বন্যায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৮০০ কিলোমিটার সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জে এবারের বন্যায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনো অনেক স্থানে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি। সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযাগের সড়কগুলো ছাড়াও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কের। এতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে লোকজনকে। তবে উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের গ্রামীণ সড়কই বেশি।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর হিসেব মতে, এখন পর্যন্ত বন্যায় জেলায় ২৭৯টি সড়কের ৮৪৮ কিলোমিটার সড়ক, ৯৬টি সেতু ও কালভার্টের ক্ষতি হয়েছে। সড়ক, সেতু, কালভার্ট এবং অবকাঠামো মিলিয়ে টাকার অংকে জেলায় ক্ষতি হয়েছে ২০৯ কোটি টাকার। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নিয়ন্ত্রাণধীন গ্রামীণ সড়কই বেশি। তবে এখনো অনেক উপজেলায় বন্যার পানি রয়েছে। তাই এটাকে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির হিসেবে বলা যাবে না।

সুনামগঞ্জ এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় এই প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণাধীন ২৭৫টি সড়কের ৮১৮কিলোমিটার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ৯৬টি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি এলজিইডির বিভিন্ন স্থাপনাও ক্ষতি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ¯স্রোত, অতিবৃষ্টি এবং সড়কের ওপর পানি জমে থাকাই ক্ষতির কারণ। টাকার অংকে এলজিইডির সড়ক, সেতু ও কালভার্ড এবং অবকাঠামো মিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে ১৯৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকার। এ ছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের চারটি সড়কের প্রায় ৩০ কিলোমিটার নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি।

এলজিইডির হিসেব অনুযায়ী, জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার ৬৬টি সড়কের ১৮৫ কিলোমিটার, শাল্লা উপজেলার ২৩টি সড়কের ৪৫ কিলোমিটার, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ৩০টি সড়কের ৬০ কিলোমিটার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ৪২টি সড়কের ১২৬ কিলোমিটার, দিরাই উপজেলায় নয়টি সড়কের ২৮ কিলোমিটার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৫১ টি সড়কের ১৬৮ কিলোমিটার, তাহিরপুর উপজেলায় ৩টি সড়কে ১৬ কিলোমিটার, জামালগঞ্জ উপজেলার ছয়টি সড়কে ছয় কিলোমিটার, জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০টি সড়কে ৭৫ কিলোমিটার, ধরমপাশা উপজেলায় ১৫টি সড়কে ৫০কিলোমিটার এবং ছাতক উপজেলায় ১০টি সড়কে ৫৮ কিলোমিটারের ক্ষতি হয়েছে। এসব জায়গায় সড়কের পিচ, ঢালাই ওঠে গেছে। আবার কোথাও কোথাও ভেঙে গেছে।

এ ছাড়া জেলার ১১ উপজেলায় ৯৬টি সেতু ও কালভার্টের এক হাজার ১১৯মিটার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১০টি, শাল্লায় পাঁচটি, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১২টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ১৫টি, দিরাইয়ে তিনটি, বিশ্বম্ভরপুরে ১০টি, তাহিরপুর উপজেলায় চারটি, জামালগঞ্জে আটটি, জগন্নাথপুর উপজেলায় ছয়াট, ধরমপাশায় ২০টি এবং ছাতক উপজেলায় তিনটি সেতু ও কালভার্টের ক্ষতি হয়েছে।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন সুনামগঞ্জ-সাচনা, সুনামগঞ্জ-কাছিরগাতি, ছাতক-দোয়ারাবাজার এবং আনোয়ারপুর-তাহিরপুর সড়কের প্রায় ৩০কিলোমিটার বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়। এ কারণে বিভিন্নস্থানে ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও সড়ক ভেঙে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ ও গর্তের।

সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের আনোয়ারপুর এলাকায় ঢলের পানির তোড়ে সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় এই সড়কে সরাসরি যান চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে। এই সড়কের শক্তিয়ারখলা এলাকা নিচু হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নামলেই ওই অংশটুকু নিমজ্জিত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এই অংশ এলজিইডির অধীনে। আবার আনোয়ারপুর এলাকায় ঢলের পানিতে প্রায় প্রতিবছর সড়কের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অংশ আবার সড়ক ও জনপথ বিভাগের।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বলেছেন, আমার উপজেলায় ঢলের পানির তোড়ে সড়কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক ছাড়াও উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়েছে। তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক এখনো জলমগ্ন। মানুষজন চলাচল করতে পারছেন না। সীমান্ত এলাকার সড়কগুলো ভেঙেচুরে একাকার হয়ে আছে। পানি কমলে দ্রুত এই সড়কগুলোর সংস্কার কাজ করতে হবে।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এরশাদ মিয়া বলেন, বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলা এলাকায় সড়ক নিচু হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নামলেই এই স্থানটি পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। মানুষ বিপাকে পড়েন। তখন তাহিরপুর উপজেলার মানুষ জেলা সদরে যেতে পারেন না। এই সমস্যা থেকে কিভাবে মুক্ত হওয়া যায় এ নিয়ে চিন্তা করা জরুরি।

সুনামগঞ্জে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এটা চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র নয়, বন্যায় গ্রামীণ সড়কের বেশি ক্ষতি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখনো বন্যার পানি আছে। পানি সম্পূর্ণ নেমে গেলে পুরো ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, আমরা ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত অবহিত করছি। বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজ হবে।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন,‘আমাদের মূলত চারটি সড়কে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এসব সড়কে আপাতত জরুরি সংস্কার কাজ করব, কিছু কিছু সড়কে কাজ শুরু হয়েছে। স্থায়ী কাজ হবে পরবর্তীতে।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর