হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমার এখন নিজের পরিবার হয়েছে। আমরা চারজন। সবাই ব্যস্ত। ছেলেমেয়ে ব্যস্ত তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে। আমি এবং আমার স্ত্রী ব্যস্ত আমাদের কাজ নিয়ে। এখানে (সুইডেনে) আবার কাজের লোক নেই। সবকিছু নিজেদেরকেই করতে হয়।
যেমন আমার স্ত্রী আজ কাজ থেকে বাড়ি এসে লন্ড্রি করতে শুরু করেছে। আমি রাতের ডিনার রেডি করা থেকে শুরু করে খাবার শেষে থালাবাটি পরিষ্কার করার কাজ শেষ করলাম। ছেলে জনাথান দেশের বাইরে টেনিস ট্যুরে, মেয়ে জেসিকা বাড়িতে। সপ্তাহ ধরে স্কুল, তারপর টেনিস, আবার উইকেন্ডে এক্সট্রা কাজ সব মিলে আমাদের জীবন। তার অর্থ এই নয় যে আমাদের অন্য কিছু করার সময় নেই। অবশ্যই আছে।
আমি প্রতিদিনের মতো আজকেও হাঁটতে ঘণ্টাখানেক সময় দিয়েছি, দিনে করণীয় সব কাজ করেছি। এখন আবার টিভির সামনে বসে বিশ্বের কোথায় কি হচ্ছে খোঁজখবর রাখছি, দেখছি, সেই সঙ্গে লিখছি। সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটির সঙ্গেও জড়িত রয়েছি। টেলিফোন আসছে, টেকস্ট করেছি অনেককে, আবার পরিবারের সঙ্গেও সময় দিচ্ছি। ব্যস্ত জীবন প্রতিদিনই। তারপরও নিজেদের সব কর্মের শেষে সমাজের কাজ করার মতো সময় সর্বদাই থাকে। এটাই হওয়ার কথা।
পরনিন্দা করে যে সময় ব্যয় করা হয় সে সময় যদি সবাই ক্রিয়েটিভ কিছু করি তাহলে কিছু না হলেও মনের মধ্যে আত্মতৃপ্তি বোধ হয়, যা সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার এক ওষুধ। এ ওষুধে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। নেই ডিপ্রেশন। নেই স্ট্রেস, নেই অস্বস্তি নেই অশান্তি, আছে শুধু শান্তি ও স্বস্তি।
তার মানে কি ইউরোপে কোনও সমস্যা নেই? অবশ্যই এখানেও নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। তবে ভাবতেও অবাক লাগে যে এখানকার মানুষের পানিতে ডুবে মরার ভয় নেই। বসতবাড়ি ধসে পড়ার ভয় নেই। এমনকি অন্ন, বস্ত্র বা বাসস্থানের সমস্যা নেই তবুও এরা ভাবছে গ্লোবাল জলবায়ু এবং তাপমাত্রা নিয়ে। আমার স্ত্রী (মারিয়া) বাড়ির সব রুমেই নানা ধরনের ফুলের গাছ সব সময় রোপণ করে। আজকেও লন্ড্রির ফাঁকে নতুন গাছ রোপণ করছে, যেগুলো আছে সেগুলোর রীতিমতো যত্ন নিচ্ছে, ফুলগাছের সঙ্গে কথা বলছে।
কথা প্রসঙ্গে বলছে পৃথিবীর ইন্ডাস্ট্রি, যানবাহন, যুদ্ধের অস্ত্রপাতি, বিষাক্ত রাসায়নিক কেমিক্যাল প্রভৃতি পৃথিবীর জলবায়ু নষ্ট করছে। আমরা জানছি এবং শুনছি, কিন্তু নিজেরা কি করছি? আমাদের সবার উচিত সব জায়গাতেই গাছপালা লাগানো। এতে ভালো সময় কাটানো সম্ভব, ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব এবং আরও সম্ভব নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলা।
ঘরের ভিতরে জানালার পাশে এবং ব্যালকনিতে বারো মাসই গাছপালা, ফুল এবং ফলের চাষ করা সম্ভব। তাই সবাই যদি ঘরে ঘরে ছোট ছোট ফুলগাছ বা পাতা বাহারের গাছ লাগায় তবে বাড়িতে অগত্যা ক্লাইমেটের অবনতি হবে না।
মারিয়ার কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে গেলো বাংলাদেশের কথা। মনে পড়ে গেল ১৭ কোটি মানুষের কথা। মনে পড়ে গেল কমপক্ষে পাঁচ কোটি বাসাবাড়ির কথা। মনে পড়ে গেল রাস্তাঘাট, হাটবাজারসহ সমস্ত খালি জায়গার কথা। প্রতিদিন যদি সবাই একটি পরনিন্দা থেকে বিরতি থেকে একটি ফুলের বা ফলের গাছ রোপণ করি তাহলে ১৭ কোটি নতুন গাছ জন্মাবে সেইসঙ্গে ১৭ কোটি পরনিন্দা বিলীন হয়ে যাবে। ভাবতেই চমৎকার লাগছে। নিজের হাতে তৈরি করা কিছু চোখের সামনে বড় হতে দেখার মজাই আলাদা। গাছপালা যতোবেশি আমরা রোপণ করব ততোবেশি কার্বন- ডাই-অক্সাইড থেকে মুক্তি পাবো। সারা পৃথিবী যদি এ কাজটি শুরু করে তবে আমি নিশ্চিত পৃথিবীর মাধুর্য যেমন বৃদ্ধি পাবে আমরাও আনন্দময় জীবন পাবো।
একইসঙ্গে খাবারের উচ্ছিষ্ঠ বা নোংরা আবর্জনাগুলো বাড়ির পাশে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গর্ত করে সেখানে কম্পোস্ট তৈরি করতে পারি। এই কম্পোস্ট মাটির সঙ্গে মিশিয়ে মাটির উর্বরশক্তি বৃদ্ধি করে ফলমূল শাকসবজির চাষ করতে পারা সম্ভব। বাংলাদেশের তরুণ সমাজ থেকে শুরু করে সব বয়সের সকলেই এই কাজটি একত্রিত হয়ে করতে পারলে একটি ফ্যামিলি বাইন্ডিং মাইন্ড সেট তৈরির সঙ্গে পরিবেশ পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা সম্ভব। সকল ধর্মে ভালো কাজগুলোই কিন্তু বেশি বেশি করার আদেশ রয়েছে। তাই তা প্রতিনিয়ত করা দরকার।
এখন সবকিছু উল্টো হয়েছে যেমন খারাপ কাজ সারাক্ষণ করা আর মাঝেমধ্যে ভালো কাজ করা। যেমন বছরে মাঝেমধ্যে বা হঠাৎ কাউকে সাহায্য করা অকেশনালি। কিভাবে ভালো কাজে মোটিভেশন পেতে পারি? ভালো কাজের মধ্য দিয়েই এর মোটিভেশন পাওয়া সম্ভব।
মনের মধ্যে বড্ড জিদ চেপেছে যখন দেখছি দোহার(Doha) চলমান বিশ্বকাপ অ্যাথলেটিক্সে অনেক দেশের অংশগ্রহণ। লাল সবুজের পতাকা নেই সেখানে কিন্তু বৃক্ষরোপণে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই হতে পারে এমন একটি উদ্যোক্তা দেশ পৃথিবীর মধ্যে। কারণ আমরা পানিতে ডুবে মরতে চাইনা। আমরা মহামারী এবং ডেঙ্গুর মত ভয়াবহ বিষাক্ত ছোবলে প্রাণ হারাতে চাই না।
আমরা ফুলে-ফলে ভরা ভালোবাসার সুখের ঘর তৈরি করে মানুষের মতো বাঁচতে চাই। তাহলে আসুন সবুজ বাংলা গড়ি এবং গাছ লাগাই। এমন গাছ লাগাতে হবে যেগুলো দীর্ঘ সময় বাঁচে। এর ফলে দীর্ঘ দিন ধরে বায়ুমণ্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ এবং সংরক্ষণ করতে পারবে।