হাওর বার্তা ডেস্কঃ ডেঙ্গুর ছোবলে কয়েকদিনের ব্যবধানে ঝরে গেছে কিশোরগঞ্জের দুই কলেজছাত্রসহ ছয়টি মূল্যবান জীবন। সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে মনোয়ারা বেগম (৪৫) নামে এক গৃহবধূর নাম। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এই গৃহবধূ। গৃহবধূ মনোয়ারা বেগম মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের চমকপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী। তিন ছেলে ও দুই কন্যা সন্তানের জননী মনোয়ারার কিডনিজনিত সমস্যার চিকিৎসা করাতে ঢাকায় নিয়ে গেলে ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে তার। ঈদের পরদিন মঙ্গলবার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় ওইদিনই তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে গতকাল দুপুরে মনোয়ারা পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।
এবার ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত কিশোরগঞ্জে ছয়জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের মধ্যে তিনজন নারী এবং তিনজন পুরুষ। তিন নারীর মধ্যে দুই গৃহবধূ মনোয়ারা বেগম (৪৫) ও নাসরিন আক্তার (২০) এবং এক মাদরাসা ছাত্রী সাকিনা (১৮)। তিন পুরুষের মধ্যে দুই কলেজছাত্র আল আমিন (১৭) ও ফরহাদ হোসেন (২০) এবং এক সিআইডি সদস্য জামাল আহমেদ (৩৬)।
তাদের মধ্যে গত ২১শে জুলাই সকালে রাজধানীর বড় মগবাজার এলাকার একটি হাসপাতালে কলেজছাত্র আল আমিন মারা যান। আল আমিন হোসেনপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ আড়াইবাড়িয়া এলাকার আবদুস সাত্তারের ছেলে। তিনি তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাজধানীর বেগুনবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করার সময় তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। হাসপাতালে ভর্তি করার পর ৯ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হেরে যান আল আমিন।
ঈদের আগের দিন গত ১১ই আগস্ট বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কলেজছাত্র ফরহাদ হোসেন। তিনি ইটনা উপজেলার বড়িবাড়ি ইউনিয়নের শিমুলবাঁক হাটির পল্লী চিকিৎসক ফেরদৌস মিয়ার ছেলে এবং শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। কিশোরগঞ্জ শহরের বাসায় অবস্থান করার সময় ফরহাদ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে তিনদিন চিকিৎসা নেয়ার পর তার অবস্থার অবনতি হলে গত ১০ই আগস্ট তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
ঈদের আনন্দের দিনে গত ১২ই আগস্ট ডেঙ্গু কেড়ে নেয় সিআইডিতে কর্মরত জামাল আহমেদের প্রাণ। সন্ধ্যায় রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। জামাল আহমেদ কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ মনিপুরঘাট এলাকার মো. আবদুল মান্নানের ছেলে। তিনি সিআইডি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। ঈদের পরদিন গত ১৩ই আগস্ট ভোর ৪টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাকিনা (১৮) নামে এক কওমি মাদরাসাছাত্রী।
সাকিনা জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার গুনধর ইউনিয়নের মোকামবাড়ি গ্রামের মো. রইছ উদ্দিনের মেয়ে। গ্রামের বাড়িতে বেশ কয়েকদিন জ্বরে ভোগার পর জেলা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়ার পর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। পরে তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ঈদের দিন রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ভোর ৪টার দিকে সাকিনা মারা যান।
এর পরদিন গত ১৪ই আগস্ট ভোর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গৃহবধূ নাসরিন আক্তার। গৃহবধূ নাসরিন আক্তার কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের দাসেরগাঁও গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী। এক সন্তানের জননী নাসরিন স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকতেন। সেখানেই তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে তিনি বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে যান। ঈদের পর দিন মঙ্গলবার রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৩টার দিকে নাসরিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।