হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাগলা মসজিদ। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এক পবিত্র ইবাদতখানা। কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকার নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত এই মসজিদটি দেশজুড়ে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। একটি অন্যতম পবিত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত এই পাগলা মসজিদ।
পাগলা মসজিদে ইবাদতের মাধ্যমে এক অন্যরকম প্রশান্তি লাভ করেন মুসল্লীরা। প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বাইরেও জুমআর নামাজ এবং মহিমান্বিত রজনীগুলোতে মুসল্লীরা ছুটে যান পাগলা মসজিদে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলআমিনের অনুকম্পা পেতে ইবাদতে মশগুল হন তারা। ঐতিহাসিক এই মসজিদটির নামকরণ নিয়েও নানা জনশ্রুতি আছে।
এরমধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত জনশ্রুতি হচ্ছে, পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদের কাছে উপস্থিত হন। এ সময় তাঁকে ঘিরে আশে পাশে অনেক ভক্তকূল সমবেত হন। পাগলবেশী আধ্যাত্মিক এই পুরুষের ইন্তেকালের পর তাঁর সমাধির পাশে পরবতীতে এই মসজিদটি গড়ে উঠে। কালক্রমে এটি পাগলা মসজিদ নামে পরিচিত হয়।
কেবল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছেই নয়, সকল র্ধমাবলম্বীদের কাছেই অত্যন্ত পবিত্র ধমীয় কেন্দ্র হিসেবে পাগলা মসজিদ পরিগণিত হয়ে আসছে। দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবেও স্বীকৃত পাগলা মসজিদ। এ মসজিদে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দান করেন।
পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক খুললে প্রতিবারই কোটি টাকার উপরে পাওয়া যায়। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মসজিদটির দানসিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগীসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। কথিত আছে, খাস নিয়তে এই মসজিদে দান করলে মনোবাঞ্চা পূর্ণ হয়। সেজন্য দূর-দূরান্ত থেকেও অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন।
প্রায় সাড়ে চার একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটিকে ‘পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্স’ নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের উন্নয়ন ছাড়াও বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়। এবার পাগলা মসজিদটির উন্নয়নে নেয়া হচ্ছে এক মহাপরিকল্পনা। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বাধিন পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটি মসজিদটিকে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে এতদঞ্চলের একটি দর্শণীয় মসজিদ হিসেবে এটিকে রূপ দিতে চান। আর এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় হবে অন্তত ৫০ কোটি টাকা। সেই অর্থও মানুষের দান থেকে পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর নির্দেশনায় নির্মাণ কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ মসজিদটির অবকাঠামো এবং পরিবেশ উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।
পাগলা মসজিদের মূল স্থাপনাটিকে ধুয়ে মুছে চুনকাম করা হয়েছে। মসজিদে নববীর আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে মসজিদটিকে। জীর্ণ অজুখানাকে ঘষা-মাজা আর ধুয়ে-মুছে মুসল্লীদের উপযোগী করা হয়েছে। সুউচ্চ প্রাচীর ঘেরা মসজিদ এলাকার প্রাচীরের পাশ ঘেঁষে নির্মাণ করা হচ্ছে ওয়াকওয়ে। ওয়াকওয়ের পাশে রোপণ করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা। মসজিদ প্রাঙ্গণের পরিবেশ উন্নয়নের জন্য সেখানেও নেয়া হয়েছে নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড।
মুসল্লীদের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য স্থান নির্ধারণ করে গড়ে তোলা হচ্ছে পার্কিং এরিয়া। সবুজ ঘাসে ঢেকে দেয়া হচ্ছে মসজিদের বহিরাঙ্গণ। মসজিদের এই উন্নয়নযজ্ঞকে সামনে রেখে দিন-রাত চলছে নানা ব্যস্ততা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ জানান, পাগলা মসজিদটিকে মুসল্লীবান্ধব একটি অনন্য মসজিদ হিসেবে রূপ দেয়ার চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য থাকবে, সামগ্র্রিক পরিবেশের উন্নয়ন ঘটিয়ে মুসল্লীদের সুযোগ-সুবিধার পরিসর যেন বাড়ানো যায়। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়িত হলে দেশ-বিদেশের মানুষ ঐতিহাসিক এই মসজিদটিতে পরম প্রশান্তি নিয়ে ইবাদত-বন্দেগী করতে পারবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।