বিদেশে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট দেশেই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিতে আগামী সপ্তাহ থেকে অনলাইনে আবেদনপত্র নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আবেদন জমা নেয়া শেষে আবেদনকারীর উপজেলায় তদন্তের পর স্মার্টকার্ড ছাপিয়ে তার অবস্থানস্থলেই সরবরাহ করা হবে।
রোববার নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
প্রথম ধাপে চারটি দেশে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা চারটি দেশে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের এ কার্যক্রমের আওতায় আনছি। যুক্তরাজ্য, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরবের প্রবাসীরা এ সুযোগ পাবেন। আগামী রোববার অথবা মঙ্গলবার এ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসীদের ভোটার করে সেখানেই জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের অনুমতি লাগে। আমরা বিভিন্ন দেশে সার্ভে করার পর সিঙ্গাপুরকে বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু দেশটির সরকার এখনও অনুমতি না দেয়ায় অনলাইনেই আমরা কার্যক্রম শুরু করব।
এই চার দেশ সম্পন্ন করর পর যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের এ সুযোগ দেয়ার কথা জানিয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক বলেন, এই কার্যক্রম সম্পন্ন করতে প্রচারণা চালানো হবে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে।
এনআইডি অনুবিভাগ সূত্র জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করা হবে দুইটি প্রক্রিয়ায়। প্রথমে ইসি একটি আলাদা সার্ভার বসিয়ে তাদের ওয়েবসাইটে আলাদা লিংক যুক্ত করবে। সেই লিংকে ক্লিক করে প্রবাসীরা সংশ্লিষ্ট দেশে বসেই তাদের প্রয়োজনীয় সব কাগজ/দলিলপত্র আপলোড করবেন এবং ফরম পূরণ করে আবেদন সম্পন্ন করবেন।
এরপর আবেদনটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হবে তদন্তের জন্য। সেখান থেকে ইতিবাচক প্রতিবেদন আসলে আবেদনকারীকে নিবন্ধন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবে ইসি। পরে আবেদনকারীর দশ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নিতে সংশ্লিষ্ট দেশেই নিবন্ধন কেন্দ্র বসাবে ইসি। এবং সেখান থেকেই আবেদনকারীর আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নিয়ে স্মার্টকার্ড বা এনআইডি বিতরণ করবে ইসি।
প্রসঙ্গত, ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল দশকখানেক আগে। এরপর প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার দাবিও আলোচনায় আসে। তবে ভোটারদের বায়োমেট্রিক তথ্য সম্বলিত স্মার্ট কার্ড দেয়া শুরু হলেও প্রবাসীদের ভোটার করার প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতা দেখা দেয়। ফলে বিষয়টি আটকে থাকে।
এর আগে গত বছরের এপ্রিলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া ও ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে একটি আলোচনা সভা করেছিল নির্বাচন কমিশন।
উল্লেখ্য, বিশ্বের ১৬০টি দেশে চাকরিসূত্রে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি নাগরিক। প্রবাসীদের অনেকের নেই কোনো ন্যাশনাল আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র। দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি সোনার মানুষ হিসেবে পরিচিত এই প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান এবং ভোটাধিকার।