‘জীবন যোদ্ধা’ নুরুল্লাহর রিকশাটি কেড়ে নিল পুলিশ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নুরুল্লাহ। ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে একটি হাত ও একটি পা হারিয়েছেন। কৈশোরে প্রথমে হাত পেতে চলেছেন কিছুদিন। কিন্তু পরে আত্মসম্মানে বাঁধে। ঠিক করেন কাজ করে খাবেন। সচল হাতে তুলে নেন রিকশার স্টিয়ারিং। এভাবে চলছিল কয়েক বছর। কিন্তু হঠাৎ বাধ সাধল পুলিশ। তার রিকশাটা আটকে দিয়েছে তারা। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকাটাইমসে আচমকা ফোন নুরুল্লাহর। কাঁদে কাঁদো গলায় বলেন, ‘স্যার, আমার রিকশাটা খিলগাঁও রেলগেইটে আটকায়া দিছে। কিছু একটা করেন।’

নুরুল্লাহর বাড়ি জামালপুরে। ঘরে স্ত্রী। দুই সন্তান। দুজনই মেয়ে। বড় মেয়েটার বয়স আট বছর। প্রতিবন্ধত্ব তার জন্ম সহোদর। কথা বলতে পারে না। হাঁটতেও পারে না। বাঁ পা-টা ডান পায়ের তুলনায় চিকন।

চিকিৎসকরা বলেছেন, টানা কয়েক বছর থেরাপি দিলে হয়তো হাঁটতে পারবে মেয়েটি। দু হাত-পায়ে তিন চাকা টেনে চারজনের খাওয়া-পরার জোগান দিতেই বাবা নুরুল্লাহর গলদঘর্ম। তার ওপর মেয়ের এমন ব্যয়বহুল চিকিৎসা টেনে নেওয়া দুঃসাধ্যই বটে।

স্ত্রী-সন্তানরা গ্রামে থাকেন। নুরুল্লাহ থাকেন ঢাকার খিলগাঁওয়ে। মেসে। রিকশা চালান। এক যুগের বেশি সময় ধরে চলছে তার জীবনের এই যুদ্ধ। ভিক্ষাবৃত্তি নয়, আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচবেন বলেই নেমেছিলেন এই পথে।

হঠাৎ নুরুল্লাহর রিকশা কেন পুলিশ আটকালো-জানতে খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় দায়িত্ব পালন করা ওই সার্জেন্টের নাগাল পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে নুরুল্লাহকেও বারবার কল করে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না।

আধা ঘণ্টা পর নুরুল্লাহন নিজেই কল করলেন। বলেন, ‘স্যার, আমার মোবাইলটাও আটকায়া রাখছিল। পকেটে রাইখ্যা দিছিল। যাতে কাউরে জানাইতে না পারি।’

এখন রিকশা কোথায় আছে- এমন প্রশ্নে প্রতিবন্ধী মানুষটি বলেন, ‘এখন রেকার লাগাইব, হাজার বারোশ টাকা নিব।’

নুরুল্লাহকে কেন খেটে খেতে দিতে চায় না পুলিশ? জানতে যোগাযোগ করা হয়, ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) রাকিবুল হাসানের সঙ্গে। তার দাবি, নুরুল্লাহ যেটা করছেন সেটা ঝুঁকিপূর্ণ।

‘আমাদের করণীয় হচ্ছে, কেউ যেন ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চালিয়ে অন্যের প্রাণহানি না করে। এ জন্য ব্যাটারি খুলে দেওয়া হয়। তাদের তো নিজের ওপরই কন্ট্রোল নাই, প্রতিবন্ধী মানুষ। ওই গাড়ি তো সে ব্রেক করতে পারবে না। অ্যাক্সিডেন্ট করবে। তাই আমাদের নির্দেশ হচ্ছে এই ধরনের লোক পাওয়া মাত্র তার ব্যাটারি খুলে গাড়ি জব্দ করা। এ জন্য আমরা অভিযান শুরু করেছি।’

তাহলে এরা কী করে বাঁচবে-এমন প্রশ্নে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিবন্ধী বলে এরা মেইন রোডে উঠে যায়। সেখানে লরি চলে, দ্রুত গতির গাড়ি চলে। মহল্লার মধ্যে আমরা ওভারলুক করি। মেইন রোডে আসলে আমরা বাঁধা দেই।’

সূত্র: ঢাকাটাইমস

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর