ঢাকা ০৮:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছোট্ট তুবাকে কী জবাব দেবে সমাজ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৫:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ জুলাই ২০১৯
  • ২৪৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মহাখালীর ওয়্যারলেস গেট এলাকার বাসায় স্বজনরা যখন তাসলিমা বেগম রেনুর এমন নিষ্ঠুর মৃত্যুতে বিলাপ করছিলেন, তখন পুরো বাসায় খেলা করছিল চার বছর বয়সী তাসনিম তুবা। খেলার পুতুল ছুড়ে মারছিল মেঝেতে। কখনও মায়ের একখানি ছবি হাতে নিয়ে চুমু খাচ্ছিল আনমনে। চঞ্চলা এই  ছোট্ট শিশুটি জানেও না, পৃথিবীতে তাকে আগলে রাখার কেউ রইল না আর। তুবা এও জানে না, পারিবারিক কলহের নিষ্ঠুরতায় বাবার প্রস্থানের পর শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল মমতাময়ী ওই মা, গুজব নামের দানবের হাতে শিকার হয়ে নিঃশেষ হয়ে গেলেন তিনিও। সে যে একেবারেই স্নেহহীন হয়ে গেল, সেটা জানারও বয়স হয়নি তার। ছোট্ট এই শিশুটিকে কী জবাব দেবে নিষ্ঠুর সমাজ।

রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকায় স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেধরা গুজবে কান দিয়ে গত শনিবার একদল নিষ্ঠুর মানুষ নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে তুবার মাকে। যখন তাকে এলোপাতাড়ি পেটানো হচ্ছিল, হয়তো বারবারই তার চোখের সামনে ভেসে আসছিল তুবার মুখখানি। হয়তো তিনি বলে উঠছিলেন, তিনি ছেলেধরা নন, তারও ছেলেমেয়ে রয়েছে। কিন্তু কিছুতে মন গলেনি গুজব-বিশ্বাসী পাষণ্ডদের। স্বজনরা বলেছেন, তিনি ওই স্কুলে মেয়েকে ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়ে মানুষরূপী একদল নির্বোধের চরম হিংস্রতার শিকার হন। যে মা একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন, সেই মেয়ের আগামীটা ঘোর অন্ধকারই হয়ে রইল।

রেনুকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গতকাল রাতে গ্রেফতার করেছে বাড্ডা থানা পুলিশ। তারা হলেন-জাফর, শাহিন ও সাইদুল ইসলাম বাপ্পি। তাদের মধ্যে জাফর ও শাহিন খিলক্ষেতের একটি কলেজের শিক্ষার্থী এবং বাড্ডায় বাপ্পির দোকান রয়েছে। তারা বাড্ডার বাসিন্দা। মোবাইল ফোনের ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্তের পর গ্রেফতার করা হয়।

স্বজনরা জানিয়েছেন, পারিবারিক কলহে স্বামী তসলিম উদ্দিনের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে তাসলিমা বেগম রেনুর। এরপরও দমে যাননি উচ্চশিক্ষিত উদ্যমী এই নারী। ছোট্ট দুই সন্তান তাহসিন আল মাহির (১১) ও তাসনিম তুবাকে নিয়ে শুরু করেন জীবনযুদ্ধ। তবে বছরখানেক আগে ছেলেকে নিয়ে যান বাবা। এরপর তুবা ও ওর মা মহাখালীর ওয়্যারলেস গেট এলাকায় বসবাস শুরু করেন অন্য স্বজনের সঙ্গে। কিন্তু তিনি বরাবরই উদ্বিগ্ন ছিলেন মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

তাসলিমার ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু সাংবাদিককে বলেন, ‘খালা দীর্ঘদিন বাড্ডা এলাকায় বসবাস করেছেন। তার শ্বশুরবাড়িও ওই এলাকায়। ছেলে তাহসিন বাড্ডার একটি বেসরকারি স্কুলে পড়ে। এ জন্য তিনি ওই এলাকায় নতুন করে বাসা খুঁজছিলেন। শনিবার নিজের অফিস বন্ধ থাকায় তুবাকে ওই এলাকার স্কুলে ভর্তির খোঁজ নিতে যান। আর সেখানেই ঘটে এমন নিষ্ঠুরতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমন ঘটনার পরও তুবার বাবা খোঁজ নেননি। খালা গুজবের নিষ্ঠুরতার বলি হওয়ায় শিশুটি এতিম হলো। মানুষের নিষ্ঠুরতায় ভবিষ্যৎ আরও বেশি অন্ধকার হলো ওর।’

রেনুর বোন সেলিনা আক্তার বিলাপ করে বলছিলেন, ‘এখন ওর সন্তানের কী হবে! কাকে মা বলে ডাকবে! কাকেই বা জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে! যে রেনু জীবনে কোনো অপরাধ করেনি, তাকেই অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হলো! আমি এর বিচার চাই।’

রেনু আসলে কেমন ছিলেন, তা জানতে প্রতিবেশী আর তার স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়। তার সঙ্গে একই বাসায় থাকতেন ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু। তিনি বলেন, ‘খালা স্নেহপরায়ণ ছিলেন। একজন শিক্ষিত-সচেতন নারী। ছেলেধরা তো দূরের কথা, নূ্যনতম অপরাধও করতে পারেন না তিনি। ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন, হয়তো ওদের আগামী নিয়ে একটু মানসিক যন্ত্রণাও ছিল তার।’

তার কথার সত্যতা মিলল প্রতিবেশী রেহনুমা বেগমসহ কয়েকজন প্রতিবেশী নারীর কথায়ও। তাদের কথায় বেরিয়ে এলো রেনুর মহানুভবতার গল্পও। তারা বলছিলেন, রেনু নিজের অফিসের ফাঁকে আশপাশের বাসিন্দার শিশুদের বিনামূল্যে পড়ালেখা করাতেন। এই কাজটা তিনি নিয়মিত করতেন এবং নিজের সন্তানদের মতোই অন্য শিশুদের ভালোবাসতেন।

শনিবারের ঘটনা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, রেনু স্কুলের গেট দিয়ে ঢুকে কাউকে যেন খুঁজছিলেন। এতে সেখানে অভিভাবকদের সন্দেহ হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নেওয়া হয়। ততক্ষণে আশপাশে গুজব ডালাপালা মেলে- স্কুলে ‘ছেলেধরা’ নারী আটক হয়েছে। শত শত লোক স্কুলে ঢুকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে তাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে পিটিয়ে হত্যা করে। কেউ কেউ ভয়ঙ্কর সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করে।

রেনু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাড্ডা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, রেনু কেন সেখানে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে পুলিশ এখনও পরিস্কার নয়। মেয়েকে ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার কথা বলা হলেও সরকারি স্কুলে সাধারণত জানুয়ারি মাসে ভর্তি শুরু হয়। এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে।

ওসি বলেন, ‘ওই নারী যে ছেলেধরা বা কোনো অপরাধী নন, সে বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। তিনি গুজবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। গণপিটুনিতে জড়িতদের মধ্যে তিনজনকে রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

গ্রামের বাড়িতে দাফন সম্পন্ন : সমকালের লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, রেনুর বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে। তার বাবা মৃত আবদুল মান্নান। গতকাল রোববার ঢাকা থেকে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখানে শত শত মানুষ ভিড় করেন। স্বজনরা বিলাপ করে এর বিচার চান। প্রতিবেশীরাও রেনু হত্যায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

তাসলিমার চাচাতো ভাই হারুন অর রশিদ জানান, রোববার তার মরদেহ বাড়িতে পৌঁছলে জানাজা শেষে রাত ৮টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তুবার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় এমপি : রেনুর মেয়ে তাসনিম তুবার পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল। গুজবে রেনুর প্রতি এমন নিষ্ঠুরতায় তিনি দুঃখও প্রকাশ করেন। তিনি জানান, এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে হত্যাকাণ্ড কারও কাম্য নয়। তিনি রেনু হত্যায় সুষ্ঠু বিচার পেতে পরিবারটিকে আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘এখন নিহতের চার বছরের মেয়ে ও ১১ বছরের ছেলের পড়ালেখার খরচেরও দায়িত্ব নিয়েছি।’

সূত্র: সমকাল

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

ছোট্ট তুবাকে কী জবাব দেবে সমাজ

আপডেট টাইম : ১২:৩৫:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ জুলাই ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মহাখালীর ওয়্যারলেস গেট এলাকার বাসায় স্বজনরা যখন তাসলিমা বেগম রেনুর এমন নিষ্ঠুর মৃত্যুতে বিলাপ করছিলেন, তখন পুরো বাসায় খেলা করছিল চার বছর বয়সী তাসনিম তুবা। খেলার পুতুল ছুড়ে মারছিল মেঝেতে। কখনও মায়ের একখানি ছবি হাতে নিয়ে চুমু খাচ্ছিল আনমনে। চঞ্চলা এই  ছোট্ট শিশুটি জানেও না, পৃথিবীতে তাকে আগলে রাখার কেউ রইল না আর। তুবা এও জানে না, পারিবারিক কলহের নিষ্ঠুরতায় বাবার প্রস্থানের পর শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল মমতাময়ী ওই মা, গুজব নামের দানবের হাতে শিকার হয়ে নিঃশেষ হয়ে গেলেন তিনিও। সে যে একেবারেই স্নেহহীন হয়ে গেল, সেটা জানারও বয়স হয়নি তার। ছোট্ট এই শিশুটিকে কী জবাব দেবে নিষ্ঠুর সমাজ।

রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকায় স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেধরা গুজবে কান দিয়ে গত শনিবার একদল নিষ্ঠুর মানুষ নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে তুবার মাকে। যখন তাকে এলোপাতাড়ি পেটানো হচ্ছিল, হয়তো বারবারই তার চোখের সামনে ভেসে আসছিল তুবার মুখখানি। হয়তো তিনি বলে উঠছিলেন, তিনি ছেলেধরা নন, তারও ছেলেমেয়ে রয়েছে। কিন্তু কিছুতে মন গলেনি গুজব-বিশ্বাসী পাষণ্ডদের। স্বজনরা বলেছেন, তিনি ওই স্কুলে মেয়েকে ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়ে মানুষরূপী একদল নির্বোধের চরম হিংস্রতার শিকার হন। যে মা একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন, সেই মেয়ের আগামীটা ঘোর অন্ধকারই হয়ে রইল।

রেনুকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গতকাল রাতে গ্রেফতার করেছে বাড্ডা থানা পুলিশ। তারা হলেন-জাফর, শাহিন ও সাইদুল ইসলাম বাপ্পি। তাদের মধ্যে জাফর ও শাহিন খিলক্ষেতের একটি কলেজের শিক্ষার্থী এবং বাড্ডায় বাপ্পির দোকান রয়েছে। তারা বাড্ডার বাসিন্দা। মোবাইল ফোনের ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্তের পর গ্রেফতার করা হয়।

স্বজনরা জানিয়েছেন, পারিবারিক কলহে স্বামী তসলিম উদ্দিনের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে তাসলিমা বেগম রেনুর। এরপরও দমে যাননি উচ্চশিক্ষিত উদ্যমী এই নারী। ছোট্ট দুই সন্তান তাহসিন আল মাহির (১১) ও তাসনিম তুবাকে নিয়ে শুরু করেন জীবনযুদ্ধ। তবে বছরখানেক আগে ছেলেকে নিয়ে যান বাবা। এরপর তুবা ও ওর মা মহাখালীর ওয়্যারলেস গেট এলাকায় বসবাস শুরু করেন অন্য স্বজনের সঙ্গে। কিন্তু তিনি বরাবরই উদ্বিগ্ন ছিলেন মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

তাসলিমার ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু সাংবাদিককে বলেন, ‘খালা দীর্ঘদিন বাড্ডা এলাকায় বসবাস করেছেন। তার শ্বশুরবাড়িও ওই এলাকায়। ছেলে তাহসিন বাড্ডার একটি বেসরকারি স্কুলে পড়ে। এ জন্য তিনি ওই এলাকায় নতুন করে বাসা খুঁজছিলেন। শনিবার নিজের অফিস বন্ধ থাকায় তুবাকে ওই এলাকার স্কুলে ভর্তির খোঁজ নিতে যান। আর সেখানেই ঘটে এমন নিষ্ঠুরতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমন ঘটনার পরও তুবার বাবা খোঁজ নেননি। খালা গুজবের নিষ্ঠুরতার বলি হওয়ায় শিশুটি এতিম হলো। মানুষের নিষ্ঠুরতায় ভবিষ্যৎ আরও বেশি অন্ধকার হলো ওর।’

রেনুর বোন সেলিনা আক্তার বিলাপ করে বলছিলেন, ‘এখন ওর সন্তানের কী হবে! কাকে মা বলে ডাকবে! কাকেই বা জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে! যে রেনু জীবনে কোনো অপরাধ করেনি, তাকেই অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হলো! আমি এর বিচার চাই।’

রেনু আসলে কেমন ছিলেন, তা জানতে প্রতিবেশী আর তার স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়। তার সঙ্গে একই বাসায় থাকতেন ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু। তিনি বলেন, ‘খালা স্নেহপরায়ণ ছিলেন। একজন শিক্ষিত-সচেতন নারী। ছেলেধরা তো দূরের কথা, নূ্যনতম অপরাধও করতে পারেন না তিনি। ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন, হয়তো ওদের আগামী নিয়ে একটু মানসিক যন্ত্রণাও ছিল তার।’

তার কথার সত্যতা মিলল প্রতিবেশী রেহনুমা বেগমসহ কয়েকজন প্রতিবেশী নারীর কথায়ও। তাদের কথায় বেরিয়ে এলো রেনুর মহানুভবতার গল্পও। তারা বলছিলেন, রেনু নিজের অফিসের ফাঁকে আশপাশের বাসিন্দার শিশুদের বিনামূল্যে পড়ালেখা করাতেন। এই কাজটা তিনি নিয়মিত করতেন এবং নিজের সন্তানদের মতোই অন্য শিশুদের ভালোবাসতেন।

শনিবারের ঘটনা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, রেনু স্কুলের গেট দিয়ে ঢুকে কাউকে যেন খুঁজছিলেন। এতে সেখানে অভিভাবকদের সন্দেহ হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নেওয়া হয়। ততক্ষণে আশপাশে গুজব ডালাপালা মেলে- স্কুলে ‘ছেলেধরা’ নারী আটক হয়েছে। শত শত লোক স্কুলে ঢুকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে তাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে পিটিয়ে হত্যা করে। কেউ কেউ ভয়ঙ্কর সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করে।

রেনু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাড্ডা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, রেনু কেন সেখানে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে পুলিশ এখনও পরিস্কার নয়। মেয়েকে ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার কথা বলা হলেও সরকারি স্কুলে সাধারণত জানুয়ারি মাসে ভর্তি শুরু হয়। এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে।

ওসি বলেন, ‘ওই নারী যে ছেলেধরা বা কোনো অপরাধী নন, সে বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। তিনি গুজবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। গণপিটুনিতে জড়িতদের মধ্যে তিনজনকে রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

গ্রামের বাড়িতে দাফন সম্পন্ন : সমকালের লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, রেনুর বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে। তার বাবা মৃত আবদুল মান্নান। গতকাল রোববার ঢাকা থেকে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখানে শত শত মানুষ ভিড় করেন। স্বজনরা বিলাপ করে এর বিচার চান। প্রতিবেশীরাও রেনু হত্যায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

তাসলিমার চাচাতো ভাই হারুন অর রশিদ জানান, রোববার তার মরদেহ বাড়িতে পৌঁছলে জানাজা শেষে রাত ৮টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তুবার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় এমপি : রেনুর মেয়ে তাসনিম তুবার পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল। গুজবে রেনুর প্রতি এমন নিষ্ঠুরতায় তিনি দুঃখও প্রকাশ করেন। তিনি জানান, এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে হত্যাকাণ্ড কারও কাম্য নয়। তিনি রেনু হত্যায় সুষ্ঠু বিচার পেতে পরিবারটিকে আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘এখন নিহতের চার বছরের মেয়ে ও ১১ বছরের ছেলের পড়ালেখার খরচেরও দায়িত্ব নিয়েছি।’

সূত্র: সমকাল