷

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর তাকে প্রথমে গৃহবন্দী এবং ২৩শে আগস্ট, ১৯৭৫ তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী করা হয় ৷ কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় সৈয়দ নজরুল ইসলামকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলামের শাহাদাত বার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে কিশোরগঞ্জে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন আয়োজিত এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রোববার (৩ নভেম্বর) বাদ জোহর শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি যশোদলের বীরদামপাড়া সাহেব বাড়ি জামে মসজিদে, শহরের পাগলা মসজিদ এবং শহিদী মসজিদে পবিত্র কুরআনখানি ও দোয়া মাহফিল। জেলা সদরের মসজিদগুলোতে বিশেষ মোনাজাত। মন্দির-গির্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা।

সম্পর্কিত ছবি

 জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, রোববার (৩ নভেম্বর) সকাল ৯টায় কিশোরগঞ্জের পুরাতন স্টেডিয়াম থেকে বিশাল শোক র‌্যালির মাধ্যমে কর্মসূচির শুরু হবে। শোক র‌্যালিটি জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে শেষ হবে। সেখানে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দিনব্যাপী স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রম চলবে।

বিকাল ৪টায় কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হবে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সন্ধ্যা ৬টায় আলোচনা সভা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ইসলামিয়া সুপার মার্কেট প্রাঙ্গণে প্রদর্শিত হবে শহীদ সৈয়দ নজরুলের রাজনীতি এবং জেল হত্যার ওপর ডকুমেন্টারি।

এছাড়াও শহরের আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কিশোরগঞ্জ পৌর এলাকায় সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল কলেজে আলোচনা সভা হবে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

আপডেট টাইম : ১১:৩৬:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাতীয় চার নেতার অন্যতম কিশোরগঞ্জের সন্তান বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম। সৈয়দ নজরুল ইসলামের শাহাদাত বার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে কিশোরগঞ্জে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন আয়োজিত এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রোববার (৩ নভেম্বর) বাদ জোহর শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি যশোদলের বীরদামপাড়া সাহেব বাড়ি জামে মসজিদে, শহরের পাগলা মসজিদ এবং শহিদী মসজিদে পবিত্র কুরআনখানি ও দোয়া মাহফিল। জেলা সদরের মসজিদগুলোতে বিশেষ মোনাজাত। মন্দির-গির্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা।

১৭ এপ্রিল থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।  সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রধানতম পুরুষ, যার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের অস্হায়ী বাংলাদেশ সরকার নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের কবল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে। এই ঘটনাটি বাঙালি জাতিসত্তাকে বিশ্ববাসীর সামনে গর্বিত পুনরুত্থানের সুযোগ করে দেয়।

ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯২৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ জেলার (বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলা) সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নে বীরদামপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দা নাফিসা ইসলামের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে। ৪ ছেলে হচ্ছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, সৈয়দ শরিফুল ইসলাম ও সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম এবং ২ মেয়ে সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, সৈয়দা রাফিয়া নূর রুপা। তার লেখাপড়ার শুরু যশোদল মিডল ইংলিশ স্কুলে৷ এরপর কিশোরগঞ্জ আজিমুদ্দিন হাই স্কুল আর ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে অতিবাহিত করেন তার স্কুল জীবন। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ১৯৪১ সালে দুই বিষয়ে লেটার মার্কসসহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন৷ ১৯৪৩ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন৷ তারপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে।  সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৪৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে কৃতিত্বের সাথে বি.এ. (অনার্স), ১৯৪৭ সালে এম.এ এবং ১৯৫৩ সালে এল.এল.বি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৷

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছবি এর ছবির ফলাফল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৪৬-৪৭ সালে সলিমুলাহ মুসলিম হল ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন ৷ তিনি ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন ৷ ১৯৪৭ সালে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ৷ তিনি মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন ৷ ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি সর্বদলীয় একশন কমিটির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হবার পরও সরকারি চাকুরী প্রত্যাখ্যান করেন৷ তিনি ১৯৪৯ সালে ইতিহাসের প্রভাষক হিসেবে আনন্দমোহন কলেজে যোগদান করেন৷ পরে ১৯৫৫ সালে ময়মনসিংহে আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন৷ তিনি ১৯৫৭ সালে খ্যাতিমান রাজনীতিক, সু-সাহিত্যিক ও পাকিস্তানের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আবুল মনসুর আহমেদকে কাউন্সিলের মাধ্যমে হারিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং এ পদে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ছিলেন ৷ ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ তিনি আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন ৷

১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবিতে দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন শুরু হলে আইয়ুব সরকার আওয়ামীলীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করার পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন ৷ তিনি ছিলেন ডেমোক্রেটিক এ্যাকশন কমিটির (DAC) অন্যতম কর্ণধার। রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করার জন্য রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথমে ১৯৬৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং পরে ১০-১৩ মার্চ দু’দফা এ বৈঠক হয়৷ তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের অন্যতম নেতা হিসেবে এ সময় বৈঠকে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৭ আসন থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতীয় সংসদে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন।

সম্পর্কিত ছবি

তাজউদ্দীন আহমদ শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপ্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক এবং তার অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান ও অস্থায়ী সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক, নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একটা সরকারের কাঠামো তৈরি করেন এবং ১০ এপ্রিল রেডিওতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভাষণ দেন৷ বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারের তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন৷

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর তাকে প্রথমে গৃহবন্দী এবং ২৩শে আগস্ট, ১৯৭৫ তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী করা হয় ৷ কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় সৈয়দ নজরুল ইসলামকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলামের শাহাদাত বার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে কিশোরগঞ্জে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন আয়োজিত এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রোববার (৩ নভেম্বর) বাদ জোহর শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি যশোদলের বীরদামপাড়া সাহেব বাড়ি জামে মসজিদে, শহরের পাগলা মসজিদ এবং শহিদী মসজিদে পবিত্র কুরআনখানি ও দোয়া মাহফিল। জেলা সদরের মসজিদগুলোতে বিশেষ মোনাজাত। মন্দির-গির্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা।

সম্পর্কিত ছবি

 জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, রোববার (৩ নভেম্বর) সকাল ৯টায় কিশোরগঞ্জের পুরাতন স্টেডিয়াম থেকে বিশাল শোক র‌্যালির মাধ্যমে কর্মসূচির শুরু হবে। শোক র‌্যালিটি জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে শেষ হবে। সেখানে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দিনব্যাপী স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রম চলবে।

বিকাল ৪টায় কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হবে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সন্ধ্যা ৬টায় আলোচনা সভা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ইসলামিয়া সুপার মার্কেট প্রাঙ্গণে প্রদর্শিত হবে শহীদ সৈয়দ নজরুলের রাজনীতি এবং জেল হত্যার ওপর ডকুমেন্টারি।

এছাড়াও শহরের আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কিশোরগঞ্জ পৌর এলাকায় সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল কলেজে আলোচনা সভা হবে।