ঢাকা ১১:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিশুদের নিয়ে ডেঙ্গু আতঙ্কে পরিবার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০২:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জুলাই ২০১৯
  • ২৬৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী সচিব কাজী ফয়সালের মেয়ে লাবণ্য আলীনা কাজী মারা গেছে চলতি মাসে। চার বছরের কিছু বেশি বয়সী লাবণ্য জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে গত ৮ জুলাই মা-বাবাকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ফুটফুটে শিশুটি চিরতরে বিদায় নেয়। লাবণ্যর মতো চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৯ শিশুর মৃত্যু  হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে সহস্রাধিক শিশু। ডেঙ্গু নিয়ে গতকাল শনিবার আরও ২২ শিশু ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। উদ্বেগ ছড়িয়েছে শিশুদের পরিবারেও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্নেষণ করে দেখা  যায়, এ পর্যন্ত প্রায় ৩৪ শতাংশ শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ঝুঁকিতে আছেন নারীরাও। শিশুদের মতো প্রায় সমান হারে তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা শিশুদের সহ্য করা অত্যন্ত কঠিন। বড়দের শারীরিক যে সহনীয় ক্ষমতা আছে, শিশুদের তা নেই। এ কারণে তাদের জন্য ডেঙ্গু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় শিশুদের প্রতি বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ও শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবদুল আজিজ জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরে উচ্চ তাপমাত্রার পাশাপাশি হাড় ও মাংসপেশিতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এই ধকল সামাল দেওয়া শিশুদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। এ ছাড়া দাঁতের গোড়া, নাক থেকে রক্ত বের হতে পারে। ডেঙ্গু ভাইরাসের একটি বৈশিষ্ট্য হলো- এটি রক্তনালির পরিবর্তন ঘটিয়ে জলীয় অংশ বের করে দেয়। ফলে রোগী পানিশূন্যতায় ভোগে। বড়দের তুলনায় শিশুরা পানিশূন্যতায় বেশি ভোগে। এতে করে তীব্র পানিশূন্য হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়াসহ নানা জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয় শিশুদের। তাই শিশুদের প্রতি বাড়তি নজর দিতে হবে।

পরিবারে উদ্বেগ : ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের পরিবারেও উদ্বেগ ছড়িয়েছে। দুই বছর চার মাস বয়সী শিশু মাশফিকে নিয়ে গতকাল শনিবার ঢাকা শিশু হাসপাতালে আসেন তার মা। সঙ্গে ছিলেন চাচা মাকসুদুর রহমান। শিশুটি জ্বরে কাঁপছিল। শিশুটির শারীরিক এমন অবস্থায় মায়ের চোখও ছলছল করছিল। ঢাকায় তেজতুরীপাড়া এলাকায় তারা বসবাস করেন। মাকসুদুর রহমান বলেন, চার দিন ধরে মাশফি জ্বরে আক্রান্ত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করেও জ্বর কমছিল না। এরপর গতকাল ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কোনো খাবার খেতে চায় না সে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী লিকুইড খাবার দেওয়া হচ্ছে। আরেক শিশু ছয় বছর বয়সী মুসকানকে গতকাল ভর্তি করা হয়। তার স্বজনরা জানান, রাজধানীর রাজাবাজার এলাকায় তারা বসবাস করেন। চার দিন ধরে মুসকান জ্বরে আক্রান্ত। বাসায় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে জ্বর কমছিল না। এরপর হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। জ্বরের পাশাপাশি শরীর ও হাত-পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। শিশুটির সুস্থতার জন্য তিনি দোয়া প্রার্থনা করেন।

আবান নামের তিন বছর সাত মাস বয়সী আরেক শিশুকে গত শুক্রবার ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকেই শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসকরা স্বজনদের ডেকে এনআইসিইউতে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু শিশু হাসপাতালে এনআইসিইউর কোনো শয্যা ফাঁকা ছিল না। শিশুটির নানা নাসির উদ্দিন জানান, এনআইসিইউ না পেয়ে আবানকে তারা রেনেসাঁ নামে একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে এনআইসিইউতে ভর্তির পরও তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। এরপর গতকাল শনিবার দুপুরে বনশ্রী এলাকার আল-রাজী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নাতির সুস্থতার জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।

মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট ড. আবু সাঈদ শিমুল জানান, শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে পানি ও তরলজাতীয় খাবার খাওয়ানোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি ডাবের পানি, স্যালাইন, জুস, লেবুর শরবত খাওয়াতে হবে। এ সময় মুখে রুচি কম থাকে। তাই পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার দিতে হবে। আক্রান্ত শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন থেকে বিরত রাখতে হবে। একই সঙ্গে শিশুর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরে গতকাল শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত আট হাজার ৮৬৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৯ শিশু। এক হাজার ৪৭৪ জন এখন রাজধানীসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যরা চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন। গতকালও নতুন করে আরও ২৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে জুলাই মাসে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে তিন হাজার ৯৬০ জনে দাঁড়াল। গত জুন মাসেও এক হাজার ৭৭০ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

শিশুদের চিত্র : স্কয়ার, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে দু’জন করে এবং ইউনাইটেড, গ্রিনলাইফ ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে একজন করে মোট ৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের এপিডেমিওলজিস্ট কিংকর ঘোষ জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে এ পর্যন্ত ১৯০ শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে ১৩৮ শিশু এবং আরও ৫০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে থাকা রাজধানীসহ দেশের সরকারি-বেসরকারি ৪৯ হাসপাতালের তথ্যেও একই চিত্র পাওয়া গেছে। এ ছাড়া শিশু রোগীদের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট কোনো তালিকা পাওয়া যায়নি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, জেন্ডার হিসাব করে শুরুতে তারা তালিকা তৈরি করেননি। এ কারণে মোট আক্রান্তের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুদের পৃথক করা সম্ভব হয়নি। তবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তারা এই কাজ করা শুরু করেছেন। এতে দুই হাজার ১৭৬ রোগীর জেন্ডারভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনা করে ৬৪৫ শিশু পাওয়া গেছে। নারীর সংখ্যা ৬৭৪ এবং পুরুষ ৮৫৭ জন। এখন থেকে জেন্ডারভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত তারা সংরক্ষণে রাখবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা জানান, পরিস্থিতির অবনতি রোধে মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের জন্য বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে আশপাশে পরিবেশের ওপর জোর দিতে হবে। মানুষ সচেতন হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব। এ ছাড়া জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে চিকিৎসায় রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

শিশুদের নিয়ে ডেঙ্গু আতঙ্কে পরিবার

আপডেট টাইম : ১২:০২:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জুলাই ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী সচিব কাজী ফয়সালের মেয়ে লাবণ্য আলীনা কাজী মারা গেছে চলতি মাসে। চার বছরের কিছু বেশি বয়সী লাবণ্য জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে গত ৮ জুলাই মা-বাবাকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ফুটফুটে শিশুটি চিরতরে বিদায় নেয়। লাবণ্যর মতো চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৯ শিশুর মৃত্যু  হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে সহস্রাধিক শিশু। ডেঙ্গু নিয়ে গতকাল শনিবার আরও ২২ শিশু ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। উদ্বেগ ছড়িয়েছে শিশুদের পরিবারেও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্নেষণ করে দেখা  যায়, এ পর্যন্ত প্রায় ৩৪ শতাংশ শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ঝুঁকিতে আছেন নারীরাও। শিশুদের মতো প্রায় সমান হারে তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা শিশুদের সহ্য করা অত্যন্ত কঠিন। বড়দের শারীরিক যে সহনীয় ক্ষমতা আছে, শিশুদের তা নেই। এ কারণে তাদের জন্য ডেঙ্গু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় শিশুদের প্রতি বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ও শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবদুল আজিজ জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরে উচ্চ তাপমাত্রার পাশাপাশি হাড় ও মাংসপেশিতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এই ধকল সামাল দেওয়া শিশুদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। এ ছাড়া দাঁতের গোড়া, নাক থেকে রক্ত বের হতে পারে। ডেঙ্গু ভাইরাসের একটি বৈশিষ্ট্য হলো- এটি রক্তনালির পরিবর্তন ঘটিয়ে জলীয় অংশ বের করে দেয়। ফলে রোগী পানিশূন্যতায় ভোগে। বড়দের তুলনায় শিশুরা পানিশূন্যতায় বেশি ভোগে। এতে করে তীব্র পানিশূন্য হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়াসহ নানা জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয় শিশুদের। তাই শিশুদের প্রতি বাড়তি নজর দিতে হবে।

পরিবারে উদ্বেগ : ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের পরিবারেও উদ্বেগ ছড়িয়েছে। দুই বছর চার মাস বয়সী শিশু মাশফিকে নিয়ে গতকাল শনিবার ঢাকা শিশু হাসপাতালে আসেন তার মা। সঙ্গে ছিলেন চাচা মাকসুদুর রহমান। শিশুটি জ্বরে কাঁপছিল। শিশুটির শারীরিক এমন অবস্থায় মায়ের চোখও ছলছল করছিল। ঢাকায় তেজতুরীপাড়া এলাকায় তারা বসবাস করেন। মাকসুদুর রহমান বলেন, চার দিন ধরে মাশফি জ্বরে আক্রান্ত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করেও জ্বর কমছিল না। এরপর গতকাল ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কোনো খাবার খেতে চায় না সে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী লিকুইড খাবার দেওয়া হচ্ছে। আরেক শিশু ছয় বছর বয়সী মুসকানকে গতকাল ভর্তি করা হয়। তার স্বজনরা জানান, রাজধানীর রাজাবাজার এলাকায় তারা বসবাস করেন। চার দিন ধরে মুসকান জ্বরে আক্রান্ত। বাসায় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে জ্বর কমছিল না। এরপর হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। জ্বরের পাশাপাশি শরীর ও হাত-পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। শিশুটির সুস্থতার জন্য তিনি দোয়া প্রার্থনা করেন।

আবান নামের তিন বছর সাত মাস বয়সী আরেক শিশুকে গত শুক্রবার ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকেই শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসকরা স্বজনদের ডেকে এনআইসিইউতে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু শিশু হাসপাতালে এনআইসিইউর কোনো শয্যা ফাঁকা ছিল না। শিশুটির নানা নাসির উদ্দিন জানান, এনআইসিইউ না পেয়ে আবানকে তারা রেনেসাঁ নামে একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে এনআইসিইউতে ভর্তির পরও তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। এরপর গতকাল শনিবার দুপুরে বনশ্রী এলাকার আল-রাজী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নাতির সুস্থতার জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।

মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট ড. আবু সাঈদ শিমুল জানান, শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে পানি ও তরলজাতীয় খাবার খাওয়ানোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি ডাবের পানি, স্যালাইন, জুস, লেবুর শরবত খাওয়াতে হবে। এ সময় মুখে রুচি কম থাকে। তাই পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার দিতে হবে। আক্রান্ত শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন থেকে বিরত রাখতে হবে। একই সঙ্গে শিশুর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরে গতকাল শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত আট হাজার ৮৬৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৯ শিশু। এক হাজার ৪৭৪ জন এখন রাজধানীসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যরা চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন। গতকালও নতুন করে আরও ২৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে জুলাই মাসে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে তিন হাজার ৯৬০ জনে দাঁড়াল। গত জুন মাসেও এক হাজার ৭৭০ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

শিশুদের চিত্র : স্কয়ার, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে দু’জন করে এবং ইউনাইটেড, গ্রিনলাইফ ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে একজন করে মোট ৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের এপিডেমিওলজিস্ট কিংকর ঘোষ জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে এ পর্যন্ত ১৯০ শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে ১৩৮ শিশু এবং আরও ৫০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে থাকা রাজধানীসহ দেশের সরকারি-বেসরকারি ৪৯ হাসপাতালের তথ্যেও একই চিত্র পাওয়া গেছে। এ ছাড়া শিশু রোগীদের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট কোনো তালিকা পাওয়া যায়নি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, জেন্ডার হিসাব করে শুরুতে তারা তালিকা তৈরি করেননি। এ কারণে মোট আক্রান্তের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুদের পৃথক করা সম্ভব হয়নি। তবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তারা এই কাজ করা শুরু করেছেন। এতে দুই হাজার ১৭৬ রোগীর জেন্ডারভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনা করে ৬৪৫ শিশু পাওয়া গেছে। নারীর সংখ্যা ৬৭৪ এবং পুরুষ ৮৫৭ জন। এখন থেকে জেন্ডারভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত তারা সংরক্ষণে রাখবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা জানান, পরিস্থিতির অবনতি রোধে মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের জন্য বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে আশপাশে পরিবেশের ওপর জোর দিতে হবে। মানুষ সচেতন হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব। এ ছাড়া জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে চিকিৎসায় রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠবে।