ঢাকা ০৬:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাঁচ নারী কনস্টেবলের নতুন জীবন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:২৫:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ জুলাই ২০১৯
  • ২৬০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজশাহীতে কনস্টেবল পদে এবার ৪৪ জন নারী নিয়োগ পেয়েছেন। ৮ জুলাই স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিতে আসা পাঁচ নারী কনস্টেবলের সঙ্গে কথা হয়। এই নারীরা ঘুষ না দিয়েই পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। তাই তাঁরা অভিভূত। যেহেতু ঘুষ না দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, তাই তাঁরাও কখনো দুর্নীতি করবেন না এবং মানুষের উপকার করবেন বলে জানালেন।

কথার শুরুতেই কনস্টেবল ইভা বলেন, ‘চাকরি পাওয়ার পর প্রথম কাজ হবে মাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে আনা।’ জানালেন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর বাবা তাঁদের ফেলে চলে যান। তখন থেকে মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে দুই ছেলেমেয়েকে মানুষ করছেন। নিয়োগপ্রত্যাশী ৫ হাজার ১৪১ জন প্রতিযোগীর সঙ্গে লড়াই করে ইভাকে উত্তীর্ণ হতে হয়েছে। ইভার নামের সঙ্গে কোনো পদবি নেই।

বাড়ি রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানার চণ্ডীপুর এলাকায়। ইভা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। পাড়ার এক আপুর কাছ থেকে পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষার কথা জানতে পেরে তিনি আবেদন করেছিলেন। বাবা চলে যাওয়ার পর ভাই আহসান আলীকে নৈশ বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন মা। এই ভাই দুই বছর আগে এসএসসি পাস করে এখন একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন।

পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া গ্রামের সুমি খাতুনের বাবা ধোপাপাড়া বাজারে চা বিক্রি করেন। ভাই সুজন আলীও বাবার সঙ্গে দোকানে কাজ করে। ছোট ভাইটিরও পড়াশোনা হয়নি। সুমির ভাষায়, কাউকে টাকা দিয়ে যদি চাকরি পেতে হতো, তাহলে জীবনে কোনো দিন চাকরি হতো না।

সুমনা খাতুনের বাড়ি চারঘাট উপজেলার বিলমেরামতপুর গ্রামে। তাঁর বাবা কুলির কাজ করেন। সুমনা জানান, একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে এই চাকরির সার্কুলারের খবর পেয়েছিলেন। তারপর নিজেই সবকিছু করেছেন।

রাজশাহী নগরের মতিহার থানার বামনশিকড় এলাকার বেদানা খাতুনের বাবা একজন ভ্যানচালক। মা মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। মেয়ের এই চাকরি পাওয়াতে বাবা জামাল উদ্দিন বললেন, তিনি কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছেন না। এই জামানায় কোনো টাকাপয়সা ছাড়াই মেয়ের চাকরি হলো! তাঁর মন্তব্য, ‘কিসে কী হলো ভাই আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’

রাজশাহী নগরের তেরখাদিয়া এলাকার সমুনা ইসলামের বাবা বাসচালকের সহকারী। তাঁর পরিবারও সুমনার চাকরি পাওয়াতে বিস্মিত।

রাজশাহীর পুলিশ সুপার এম শহিদুল্লাহ বললেন, ‘ঘুষ না দিয়ে এবার যারা নিয়োগ পেল, তারা মানুষকে সত্যিকারের “সার্ভিস” দেবে বলেই প্রত্যাশা করছি। নির্বাচিতদের সবাই হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য না। অনার্স পড়া ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা কয়েকজনেরও চাকরি হয়েছে। এই হতদরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা পরীক্ষায় তাদের সঙ্গে “ফাইট” দিয়ে টিকেছে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

পাঁচ নারী কনস্টেবলের নতুন জীবন

আপডেট টাইম : ০১:২৫:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ জুলাই ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজশাহীতে কনস্টেবল পদে এবার ৪৪ জন নারী নিয়োগ পেয়েছেন। ৮ জুলাই স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিতে আসা পাঁচ নারী কনস্টেবলের সঙ্গে কথা হয়। এই নারীরা ঘুষ না দিয়েই পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। তাই তাঁরা অভিভূত। যেহেতু ঘুষ না দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, তাই তাঁরাও কখনো দুর্নীতি করবেন না এবং মানুষের উপকার করবেন বলে জানালেন।

কথার শুরুতেই কনস্টেবল ইভা বলেন, ‘চাকরি পাওয়ার পর প্রথম কাজ হবে মাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে আনা।’ জানালেন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর বাবা তাঁদের ফেলে চলে যান। তখন থেকে মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে দুই ছেলেমেয়েকে মানুষ করছেন। নিয়োগপ্রত্যাশী ৫ হাজার ১৪১ জন প্রতিযোগীর সঙ্গে লড়াই করে ইভাকে উত্তীর্ণ হতে হয়েছে। ইভার নামের সঙ্গে কোনো পদবি নেই।

বাড়ি রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানার চণ্ডীপুর এলাকায়। ইভা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। পাড়ার এক আপুর কাছ থেকে পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষার কথা জানতে পেরে তিনি আবেদন করেছিলেন। বাবা চলে যাওয়ার পর ভাই আহসান আলীকে নৈশ বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন মা। এই ভাই দুই বছর আগে এসএসসি পাস করে এখন একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন।

পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া গ্রামের সুমি খাতুনের বাবা ধোপাপাড়া বাজারে চা বিক্রি করেন। ভাই সুজন আলীও বাবার সঙ্গে দোকানে কাজ করে। ছোট ভাইটিরও পড়াশোনা হয়নি। সুমির ভাষায়, কাউকে টাকা দিয়ে যদি চাকরি পেতে হতো, তাহলে জীবনে কোনো দিন চাকরি হতো না।

সুমনা খাতুনের বাড়ি চারঘাট উপজেলার বিলমেরামতপুর গ্রামে। তাঁর বাবা কুলির কাজ করেন। সুমনা জানান, একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে এই চাকরির সার্কুলারের খবর পেয়েছিলেন। তারপর নিজেই সবকিছু করেছেন।

রাজশাহী নগরের মতিহার থানার বামনশিকড় এলাকার বেদানা খাতুনের বাবা একজন ভ্যানচালক। মা মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। মেয়ের এই চাকরি পাওয়াতে বাবা জামাল উদ্দিন বললেন, তিনি কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছেন না। এই জামানায় কোনো টাকাপয়সা ছাড়াই মেয়ের চাকরি হলো! তাঁর মন্তব্য, ‘কিসে কী হলো ভাই আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’

রাজশাহী নগরের তেরখাদিয়া এলাকার সমুনা ইসলামের বাবা বাসচালকের সহকারী। তাঁর পরিবারও সুমনার চাকরি পাওয়াতে বিস্মিত।

রাজশাহীর পুলিশ সুপার এম শহিদুল্লাহ বললেন, ‘ঘুষ না দিয়ে এবার যারা নিয়োগ পেল, তারা মানুষকে সত্যিকারের “সার্ভিস” দেবে বলেই প্রত্যাশা করছি। নির্বাচিতদের সবাই হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য না। অনার্স পড়া ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা কয়েকজনেরও চাকরি হয়েছে। এই হতদরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা পরীক্ষায় তাদের সঙ্গে “ফাইট” দিয়ে টিকেছে।’