ঢাকা ১০:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একসঙ্গে কুরআন মুখস্থ করলেন ৪ জমজ বোন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৯
  • ২০৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ৪ জমজ বোন। দেখতে প্রায় একই রকম। দিমা, দিনা, সুজানা ও রাজান। একসঙ্গে জন্ম আবার একই সঙ্গে বেড়ে ওঠা। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো তারা এক সঙ্গেই পবিত্র কুরআন মুখস্থ করেছেন। সম্প্রতি তারা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনাও সম্পন্ন করেছেন। ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তারা।

ফিলিস্তিনের ১৮ বছর বয়সের ৪ জমজ তরুণির কথা বলছি। যারা একই সময়ে জন্ম নেয়া থেকে শুরু করে পবিত্র কুরআন হেফজসহ এখন পর্যন্ত পড়া-লেখা সব কিছুতেই সমানতালে বেড়ে ওঠেছেন।

ইসরাইল অধিকৃত ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নগরীর উম্মে তুবা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জমজ ৪ বোনের জন্ম। বাবা মুরয়ি আশ-শানিতি (৫৮) মা নাজাহ আশ-শানিতি (৫৪)। গরিব হওয়ার পরও থেমে নেই দিমা-দিনাদের পড়াশোনা। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষায়ও তারা পিছিয়ে থাকতে নারাজ।

সে লক্ষ্যে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। আর ইতিমধ্যে পুরো কুরআন হেফজ সম্পন্ন করেছেন। পড়াশোনা ও বেড়ে ওঠায় দিমা-দিনা-সুজান ও রাজান যেন একটি মালার ৪টি উজ্জ্বল মুক্তা।

এক সঙ্গে জন্ম, এক সঙ্গে বড় হওয়া, এক সঙ্গে কুরআন মুখস্থ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা সবাই গড় নব্বইয়ের ওপরে স্কোর পেয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়। তাদের স্কোর হলো ৯৩.৯, ৯২.১, ৯১.৪ ও ৯১.১।

দিমা-রাজনদের মা নাজাহ আশ-শানিতি জানান, ‘মেয়েরা জেরুজালেমের আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বালিকা বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা শেষ করছেন।

৪ জমজ বোনের মাঝে রয়েছে চমৎকার পারস্পরিক মিল। পড়াশোনায় রয়েছে তাদের গভীর মনোযোগ। আর তাতে সাফল্যও পাচ্ছেন তারা। এ কারণেই তাদের জন্য মা নাজাহ আশ-শানিতি গর্বিত ও আনন্দিত।

নাজাহ আশ-শানিতি আরও বলেন, ‘তার ৪ মেয়েকে দেখতে প্রায় একই রকম মনে হয়। তবে তাদের পৃথক করতে কষ্ট হয় না। কথা শুনলেই তিনি বুঝতে পারেন, কে দিমা, দিনা, রাজন ও সুজন।

শৈশবের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে নাজাহ আশ-শানিতি বলেন, ‘শিশু থাকা অবস্থায় যখন নাম রাখি এবং দোলনায় চড়াই তখন তাদের পৃথক রাখতে এবং চেনার জন্য ভিন্ন ভিন্ন রঙের সুতা দিয়ে জামায় নকশা করে রাখতাম। এখন আর তা প্রয়োজন পড়ে না। কণ্ঠস্বরই আমাকে প্রত্যেকের পরিচয় বলে দেয়।

৪ জমজ বোনের আরেকটি বিস্ময়কর ব্যাপার হলো-

তারা যখন অসুস্থ হতো তখন একসঙ্গে অসুস্থ হতো। আবার সুস্থ হলেও তারা এক সঙ্গে সুস্থ হয়ে যেতো। তারা সব সময়ই একসঙ্গে চলাফেরা, খেলাধূলা করতেও ভালোবাসে। এ কারণেই আমি ওদেরকে একই রঙের পোশাক পরাতে চেষ্টা করি এবং পোশাক পরতে বলি।

কুরআনের হাফেজ হওয়া প্রসঙ্গে নাজাহ আশ-শানিতি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই কুরআন মুখস্তের জন্য গ্রামের মসজিদের মক্তবে পাঠাই। একই পোশাকে মসজিদের দিকে আসা-যাওয়ার দৃশ্য আমার চোখকে শীতল করে তুলতো।

১৩ বছর বয়সে ৪ জমজ বোন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হিফজ মারকাজে ভর্তি হয়। ১৭ বছর বয়সে তারা মাধ্যমিক স্কুলের পড়াশোনা সাফল্যের সঙ্গে শেষ করে। তবে এক বছর আগে ১৬ বছর বয়সেই তারা একসঙ্গে পবিত্র কুরআন হেফজ সম্পন্ন করে।

দিমা-দিনা-সুজান ও রাজনের ইচ্ছা হলো তারা ফিলিস্তিনের যে কোনো প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশোনা করবে।

৪ জমজ মেয়ের বাবা মুরয়ি আশ-শানিতি সন্তানদের স্বপ্ন পূরণ করতে চান। এ জন্য তিনি মহান আল্লাহ সাহায্য ও মুসলিম উম্মাহর দোয়া কামনা করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

একসঙ্গে কুরআন মুখস্থ করলেন ৪ জমজ বোন

আপডেট টাইম : ১০:৩৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ৪ জমজ বোন। দেখতে প্রায় একই রকম। দিমা, দিনা, সুজানা ও রাজান। একসঙ্গে জন্ম আবার একই সঙ্গে বেড়ে ওঠা। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো তারা এক সঙ্গেই পবিত্র কুরআন মুখস্থ করেছেন। সম্প্রতি তারা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনাও সম্পন্ন করেছেন। ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তারা।

ফিলিস্তিনের ১৮ বছর বয়সের ৪ জমজ তরুণির কথা বলছি। যারা একই সময়ে জন্ম নেয়া থেকে শুরু করে পবিত্র কুরআন হেফজসহ এখন পর্যন্ত পড়া-লেখা সব কিছুতেই সমানতালে বেড়ে ওঠেছেন।

ইসরাইল অধিকৃত ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নগরীর উম্মে তুবা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জমজ ৪ বোনের জন্ম। বাবা মুরয়ি আশ-শানিতি (৫৮) মা নাজাহ আশ-শানিতি (৫৪)। গরিব হওয়ার পরও থেমে নেই দিমা-দিনাদের পড়াশোনা। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষায়ও তারা পিছিয়ে থাকতে নারাজ।

সে লক্ষ্যে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। আর ইতিমধ্যে পুরো কুরআন হেফজ সম্পন্ন করেছেন। পড়াশোনা ও বেড়ে ওঠায় দিমা-দিনা-সুজান ও রাজান যেন একটি মালার ৪টি উজ্জ্বল মুক্তা।

এক সঙ্গে জন্ম, এক সঙ্গে বড় হওয়া, এক সঙ্গে কুরআন মুখস্থ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা সবাই গড় নব্বইয়ের ওপরে স্কোর পেয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়। তাদের স্কোর হলো ৯৩.৯, ৯২.১, ৯১.৪ ও ৯১.১।

দিমা-রাজনদের মা নাজাহ আশ-শানিতি জানান, ‘মেয়েরা জেরুজালেমের আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বালিকা বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা শেষ করছেন।

৪ জমজ বোনের মাঝে রয়েছে চমৎকার পারস্পরিক মিল। পড়াশোনায় রয়েছে তাদের গভীর মনোযোগ। আর তাতে সাফল্যও পাচ্ছেন তারা। এ কারণেই তাদের জন্য মা নাজাহ আশ-শানিতি গর্বিত ও আনন্দিত।

নাজাহ আশ-শানিতি আরও বলেন, ‘তার ৪ মেয়েকে দেখতে প্রায় একই রকম মনে হয়। তবে তাদের পৃথক করতে কষ্ট হয় না। কথা শুনলেই তিনি বুঝতে পারেন, কে দিমা, দিনা, রাজন ও সুজন।

শৈশবের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে নাজাহ আশ-শানিতি বলেন, ‘শিশু থাকা অবস্থায় যখন নাম রাখি এবং দোলনায় চড়াই তখন তাদের পৃথক রাখতে এবং চেনার জন্য ভিন্ন ভিন্ন রঙের সুতা দিয়ে জামায় নকশা করে রাখতাম। এখন আর তা প্রয়োজন পড়ে না। কণ্ঠস্বরই আমাকে প্রত্যেকের পরিচয় বলে দেয়।

৪ জমজ বোনের আরেকটি বিস্ময়কর ব্যাপার হলো-

তারা যখন অসুস্থ হতো তখন একসঙ্গে অসুস্থ হতো। আবার সুস্থ হলেও তারা এক সঙ্গে সুস্থ হয়ে যেতো। তারা সব সময়ই একসঙ্গে চলাফেরা, খেলাধূলা করতেও ভালোবাসে। এ কারণেই আমি ওদেরকে একই রঙের পোশাক পরাতে চেষ্টা করি এবং পোশাক পরতে বলি।

কুরআনের হাফেজ হওয়া প্রসঙ্গে নাজাহ আশ-শানিতি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই কুরআন মুখস্তের জন্য গ্রামের মসজিদের মক্তবে পাঠাই। একই পোশাকে মসজিদের দিকে আসা-যাওয়ার দৃশ্য আমার চোখকে শীতল করে তুলতো।

১৩ বছর বয়সে ৪ জমজ বোন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হিফজ মারকাজে ভর্তি হয়। ১৭ বছর বয়সে তারা মাধ্যমিক স্কুলের পড়াশোনা সাফল্যের সঙ্গে শেষ করে। তবে এক বছর আগে ১৬ বছর বয়সেই তারা একসঙ্গে পবিত্র কুরআন হেফজ সম্পন্ন করে।

দিমা-দিনা-সুজান ও রাজনের ইচ্ছা হলো তারা ফিলিস্তিনের যে কোনো প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশোনা করবে।

৪ জমজ মেয়ের বাবা মুরয়ি আশ-শানিতি সন্তানদের স্বপ্ন পূরণ করতে চান। এ জন্য তিনি মহান আল্লাহ সাহায্য ও মুসলিম উম্মাহর দোয়া কামনা করেন।