কাশ্মীরিদের জন্য সময়টা ছিলো গাছ থেকে টসটসে আপেল সংগ্রহ করে বাজারজাত করার। কাশ্মীরের সোপোরি শহরের বাজারে এখন ব্যবসায়ীদের আনাগোনা আর ট্রাকের বহর থাকার কথা ছিল। তবে সেই বাজারে এখন সুনসান নিস্তব্ধতা। গাছের আপেল গাছেই পঁচে যাচ্ছে।
গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা বাতিল করে মোদি সরকার। কাশ্মীরিদের বিক্ষোভ দমনে সেখানে কারফিউ জারিসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধে শত শত রাজনৈতিক কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়েও বিক্ষোভ করছে কাশ্মীরিরা।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আপেল উৎপাদনকারী অঞ্চল কাশ্মীর। বিস্তৃত আপেল বাগান, বড় বড় বাড়ি ও সমৃদ্ধির জন্য সোপোরি শহরকে ‘লিটল লন্ডন’ হিসেবে ডাকা হয়। তবে সেই শহর এখন যেন ধূসর মরুভূমি। বাজারে সুনসান নীরবতা। নেই কোনো ক্রেতা-বিক্রেতা।
এক ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেছেন, ‘সবাই ভীত। কেউই আসছে না।’
কাশ্মীরের অর্থনীতি আপেল হচ্ছে প্রাণ সঞ্চারিণী। রাজ্যের ৩৫ লাখ মানুষ অর্থাৎ মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকই আপেল উৎপাদন ও বিপণননের সঙ্গে জড়িত।
কৃষক ও ফল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সরকারের দমনপীড়নের কারণে তারা স্থানীয় বাজারে কিংবা ভারতের অন্যান্য রাজ্যে ফল পাঠাতে পারছেন না। বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গ্রুপগুলোও তাদেরকে ফল সংগ্রহ ও বিপণন বন্ধ রাখতে হুমকি দিচ্ছে বলে অনেকে জানিয়েছেন। সংগ্রহ না করায় গাছের ফল তাই গাছেই পঁচছে।
হাজি নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা দুদিক থেকেই আটকা। আমরা এখানেও যেতে পারি না ওখানেও যেতে পারি না।’
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, কেবল ফল খাতই নয়, কাশ্মীরের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত পর্যটন ও হস্তশিল্পও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
শামীম আহমেদ নামের এক পর্যটন এজেন্ট জানান, এই বছর পর্যটক মৌসুম পুরোটাই শূন্য।
তিনি বলেন, ‘আগস্ট হচ্ছে চড়া মৌসুম এবং আমাদের অক্টোবর পর্যন্ত বুকিং থাকে। ক্ষতি কাটাতে দীর্ঘ সময় লাগবে। আমরা জানি না এরপর কী হবে।’
পর্যটকের অভাবে খা খা করছে কাশ্মীরের কার্পেটের বাজার। যোগাযোগ ব্যবস্থা এক রকম বিচ্ছিন্ন থাকায় ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও কার্পেট পাঠাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
শওকত আহমেদ নাম এক কার্পেট ব্যবসায়ী বলেন, ‘পর্যটক না থাকলে বিক্রিও বন্ধ। যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা ভারতের অন্যান্য অংশেও বিক্রি করতে পারছি না।’