ঢাকা ০৫:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব জনমত সৃষ্টিতে কনসার্ট-সেমিনারের আয়োজন করতে হবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:৩০:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ জুলাই ২০১৯
  • ২৭৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রবাসীদের প্রমাণ দিতে হবে যে, তারা সত্যিকার অর্থেই একেকজন বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর। একাত্তরে যেমন বিশ্বখ্যাত নিউইয়র্ক সিটির মেডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে জর্জ হ্যারিসনের কনসার্টের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক জনমত সোচ্চার করা সম্ভব হয়েছিল, ঠিক তেমনিভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুতেও কনসার্ট, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, র‌্যালি এবং নিজ নিজ এলাকার সিনেটর-কংগ্রেসম্যানদের সাথে দেন-দরবার করতে হবে।’

ওয়াশিংটন ডিসি এবং বস্টনে প্রবাসীদের সাথে পৃথক দুটি মতবিনিময়কালে ১৭ ও ১৯ জুলাই তিনি এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, সরকারের উদ্যোগে কূটনৈতিক তৎপরতাকে সুসংহত করতে প্রবাসীদের কর্মকাণ্ড অপরিসীম ভূমিকা রাখবে। কারণ, নিজ নিজ এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা প্রবাসীদের অনুরোধ-আহ্বানকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য। ইতিপূর্বে বহুভাবে সে স্বাক্ষর রেখেছেন আমেরিকা প্রবাসীরা।

১৯ জুলাই শুক্রবার দুপুরে বিশ্বখ্যাত বস্টনে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সেমিনার শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বস্টনে একটি হোটেলে প্রবাসী বাংলাদইশদের সাথে মতবিনিময় করেন। এতে বিশিষ্টজনদের মাঝে ছিলেন প্রফেসর ড. আবু হাসনাত, এমআইটি সায়েন্টিস্ট মিজানুল চৌধুরী, কবি বদিউজ্জামান নাসিম, মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ চৌধুরী, পেশাজীবী ইকবাল ইউসুফ, রোকেয়া মাহমুদ, ব্যবসায়ী মনজুর আলম, ফরিদা আরভী, মিন্টু কামরুজ্জামান, মোহাম্মদ মিয়াজী, সাজ্জাদুল সাজু প্রমুখ।

ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসাও ছিলেন এ মতবিনিময় সভায়।

এর আগে, ১৭ জুলাই বুধবার রাতে ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন আয়োজিত মতবিনিময় সমাবেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরেন। উঠে আসে জিডিপি’র উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, আমদানী-রপ্তানী বৃদ্ধি, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ নানা উন্নয়ন সূচকের উদাহরণ। মন্ত্রী জিনি-কোইফিসিয়েন্টসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক, উপাত্ত ও সংজ্ঞায় বাংলাদেশের উন্নয়নকে বিশ্লেষণ করে দেখান যা পার্শ্ববর্তী যে কোন দেশের চেয়ে বেশি ও অগ্রমুখী। কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার বিস্ময়কর সাফল্যের কথা তুলে ধরেন ড. মোমেন। এমন সম্ভাবনাময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ইস্যুটি কিভাবে অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলছে তা উল্লেখ করেন তিনি। ১.১ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতার কথা উল্লেখ করে  পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্য বিড়ম্বিত, অমানবিক সহিংসতার শিকার এই মানুষগুলোকে আশ্রয় না দিলে তাদের আর যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না।

মন্ত্রী রোহিঙ্গা সঙ্কটের ক্রম ইতিহাসসহ এই সঙ্কটের সমাধানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পাশাপাশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “মিয়ানমার এই সঙ্কটের সমাধানে এগিয়ে আসেনি। কফি আনান কমিশনের সুপারিশ থেকে শুরু করে কোনো পদক্ষেপই তারা বাস্তবায়ন করেনি। রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার আস্থা ও নিরাপত্তা সৃষ্টিকারী কোনো অনুকূল পরিবেশই তারা সৃষ্টি করতে পারেনি। পরিবর্তে মিয়ানমার বিষয়টি নিয়ে ব্লেইম গেম খেলছে”।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষে যা সম্ভব তার সব সবকিছুই বাংলাদেশ করে যাচ্ছে মর্মে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এই সঙ্কটের সমাধানে বিশ্ব বিবেককে এগিয়ে আসতে হবে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পদক্ষেপের পাশাপাশি এর সমাধানে শিক্ষাবিদ, গবেষক ও বিশ্বের খ্যাতনামা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে ভূমিকা রাখতে হবে যাতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের টেকসই ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হয়”।

এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি ড. মনসুর খন্দকার এবং স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া।

উল্লেখ্য যে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্যোগে ১৮ জুলাই পর্যন্ত ৩দিনব্যাপী ‘ধমীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে বক্তব্য দিতে এসেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব জনমত সৃষ্টিতে কনসার্ট-সেমিনারের আয়োজন করতে হবে

আপডেট টাইম : ০১:৩০:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ জুলাই ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রবাসীদের প্রমাণ দিতে হবে যে, তারা সত্যিকার অর্থেই একেকজন বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর। একাত্তরে যেমন বিশ্বখ্যাত নিউইয়র্ক সিটির মেডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে জর্জ হ্যারিসনের কনসার্টের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক জনমত সোচ্চার করা সম্ভব হয়েছিল, ঠিক তেমনিভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুতেও কনসার্ট, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, র‌্যালি এবং নিজ নিজ এলাকার সিনেটর-কংগ্রেসম্যানদের সাথে দেন-দরবার করতে হবে।’

ওয়াশিংটন ডিসি এবং বস্টনে প্রবাসীদের সাথে পৃথক দুটি মতবিনিময়কালে ১৭ ও ১৯ জুলাই তিনি এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, সরকারের উদ্যোগে কূটনৈতিক তৎপরতাকে সুসংহত করতে প্রবাসীদের কর্মকাণ্ড অপরিসীম ভূমিকা রাখবে। কারণ, নিজ নিজ এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা প্রবাসীদের অনুরোধ-আহ্বানকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য। ইতিপূর্বে বহুভাবে সে স্বাক্ষর রেখেছেন আমেরিকা প্রবাসীরা।

১৯ জুলাই শুক্রবার দুপুরে বিশ্বখ্যাত বস্টনে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সেমিনার শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বস্টনে একটি হোটেলে প্রবাসী বাংলাদইশদের সাথে মতবিনিময় করেন। এতে বিশিষ্টজনদের মাঝে ছিলেন প্রফেসর ড. আবু হাসনাত, এমআইটি সায়েন্টিস্ট মিজানুল চৌধুরী, কবি বদিউজ্জামান নাসিম, মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ চৌধুরী, পেশাজীবী ইকবাল ইউসুফ, রোকেয়া মাহমুদ, ব্যবসায়ী মনজুর আলম, ফরিদা আরভী, মিন্টু কামরুজ্জামান, মোহাম্মদ মিয়াজী, সাজ্জাদুল সাজু প্রমুখ।

ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসাও ছিলেন এ মতবিনিময় সভায়।

এর আগে, ১৭ জুলাই বুধবার রাতে ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন আয়োজিত মতবিনিময় সমাবেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরেন। উঠে আসে জিডিপি’র উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, আমদানী-রপ্তানী বৃদ্ধি, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ নানা উন্নয়ন সূচকের উদাহরণ। মন্ত্রী জিনি-কোইফিসিয়েন্টসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক, উপাত্ত ও সংজ্ঞায় বাংলাদেশের উন্নয়নকে বিশ্লেষণ করে দেখান যা পার্শ্ববর্তী যে কোন দেশের চেয়ে বেশি ও অগ্রমুখী। কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার বিস্ময়কর সাফল্যের কথা তুলে ধরেন ড. মোমেন। এমন সম্ভাবনাময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ইস্যুটি কিভাবে অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলছে তা উল্লেখ করেন তিনি। ১.১ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতার কথা উল্লেখ করে  পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্য বিড়ম্বিত, অমানবিক সহিংসতার শিকার এই মানুষগুলোকে আশ্রয় না দিলে তাদের আর যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না।

মন্ত্রী রোহিঙ্গা সঙ্কটের ক্রম ইতিহাসসহ এই সঙ্কটের সমাধানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পাশাপাশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “মিয়ানমার এই সঙ্কটের সমাধানে এগিয়ে আসেনি। কফি আনান কমিশনের সুপারিশ থেকে শুরু করে কোনো পদক্ষেপই তারা বাস্তবায়ন করেনি। রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার আস্থা ও নিরাপত্তা সৃষ্টিকারী কোনো অনুকূল পরিবেশই তারা সৃষ্টি করতে পারেনি। পরিবর্তে মিয়ানমার বিষয়টি নিয়ে ব্লেইম গেম খেলছে”।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষে যা সম্ভব তার সব সবকিছুই বাংলাদেশ করে যাচ্ছে মর্মে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এই সঙ্কটের সমাধানে বিশ্ব বিবেককে এগিয়ে আসতে হবে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পদক্ষেপের পাশাপাশি এর সমাধানে শিক্ষাবিদ, গবেষক ও বিশ্বের খ্যাতনামা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে ভূমিকা রাখতে হবে যাতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের টেকসই ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হয়”।

এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি ড. মনসুর খন্দকার এবং স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া।

উল্লেখ্য যে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্যোগে ১৮ জুলাই পর্যন্ত ৩দিনব্যাপী ‘ধমীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে বক্তব্য দিতে এসেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।