ঢাকা ০৫:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য স্থান বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৭:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জুলাই ২০১৯
  • ২২৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্যোগে ওয়াশিংটন ডিসিতে ৩ দিনবাপী ‘ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী দিবসে (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য একটি স্থান। বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম-কর্ম অবাধে সম্পাদন করছেন এবং বাংলাদেশের সংবিধান সে অধিকার নিশ্চিত করেছে।’

বাংলাদেশের মন্ত্রী এ সমাবেশে আরো বলেছেন, সারাবিশ্বে টেকসই শান্তি ও স্থিতির স্বার্থেই সকলকে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সর্বক্ষেত্রে জাগ্রত রাখতে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নয় মানবতাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাহলেই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন-পরিক্রমা ত্বরান্বিত হবে।’

উল্লেখ্য, ৪০ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১০৬ দেশের নীতি-নির্ধারক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ, মসজিদ-মন্দির-গীর্জার কর্ণধার, লেখক-মানবাধিকার কর্মীরা এই সম্মেলনে অংশ নেন। এটি ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর আহ্বানে ধর্মীয় সম্প্রীতি জাগ্রত রাখতে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক এ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ ব্রাউনব্যাকসহ পদস্থ কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট তার মূল বক্তব্যে দেশে দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতায় ক্রমান্বয়ে অগ্রগতির সংবাদে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র বলিষ্ঠ ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে বলে পুনরায় উল্লেখ করে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, এহেন বর্বরতায় দায়ীদেরকেও কাঠগড়ায় সোপর্দ করতে সোচ্চার থাকবো আমরা।

এ সম্মেলনে মিয়ানমার প্রসঙ্গে গৃহিত এক রেজ্যুলেশনে বলা হয়েছে, আগামী বছর মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। সে নির্বাচনে সকল ধর্ম/সম্প্রদায়ের মানুষের অবাধ অংশগ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে। এজন্যে প্রয়োজনীয় সংলাপের কথাও বলা হয়েছে। এ সংলাপে থাকবে সম্ভাব্য প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল বা জোটগুলো। ধর্ম বা গোত্র বিবেচনায় নয়, বার্মার নাগরিক হিসেবে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে। রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমান নিধনের জন্যে বা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্যে দায়ীদের চিহ্নিত এবং শাস্তি প্রদানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেই দেশত্যাগী রোহিঙ্গারা নিজ বসতভিটায় ফিরতে আগ্রহী হবে বলেও মন্তব্য করা হয় এ সম্মেলনে।

এ সম্মেলনে গণচীনে মুসলিম-বিদ্বেষমূলক আচরণেরও নিন্দা জানানো হয় এবং ধর্মবিশ্বাসী সকলের অধিকার সমুন্নত রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান উচ্চারিত হয়। এ ধরনের আন্তর্জাতিক সমাবেশ শুধু ওয়াশিংটন ডিসিতে আঞ্চলিক পর্যায়েও করার পরামর্শ দিয়ে ড. মোমেন বলেছেন, শীঘ্রই বাংলাদেশ সেই সম্মেলনের হোস্ট করতে আগ্রহী। এসময় তার বক্তব্যে ড. মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় বিশ্বাস করেন যে, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এবং সে চেতনায় সবকিছু হচ্ছে বাংলাদেশে।’

সকল ধর্ম এবং জাতি-বিশ্বাসের মানুষ কোন ধরনের ভয়-ভীতি ছাড়া নিরাপদে মর্যাদার সাথে জীবন-যাপন করতে সক্ষম হয়। এমন একটি পরিবেশ তৈরীর জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিক এই উদ্যোগের অংশিদার হতে পেরে বাংলাদেশও গৌরববোধ করছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

‘বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানও সব সময় সকল ধর্মবিশ্বাসী মানুষের সমঅধিকার নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা সে পথেই হাঁটছেন অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সামাজিক ন্যায়-বিচার সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সে অধিকার সুসংহত করেছে বাংলাদেশের সংবিধান’-উল্লেখ করেন ড. মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের নৃশংসতার প্রসঙ্গে বলেন, জাতির পিতাকে সপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলেছে। ধর্মের নামে উগ্রপন্থিরা বাংলাদেশকে একটি জঙ্গিরাষ্ট্রের তকমা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ওরা পারেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যার সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুনরায় একাত্তরের চেতনায় ফিরেছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিরাপদে-নির্বিঘ্নে তাদের ধর্ম-কর্ম সম্পাদনে সক্ষম হচ্ছেন। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্বেও বাংলাদেশের ধর্মীয়-সম্প্রীতি আজ সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে।’ ‘ধর্মের কারণে কেউ যাতে বিমাতাসূলভ আচরনের শিকার না হন, ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কেউ যাতে সহিসংসতা চালাতে না পারে সেজন্যে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। দেশে দেশে সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদে লিপ্তরা শুধু একটি ধর্ম-বিশ্বাসী লোক নয়, তারা বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষ। অর্থাৎ ওরা মানবতার শত্রু। ওদেরকে প্রতিহত করতে বিবেকসম্পন্ন সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে নতুন একটি আইন চালু করা হয়েছে। সে অনুযায়ী কোন ধর্মবিশ্বাসী মানুষ বা সম্প্রদায়কে হেয়-প্রতিপন্ন করা অথবা ঐ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বা বর্বরতা চালালে সেজন্যে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা হয়েছে। এটি করা হয়েছে সামাজিক-ধর্মীয় সম্প্রীতি সমুন্নত রাখার স্বার্থে। শুধু তাই নয়, মাদ্রাসা শিক্ষাকেও আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। এজন্যে চলতি বছরের বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে ৯০০ মিলিয়ন ডলার তথা সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ হচ্ছে মানবিকতার উর্বর ভূমি। মিয়ানমার জান্তার বর্বরতার ভিকটিমরা প্রাণের ভয়ে মাতৃভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়লে তাদেরকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্বেও বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদানের ঘটনাটি আজ কারো অজানা নেই। এভাবেই মানবিকতাকে প্রাধান্য দেয় বাংলাদেশ।

ধর্মীয় সম্প্রীতির বন্ধনকে সুসংহত রাখতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম বলে উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, সর্বাধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে সামজিক-সম্প্রীতি তথা ধর্মীয় স্বাধীনতাকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, তা খুব কম সময়েই দেখা যাচ্ছে।  তিনি মনে করেন গণমাধ্যমের ইতিবাচক প্রচারণায় ধর্মীয় সম্প্রীতিই শুধু জোরদার হয় না, সামাজিক স্থিতি মজবুত হয় এবং উন্নয়ন-পরিক্রমা ত্বরান্বিত হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য স্থান বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আপডেট টাইম : ১২:০৭:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জুলাই ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্যোগে ওয়াশিংটন ডিসিতে ৩ দিনবাপী ‘ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী দিবসে (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য একটি স্থান। বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম-কর্ম অবাধে সম্পাদন করছেন এবং বাংলাদেশের সংবিধান সে অধিকার নিশ্চিত করেছে।’

বাংলাদেশের মন্ত্রী এ সমাবেশে আরো বলেছেন, সারাবিশ্বে টেকসই শান্তি ও স্থিতির স্বার্থেই সকলকে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সর্বক্ষেত্রে জাগ্রত রাখতে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নয় মানবতাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাহলেই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন-পরিক্রমা ত্বরান্বিত হবে।’

উল্লেখ্য, ৪০ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১০৬ দেশের নীতি-নির্ধারক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ, মসজিদ-মন্দির-গীর্জার কর্ণধার, লেখক-মানবাধিকার কর্মীরা এই সম্মেলনে অংশ নেন। এটি ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর আহ্বানে ধর্মীয় সম্প্রীতি জাগ্রত রাখতে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক এ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ ব্রাউনব্যাকসহ পদস্থ কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট তার মূল বক্তব্যে দেশে দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতায় ক্রমান্বয়ে অগ্রগতির সংবাদে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র বলিষ্ঠ ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে বলে পুনরায় উল্লেখ করে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, এহেন বর্বরতায় দায়ীদেরকেও কাঠগড়ায় সোপর্দ করতে সোচ্চার থাকবো আমরা।

এ সম্মেলনে মিয়ানমার প্রসঙ্গে গৃহিত এক রেজ্যুলেশনে বলা হয়েছে, আগামী বছর মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। সে নির্বাচনে সকল ধর্ম/সম্প্রদায়ের মানুষের অবাধ অংশগ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে। এজন্যে প্রয়োজনীয় সংলাপের কথাও বলা হয়েছে। এ সংলাপে থাকবে সম্ভাব্য প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল বা জোটগুলো। ধর্ম বা গোত্র বিবেচনায় নয়, বার্মার নাগরিক হিসেবে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে। রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমান নিধনের জন্যে বা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্যে দায়ীদের চিহ্নিত এবং শাস্তি প্রদানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেই দেশত্যাগী রোহিঙ্গারা নিজ বসতভিটায় ফিরতে আগ্রহী হবে বলেও মন্তব্য করা হয় এ সম্মেলনে।

এ সম্মেলনে গণচীনে মুসলিম-বিদ্বেষমূলক আচরণেরও নিন্দা জানানো হয় এবং ধর্মবিশ্বাসী সকলের অধিকার সমুন্নত রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান উচ্চারিত হয়। এ ধরনের আন্তর্জাতিক সমাবেশ শুধু ওয়াশিংটন ডিসিতে আঞ্চলিক পর্যায়েও করার পরামর্শ দিয়ে ড. মোমেন বলেছেন, শীঘ্রই বাংলাদেশ সেই সম্মেলনের হোস্ট করতে আগ্রহী। এসময় তার বক্তব্যে ড. মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় বিশ্বাস করেন যে, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এবং সে চেতনায় সবকিছু হচ্ছে বাংলাদেশে।’

সকল ধর্ম এবং জাতি-বিশ্বাসের মানুষ কোন ধরনের ভয়-ভীতি ছাড়া নিরাপদে মর্যাদার সাথে জীবন-যাপন করতে সক্ষম হয়। এমন একটি পরিবেশ তৈরীর জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিক এই উদ্যোগের অংশিদার হতে পেরে বাংলাদেশও গৌরববোধ করছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

‘বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানও সব সময় সকল ধর্মবিশ্বাসী মানুষের সমঅধিকার নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা সে পথেই হাঁটছেন অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সামাজিক ন্যায়-বিচার সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সে অধিকার সুসংহত করেছে বাংলাদেশের সংবিধান’-উল্লেখ করেন ড. মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের নৃশংসতার প্রসঙ্গে বলেন, জাতির পিতাকে সপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলেছে। ধর্মের নামে উগ্রপন্থিরা বাংলাদেশকে একটি জঙ্গিরাষ্ট্রের তকমা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ওরা পারেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যার সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুনরায় একাত্তরের চেতনায় ফিরেছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিরাপদে-নির্বিঘ্নে তাদের ধর্ম-কর্ম সম্পাদনে সক্ষম হচ্ছেন। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্বেও বাংলাদেশের ধর্মীয়-সম্প্রীতি আজ সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে।’ ‘ধর্মের কারণে কেউ যাতে বিমাতাসূলভ আচরনের শিকার না হন, ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কেউ যাতে সহিসংসতা চালাতে না পারে সেজন্যে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। দেশে দেশে সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদে লিপ্তরা শুধু একটি ধর্ম-বিশ্বাসী লোক নয়, তারা বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষ। অর্থাৎ ওরা মানবতার শত্রু। ওদেরকে প্রতিহত করতে বিবেকসম্পন্ন সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে নতুন একটি আইন চালু করা হয়েছে। সে অনুযায়ী কোন ধর্মবিশ্বাসী মানুষ বা সম্প্রদায়কে হেয়-প্রতিপন্ন করা অথবা ঐ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বা বর্বরতা চালালে সেজন্যে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা হয়েছে। এটি করা হয়েছে সামাজিক-ধর্মীয় সম্প্রীতি সমুন্নত রাখার স্বার্থে। শুধু তাই নয়, মাদ্রাসা শিক্ষাকেও আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। এজন্যে চলতি বছরের বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে ৯০০ মিলিয়ন ডলার তথা সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ হচ্ছে মানবিকতার উর্বর ভূমি। মিয়ানমার জান্তার বর্বরতার ভিকটিমরা প্রাণের ভয়ে মাতৃভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়লে তাদেরকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্বেও বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদানের ঘটনাটি আজ কারো অজানা নেই। এভাবেই মানবিকতাকে প্রাধান্য দেয় বাংলাদেশ।

ধর্মীয় সম্প্রীতির বন্ধনকে সুসংহত রাখতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম বলে উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, সর্বাধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে সামজিক-সম্প্রীতি তথা ধর্মীয় স্বাধীনতাকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, তা খুব কম সময়েই দেখা যাচ্ছে।  তিনি মনে করেন গণমাধ্যমের ইতিবাচক প্রচারণায় ধর্মীয় সম্প্রীতিই শুধু জোরদার হয় না, সামাজিক স্থিতি মজবুত হয় এবং উন্নয়ন-পরিক্রমা ত্বরান্বিত হয়।