ঢাকা ০১:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহাসড়কে ধানের শীষ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৩১:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৯
  • ২৩৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খানাখন্দ আর বড় বড় গর্তের কারণে লালমনিরহাট-বুড়িমারী আঞ্চলিক মহাসড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত। সেখানে জমে আছে বৃষ্টির পানি। চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে মহাসড়কটি। এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে ত্রিদেশীয় পাসপোর্টধারী যাত্রীসহ ও অন্য পথচারীরা। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

পাটগ্রাম উপজেলার কলেজ মোড় এলাকায় দুই মাস আগে সংস্কারের প্রতিবাদ জানিয়ে মহাসড়কের ওপরে ধানের চারা রোপণ করেন স্থানীয়রা। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও হয়নি মহাসড়ক সংস্কার। দুই মাসে মহাসড়কের ওপর লাগানো ধান গাছে বের হয়েছে শীষ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দেশের অন্যতম স্থলবন্দর পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের পণ্যবাহী ট্রাক এবং ভারত-ভুটান-নেপালের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ঢাকার পথে যাওয়া-আসায় যোগাযোগের একমাত্র ভরসা লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক।

 

কিন্তু ত্রিদেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র এ স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহনে ১০০ কিলোমিটারের বেশি মহাসড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নিম্নমানের সংস্কারকাজ, বৃষ্টির পানি জমে থাকা ও অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করায় মহাসড়কটির সহস্রাধিক স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

খানাখন্দে পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন যাত্রীরা। মহাসড়কে বিকল হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাক। গর্তে পড়ে একটি ট্রাক বিকল হলে দীর্ঘ যানজটে নাকাল হচ্ছেন যাত্রীরা। ফলে স্থলবন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ভোগান্তি এড়াতে বাইপাস সড়কগুলোতে বেড়েছে যানবাহনের চাপ।

জেলার ৫টি উপজেলার ওপর দিয়ে চলা মহাসড়কটির পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট-১) অংশ চলাচলের জন্য কিছুটা ভালো থাকলেও কালীগঞ্জ-আদিতমারী (লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নিজ এলাকা) অংশটি একেবারে অকেজো। খোদ মন্ত্রীর বাড়ির সামনের মহাসড়কে হাজারো খানাখন্দ।

সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত লালমনিরহাট-৩ আসনের অংশটিরও একই অবস্থা। যদিও একই বরাদ্দে গত অর্থবছরে পুরো মহাসড়কটি সংস্কার করা হয়েছে। এরপরও আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলার অংশের প্রতি মাসে সংস্কারের নামে জোড়া-তালি দিয়ে যোগাযোগ সচল রেখেছে লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

স্থানীয় ট্রাকচালক আলিবর রহমান বলেন, উন্নয়নের মহাসড়কে এখন ধানের শীর্ষ বেরিয়েছে। আমরা এই মহাসড়ক সংস্কারের জন্য অনেক প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু আজো কোনো কাজ হয়নি। মহাসড়কটি দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ একটি সড়ক। খুব প্রয়োজন ছাড়া এই মহাসড়কে গাড়ি চালাই না। মহাসড়কটিকে ‘মরার সড়ক’ বলা হয়।

 

স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কটির বেহাল দশার কারণে এলাকার লোকজন ধানের চারা লাগিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। ধান বের হলেও এখনো মহাসড়কটি সংস্কার হয়নি। দেশে জনপ্রতিনিধি আছে বলে মনে হয় না।

স্থানীয় ট্রাকচালক মুকুল বলেন, সদর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে গেলেই ট্রাক বিকল হয়ে যায়। কখনো ট্রাক উল্টে মালামাল নষ্ট হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ মহাসড়কে চলতে হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেটের দায়ে ট্রাক চালাই। দীর্ঘদিন মহাসড়কটি এভাবে পড়ে থাকলেও যেন দেখার কেউ নেই।

জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃপক্ষ জানায়, এ মহাসড়কের বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে পাটগ্রামগামী মাত্র ১০ কিলোমিটার অংশে প্রশস্তকরণ ও সংস্কারকাজের জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প চলমান। সম্প্রতি এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। তবে পুরো মহাসড়ক সংস্কার করার মতো বরাদ্দ নেই।

লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বখতিয়ার আলম বলেন, সড়কের পাশে উঁচু মার্কেট ও ভারী যানবাহনের কারণে মহাসড়কটি স্থায়ী হচ্ছে না। গত জুন মাসে মহাসড়কটির পুরো অংশ সংস্কার করায় নতুন করে সংস্কারের কোনো বরাদ্দ নেই। সওজের নিজস্ব তহবিল থেকে মাঝে মধ্যে সড়কের গর্তগুলো ভরাট করা হয়। তবে সেই বরাদ্দও না থাকায় আপাত সংস্কার করা যাচ্ছে না। বরাদ্দের চাহিদা দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা হবে।

তিনি বলেন, মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প হাতে নেয়ায় শক্তভাবে সংস্কার করার কাজও হাতে নেয়া যাচ্ছে না। তবে সেই চার লেনের প্রকল্পের কাজ শুরু হতে তিন-চার বছর সময় লাগবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

মহাসড়কে ধানের শীষ

আপডেট টাইম : ০৮:৩১:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খানাখন্দ আর বড় বড় গর্তের কারণে লালমনিরহাট-বুড়িমারী আঞ্চলিক মহাসড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত। সেখানে জমে আছে বৃষ্টির পানি। চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে মহাসড়কটি। এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে ত্রিদেশীয় পাসপোর্টধারী যাত্রীসহ ও অন্য পথচারীরা। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

পাটগ্রাম উপজেলার কলেজ মোড় এলাকায় দুই মাস আগে সংস্কারের প্রতিবাদ জানিয়ে মহাসড়কের ওপরে ধানের চারা রোপণ করেন স্থানীয়রা। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও হয়নি মহাসড়ক সংস্কার। দুই মাসে মহাসড়কের ওপর লাগানো ধান গাছে বের হয়েছে শীষ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দেশের অন্যতম স্থলবন্দর পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের পণ্যবাহী ট্রাক এবং ভারত-ভুটান-নেপালের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ঢাকার পথে যাওয়া-আসায় যোগাযোগের একমাত্র ভরসা লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক।

 

কিন্তু ত্রিদেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র এ স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহনে ১০০ কিলোমিটারের বেশি মহাসড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নিম্নমানের সংস্কারকাজ, বৃষ্টির পানি জমে থাকা ও অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করায় মহাসড়কটির সহস্রাধিক স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

খানাখন্দে পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন যাত্রীরা। মহাসড়কে বিকল হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাক। গর্তে পড়ে একটি ট্রাক বিকল হলে দীর্ঘ যানজটে নাকাল হচ্ছেন যাত্রীরা। ফলে স্থলবন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ভোগান্তি এড়াতে বাইপাস সড়কগুলোতে বেড়েছে যানবাহনের চাপ।

জেলার ৫টি উপজেলার ওপর দিয়ে চলা মহাসড়কটির পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট-১) অংশ চলাচলের জন্য কিছুটা ভালো থাকলেও কালীগঞ্জ-আদিতমারী (লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নিজ এলাকা) অংশটি একেবারে অকেজো। খোদ মন্ত্রীর বাড়ির সামনের মহাসড়কে হাজারো খানাখন্দ।

সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত লালমনিরহাট-৩ আসনের অংশটিরও একই অবস্থা। যদিও একই বরাদ্দে গত অর্থবছরে পুরো মহাসড়কটি সংস্কার করা হয়েছে। এরপরও আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলার অংশের প্রতি মাসে সংস্কারের নামে জোড়া-তালি দিয়ে যোগাযোগ সচল রেখেছে লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

স্থানীয় ট্রাকচালক আলিবর রহমান বলেন, উন্নয়নের মহাসড়কে এখন ধানের শীর্ষ বেরিয়েছে। আমরা এই মহাসড়ক সংস্কারের জন্য অনেক প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু আজো কোনো কাজ হয়নি। মহাসড়কটি দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ একটি সড়ক। খুব প্রয়োজন ছাড়া এই মহাসড়কে গাড়ি চালাই না। মহাসড়কটিকে ‘মরার সড়ক’ বলা হয়।

 

স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কটির বেহাল দশার কারণে এলাকার লোকজন ধানের চারা লাগিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। ধান বের হলেও এখনো মহাসড়কটি সংস্কার হয়নি। দেশে জনপ্রতিনিধি আছে বলে মনে হয় না।

স্থানীয় ট্রাকচালক মুকুল বলেন, সদর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে গেলেই ট্রাক বিকল হয়ে যায়। কখনো ট্রাক উল্টে মালামাল নষ্ট হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ মহাসড়কে চলতে হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেটের দায়ে ট্রাক চালাই। দীর্ঘদিন মহাসড়কটি এভাবে পড়ে থাকলেও যেন দেখার কেউ নেই।

জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃপক্ষ জানায়, এ মহাসড়কের বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে পাটগ্রামগামী মাত্র ১০ কিলোমিটার অংশে প্রশস্তকরণ ও সংস্কারকাজের জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প চলমান। সম্প্রতি এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। তবে পুরো মহাসড়ক সংস্কার করার মতো বরাদ্দ নেই।

লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বখতিয়ার আলম বলেন, সড়কের পাশে উঁচু মার্কেট ও ভারী যানবাহনের কারণে মহাসড়কটি স্থায়ী হচ্ছে না। গত জুন মাসে মহাসড়কটির পুরো অংশ সংস্কার করায় নতুন করে সংস্কারের কোনো বরাদ্দ নেই। সওজের নিজস্ব তহবিল থেকে মাঝে মধ্যে সড়কের গর্তগুলো ভরাট করা হয়। তবে সেই বরাদ্দও না থাকায় আপাত সংস্কার করা যাচ্ছে না। বরাদ্দের চাহিদা দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা হবে।

তিনি বলেন, মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প হাতে নেয়ায় শক্তভাবে সংস্কার করার কাজও হাতে নেয়া যাচ্ছে না। তবে সেই চার লেনের প্রকল্পের কাজ শুরু হতে তিন-চার বছর সময় লাগবে।