হাওর বার্তা ডেস্কঃ দুই সিটির মেয়রের মশা নিধনের আগাম পরিকল্পনার অভাবে নগরীতে ডেঙ্গু মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এর মূল কারণ হিসেবে নগরীর বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেন, বাস্তবতার নিরিখে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরুর আগে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি। আর যে ওষুধ ছিটানোর কথা তা ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তদারকির অভাবে সঠিকভাবে ছিটানো হয়নি।
সকাল বেলা এডালডি সাইড মশার লার্ভা নির্মূলে কাউন্সিলরদের কার্যালয় থেকে মশক নিধনকর্মীরা ওষুধ নিয়েছেন। কিন্তু তারা সেই ওষুধ প্রয়োগ না করে কালোবাজারে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক দিকে নিম্নমানের ওষুধ অন্যদিকে মশককর্মীদের কারসাজির কারণে ওষুধগুলো প্রয়োগ করা হয়নি। এ কারণে মশার উপদ্রব বাড়ছে। পাশাপাশি ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এর দায়ভার দুই মেয়র এড়াতে পারে না।
নগরীর গুলিস্তান এলাকার বাসিন্দা সানাউল হক সাংবাদিককে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র নামে মাত্র কোন কাজের নয়। কারণ হিসেবে বলেন, তার খামখেয়ালীর জন্য অকার্যকর ওষুধের উপর ভর করার কারণে মশার উপদ্রব বাড়ছে। একই সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রভাব বিস্তার করেছে। এর দায় মেয়রকে নিতে হবে।
নগরবাসী বলছেন, গত দুই বছরের মধ্যে সকাল-বিকাল ফগার মেশিনের শব্দ নগরবাসীর কানে শোনেনি। ডেঙ্গুর প্রভাব বিস্তারের সাথে সাথে নতুন করে ওষুধ কেনা, ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে মসজিদ স্কুল, কলেজে প্রচারণা বাড়ানোর উপর জোর দেয়া হয়েছে। আগে এই প্রচারণা চলমান থাকলে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৫০-৫৫ জন মানুষের প্রাণ হয়তো বেঁচে যেতো। যদিও মুত্যুর উপর আল্লাহ ছাড়া কারো হাত নেই। তারপরেও ডেঙ্গুর অজুহাতে থেকে মৃত্যুর অপবাদ টানতে হতো না দুই মেয়রকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, লোকবল, ফগার মেশিন ও অর্থের সংকটে এলাকাভিত্তিক ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার হচ্ছে না। এ কারণে ডেঙ্গুর মৌসুমে দৌঁড়ে বেড়াতে হচ্ছে দুই মেয়রকে। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা থাকলে কোন সমস্যার সম্মুখীন হতো না দুই সিটি করপোরেশেন।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থ বরাদ্দ নয়, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা।
এ অবস্থায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলছেন, কোনো অজুহাতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গাফিলতি দেখলে, কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কাজল বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ মশার ওষুধ যেটা আমাদের দরকার তা নেই। লোকবলও কম। লোকবল ও মশার ওষুধ ছিটানোর মেশিন বাড়াতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটির কাউন্সিলর ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরুল ইসলাম রতন সাংবাদিককে বলেন, আমার এলাকায় ডেঙ্গুর প্রভাব খুব কম। তার পরেও প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মশক নিধনকর্মীরা নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর কাজ করছে। আর পরিচ্ছন্নকর্মীরা নিয়মিত পরিচ্ছন্ন কাজ করছে। তিনি বলেন, আমার এলাকায় শুধুমাত্র জহুরী মহল্লার রাস্তার এক জায়গায় পানি জমে থাকে এটি সমাধান হলে পরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড দাবি করবো।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ সমর রায় বলেন, আমি ফগার মেশিন পর্যন্ত যেতে চাই না। দুই সিটির মেয়রের বড় শক্তি হচ্ছে জনগণ, দলের কর্মী। উনি যদি মনে করেন কাজ করবেন, তাহলে ওনারা জনগণ নিয়ে কাজ করতে পারত।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম বলেন, কাউন্সিলররা যদি কোথাও সক্রিয় না থাকে তাহলে তথ্য দেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সংকট থাকলে তারা আমাদের কাছে বলুক আমরা ব্যবস্থা নেব। স্থায়ী সমাধানের জন্য এডিস মশা মারা চেয়ে বংশবৃদ্ধি রোধ করা বেশি জরুরি বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।