হাওর বার্তা ডেস্কঃ বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূল এখন ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছে ভরপুর। জাল ফেললেই ধরা পড়বে ইলিশ, লাক্ষ্যা, কোরাল, পোপা, গুইজ্যাসহ নানা প্রজাতির মাছ। মাছ বিক্রির টাকায় দূর হবে জেলেপল্লির অভাব-অনটন। জেলেদের লক্ষ্য এখন ইলিশ ধরা।
কথাগুলো বলেন কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটার জেলে আবদুল খালেক। নুনিয়াছটা ফিশারিঘাটে গতকাল সোমবার দুপুরে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। জেলার বৃহৎ পাইকারি মাছের বাজার এই ফিশারিঘাট। এটি সরকারের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। গভীর সমুদ্র থেকে আহরিত অধিকাংশ মাছ এ ঘাটে বেচাকেনা চলে। ঘাটের পাশেই বাঁকখালী নদী। নদীতে ভাসমান আছে কয়েক শ ট্রলার। বুধবার সকাল থেকে গভীর সমুদ্রে ইলিশ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছে সব কটি ট্রলার।
জেলেদের ভাষ্য, ৬৫ দিন মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় মাছের মজুত ও আকৃতি দুটোই বেড়েছে। আরেকটি ট্রলারের জেলে আবদুল মাবুদ (৫৫) বললেন, ‘৩৫ বছর ধরে সাগরে মাছ ধরে চলেছি, কোনো সময় সংসারে টানাপোড়েন দেখা দেয়নি। এবার ৬৫ দিনের মাছ ধরা কর্মসূচি জেলেদের দুর্দশা বাড়িয়ে দিয়েছে। পুনর্বাসনে তেমন উদ্যোগও ছিল না। এখন ইলিশ ধরে দেনা শোধের চেষ্টা চালাতে হবে জেলেদের।’
কক্সবাজার উপকূল সাগরে মাছ ধরার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আজ শেষ ৫ হাজার নৌকা প্রস্তুত।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, গত ২০ মে থেকে ৬৫ দিনের মাছ ধরা বন্ধ কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। আজ মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) এ নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। তারপর জেলেরা মাছ ধরতে সাগরে নামবেন। ইতিমধ্যে অনেকে প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন। জেলেরা প্রাপ্তবয়স্ক মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরলে বাজারের মাছের সংকট দূর হবে।
মহেশখালীর বাসিন্দা ও ট্রলার মালিক সরওয়ার কামাল বলেন, বাজারে এখন মাছের প্রচুর চাহিদা। চাহিদা পূরণে জেলেরা মাছ ধরার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। কিন্তু ‘জলদস্যু’ নিয়ে অধিকাংশ জেলে আতঙ্কে। মাছ ধরে উপকূলে ফেরার সময় একাধিক জলদস্যু বাহিনী লুটপাট চালাতে পারে।
টেকনাফের জেলেদের দুর্ভাগ্য
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, ইয়াবা চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল থেকে টেকনাফের নাফ নদী ও তৎসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উপকূলে মাছ ধরা বন্ধ রাখে প্রশাসন। এ কারণে দুই বছর ধরে টেকনাফের ১৫ হাজারের বেশি জেলে মাছ ধরতে পারছেন না। ফলে জেলেপল্লির ঘরে ঘরে চলছে হাহাকার চলছে।
জানা গেছে, ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞার আওতায় টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার আরও ২০ হাজার জেলে মাছ ধরতে পারেননি। ২৪ জুলাই থেকে সারা দেশের জেলেরা সাগরে মাছ ধরার সুযোগ পেলেও টেকনাফের জেলেরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
নৌকা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ গণি বলেন, টেকনাফের জেলেদের নাফ নদীসহ সাগর উপকূলে মাছ ধরার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত ২৬ মে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছিল। এ পর্যন্ত সাড়া মেলেনি। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরও টেকনাফের জেলেরা মাছ ধরতে না পারলে খাবে কী?
টেকনাফ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তে নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়েছে।