ঢাকা ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টেলিযোগাযোগে বিশৃঙ্খলা বিটিআরসির নির্দেশনা পাত্তা দিচ্ছে না অপারেটররা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:০৭:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৯
  • ২৫৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এখন চলছে ডিজিটাল যুগ। প্রশাসনের সবকিছুতেই হয়ে গেছে ডিজিলাইজেশন। কিন্তু ডিজিটালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সেক্টর টেলিযোগাযোগ; সেখানে চলছে চরম বিশৃংখলা। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে যে কয়টি সেক্টরে অব্যবস্থাপনা বাসা বেঁধেছে তার অন্যতম টেলিযোগাযোগ। বৈধপথের সাথে পাল্লা দিয়ে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে অবৈধ ভিওআইপি কল। এতে গ্রাহকদের সেবার বদলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। ইন্টারনেটের ধীরগতি, আগে কলড্রপের জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হলেও এখন সেটা নেই। রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে একই চিত্র।

জানতে চাইলে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে টেলিযোগাযোগ সেবার কোয়ালিটি অব সার্ভিস সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এর অন্যতম কারণ অপারেটরদের গ্রাহক অনুপাতে তরঙ্গ কম থাকা। ফলে গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা, কলড্রপ, ডাটা ব্যবহারে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অবশ্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেছেন, ভিওআইপি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকা টেলিকম কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে জরিমানা বাবদ ৮৬০ কোটি ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে।

টেলিযোগাযোগ খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি)। লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বিটিআরসির নির্দেশনা মেনেই টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানে বাধ্য। অথচ সংস্থাটির উদাসীনতা, নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, দূর্বলতা ও ভুলের কারণে প্রতিনিয়তই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নিম্নমানের গ্রাহক সেবা, রাজস্ব বকেয়া, লাইসেন্সবিহীন কার্যক্রম পরিচালনা করলেও প্রতিষ্ঠানগুলোকে শোকজ নোটিশ দিয়েই দায় সারছে বিটিআরসি। আর কঠোর কোন ব্যবস্থা গ্রহণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে না পারায় অপারেটরগুলোও গুরুত্ব দেয়না সংস্থাটির কোন নোটিশকে। ফলে সর্বনিম্ন পর্যায়ে টেলিযোগাযোগ সেবা, গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা, কলড্রপ, ডাটা ব্যবহারে ভোগান্তির শিকার, বাজার যাচাই না করেই একের পর এক ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) লাইসেন্স প্রদান, মহল্লায় মহল্লায় লাইসেন্সবিহীন আইএসপি সেবা, নীতিমালা অমান্য করে মোবাইল ফোন অপারেটরদের অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন, ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটরের সেবার মূল্য নির্ধারণ না করা, রাজস্ব আদায়ে ও অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে বিটিআরসির ব্যর্থতাসহ নানা কারণেই বিশৃঙ্খল অবস্থা টেলিযোগাযোগ খাতে। যদিও বিটিআরসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-টেলিযোগাযোগ খাতে বিশৃঙ্খল অবস্থা এড়ানোর জন্য বিটিআরসি সচেষ্ট। এই খাতে যেনো সুষ্ঠু একটা ব্যবস্থা বিরাজমান থাকে সেজন্য সব সময় সচেষ্ট রয়েছে কমিশন।

গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে দিনের পর দিন নিম্নমানের গ্রাহক সেবা দিয়ে যাচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। বিটিআরসির আয়োজিত গণশুনানিতে এ বিষয়ে গ্রাহকদের পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংস্থাটি। দেশের জেলা-উপজেলা শহর থেকে শুরু করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত কলড্রপের শিকার গ্রাহকরা বিটিআরসি, অপারেটর এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ করেও কোন সমাধান পাচ্ছেন না। এর আগে সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম কলড্রপের জন্য ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা দিলেও কোন অজানা কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। যার সদুত্তর নেই কমিশনের কাছে। ইন্টারনেটের গতি নিয়ে খোদ বিটিআরসি’র জরিপেই উঠে এসেছে ধীরগতির ইন্টারনেট সেবার চিত্র। কিন্তু এক্ষেত্রেও নিরব কমিশন। গ্রামীণফোন, রবি, টেলিটক, সিটিসেল, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লি., ইন্টারকানেশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) ও ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডবিøউ) অপারেটরের কাছে ১৮ হাজার ৫৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা বকেয়া থাকলেও আদায় করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বছরের পর বছর ধরে অবৈধ ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) এর মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারালেও তা বন্ধ করতে পারেনি বিটিআরসি।

উপেক্ষিত গ্রাহক স্বার্থ: টেলিযোগাযোগ সেবার মান নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। ফোরজি’র কথা বলে টুজি ইন্টারনেট সেবা, কথা বলতে গেলেই কলড্রপ, মিউট (সংযোগ সচল থাকে কথা শোনা যায় না) কলের বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন প্রায় সব মোবাইল ফোন গ্রাহকই। টাকা ব্যয় করে নিম্নমানের সেবা পাওয়ায় জাতীয় সংসদেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি গ্রাহকদের। আগের মতোই ধীরগতির ইন্টারনেট, পাঁচ মিনিট কথা কললেও কলড্রপ ও মিউট কলের শিকার হওয়ার অভিযোগ করছেন তারা। মাঝে মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। বিটিআরসির জরিপেই ওঠে এসেছে, ফোরজি সেবায় মানসম্মত যে গতিসীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তিন অপারেটর (গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক)। কোন অপারেটরেই গতিসীমা নেই বেঞ্চমার্কের ধারের কাছে। কল সেটআপেও ব্যর্থতার বৃত্তে তিনটি অপারেটর (গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও টেলিটক)। আর কলড্রপে বেঞ্চমার্কে নেই গ্রামীণফোন। বিটিআরসির সর্বশেষ ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) ড্রাইভ টেস্টের’ প্রতিবেদনে জানা যায়, কলড্রপে সর্বোচ্চ হার ২ শতাংশ, পরীক্ষায় অন্য তিন অপারেটর উত্তীর্ণ হলেও গ্রামীণফোন ব্যর্থ হয়েছে। গ্রামীণফোনের কলড্রপের হার ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। যেকোন কল করার ক্ষেত্রে ৭ সেকেন্ডের মধ্যে সেই কল সংশ্লিষ্ট নম্বরে পৌঁছে যাওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু রবি ছাড়া বাকি তিন অপারেটরই বেশি সময় নিচ্ছে। থ্রিজি ইন্টারনেটে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক বেঞ্চমার্ক স্পিড দিতে পারলেও ব্যর্থ হয়েছে টেলিটক। আর এই পরীক্ষায় টেলিটকের ফোরজি পরীক্ষা না হলেও অন্য তিন অপারেটরই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কোয়ালিটি অব সার্ভিসের বেঞ্চমার্ক অনুযায়ি, থ্রিজিতে ডাউনলোডের সর্বনিম্ন গতি ২ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড (এমবিপিএস) আর ফোরজিতে ডাউনলোডের সর্বনিম্ন গতি হওয়ার কথা ৭ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ডে (এমবিপিএস)। থ্রিজিতে টেলিটক ছাড়া অন্য তিন অপারেটরের গতি ৩ এমবিপিএসের ওপরে হলেও টেলিটকের গতি ১ দশমিক ৬৩ এমবিপিএস। অন্যদিকে ফোরজিতে কোন অপারেটরই নির্ধারিত এই মান পূরণ করতে পারেনি।

বিটিআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়, কমিশন মোবাইল ফোনের সেবার মানের বিষয়ে তাঁর প্রতিশ্রুত কার্যাবলী চালিয়ে যাচ্ছে। কোয়ালিটি অব সার্ভিস রেগুলেশন অনুযায়ী ইতোমধ্যে সেবা প্রদানের জন্য অপারেটর সমূহকে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সেবার মানের বিষয়ে কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করার কোনও সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জরিমানা ও শাস্তির বিধানকে উপেক্ষা করা যায়না।

মুঠোফোন গ্রাহকদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে গতকালও মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন বিটিআরসিতে লিখিত অভিযোগ করেছে। সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে টেলিযোগাযোগ সেবার কোয়ালিটি অব সার্ভিস সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এর অন্যতম কারণ অপারেটরদের গ্রাহক অনুপাতে তরঙ্গ কম থাকা। ফলে গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা, কলড্রপ, ডাটা ব্যবহারে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গ্রামীণফোনের ৩৭ মেগাহার্টজ তরঙ্গ দিয়ে সেবা দিচ্ছে ৭ কোটি ২৫ লাখ গ্রাহককে। প্রায় ২০ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। রবির ৩৬ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গের বিপরীতে গ্রাহক প্রায় ৪ কোটি ৮০ লাখ। প্রায় ১৪ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বাংলালিংকে ৩ কোটি ৮০ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে তরঙ্গ আছে ৩০ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। প্রায় ১৩ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। টেলিটকের ৩৮ লাখ ৮৩ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে তরঙ্গ আছে ২৫ দশমিক ২ মেগাহার্টজ। প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে ব্যবহৃত হচ্ছে ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। অথচ ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গের বিপরীতে গ্রাহক শ্রীলঙ্কায় ২ লাখ ৭০ হাজার, পাকিস্তানে ১ লাখ ৪০ হাজার, আফগানিস্তানে ২ লাখ ৯০ হাজার, নেপালে ৫ লাখ ২২ হাজার, মালয়েশিয়ায় ২ লাখ, অস্ট্রেলিয়ায় ১ লাখ ২০ হাজার, জার্মানিতে ৩ লাখ ৯৯ হাজার। অন্যদিকে দেশের খুবই কম তরঙ্গ ব্যবহার করে গ্রাহক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এত কম পরিমাণ তরঙ্গ ব্যবহার করার ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে কলড্রপ, তেমনি নেটওয়ার্ক কভারেজ বাড়াতে যত্রতত্র বিটিএস বসানোয় তেজস্ক্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রাহকদের সেবার মান নিম্নমুখী হবার সাথে সাথে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে।

নিম্নমানের গ্রাহক সেবার বিষয়ে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, নিরীক্ষা জটিলতার কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বর্তমানে আমাদের অনাপত্তিপত্র বা এনওসি প্রদান বন্ধ রেখেছে। এর ফলে চলতি বছরে আমাদের প্রায় ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ আটকে গেছে। আমরা আশা করি, মানসম্মত টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনওসি প্রদান বন্ধের মতো বিনিয়োগবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।
আর গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিটিআরসির ভিত্তিহীন বিধিনিষেধ ও কারণ-দর্শানোর নোটিশটি এখনও বলবৎ থাকায় গ্রামীণফোনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও গ্রাহকসেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

নিয়ন্ত্রণহীন অবৈধ ভিওআইপি: বৈধপথে আন্তর্জাতিক কল বাড়াতে কমানো হয়েছে ইনকামিং কল টার্মিনেশন রেট। অবৈধ কল টার্মিনেশনে অনিবন্ধিত সিম ব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ দিয়ে) সিম নিবন্ধন চালু করেছে সরকার। অবৈধপথে কল আদানপ্রদানের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে দু’একটি অভিযানও চালাচ্ছে বিটিআরসি ও র‌্যাবের যৌথ টিম। তবে কোন কিছুই যেন কাজে আসছে না। বৈধপথের সাথে পাল্লা দিয়ে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে অবৈধ ভিওআইপি কল। অবৈধ এই ব্যবসার জন্য প্রতিবছর বিদেশে পাচার হচ্ছে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। আর সরকার হারাচ্ছে আড়াই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব। খোদ বিটিআরসি’র তথ্য অনুযায়ি প্রতিদিন আড়াই কোটি মিনিট কল অবৈধ পথে আসছে। যদিও বাস্তবে এই পরিমাণ আরও বেশি। তিন বছর আগেও যেখানে অবৈধ ভিওআইপির পাশাপাশি বছরে আন্তর্জাতিক কল থেকে সরকারের রাজস্ব এসেছে ২ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। সেখানে গত অর্থবছরে এটি নেমে এসেছে অর্ধেকেরও কমে। এই বছরে রাজস্ব আয় হয়েছে মাত্র ৯০৫ কোটি টাকা।

অবৈধ ভিওআইপিতে জড়িত থাকায় অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে কী ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, ভিওআইপি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকা টেলিকম কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে জরিমানা বাবদ ৮৬০ কোটি ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জরিমানা করা হয়েছে গ্রামীণফোনকে। এই অপারেটরটিকে জরিমানা করা হয়েছে ৪১৮ কোটি ৪০ লাখ, রবি আজিয়াটাকে ১৪৫ কোটি, বাংলালিংকে ১২৫ কোটি, র‌্যাংকস টেলিকমকে ১৫০ কোটি, পিপলস টেলিকমকে ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় অবৈধ ভিওআইপিতে শীর্ষে থাকা রাষ্ট্রীয় টেলিকম অপারেটর টেলিটককে জরিমানার কথা বলা হয়নি।

বকেয়া আদায়ে ব্যর্থতা: সরকার যেখানে রাজস্ব আদায়ের জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছে সেখানে টেলিযোগাযোগ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর ধরে রাজস্ব বকেয়া রেখেই ব্যবসা করে যাচ্ছে। গ্রামীণফোন, রবি, টেলিটক, সিটিসেল, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লি., ইন্টারকানেশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) ও ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডবিøউ) অপারেটরের কাছে ১৮ হাজার ৫৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা বকেয়। শুধু চার মোবাইল ফোন অপারেটরের কাছে সরকারের পাওনা ১৫ হাজার ১৬০ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের নিরীক্ষা দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ এবং রবির ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। বিপুল সংখ্যক এই অর্থ আদায়ে মুখোমুখী অবস্থানে রয়েছে বিটিআরসি ও দুই অপারেটর। অর্থ আদায়ে এনওসি বাতিলসহ লাইসেন্স বাতিলের হুমকী দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। আর বিটিআরসির নিরীক্ষা সঠিক নয় দাবি করে গঠনমূলক নিষ্পত্তি চেয়েছে তারা। বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করার পরও এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এবিষয়ে কোর্টে মামলাও করেছে দুই অপারেটর। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিটিআরসির ব্যর্থতার সুযোগ নিয়েই অপারেটররা নিরীক্ষার দাবি না মেনে কোর্টে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

রবির সাহেদ আলম বলেন, বিটিআরসি পরিচালিত বিতর্কিত নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বিষয়ে একটি মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। বিচারাধীন কোনো বিষয়ে তাইএ মূহুর্তে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তবে নিরীক্ষা আপত্তি নিয়ে জটিলতা সমাধানে সরকারের সাথে আমাদের আলোচনা চলছে। আমরা মনে করি, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সবার জন্য এ সমস্যার একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বেরিয়ে আসবে।

গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিটিআরসির ভিত্তিহীন এবং বিবাদমান নিরীক্ষা সংক্রান্ত দাবিটির গঠনমূলক সমাধানের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে আমাদের বিবেচনাধীন আছে। অর্থমন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের প্রতি তাদের সহায়তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু তাদের সদয় নির্দেশনা ও সহায়তা সত্তে¡ও বিবাদমান বিষয়টির সময়োপযোগী কোন অগ্রগতি এখনও হয়নি।

বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণফোন ও রবি ছাড়া ইন্টারকানেশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) অপারেটরদের কাছে বকেয়া ১৭০ কোটি টাকা, সিটিসেলের কাছে ১২৮ কোটি, টেলিটকের কাছে এক হাজার ৫৮৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা, আইজিডব্লিউ অপারেটরদের কাছে ৯২১ কোটি ১ লাখ টাকা এবং বিটিসিএলের কাছে ২ হাজার ২৮৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

আইএসপি সেবায় হ য ব র ল অবস্থা: বিটিআরসির তথ্য অনুয়ায়ি সারাদেশে এখন ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে লাইসেন্সধারী এক হাজার ৭০০ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি)। অভিযোগ রয়েছে বাজারের সক্ষমতা যাচাই না করেই একের পর এক আইএসপি লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে। যা এখনো অব্যাহত। যেখানে পুরনো ও বৈধ লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোই টিকে থাকার লড়াই করছে সেখানে একের পর এক লাইসেন্স প্রদান এবং অবৈধ আইএসপিদের কারণে কোনঠাসা আইএসপি ব্যবসায়ীরা। মহল্লায় মহল্লায় ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দিয়ে অবৈধ আইএসপি ব্যবসায়ীরা বৈধ ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় পার্টনারশিপ দাবি, মাসিক চাঁদা নির্ধারণসহ হয়রানি ও হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আইএসপি ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইন্টানেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক বলেন, লাইসেন্স যাদের আছে, বিটিআরসির নীতিমালা অনুয়ায়ী তারাই ব্যবসা করবে। নতুন যারা ব্যবসা করতে চায় তারা লাইন্সে নিয়ে, সরকারের আইনকানুন মেনে ব্যবসায় আসতে পারে। কিন্তু পেশী শক্তি দিয়ে বা ক্ষমতা আছে, শক্তি আছে এটি দেখিয়ে আমি থাকবো, অন্য কাউকে ব্যবসা করতে দিব না, বের করে দেবো এটা যেনো না হয়।

ঝুলে আছে এনটিটিএন সমস্যা: টেলিযোগাযোগ সেবার মহাসড়ক নির্মাণের জন্য ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের (এনটিটিএন) লাইসেন্স প্রদান করা হয় ৫টি প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে তিনটি সরকারি ও দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি দুই প্রতিষ্ঠান সামিট কমিউনিকেশন্স এবং ফাইবার এট হোমের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক এবং কিছু আইএসপি প্রতিষ্ঠান এনটিটিএন লাইসেন্সিং নীতিমালা অমান্য করে নিজেরাই অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করছে। বিটিআরসির কাছে অভিযোগ করেও এ বিষয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

জানতে চাইলে বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান বলেন, অডিট নিরীক্ষার বিষয়টি যেহেতু অর্থ মন্ত্রণালয় দেখছে, আমরা নোটিশ দিয়েছিলাম তারা নোটিশের জবাব দিয়েছে। আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখছি পরবর্তী কি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সেটা জানানো হবে। বকেয়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে বকেয়া পরিশোধের জন্য তাগাদা দেয়া হয়। নিম্ন মানের সেবার বিষয়ে জাকির বলেন, অপারেটরদের সেবা প্রদানের জন্য যে পরিমাণ স্পেকট্রাম চাহিদা সেটা এখন পর্যাপ্ত না। তাদেরকে স্পেকট্রাম কেনার জন্য বলা হচ্ছে। লাইসেন্স ছাড়া আইএসপি সেবার বিষয়ে বলেন, আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি। মনিটরিংয়ের বাইরেও কোন ঘটনা ঘটলে অভিযোগ করার অনুরোধ করছি। অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে লোকবলের সঙ্কটের কারণে অনেক কিছু করা সম্ভব হয়না বলেও জানান বিটিআরসির এই কর্মকর্তা।

সূএ:দৈনিক ইনকিলাব

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

টেলিযোগাযোগে বিশৃঙ্খলা বিটিআরসির নির্দেশনা পাত্তা দিচ্ছে না অপারেটররা

আপডেট টাইম : ০৮:০৭:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এখন চলছে ডিজিটাল যুগ। প্রশাসনের সবকিছুতেই হয়ে গেছে ডিজিলাইজেশন। কিন্তু ডিজিটালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সেক্টর টেলিযোগাযোগ; সেখানে চলছে চরম বিশৃংখলা। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে যে কয়টি সেক্টরে অব্যবস্থাপনা বাসা বেঁধেছে তার অন্যতম টেলিযোগাযোগ। বৈধপথের সাথে পাল্লা দিয়ে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে অবৈধ ভিওআইপি কল। এতে গ্রাহকদের সেবার বদলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। ইন্টারনেটের ধীরগতি, আগে কলড্রপের জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হলেও এখন সেটা নেই। রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে একই চিত্র।

জানতে চাইলে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে টেলিযোগাযোগ সেবার কোয়ালিটি অব সার্ভিস সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এর অন্যতম কারণ অপারেটরদের গ্রাহক অনুপাতে তরঙ্গ কম থাকা। ফলে গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা, কলড্রপ, ডাটা ব্যবহারে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অবশ্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেছেন, ভিওআইপি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকা টেলিকম কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে জরিমানা বাবদ ৮৬০ কোটি ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে।

টেলিযোগাযোগ খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি)। লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বিটিআরসির নির্দেশনা মেনেই টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানে বাধ্য। অথচ সংস্থাটির উদাসীনতা, নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, দূর্বলতা ও ভুলের কারণে প্রতিনিয়তই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নিম্নমানের গ্রাহক সেবা, রাজস্ব বকেয়া, লাইসেন্সবিহীন কার্যক্রম পরিচালনা করলেও প্রতিষ্ঠানগুলোকে শোকজ নোটিশ দিয়েই দায় সারছে বিটিআরসি। আর কঠোর কোন ব্যবস্থা গ্রহণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে না পারায় অপারেটরগুলোও গুরুত্ব দেয়না সংস্থাটির কোন নোটিশকে। ফলে সর্বনিম্ন পর্যায়ে টেলিযোগাযোগ সেবা, গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা, কলড্রপ, ডাটা ব্যবহারে ভোগান্তির শিকার, বাজার যাচাই না করেই একের পর এক ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) লাইসেন্স প্রদান, মহল্লায় মহল্লায় লাইসেন্সবিহীন আইএসপি সেবা, নীতিমালা অমান্য করে মোবাইল ফোন অপারেটরদের অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন, ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটরের সেবার মূল্য নির্ধারণ না করা, রাজস্ব আদায়ে ও অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে বিটিআরসির ব্যর্থতাসহ নানা কারণেই বিশৃঙ্খল অবস্থা টেলিযোগাযোগ খাতে। যদিও বিটিআরসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-টেলিযোগাযোগ খাতে বিশৃঙ্খল অবস্থা এড়ানোর জন্য বিটিআরসি সচেষ্ট। এই খাতে যেনো সুষ্ঠু একটা ব্যবস্থা বিরাজমান থাকে সেজন্য সব সময় সচেষ্ট রয়েছে কমিশন।

গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে দিনের পর দিন নিম্নমানের গ্রাহক সেবা দিয়ে যাচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। বিটিআরসির আয়োজিত গণশুনানিতে এ বিষয়ে গ্রাহকদের পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংস্থাটি। দেশের জেলা-উপজেলা শহর থেকে শুরু করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত কলড্রপের শিকার গ্রাহকরা বিটিআরসি, অপারেটর এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ করেও কোন সমাধান পাচ্ছেন না। এর আগে সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম কলড্রপের জন্য ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা দিলেও কোন অজানা কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। যার সদুত্তর নেই কমিশনের কাছে। ইন্টারনেটের গতি নিয়ে খোদ বিটিআরসি’র জরিপেই উঠে এসেছে ধীরগতির ইন্টারনেট সেবার চিত্র। কিন্তু এক্ষেত্রেও নিরব কমিশন। গ্রামীণফোন, রবি, টেলিটক, সিটিসেল, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লি., ইন্টারকানেশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) ও ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডবিøউ) অপারেটরের কাছে ১৮ হাজার ৫৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা বকেয়া থাকলেও আদায় করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বছরের পর বছর ধরে অবৈধ ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) এর মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারালেও তা বন্ধ করতে পারেনি বিটিআরসি।

উপেক্ষিত গ্রাহক স্বার্থ: টেলিযোগাযোগ সেবার মান নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। ফোরজি’র কথা বলে টুজি ইন্টারনেট সেবা, কথা বলতে গেলেই কলড্রপ, মিউট (সংযোগ সচল থাকে কথা শোনা যায় না) কলের বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন প্রায় সব মোবাইল ফোন গ্রাহকই। টাকা ব্যয় করে নিম্নমানের সেবা পাওয়ায় জাতীয় সংসদেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি গ্রাহকদের। আগের মতোই ধীরগতির ইন্টারনেট, পাঁচ মিনিট কথা কললেও কলড্রপ ও মিউট কলের শিকার হওয়ার অভিযোগ করছেন তারা। মাঝে মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। বিটিআরসির জরিপেই ওঠে এসেছে, ফোরজি সেবায় মানসম্মত যে গতিসীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তিন অপারেটর (গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক)। কোন অপারেটরেই গতিসীমা নেই বেঞ্চমার্কের ধারের কাছে। কল সেটআপেও ব্যর্থতার বৃত্তে তিনটি অপারেটর (গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও টেলিটক)। আর কলড্রপে বেঞ্চমার্কে নেই গ্রামীণফোন। বিটিআরসির সর্বশেষ ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) ড্রাইভ টেস্টের’ প্রতিবেদনে জানা যায়, কলড্রপে সর্বোচ্চ হার ২ শতাংশ, পরীক্ষায় অন্য তিন অপারেটর উত্তীর্ণ হলেও গ্রামীণফোন ব্যর্থ হয়েছে। গ্রামীণফোনের কলড্রপের হার ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। যেকোন কল করার ক্ষেত্রে ৭ সেকেন্ডের মধ্যে সেই কল সংশ্লিষ্ট নম্বরে পৌঁছে যাওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু রবি ছাড়া বাকি তিন অপারেটরই বেশি সময় নিচ্ছে। থ্রিজি ইন্টারনেটে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক বেঞ্চমার্ক স্পিড দিতে পারলেও ব্যর্থ হয়েছে টেলিটক। আর এই পরীক্ষায় টেলিটকের ফোরজি পরীক্ষা না হলেও অন্য তিন অপারেটরই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কোয়ালিটি অব সার্ভিসের বেঞ্চমার্ক অনুযায়ি, থ্রিজিতে ডাউনলোডের সর্বনিম্ন গতি ২ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড (এমবিপিএস) আর ফোরজিতে ডাউনলোডের সর্বনিম্ন গতি হওয়ার কথা ৭ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ডে (এমবিপিএস)। থ্রিজিতে টেলিটক ছাড়া অন্য তিন অপারেটরের গতি ৩ এমবিপিএসের ওপরে হলেও টেলিটকের গতি ১ দশমিক ৬৩ এমবিপিএস। অন্যদিকে ফোরজিতে কোন অপারেটরই নির্ধারিত এই মান পূরণ করতে পারেনি।

বিটিআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়, কমিশন মোবাইল ফোনের সেবার মানের বিষয়ে তাঁর প্রতিশ্রুত কার্যাবলী চালিয়ে যাচ্ছে। কোয়ালিটি অব সার্ভিস রেগুলেশন অনুযায়ী ইতোমধ্যে সেবা প্রদানের জন্য অপারেটর সমূহকে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সেবার মানের বিষয়ে কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করার কোনও সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জরিমানা ও শাস্তির বিধানকে উপেক্ষা করা যায়না।

মুঠোফোন গ্রাহকদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে গতকালও মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন বিটিআরসিতে লিখিত অভিযোগ করেছে। সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে টেলিযোগাযোগ সেবার কোয়ালিটি অব সার্ভিস সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এর অন্যতম কারণ অপারেটরদের গ্রাহক অনুপাতে তরঙ্গ কম থাকা। ফলে গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা, কলড্রপ, ডাটা ব্যবহারে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গ্রামীণফোনের ৩৭ মেগাহার্টজ তরঙ্গ দিয়ে সেবা দিচ্ছে ৭ কোটি ২৫ লাখ গ্রাহককে। প্রায় ২০ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। রবির ৩৬ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গের বিপরীতে গ্রাহক প্রায় ৪ কোটি ৮০ লাখ। প্রায় ১৪ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বাংলালিংকে ৩ কোটি ৮০ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে তরঙ্গ আছে ৩০ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। প্রায় ১৩ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। টেলিটকের ৩৮ লাখ ৮৩ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে তরঙ্গ আছে ২৫ দশমিক ২ মেগাহার্টজ। প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে ব্যবহৃত হচ্ছে ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। অথচ ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গের বিপরীতে গ্রাহক শ্রীলঙ্কায় ২ লাখ ৭০ হাজার, পাকিস্তানে ১ লাখ ৪০ হাজার, আফগানিস্তানে ২ লাখ ৯০ হাজার, নেপালে ৫ লাখ ২২ হাজার, মালয়েশিয়ায় ২ লাখ, অস্ট্রেলিয়ায় ১ লাখ ২০ হাজার, জার্মানিতে ৩ লাখ ৯৯ হাজার। অন্যদিকে দেশের খুবই কম তরঙ্গ ব্যবহার করে গ্রাহক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এত কম পরিমাণ তরঙ্গ ব্যবহার করার ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে কলড্রপ, তেমনি নেটওয়ার্ক কভারেজ বাড়াতে যত্রতত্র বিটিএস বসানোয় তেজস্ক্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রাহকদের সেবার মান নিম্নমুখী হবার সাথে সাথে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে।

নিম্নমানের গ্রাহক সেবার বিষয়ে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, নিরীক্ষা জটিলতার কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বর্তমানে আমাদের অনাপত্তিপত্র বা এনওসি প্রদান বন্ধ রেখেছে। এর ফলে চলতি বছরে আমাদের প্রায় ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ আটকে গেছে। আমরা আশা করি, মানসম্মত টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনওসি প্রদান বন্ধের মতো বিনিয়োগবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।
আর গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিটিআরসির ভিত্তিহীন বিধিনিষেধ ও কারণ-দর্শানোর নোটিশটি এখনও বলবৎ থাকায় গ্রামীণফোনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও গ্রাহকসেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

নিয়ন্ত্রণহীন অবৈধ ভিওআইপি: বৈধপথে আন্তর্জাতিক কল বাড়াতে কমানো হয়েছে ইনকামিং কল টার্মিনেশন রেট। অবৈধ কল টার্মিনেশনে অনিবন্ধিত সিম ব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ দিয়ে) সিম নিবন্ধন চালু করেছে সরকার। অবৈধপথে কল আদানপ্রদানের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে দু’একটি অভিযানও চালাচ্ছে বিটিআরসি ও র‌্যাবের যৌথ টিম। তবে কোন কিছুই যেন কাজে আসছে না। বৈধপথের সাথে পাল্লা দিয়ে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে অবৈধ ভিওআইপি কল। অবৈধ এই ব্যবসার জন্য প্রতিবছর বিদেশে পাচার হচ্ছে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। আর সরকার হারাচ্ছে আড়াই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব। খোদ বিটিআরসি’র তথ্য অনুযায়ি প্রতিদিন আড়াই কোটি মিনিট কল অবৈধ পথে আসছে। যদিও বাস্তবে এই পরিমাণ আরও বেশি। তিন বছর আগেও যেখানে অবৈধ ভিওআইপির পাশাপাশি বছরে আন্তর্জাতিক কল থেকে সরকারের রাজস্ব এসেছে ২ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। সেখানে গত অর্থবছরে এটি নেমে এসেছে অর্ধেকেরও কমে। এই বছরে রাজস্ব আয় হয়েছে মাত্র ৯০৫ কোটি টাকা।

অবৈধ ভিওআইপিতে জড়িত থাকায় অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে কী ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, ভিওআইপি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকা টেলিকম কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে জরিমানা বাবদ ৮৬০ কোটি ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জরিমানা করা হয়েছে গ্রামীণফোনকে। এই অপারেটরটিকে জরিমানা করা হয়েছে ৪১৮ কোটি ৪০ লাখ, রবি আজিয়াটাকে ১৪৫ কোটি, বাংলালিংকে ১২৫ কোটি, র‌্যাংকস টেলিকমকে ১৫০ কোটি, পিপলস টেলিকমকে ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় অবৈধ ভিওআইপিতে শীর্ষে থাকা রাষ্ট্রীয় টেলিকম অপারেটর টেলিটককে জরিমানার কথা বলা হয়নি।

বকেয়া আদায়ে ব্যর্থতা: সরকার যেখানে রাজস্ব আদায়ের জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছে সেখানে টেলিযোগাযোগ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর ধরে রাজস্ব বকেয়া রেখেই ব্যবসা করে যাচ্ছে। গ্রামীণফোন, রবি, টেলিটক, সিটিসেল, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লি., ইন্টারকানেশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) ও ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডবিøউ) অপারেটরের কাছে ১৮ হাজার ৫৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা বকেয়। শুধু চার মোবাইল ফোন অপারেটরের কাছে সরকারের পাওনা ১৫ হাজার ১৬০ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের নিরীক্ষা দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ এবং রবির ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। বিপুল সংখ্যক এই অর্থ আদায়ে মুখোমুখী অবস্থানে রয়েছে বিটিআরসি ও দুই অপারেটর। অর্থ আদায়ে এনওসি বাতিলসহ লাইসেন্স বাতিলের হুমকী দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। আর বিটিআরসির নিরীক্ষা সঠিক নয় দাবি করে গঠনমূলক নিষ্পত্তি চেয়েছে তারা। বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করার পরও এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এবিষয়ে কোর্টে মামলাও করেছে দুই অপারেটর। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিটিআরসির ব্যর্থতার সুযোগ নিয়েই অপারেটররা নিরীক্ষার দাবি না মেনে কোর্টে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

রবির সাহেদ আলম বলেন, বিটিআরসি পরিচালিত বিতর্কিত নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বিষয়ে একটি মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। বিচারাধীন কোনো বিষয়ে তাইএ মূহুর্তে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তবে নিরীক্ষা আপত্তি নিয়ে জটিলতা সমাধানে সরকারের সাথে আমাদের আলোচনা চলছে। আমরা মনে করি, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সবার জন্য এ সমস্যার একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বেরিয়ে আসবে।

গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিটিআরসির ভিত্তিহীন এবং বিবাদমান নিরীক্ষা সংক্রান্ত দাবিটির গঠনমূলক সমাধানের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে আমাদের বিবেচনাধীন আছে। অর্থমন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের প্রতি তাদের সহায়তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু তাদের সদয় নির্দেশনা ও সহায়তা সত্তে¡ও বিবাদমান বিষয়টির সময়োপযোগী কোন অগ্রগতি এখনও হয়নি।

বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণফোন ও রবি ছাড়া ইন্টারকানেশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) অপারেটরদের কাছে বকেয়া ১৭০ কোটি টাকা, সিটিসেলের কাছে ১২৮ কোটি, টেলিটকের কাছে এক হাজার ৫৮৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা, আইজিডব্লিউ অপারেটরদের কাছে ৯২১ কোটি ১ লাখ টাকা এবং বিটিসিএলের কাছে ২ হাজার ২৮৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

আইএসপি সেবায় হ য ব র ল অবস্থা: বিটিআরসির তথ্য অনুয়ায়ি সারাদেশে এখন ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে লাইসেন্সধারী এক হাজার ৭০০ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি)। অভিযোগ রয়েছে বাজারের সক্ষমতা যাচাই না করেই একের পর এক আইএসপি লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে। যা এখনো অব্যাহত। যেখানে পুরনো ও বৈধ লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোই টিকে থাকার লড়াই করছে সেখানে একের পর এক লাইসেন্স প্রদান এবং অবৈধ আইএসপিদের কারণে কোনঠাসা আইএসপি ব্যবসায়ীরা। মহল্লায় মহল্লায় ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দিয়ে অবৈধ আইএসপি ব্যবসায়ীরা বৈধ ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় পার্টনারশিপ দাবি, মাসিক চাঁদা নির্ধারণসহ হয়রানি ও হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আইএসপি ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইন্টানেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক বলেন, লাইসেন্স যাদের আছে, বিটিআরসির নীতিমালা অনুয়ায়ী তারাই ব্যবসা করবে। নতুন যারা ব্যবসা করতে চায় তারা লাইন্সে নিয়ে, সরকারের আইনকানুন মেনে ব্যবসায় আসতে পারে। কিন্তু পেশী শক্তি দিয়ে বা ক্ষমতা আছে, শক্তি আছে এটি দেখিয়ে আমি থাকবো, অন্য কাউকে ব্যবসা করতে দিব না, বের করে দেবো এটা যেনো না হয়।

ঝুলে আছে এনটিটিএন সমস্যা: টেলিযোগাযোগ সেবার মহাসড়ক নির্মাণের জন্য ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের (এনটিটিএন) লাইসেন্স প্রদান করা হয় ৫টি প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে তিনটি সরকারি ও দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি দুই প্রতিষ্ঠান সামিট কমিউনিকেশন্স এবং ফাইবার এট হোমের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক এবং কিছু আইএসপি প্রতিষ্ঠান এনটিটিএন লাইসেন্সিং নীতিমালা অমান্য করে নিজেরাই অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করছে। বিটিআরসির কাছে অভিযোগ করেও এ বিষয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

জানতে চাইলে বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান বলেন, অডিট নিরীক্ষার বিষয়টি যেহেতু অর্থ মন্ত্রণালয় দেখছে, আমরা নোটিশ দিয়েছিলাম তারা নোটিশের জবাব দিয়েছে। আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখছি পরবর্তী কি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সেটা জানানো হবে। বকেয়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে বকেয়া পরিশোধের জন্য তাগাদা দেয়া হয়। নিম্ন মানের সেবার বিষয়ে জাকির বলেন, অপারেটরদের সেবা প্রদানের জন্য যে পরিমাণ স্পেকট্রাম চাহিদা সেটা এখন পর্যাপ্ত না। তাদেরকে স্পেকট্রাম কেনার জন্য বলা হচ্ছে। লাইসেন্স ছাড়া আইএসপি সেবার বিষয়ে বলেন, আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি। মনিটরিংয়ের বাইরেও কোন ঘটনা ঘটলে অভিযোগ করার অনুরোধ করছি। অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে লোকবলের সঙ্কটের কারণে অনেক কিছু করা সম্ভব হয়না বলেও জানান বিটিআরসির এই কর্মকর্তা।

সূএ:দৈনিক ইনকিলাব