হাওর বার্তা ডেস্কঃ বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকাল থেকে মিন্নিকে প্রায় ১৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে রাত ৯টায় তাঁকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেয় পুলিশ।
বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এক নম্বর সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে (২০) আজ সকাল পৌনে ১০ টায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ লাইনসে আনা হয়। এরপর তদন্ত কর্মকর্তার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ এবং সুদীর্ঘ সময় ধরে তথ্যাদি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। আর তাই মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটন ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে রাত ৯টায় মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মিন্নিকে গ্রেপ্তারের ২১ দিন আগে গত ২৬ জুন বরগুনা সরকরি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পরদিন ২৭ জুন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
এ মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড গেল ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এছাড়া মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার ২ নম্বর আসামি রিফাত ফরাজীসহ বাকি ৩ আসামি এখনো রিমান্ডে আছেন।
কিন্তু এসবের পরও কিছুতেই যেন সামনে আসছিলো না ভিতরের ঘটনা। তাইতো এ মামলার প্রধান সাক্ষী মিন্নির দিকেই আঙ্গুল তোলেন খোদ মিন্নির শ্বশুরসহ সর্বস্তরের মানুষ। এমনকি তাকে গ্রেপ্তারও দাবি করেন তারা।
গত ১৩ জুলাই (শনিবার) রাত ৮টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মিন্নির গ্রেপ্তার দাবি করেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ। তিনি অভিযোগ করেন, এ হত্যার সঙ্গে মিন্নি জড়িত। রিফাতের বাবার এই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই মূলত নাটকীয় মোড় নেয় ঘটনা। মিন্নির গ্রেপ্তারের দাবিতে পরদিন রোববার বেলা ১১টায় বরগুনা প্রেসক্লাবের সামনে করা হয় মানববন্ধন। মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, রিফাত হত্যায় তাঁর স্ত্রী মিন্নি জড়িত।
‘বরগুনার সর্বস্তরের জনগণ’-এর ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ। মানববন্ধনে রিফাতের বাবা ছাড়াও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও স্থানীয় সাংসদের ছেলে সুনাম দেবনাথ বক্তব্য দেন।
রোববার সকালের ওই মানববন্ধনের পর দুপুরেই নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলন করেন মিন্নি। লিখিত বক্তব্যে- ‘যাঁরা বরগুনায় ‘বন্ড ০০৭’ নামে সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি করিয়েছিলেন, তাঁরা খুবই ক্ষমতাবান এবং অর্থবিত্তশালী। নেপথ্যের এই ক্ষমতাশীলরা বিচারের আওতা থেকে দূরে থাকা ও এই হত্যা মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তাঁর শ্বশুরকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন’ বলে অভিযোগ করেন রিফাতের স্ত্রী মিন্নি। তবে মিন্নির সে অভিযোগে তেমন সাড়া মেলেনি রিফাত হত্যা ঘটনার পর থেকে সদা সরব সোশ্যাল মিডিয়া। বরং বিপরীত প্রতিক্রিয়াই দেখা যায় ফেসবুকসহ অন্যান্য সব মাধ্যমে।
এরপর আজ সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনা পুলিশ লাইনসে নেয়া হয় মিন্নিকে। মিন্নিকে পুলিশ লাইনসে নেয়ার বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, মিন্নি এই মামলার এক নম্বর সাক্ষী। তাই তাঁর জবানবন্দি নেয়ার জন্য তাঁর স্বজনসহ তাঁকে পুলিশ লাইনসে আনা হয়েছে।
যার পরের ঘটনা এখন সবারই নখদর্পনে। হ্যাঁ, মঙ্গলবার রাত ৯টায় সংবাদ সম্মেলন করে রিফাত হত্যায় তারই স্ত্রী মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।
এরই প্রেক্ষিতে এখন জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে-তবে কি রিফাত হত্যায় জড়িত তারই স্ত্রী মিন্নি! যদিও এর উত্তর এখনই নিশ্চিত করেনি প্রশাসন। তবুও এই আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না!