হাওর বার্তা ডেস্কঃ এ এক অদ্ভুত দেশ! সংখ্যালঘুরাই এখানে আছেন মহাসুখে, প্রচণ্ড দাপটে। তবে একটি কথা। সংখ্যালঘু বলতে এত দিন যা জেনে এসেছি, প্রকৃত অর্থে সে জানা বাস্তবতার সঙ্গে কতটা সমান্তরাল; তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। বাংলাদেশে ধর্মের নামে উপজাতি বা নৃগোষ্ঠীর নামে বিভাজন তৈরি করে সংখ্যালঘুর যে তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাকে একটি প্রহসন ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। এটি একটি প্রতারণা। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক জনগোষ্ঠীর সূক্ষ্ম এক্সপ্লয়টেশন।
তবে আজ যে সংখ্যালঘুদের কথা বলছি, এদের প্রশ্নে কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়। এরা সমাজের মাথা, কর্ণধার এবং সব অঘটনের নেপথ্য কারিগর। এদের কোনো ধর্মভেদ নেই। এখানে সব ধর্মের লোক পরমাত্মীয়ের মতো। এদের উদ্দেশ্য একটিই। এক্সপ্লয়টেশন। প্রতারণার মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে নিজেদের ভোগবিলাসিতাকে ত্বরান্বিত করা। দৃশ্যত সংখ্যালঘুরা প্রকৃত সংখ্যালঘু নয়। এদের সাজিয়ে রাখা হয়েছে প্রকৃত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য। বাংলাদেশে আমরা সবাই সমান মর্যাদার। অধিকারও সমান। আমাদের সংবিধান সে অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। এখানে কোনো ধর্মই সে মর্যাদা বা অধিকারকে ক্ষুণ্ন করার ক্ষমতা রাখে না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মর্যাদা এবং অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ক্ষুণ্ন করছেন প্রকৃত সংখ্যালঘুরা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ বিমান সম্পর্কে সংসদীয় কমিটিতে দেওয়া নথি পর্যালোচনার তথ্যে বলা হয়, গত ১০ বছরে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কমিশনে বিমান থেকে টিকিট নিয়েছেন কমপক্ষে ৪৫ হাজারেরও বেশি। এসব টিকিটের মধ্যে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রুটের টিকিটও আছে। কম দামে এসব টিকিট নেওয়ার কারণে বিমান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা। বিমানের অর্থ পরিদফতর, উচ্চপদস্থ থেকে কনিষ্ঠ কর্মকতা সবাই এ সুবিধা নিয়েছেন।
এমনকি নিজ নামের পাশাপাশি স্ত্রী-পরিজনদের নামেও নিয়েছেন একাধিক টিকিট। এর কোনোটিতে শতভাগ কমিশন, কোনোটিতে ৯০। এরাই সেই প্রকৃত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য। যারা নিজেদের ভোগবিলাসকে বহাল রাখার জন্য যেকোনো ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হতে পারেন। এ সম্প্রদায়ের মাঝে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সব ধর্মের মানুষের পদচারণা রয়েছে। যাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বিমান ধারাবাহিকভাবে লোকসানে ধুঁকছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্র।
শুধু বিমানের ক্ষেত্রেই নয়। সম্ভবত সরকারি বা আধা স্বায়ত্তশাসিত সব প্রতিষ্ঠানের চিত্রই এক। এদের দর্শনচিন্তাও এক ও অভিন্ন। এরা ‘চারবাক’ দর্শনে বিশ্বাসী। তবে বাংলাদেশের মোট জনসমষ্টির মাঝে এদের সংখ্যা অতি নগণ্য বললে বেশি বলা হবে না। পরিশুদ্ধ ভাষায় বলতে গেলে এরাই এ দেশের প্রকৃত সংখ্যালঘু। যারা অদৃশ্য এক এক্সপ্লয়টেশনের মধ্য দিয়ে গোটা জাতির রক্ত শোষণ করে নিজেদের অবস্থানকে সুসংহত করছে। এদের কারণেই দেশ আজ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
এখান থেকে সহজে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয় জেনেও এটুকু প্রত্যাশা করা যায়, কমিশনে টিকিট হস্তান্তর নিয়মটিকে বন্ধ করা হোক। একই সঙ্গে সরকারি বা আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত সব প্রতিষ্ঠানে দেয় এমন সুবিধা প্রত্যাহার করা হোক। বেশি না হলেও দেশের কিছু টাকার তো সাশ্রয় হবে এবং কিছু অনৈতিক কর্মকান্ডের হাত থেকে রক্ষা পাবে বাংলাদেশ। মনে রাখতে হবে, এ টাকা কোনো ব্যক্তিবিশেষের নয়, এ টাকা রাষ্ট্রের তথা জনগণের।