ঢাকা ০১:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিশোরগঞ্জের সত্যজিৎ রায় ইতিহাসের আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:২৬:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ মে ২০১৯
  • ৩১২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জ তথা বাংলাদেশের গৌরবান্বিত ইতিহাসের আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র—সত্যজিৎ রায়। তার জীবনীর ইতিহাস যেকোনো মহাপুরুষ থেকে কম নয়।

আসুন আমরা জেনে নেই সেই ইতিহাস।

জন্ম, ছেলেবেলা এবং পড়াশোনাঃ

সত্যজিৎ রায় ১৯২১ সালের ২ মে এক বিদগ্ধ এবং সাংস্কৃতিক ঋদ্ধ পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা সুকুমার রায় (১৮৮৭-১৯২৩) ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর বড় ছেলে। সুকুমার রায় ছিলেন লেখক, সম্পাদক ও আলোকচিত্রী। এছাড়া তিনি “Royal Photographic Society of Great Britain” এর ফেলো ছিলেন। তিনি ইংল্যান্ডে প্রিন্টিং টেকনোলজির উপর পড়াশোনা করেছেন এবং পরে পারিবারিক ব্যবসায়ে যোগ দেন।

১৯২৩ সালে সত্যজিৎ এর পিতা সুকুমার রায় মারা যান। তখন সত্যজিৎ এর বয়স মাত্র তিন বছর। এর তিন বছর পর প্রিন্টিং এর ব্যবসা তাদের হাত ছাড়া হয়ে যায় এবং সত্যজিৎ ও তাঁর মা’কে তাদের নিজস্ব বাড়ি ছেড়ে যেতে হয়। তাঁরা সত্যজিৎ এর মামা বাড়িতে চলে যান। তাঁর মা সুপ্রভা রায় সূচি কর্মের মাধ্যমে গৃহস্থালির খরচ নির্বাপন করতেন। এখানেই সত্যজিৎ বিজয়া(পরবর্তীতে সত্যজিৎ এর স্ত্রী) এর সাথে পরিচিত হন।

সত্যজিৎ ৮ বছর বয়সে বালিগঞ্জ সরকারি বিদ্যালয়ে (Ballygunj Government School) ভর্তি হন। এর আগে তাঁর পড়াশোনা চলছিল তাঁর মায়ের কাছে। ছাত্র হিসেবে সত্যজিৎ মাঝারি মানের ছিলেন।

স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তাঁর চলচ্চিত্র প্রেম শুরু হয়। নিয়মিত হলিউড এর খবর পড়তেন। এমনকি টুকিটাকি খবর ও বাদ যেতনা।”Picturegoer” এবং “Photoplay” এর মতো বিখ্যাত ম্যাগাজিনগুলো তিনি নিয়মিত পড়তেন। এছাড়া “Western classical music” ছিল তাঁর আরেকটি আগ্রহের বিষয়। ১৫ বছর বয়সের দিকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।

মায়ের পীড়াপীড়িতে তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন। প্রথম দুই বছর বিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করলেও তৃ্তীয় বর্ষে তিনি অর্থনীতি নেন। কারন এক নিকটাত্মীয় তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে অর্থনীতিতে গ্রাজুয়েট করলে তাঁকে চাকরি দিবেন। কলেজে পড়ার সময়েও তিনি চলচ্চিত্র দেখা এবং নিজস্ব গ্রামোফোনে “Western Classical Music” শোনা চালিয়ে যান।

১৮ বছর বয়সে ১৯৩৯ সালে তিনি গ্রাজুয়েট করেন। এবং পড়াশোনা ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষন ছিলনা তবুও তিনি বানিজ্যিক চিত্রকর (Commercial Artist) হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ছবি আঁকায় তাঁর সহজাত প্রতিভা এবং আগ্রহ ছিল। তাঁর মায়ের অবশ্য মনে হয়েছিল যে চাকরি করার পক্ষে সত্যজিৎ এর বয়স অনেক কম। তাই তিনি সত্যজিৎ কে শান্তিনিকেতনে পেইন্টিং এর উপর পড়াশোনা করার উপদেশ দেন। প্রথমে আপত্তি করলেও পড়ে সত্যজিৎ অবশ্য মেনে নেন।

শান্তিনিকেতনে পড়ার সময়ে সত্যজিৎ রায়।

কর্মজীবনঃ

১৯৪৩ এর এপ্রিলে তিনি ব্রিটেন ভিত্তিক বিজ্ঞাপনী সংস্থা D.J.Keymer এ মাসিক ৮০ রুপি বেতনে জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী ১৩ বছর (যত দিনে পথের পাঁচালী সফলতা পায় এবং তিনি পুরোদস্তুর চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন) তিনি এখানেই কর্মরত ছিলেন।

এর পরবর্তী ৩৭ বছর শুধুই চলচ্চিত্র নির্মান করেন। ১ বছরে ১ ছবি এই ছিল তাঁর মূলনীতি। প্রচন্ড কাজের চাপে ১৯৮০ এর মধ্যমভাগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর উপন্যাস অবলম্বনে “ঘরে বাইরে”(১৯৮৪) ছবিটি তাঁর আবার চলচ্চিত্রাঙ্গনে ফিরে আসার প্রথম কাজ। শুটিং এর সময় তিনি দুইবার হার্ট এটাক এর শিকার হন এবং তাঁর ছেলে সন্দীপ রায় ছবিটির কাজ শেষ করেন।

পরবর্তী চার বছর অসুস্থতার কারনে তিনি চলচ্চিত্র থেকে দূরে ছিলেন। ১৯৮৯ তে তিনি “গণশত্রু” এর অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন। এই সিরিজের পরবর্তী ছবিগুলো ছিল “শাখা- প্রশাখা”(১৯৯০) এবং “আগন্তুক”(১৯৯১)। তিন ছবির এই সিরিজটিই তাঁর জীবনের শেষ সিরিজ।

মহাপ্রয়াণঃ

১৯৯২ সালের ২৩ শে এপ্রিল সত্যজিৎ রায় মৃত্যুবরন করেন।

সত্যজিৎ এর পাওয়া পুরস্কার এর তালিকা (আংশিক)।

১৯৫৮
* পদ্মশ্রী(Padmashree), India
১৯৬৫
* পদ্মভূষন(Padmabhushan), India
১৯৬৭
*ম্যাগসেসে পুরস্কার( Magasaysay Award), Manila
১৯৭১
* Star of Yugoslavia
১৯৭৩* Doctor of Letters, Delhi University
১৯৭৪ * D. Litt., Royal College of Arts, London
১৯৭৬ *পদ্মবিভূষন( Padmabibhushan), India
১৯৭৮* D. Litt., Oxford University
* Special Award, Berlin Film Festival
* Deshikottam, Visva-Bharati University, India
১৯৭৯* Special Award, Moscow Film Festival
১৯৮০ * D. Litt., Burdwan University, India
* D. Litt., Jadavpur University, India
১৯৮১ * Doctorate, Benaras Hindu University, India* D. Litt. , North Bengal University, India
১৯৮২ * Hommage à Satyajit Ray, Canes Film Festival* Special Golden Lion of St. Mark, Venice Film Festival*বিদ্যাসাগর পুরস্কার(Vidyasagar Award), Govt. of West Bengal
১৯৮৩* Fellowship, The British Film Institute
১৯৮৫ * D. Litt., Calcutta University, India*দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার (Dadasaheb Phalke Award), India* Soviet Land Nehru Award
১৯৮৬ * Fellowship, Sangeet Natak Academy, India
১৯৮৭ * Légion d’Honneur, France* D. Litt., Rabindra Bharati University, India
১৯৯২ * অস্কার- আজীবন পুরস্কার(Oscar for Lifetime Achievement), USA
*ভারতরত্ন (Bharatratna), India

এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার এর তালিকা। তাঁর জীবনের সব পুরস্কারের তালিকা এত বড় যে দিলে লেখা খুব বড় হয়ে যাবে (হয়ত বড় লেখা দেখে আপনারা পড়বেনই না) তাই এই মহাগুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারের তালিকাটি দিলাম।

চলচ্চিত্রে আগ্রহের ইতিহাসঃ

যেসব কারন সত্যজিৎ রায়কে চলচ্চিত্র পরিচালনা করতে উৎসাহী করেছে এর মধে উল্লেখযোগ্য হল জ্যঁ রেঁনোয়ার (বিশ্ববিখ্যাত ফরাসী পরিচালক) এর সান্নিধ্যলাভ এবং তাঁর “দ্য রিভার” ছবির শুটিং প্রত্যক্ষ ভাবে দেখা (তিনি এই ছবিটির কিছু অংশের শুটিং কলকাতায় করেছিলেন)। এছাড়া ১৯৫০ সালে চাকরি সূত্রে লন্ডনে ৫ মাস অবস্থান করেছিলেন যা ছিল তাঁর চলচ্চিত্রকার হয়ে ওঠায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। লন্ডনে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি প্রায় ১০০ চলচ্চিত্র দেখেন, পরিচিত হন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা লিন্ডসে এন্ডারসন, চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ পেনেলোপি হাষ্টন ও গ্যাবিন ল্যাম্বটির সাথে। এ সময়েই তিনি বিশ্ববিখ্যাত ইতালিয়ান পরিচালক ভিত্তোরিও ডি সিকা নির্মিত নিওরিয়্যালিস্ট চলচ্চিত্র “দ্য বাইসাইকেল থিফ”(১৯৪৮) দেখে বিশেষভাবে মুগ্ধ হন এবং বিভুতিভূষন বন্দোপাধ্যায় এর উপন্যাস “পথের পাঁচালী” অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মান করার সিদ্ধান্ত নেন।

সত্যজিৎ এর প্রভাবঃ

দেশ বিদেশের বহু বিখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা সত্যজিৎ এর চলচ্চিত্রশৈলীর অনুসারী। তাঁরা বিভিন্নভাবে সত্যজিৎ রায়ের কাজ দ্বারা প্রভাবিত। এই দলে ভারতের অপর্ণা সেন, দীপা মেহতা, ঋতুপূর্ণ ঘোষ ও গৌতম ঘোষ; বাংলাদেশের তারেক মাসুদ ও তানভীর মোকাম্মেল; এমনকি ইরাকের আব্বাস কিয়ারোস্তামি এবং ফ্রান্সের জঁ লুক গদারের মত পরিচালক পর্যন্ত রয়েছেন। কেউ কেউ আবার সত্যজিৎ এর ছবি বা ছবির অংশবিশেষ অনুকরণ করেছেন। কখনো কখনো তাঁর নির্মিত কোন একটি ছবির নির্দিষ্ট একটি চরিত্র অবলম্বনে নতুন কাহিনী তৈ্রি করে ছবি নির্মান করেছেন।

সত্যজিৎ এর পরিচালিত চলচ্চিত্রের তালিকাঃ

এখানে সত্যজিৎ রায়ের সবগুলো ছবির নাম দেয়া হলো। ছবিগুলোর নাম, “মুক্তির সাল-ছবির নাম-দৈ্র্ঘ্য-প্রকার” এই ফরম্যাট এ দেয়া হলো।

1955 পথের পাঁচালী (Song of the Little Road), ১১৫ মিনিট.., সাদাকালো।

1956 অপরাজিত (The Unvanquished), ১১৩ মিনিট.., সাদাকালো।

1958 পরশ পাথর (The Philosopher’s Stone), ১১১ মিনিট.., সাদাকালো।

1958 জলসা ঘর (The Music Room), ১০০ মিনিট.., সাদাকালো।

1959 অপুর সংসার (The World of Apu), ১০৬ মিনিট.., সাদাকালো।

1960 দেবী (The Goddess), 93 min., সাদাকালো।

1961 তিন কন্যা (Three Daughters), পোষ্টমাস্টার (৫৬ মিনিট.);মনিহারা (৬১ মিনিট..); সমাপ্তি (৫৬ মিনিট.) (Two Daughters, পোষ্টমাস্টার(৫৬ মিনিট.); সমাপ্তি (৫৬ মিনিট.), সাদাকালো।

1961 Rabindranath Tagore, Documentary, ৫৪ মিনিট., সাদাকালো।

1962 কাঞ্চনজংঘা, ১০২ মিনিট.., Color

1962 অভিযান (The Expedition), ১৫০ মিনিট.., সাদাকালো।

1963 মহানগর (The Big City), ১৩১ মিনিট.., সাদাকালো।

1964 চারুলতা (The Lonely Wife), ১১৭ মিনিট.., সাদাকালো।

1964 Two, Short, ১৫ মিনিট.., সাদাকালো।

1965 কাপুরুষ ও মহাপুরুষ (The Coward and the Holy Man), ৭৪ + ৬৫ মিনিট.., সাদাকালো।

1966 নায়ক (The Hero), ১২০ ., সাদাকালো।

1967 চিড়িয়াখানা (The Zoo), ১২৫ মিনিট.., সাদাকালো।

1968 গুপি গাইন বাঘা বাইন (Adventures of Goopy and Bagha), ১৩২ মিনিট.., সাদাকালো এবং আংশিক রঙিন।

1969 অরণ্যের দিন রাত্রি (Days and Nights in the Forest), ১১৫ মিনিট..,সাদাকালো।

1970 প্রতিদ্বন্দী (The Adversary), ১১০ মিনিট.., সাদাকালো।

1971 সীমাবদ্ধ (Company Limited), ১১২ মিনিট.., সাদাকালো।

1971 সিকিম,(Sikkim), Documentary, ৬০ মিনিট.., সাদাকালো।

1972 The Inner Eye, Documentary, ২০ মিনিট.., রঙিন।

1973 অশনি সংকেত (Distant Thunder), ১০১ মিনিট.., রঙিন।

1974 সোনার কেল্লা (The Fortress), ১২০ মিনিট.., রঙিন।

1975 জন অরণ্য (The Middleman), ১৩১ মিনিট.., সাদাকালো।

1976 বালা(Bala), Documentary, ৩৩ মিনিট.., রঙিন।

1977 শতরঞ্জ কি খিলাড়ী (The Chess Players) ১১৩ মিনিট..রঙিন।

1978 জয় বাবা ফেলুনাথ (The Elephant God), ১১২ মিনিট., রঙিন।

1980 হীরক রাজার দেশে (Kingdom of Diamonds), ১১৮ মিনিট.., রঙিন।

1980 পিকু (Pikoo’s Day), Short, ২৬ মিনিট.., রঙিন।

1981 সদ্ গতি (The Deliverance), ৫২ মিনিট.., রঙিন।

1984 ঘরে বাইরে (Home and the World), ১৪০ মিনিট.., রঙিন।

1987 সুকুমার রায়(Sukumar Ray), Documentary, ৩০ মিনিট.., রঙিন।

1989 গণ শত্রু (Enemy of the People), ১০০ মিনিট.., রঙিন।

1990 শাখা প্রশাখা (Branches of the Tree), ১২১ মিনিট.., রঙিন।

1991 আগন্তুক (The Stranger), ১২০ মিনিট., রঙিন।

1955 পথের পাঁচালী (Song of the Little Road), ১১৫ মিনিট.., সাদাকালো।

1956 অপরাজিত (The Unvanquished), ১১৩ মিনিট.., সাদাকালো।

1958 পরশ পাথর (The Philosopher’s Stone), ১১১ মিনিট.., সাদাকালো।

1958 জলসা ঘর (The Music Room), ১০০ মিনিট.., সাদাকালো।

1959 অপুর সংসার (The World of Apu), ১০৬ মিনিট.., সাদাকালো।

1960 দেবী (The Goddess), 93 min., সাদাকালো।

1961 তিন কন্যা (Three Daughters), পোষ্টমাস্টার (৫৬ মিনিট.);মনিহারা (৬১ মিনিট..); সমাপ্তি (৫৬ মিনিট.) (Two Daughters, পোষ্টমাস্টার(৫৬ মিনিট.); সমাপ্তি (৫৬ মিনিট.), সাদাকালো।

1961 Rabindranath Tagore, Documentary, ৫৪ মিনিট., সাদাকালো।

1962 কাঞ্চনজংঘা, ১০২ মিনিট.., Color

1962 অভিযান (The Expedition), ১৫০ মিনিট.., সাদাকালো।

1963 মহানগর (The Big City), ১৩১ মিনিট.., সাদাকালো।

1964 চারুলতা (The Lonely Wife), ১১৭ মিনিট.., সাদাকালো।

1964 Two, Short, ১৫ মিনিট.., সাদাকালো।

1965 কাপুরুষ ও মহাপুরুষ (The Coward and the Holy Man), ৭৪ + ৬৫ মিনিট.., সাদাকালো।

1966 নায়ক (The Hero), ১২০ ., সাদাকালো।

1967 চিড়িয়াখানা (The Zoo), ১২৫ মিনিট.., সাদাকালো।

1968 গুপি গাইন বাঘা বাইন (Adventures of Goopy and Bagha), ১৩২ মিনিট.., সাদাকালো এবং আংশিক রঙিন।

1969 অরণ্যের দিন রাত্রি (Days and Nights in the Forest), ১১৫ মিনিট..,সাদাকালো।

1970 প্রতিদ্বন্দী (The Adversary), ১১০ মিনিট.., সাদাকালো।

1971 সীমাবদ্ধ (Company Limited), ১১২ মিনিট.., সাদাকালো।

1971 সিকিম,(Sikkim), Documentary, ৬০ মিনিট.., সাদাকালো।

1972 The Inner Eye, Documentary, ২০ মিনিট.., রঙিন।

1973 অশনি সংকেত (Distant Thunder), ১০১ মিনিট.., রঙিন।

1974 সোনার কেল্লা (The Fortress), ১২০ মিনিট.., রঙিন।

1975 জন অরণ্য (The Middleman), ১৩১ মিনিট.., সাদাকালো।

1976 বালা(Bala), Documentary, ৩৩ মিনিট.., রঙিন।

1977 শতরঞ্জ কি খিলাড়ী (The Chess Players) ১১৩ মিনিট..রঙিন।

1978 জয় বাবা ফেলুনাথ (The Elephant God), ১১২ মিনিট., রঙিন।

1980 হীরক রাজার দেশে (Kingdom of Diamonds), ১১৮ মিনিট.., রঙিন।

1980 পিকু (Pikoo’s Day), Short, ২৬ মিনিট.., রঙিন।

1981 সদ্ গতি (The Deliverance), ৫২ মিনিট.., রঙিন।

1984 ঘরে বাইরে (Home and the World), ১৪০ মিনিট.., রঙিন।

1987 সুকুমার রায়(Sukumar Ray), Documentary, ৩০ মিনিট.., রঙিন।

1989 গণ শত্রু (Enemy of the People), ১০০ মিনিট.., রঙিন।

1990 শাখা প্রশাখা (Branches of the Tree), ১২১ মিনিট.., রঙিন।

1991 আগন্তুক (The Stranger), ১২০ মিনিট., রঙিন।

সাহিত্যকর্মঃ

সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্রের মত সাহিত্য রচনায়ও সমান পারদর্শী ছিলেন।কিন্তু চলচ্চিত্রকার হিসেবে তাঁর অনবদ্য অবদান তাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা করেছে। হয়তো এ কারনেই তাঁর সাহিত্য নিয়ে আলোচনা কম করা হয়।তাঁর সাহিত্যগুলো মূলত তার পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত শিশুতোষ “সন্দেশ” পত্রিকার জন্য লেখা, যা পরবর্তীতে বই আকারেও বের হয়েছে।উল্লেখ্য “সন্দেশ”পত্রিকাটি মাঝখানে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ এটি আবারো চালু করেন।সত্যজিৎ এর লেখাগুলো ছিল প্রধানত কিশোর রচনা।তবে তা সব বয়সী পাঠকই পড়তেন এবং এখনো পড়েন।বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা গোয়েন্দা চরিত্র “ফেলুদা” সত্যজিৎ এর এক আশ্চর্য সৃষ্টি।এছাড়া তিনি বিজ্ঞানকল্পকাহিনী ও লিখেছেন।এ ক্ষেত্রে তাঁর আরেকটি বিখ্যাত ও জনপ্রিয় চরিত্র “প্রফেসর শঙ্কু”।এছাড়া তিনি অনেক ছোটগল্প লিখেছেন।করেছেন আনুবাদও।উল্লেখ্য যে এসব বই এর প্রচ্ছদ এবং ভিতরের ছবি সব তাঁর নিজের হাতে আঁকা।চলচ্চিত্র নির্মান এবং শুটিং নিয়েও তিনি লিখেছেন কিছু বই।এগুলো হচ্ছে, “আওয়ার ফিল্মস,দেয়ার ফিল্মস”, “বিষয়ঃ চলচ্চিত্র”, “একেই বলে শুটিং” ইত্যাদি।এছাড়া নিজের ছেলেবেলা নিয়েও তিনি বই লিখেছেন, “যখন ছোট ছিলাম”।

সত্যজিৎ সম্পর্কে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের করা কয়েকটি মন্তব্যঃ

১৯৮৭ সালে তৎকালীন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিঁতেরা[/sb] কলকাতায় এসে সত্যজিৎ কে ” লিজিয়ন অব অনার” এ ভূষিত করে বলেন-

“ভারতের সাংস্কৃতিক জগতে সত্যজিৎ রায় এক অবিস্মরনীয় ব্যক্তিত্ব।চলচ্চিত্র জগতে এই শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ পুরুষ।তাঁর মতো মহান ব্যক্তিকে আমাদের দেশের সর্বোচ্চ সন্মানে ভূষিত করতে পেরে আমি ও আমার দেশ্ বাসী আজ সন্মানিত বোধ করছি”।

১৯৯২ সালে তাঁকে অস্কার এ আজীবন সন্মাননা জানিয়ে বলা হয়,- “In recognition of his rare mastery of the art of motion pictures and for his profound humanitarian outlook,which has had an indelible influence on filmmakers and audiences throughout the world”.

অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী ড.অমর্ত্য সেন বলেন-“The work of Ray presents a remarkably insightful understanding of the relations between cultures, and his ideas remain pertinent to the great cultural debates in the contemporary world,not least in India.

“রশোমন”(১৯৫০) খ্যাত বিশ্বখ্যাত জাপানী পরিচালক আকিরা কুরোশাওয়া বলেছেন-

“Not to have seen the cinema of Ray means existing in the world without seeing the sun or the moon”.

বিখ্যাত পরিচালক Martin scorsese বলেছেন,

“Ray’s magic,the simple poetry of his images and their emotional impact,will always stay with me…His work is in the company of that of living contemporaries like Ingmar Bergman,Akira Kurosawa and Federico Fellini”

শেষ কথাঃ

সত্যজিৎ রায় কে নিয়ে লিখলে কয়েকটা মহাকাব্য হয়ে যাবে তবুও শেষ হবেনা তাকে নিয়ে লেখা।এক জীবনে শেষ করা যাবেনা তাঁকে নিয়ে গবেষনা।এমনই গভীর তাঁর বিদগ্ধতা,এতই বৈচিত্রময় তাঁর জীবনাচারণ।এই লেখায় আমি শুধু তাঁর কিছু তথ্য উপস্থাপন করেছি মাত্র।কোন বিশ্লেষন করিনি।তবে তাঁকে নিয়ে আমার আরো লেখার ইচ্ছা আছে।জানি লিখব শেষ করতে পারবোনা।মহীরুহের ডাল-পালা আর পাতার সংখা কি গুনে শেষ করা যায়?সত্যজিৎ যে মহীরুহ!

সত্যজিৎ রায়ের পৈতিক বাড়ি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র:-

কিশোরগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিঃ মিঃ দুরে কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নে অবস্হিত ভারতীয় উপমহাদেশের বিশিষ্ট চলচিএকার অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতিক বাড়ি ঘিরে গড়ে উঠতে পারে মনোরম নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র।

এই ঐতিহাসিক বাড়িটির পূর্বদিকে রয়েছে সান বাঁধানো ঘাট, পশ্চিমে কয়েক একর জায়গা জুড়ে বাড়িটি, পূর্বে প্রাচীর ও সিংহ দরজা ছিল যা এখন নেই। পশ্চিমে জরাজীর্ণ ভবন, যা এখন মসূয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তার একটু পশ্চিমে গেলেই ডাকঘর।

বাড়ীর ভিতরে রয়েছে কারুকার্য খচিত প্রাচীন দালান, বাগানবাড়ী, হাতীর পুকুর, খেলার মাঠ ইত্যাদি। সত্যজিৎ রায়ের পিতামহের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ীটি এখন সরকারের রাজস্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে আছে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে ২০১২ সালে ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি রেস্ট হাউজসহ বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও রাস্তাঘাট সংস্কার করা হয়।

এই বাড়ীতে ১৮৬০ সালের ১২ মে জন্মগ্রহণ করেন সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী। তিনি ছিলেন বিখ্যাত শিশু কিশোর পত্রিকা ‘সন্দেশের’ (১৯১৩) প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তাঁর বাবার নাম ছিল কালীনাথ রায়। পাঁচ বছর বয়সে নিঃসন্তান চাচা হরি কিশোর রায় চৌধুরী তাঁকে দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। পিতার দেয়া কামদারঞ্জন রায় নাম বদলিয়ে রাখেন উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী।
কিন্তুু

দত্তক পুত্র গ্রহণের বেশ ক‘বছর পর হরি কিশোর রায় চৌধুরী ঔরসে নরেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী জন্মগ্রহণ করায় দত্তক পুত্র উপেন্দ্র কিশোরের গুরুত্ব কমতে থাকে। হরি কিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন জমিদার। তাঁর স্নেহে লালিত উপেন্দ্র কিশোর ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৮৮০ সালে প্রবেশিকা এবং কলকাতা মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট থেকে বি এ পাস করেন।

এদিকে হরি কিশোর রায় চৌধুরী ভবিষ্যতে সম্পদের উত্তরাধিকার নিয়ে ঔরসজাত পুত্র ও দত্তক পুত্রের মাঝে যাতে কোন সংঘাত না বাধে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এজন্য বাড়ীর চার দেয়ালের বাইরে নকশা করে লোহার খুঁটি দিয়ে দত্তক পুত্রের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা বাড়ীর সীমানা নির্ধারণ করে নেন।

লোহার খুঁটিগুলো আজও রয়েছে। সীমানা নির্ধারিত বাড়ীতে উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর উরসে ১৮৮৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন জ্যেষ্ঠ পুত্র সত্যজিৎ রায়ের পিতা শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়। জন্মের পরই সুকুমার রায়সহ উপেন্দ্র কিশোর চলে যান কলকাতায়। মাঝে মাঝে নিজ বাড়ীতে ছেলে মেয়েদের নিয়ে বেড়াতে আসতেন তিনি। তাঁর মেজো মেয়ে পুণ্যলতার অনেক সাহিত্যকর্মের মধ্যে ছোট বেলার দিনগুলোতে সেকালের মসুয়ার বর্ণাঢ্য রায় চৌধুরীর পরিবারের বিবরণী রয়েছে।

হরি কিশোর রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র নরেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী মসুয়ায় জমিদারী লাভ করেন। উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী হয়ে পড়েন কলকাতা কেন্দ্রিক। নাতি সত্যজিৎ রায়ের জন্ম কলকাতাতেই এবং বেড়ে ওঠা সবই হয়েছে কলকাতায়। মসুয়া গ্রামের ভাঙ্গা-চোরা সত্যজিৎ রায়ের এই পৈতৃক বাড়ীটি দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে। বহু জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। সত্যজিৎ রায় কোনদিনই এখানে আসেননি। সবাই জানে এটি সত্যজিৎ রায়ের বাড়ী।

এ অঞ্চলের মানুষ মনেপ্রাণে এখনও ধরে রেখেছেন সেই বিশ্ববরেণ্য অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ঐতিহাসিক পৈতিক বাড়ীটি। একদা এ বাড়ীকে বলা হতো ‘পূর্ব বাংলার জোড়াসাঁকো’। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বুধবার এ ঐতিহাসিক বাড়ীতে অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখী মেলা। মসুয়া গ্রামে সত্যজিৎ রায়ের পরিবারের স্মৃতি চিহ্নটুকু ধরে রাখার জন্য গঠিত হয়েছে সত্যজিৎ রায় স্মৃতি সংসদ। প্রতি বছর ৫ই মে পালন করা হয় সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিবস।

প্রতিদিন বহু দর্শনার্থী সাহিত্যিক-কবি বাড়ীটি পরিদর্শনে আসেন। তাছারা গ্রামের শ্যমল- সবুজ ছায়া ঘেরা শান্ত পরিবেশের দুর্নিবার আকর্ষণ তো রয়েছেই।

এলাকাকাসী ও আগত দর্শনার্থীরা বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দিলে ঐতিহাসিক এই বাড়ী টিকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে মনোরম নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

কিশোরগঞ্জের সত্যজিৎ রায় ইতিহাসের আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র

আপডেট টাইম : ০৪:২৬:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ মে ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জ তথা বাংলাদেশের গৌরবান্বিত ইতিহাসের আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র—সত্যজিৎ রায়। তার জীবনীর ইতিহাস যেকোনো মহাপুরুষ থেকে কম নয়।

আসুন আমরা জেনে নেই সেই ইতিহাস।

জন্ম, ছেলেবেলা এবং পড়াশোনাঃ

সত্যজিৎ রায় ১৯২১ সালের ২ মে এক বিদগ্ধ এবং সাংস্কৃতিক ঋদ্ধ পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা সুকুমার রায় (১৮৮৭-১৯২৩) ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর বড় ছেলে। সুকুমার রায় ছিলেন লেখক, সম্পাদক ও আলোকচিত্রী। এছাড়া তিনি “Royal Photographic Society of Great Britain” এর ফেলো ছিলেন। তিনি ইংল্যান্ডে প্রিন্টিং টেকনোলজির উপর পড়াশোনা করেছেন এবং পরে পারিবারিক ব্যবসায়ে যোগ দেন।

১৯২৩ সালে সত্যজিৎ এর পিতা সুকুমার রায় মারা যান। তখন সত্যজিৎ এর বয়স মাত্র তিন বছর। এর তিন বছর পর প্রিন্টিং এর ব্যবসা তাদের হাত ছাড়া হয়ে যায় এবং সত্যজিৎ ও তাঁর মা’কে তাদের নিজস্ব বাড়ি ছেড়ে যেতে হয়। তাঁরা সত্যজিৎ এর মামা বাড়িতে চলে যান। তাঁর মা সুপ্রভা রায় সূচি কর্মের মাধ্যমে গৃহস্থালির খরচ নির্বাপন করতেন। এখানেই সত্যজিৎ বিজয়া(পরবর্তীতে সত্যজিৎ এর স্ত্রী) এর সাথে পরিচিত হন।

সত্যজিৎ ৮ বছর বয়সে বালিগঞ্জ সরকারি বিদ্যালয়ে (Ballygunj Government School) ভর্তি হন। এর আগে তাঁর পড়াশোনা চলছিল তাঁর মায়ের কাছে। ছাত্র হিসেবে সত্যজিৎ মাঝারি মানের ছিলেন।

স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তাঁর চলচ্চিত্র প্রেম শুরু হয়। নিয়মিত হলিউড এর খবর পড়তেন। এমনকি টুকিটাকি খবর ও বাদ যেতনা।”Picturegoer” এবং “Photoplay” এর মতো বিখ্যাত ম্যাগাজিনগুলো তিনি নিয়মিত পড়তেন। এছাড়া “Western classical music” ছিল তাঁর আরেকটি আগ্রহের বিষয়। ১৫ বছর বয়সের দিকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।

মায়ের পীড়াপীড়িতে তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন। প্রথম দুই বছর বিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করলেও তৃ্তীয় বর্ষে তিনি অর্থনীতি নেন। কারন এক নিকটাত্মীয় তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে অর্থনীতিতে গ্রাজুয়েট করলে তাঁকে চাকরি দিবেন। কলেজে পড়ার সময়েও তিনি চলচ্চিত্র দেখা এবং নিজস্ব গ্রামোফোনে “Western Classical Music” শোনা চালিয়ে যান।

১৮ বছর বয়সে ১৯৩৯ সালে তিনি গ্রাজুয়েট করেন। এবং পড়াশোনা ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষন ছিলনা তবুও তিনি বানিজ্যিক চিত্রকর (Commercial Artist) হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ছবি আঁকায় তাঁর সহজাত প্রতিভা এবং আগ্রহ ছিল। তাঁর মায়ের অবশ্য মনে হয়েছিল যে চাকরি করার পক্ষে সত্যজিৎ এর বয়স অনেক কম। তাই তিনি সত্যজিৎ কে শান্তিনিকেতনে পেইন্টিং এর উপর পড়াশোনা করার উপদেশ দেন। প্রথমে আপত্তি করলেও পড়ে সত্যজিৎ অবশ্য মেনে নেন।

শান্তিনিকেতনে পড়ার সময়ে সত্যজিৎ রায়।

কর্মজীবনঃ

১৯৪৩ এর এপ্রিলে তিনি ব্রিটেন ভিত্তিক বিজ্ঞাপনী সংস্থা D.J.Keymer এ মাসিক ৮০ রুপি বেতনে জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী ১৩ বছর (যত দিনে পথের পাঁচালী সফলতা পায় এবং তিনি পুরোদস্তুর চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন) তিনি এখানেই কর্মরত ছিলেন।

এর পরবর্তী ৩৭ বছর শুধুই চলচ্চিত্র নির্মান করেন। ১ বছরে ১ ছবি এই ছিল তাঁর মূলনীতি। প্রচন্ড কাজের চাপে ১৯৮০ এর মধ্যমভাগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর উপন্যাস অবলম্বনে “ঘরে বাইরে”(১৯৮৪) ছবিটি তাঁর আবার চলচ্চিত্রাঙ্গনে ফিরে আসার প্রথম কাজ। শুটিং এর সময় তিনি দুইবার হার্ট এটাক এর শিকার হন এবং তাঁর ছেলে সন্দীপ রায় ছবিটির কাজ শেষ করেন।

পরবর্তী চার বছর অসুস্থতার কারনে তিনি চলচ্চিত্র থেকে দূরে ছিলেন। ১৯৮৯ তে তিনি “গণশত্রু” এর অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন। এই সিরিজের পরবর্তী ছবিগুলো ছিল “শাখা- প্রশাখা”(১৯৯০) এবং “আগন্তুক”(১৯৯১)। তিন ছবির এই সিরিজটিই তাঁর জীবনের শেষ সিরিজ।

মহাপ্রয়াণঃ

১৯৯২ সালের ২৩ শে এপ্রিল সত্যজিৎ রায় মৃত্যুবরন করেন।

সত্যজিৎ এর পাওয়া পুরস্কার এর তালিকা (আংশিক)।

১৯৫৮
* পদ্মশ্রী(Padmashree), India
১৯৬৫
* পদ্মভূষন(Padmabhushan), India
১৯৬৭
*ম্যাগসেসে পুরস্কার( Magasaysay Award), Manila
১৯৭১
* Star of Yugoslavia
১৯৭৩* Doctor of Letters, Delhi University
১৯৭৪ * D. Litt., Royal College of Arts, London
১৯৭৬ *পদ্মবিভূষন( Padmabibhushan), India
১৯৭৮* D. Litt., Oxford University
* Special Award, Berlin Film Festival
* Deshikottam, Visva-Bharati University, India
১৯৭৯* Special Award, Moscow Film Festival
১৯৮০ * D. Litt., Burdwan University, India
* D. Litt., Jadavpur University, India
১৯৮১ * Doctorate, Benaras Hindu University, India* D. Litt. , North Bengal University, India
১৯৮২ * Hommage à Satyajit Ray, Canes Film Festival* Special Golden Lion of St. Mark, Venice Film Festival*বিদ্যাসাগর পুরস্কার(Vidyasagar Award), Govt. of West Bengal
১৯৮৩* Fellowship, The British Film Institute
১৯৮৫ * D. Litt., Calcutta University, India*দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার (Dadasaheb Phalke Award), India* Soviet Land Nehru Award
১৯৮৬ * Fellowship, Sangeet Natak Academy, India
১৯৮৭ * Légion d’Honneur, France* D. Litt., Rabindra Bharati University, India
১৯৯২ * অস্কার- আজীবন পুরস্কার(Oscar for Lifetime Achievement), USA
*ভারতরত্ন (Bharatratna), India

এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার এর তালিকা। তাঁর জীবনের সব পুরস্কারের তালিকা এত বড় যে দিলে লেখা খুব বড় হয়ে যাবে (হয়ত বড় লেখা দেখে আপনারা পড়বেনই না) তাই এই মহাগুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারের তালিকাটি দিলাম।

চলচ্চিত্রে আগ্রহের ইতিহাসঃ

যেসব কারন সত্যজিৎ রায়কে চলচ্চিত্র পরিচালনা করতে উৎসাহী করেছে এর মধে উল্লেখযোগ্য হল জ্যঁ রেঁনোয়ার (বিশ্ববিখ্যাত ফরাসী পরিচালক) এর সান্নিধ্যলাভ এবং তাঁর “দ্য রিভার” ছবির শুটিং প্রত্যক্ষ ভাবে দেখা (তিনি এই ছবিটির কিছু অংশের শুটিং কলকাতায় করেছিলেন)। এছাড়া ১৯৫০ সালে চাকরি সূত্রে লন্ডনে ৫ মাস অবস্থান করেছিলেন যা ছিল তাঁর চলচ্চিত্রকার হয়ে ওঠায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। লন্ডনে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি প্রায় ১০০ চলচ্চিত্র দেখেন, পরিচিত হন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা লিন্ডসে এন্ডারসন, চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ পেনেলোপি হাষ্টন ও গ্যাবিন ল্যাম্বটির সাথে। এ সময়েই তিনি বিশ্ববিখ্যাত ইতালিয়ান পরিচালক ভিত্তোরিও ডি সিকা নির্মিত নিওরিয়্যালিস্ট চলচ্চিত্র “দ্য বাইসাইকেল থিফ”(১৯৪৮) দেখে বিশেষভাবে মুগ্ধ হন এবং বিভুতিভূষন বন্দোপাধ্যায় এর উপন্যাস “পথের পাঁচালী” অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মান করার সিদ্ধান্ত নেন।

সত্যজিৎ এর প্রভাবঃ

দেশ বিদেশের বহু বিখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা সত্যজিৎ এর চলচ্চিত্রশৈলীর অনুসারী। তাঁরা বিভিন্নভাবে সত্যজিৎ রায়ের কাজ দ্বারা প্রভাবিত। এই দলে ভারতের অপর্ণা সেন, দীপা মেহতা, ঋতুপূর্ণ ঘোষ ও গৌতম ঘোষ; বাংলাদেশের তারেক মাসুদ ও তানভীর মোকাম্মেল; এমনকি ইরাকের আব্বাস কিয়ারোস্তামি এবং ফ্রান্সের জঁ লুক গদারের মত পরিচালক পর্যন্ত রয়েছেন। কেউ কেউ আবার সত্যজিৎ এর ছবি বা ছবির অংশবিশেষ অনুকরণ করেছেন। কখনো কখনো তাঁর নির্মিত কোন একটি ছবির নির্দিষ্ট একটি চরিত্র অবলম্বনে নতুন কাহিনী তৈ্রি করে ছবি নির্মান করেছেন।

সত্যজিৎ এর পরিচালিত চলচ্চিত্রের তালিকাঃ

এখানে সত্যজিৎ রায়ের সবগুলো ছবির নাম দেয়া হলো। ছবিগুলোর নাম, “মুক্তির সাল-ছবির নাম-দৈ্র্ঘ্য-প্রকার” এই ফরম্যাট এ দেয়া হলো।

1955 পথের পাঁচালী (Song of the Little Road), ১১৫ মিনিট.., সাদাকালো।

1956 অপরাজিত (The Unvanquished), ১১৩ মিনিট.., সাদাকালো।

1958 পরশ পাথর (The Philosopher’s Stone), ১১১ মিনিট.., সাদাকালো।

1958 জলসা ঘর (The Music Room), ১০০ মিনিট.., সাদাকালো।

1959 অপুর সংসার (The World of Apu), ১০৬ মিনিট.., সাদাকালো।

1960 দেবী (The Goddess), 93 min., সাদাকালো।

1961 তিন কন্যা (Three Daughters), পোষ্টমাস্টার (৫৬ মিনিট.);মনিহারা (৬১ মিনিট..); সমাপ্তি (৫৬ মিনিট.) (Two Daughters, পোষ্টমাস্টার(৫৬ মিনিট.); সমাপ্তি (৫৬ মিনিট.), সাদাকালো।

1961 Rabindranath Tagore, Documentary, ৫৪ মিনিট., সাদাকালো।

1962 কাঞ্চনজংঘা, ১০২ মিনিট.., Color

1962 অভিযান (The Expedition), ১৫০ মিনিট.., সাদাকালো।

1963 মহানগর (The Big City), ১৩১ মিনিট.., সাদাকালো।

1964 চারুলতা (The Lonely Wife), ১১৭ মিনিট.., সাদাকালো।

1964 Two, Short, ১৫ মিনিট.., সাদাকালো।

1965 কাপুরুষ ও মহাপুরুষ (The Coward and the Holy Man), ৭৪ + ৬৫ মিনিট.., সাদাকালো।

1966 নায়ক (The Hero), ১২০ ., সাদাকালো।

1967 চিড়িয়াখানা (The Zoo), ১২৫ মিনিট.., সাদাকালো।

1968 গুপি গাইন বাঘা বাইন (Adventures of Goopy and Bagha), ১৩২ মিনিট.., সাদাকালো এবং আংশিক রঙিন।

1969 অরণ্যের দিন রাত্রি (Days and Nights in the Forest), ১১৫ মিনিট..,সাদাকালো।

1970 প্রতিদ্বন্দী (The Adversary), ১১০ মিনিট.., সাদাকালো।

1971 সীমাবদ্ধ (Company Limited), ১১২ মিনিট.., সাদাকালো।

1971 সিকিম,(Sikkim), Documentary, ৬০ মিনিট.., সাদাকালো।

1972 The Inner Eye, Documentary, ২০ মিনিট.., রঙিন।

1973 অশনি সংকেত (Distant Thunder), ১০১ মিনিট.., রঙিন।

1974 সোনার কেল্লা (The Fortress), ১২০ মিনিট.., রঙিন।

1975 জন অরণ্য (The Middleman), ১৩১ মিনিট.., সাদাকালো।

1976 বালা(Bala), Documentary, ৩৩ মিনিট.., রঙিন।

1977 শতরঞ্জ কি খিলাড়ী (The Chess Players) ১১৩ মিনিট..রঙিন।

1978 জয় বাবা ফেলুনাথ (The Elephant God), ১১২ মিনিট., রঙিন।

1980 হীরক রাজার দেশে (Kingdom of Diamonds), ১১৮ মিনিট.., রঙিন।

1980 পিকু (Pikoo’s Day), Short, ২৬ মিনিট.., রঙিন।

1981 সদ্ গতি (The Deliverance), ৫২ মিনিট.., রঙিন।

1984 ঘরে বাইরে (Home and the World), ১৪০ মিনিট.., রঙিন।

1987 সুকুমার রায়(Sukumar Ray), Documentary, ৩০ মিনিট.., রঙিন।

1989 গণ শত্রু (Enemy of the People), ১০০ মিনিট.., রঙিন।

1990 শাখা প্রশাখা (Branches of the Tree), ১২১ মিনিট.., রঙিন।

1991 আগন্তুক (The Stranger), ১২০ মিনিট., রঙিন।

1955 পথের পাঁচালী (Song of the Little Road), ১১৫ মিনিট.., সাদাকালো।

1956 অপরাজিত (The Unvanquished), ১১৩ মিনিট.., সাদাকালো।

1958 পরশ পাথর (The Philosopher’s Stone), ১১১ মিনিট.., সাদাকালো।

1958 জলসা ঘর (The Music Room), ১০০ মিনিট.., সাদাকালো।

1959 অপুর সংসার (The World of Apu), ১০৬ মিনিট.., সাদাকালো।

1960 দেবী (The Goddess), 93 min., সাদাকালো।

1961 তিন কন্যা (Three Daughters), পোষ্টমাস্টার (৫৬ মিনিট.);মনিহারা (৬১ মিনিট..); সমাপ্তি (৫৬ মিনিট.) (Two Daughters, পোষ্টমাস্টার(৫৬ মিনিট.); সমাপ্তি (৫৬ মিনিট.), সাদাকালো।

1961 Rabindranath Tagore, Documentary, ৫৪ মিনিট., সাদাকালো।

1962 কাঞ্চনজংঘা, ১০২ মিনিট.., Color

1962 অভিযান (The Expedition), ১৫০ মিনিট.., সাদাকালো।

1963 মহানগর (The Big City), ১৩১ মিনিট.., সাদাকালো।

1964 চারুলতা (The Lonely Wife), ১১৭ মিনিট.., সাদাকালো।

1964 Two, Short, ১৫ মিনিট.., সাদাকালো।

1965 কাপুরুষ ও মহাপুরুষ (The Coward and the Holy Man), ৭৪ + ৬৫ মিনিট.., সাদাকালো।

1966 নায়ক (The Hero), ১২০ ., সাদাকালো।

1967 চিড়িয়াখানা (The Zoo), ১২৫ মিনিট.., সাদাকালো।

1968 গুপি গাইন বাঘা বাইন (Adventures of Goopy and Bagha), ১৩২ মিনিট.., সাদাকালো এবং আংশিক রঙিন।

1969 অরণ্যের দিন রাত্রি (Days and Nights in the Forest), ১১৫ মিনিট..,সাদাকালো।

1970 প্রতিদ্বন্দী (The Adversary), ১১০ মিনিট.., সাদাকালো।

1971 সীমাবদ্ধ (Company Limited), ১১২ মিনিট.., সাদাকালো।

1971 সিকিম,(Sikkim), Documentary, ৬০ মিনিট.., সাদাকালো।

1972 The Inner Eye, Documentary, ২০ মিনিট.., রঙিন।

1973 অশনি সংকেত (Distant Thunder), ১০১ মিনিট.., রঙিন।

1974 সোনার কেল্লা (The Fortress), ১২০ মিনিট.., রঙিন।

1975 জন অরণ্য (The Middleman), ১৩১ মিনিট.., সাদাকালো।

1976 বালা(Bala), Documentary, ৩৩ মিনিট.., রঙিন।

1977 শতরঞ্জ কি খিলাড়ী (The Chess Players) ১১৩ মিনিট..রঙিন।

1978 জয় বাবা ফেলুনাথ (The Elephant God), ১১২ মিনিট., রঙিন।

1980 হীরক রাজার দেশে (Kingdom of Diamonds), ১১৮ মিনিট.., রঙিন।

1980 পিকু (Pikoo’s Day), Short, ২৬ মিনিট.., রঙিন।

1981 সদ্ গতি (The Deliverance), ৫২ মিনিট.., রঙিন।

1984 ঘরে বাইরে (Home and the World), ১৪০ মিনিট.., রঙিন।

1987 সুকুমার রায়(Sukumar Ray), Documentary, ৩০ মিনিট.., রঙিন।

1989 গণ শত্রু (Enemy of the People), ১০০ মিনিট.., রঙিন।

1990 শাখা প্রশাখা (Branches of the Tree), ১২১ মিনিট.., রঙিন।

1991 আগন্তুক (The Stranger), ১২০ মিনিট., রঙিন।

সাহিত্যকর্মঃ

সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্রের মত সাহিত্য রচনায়ও সমান পারদর্শী ছিলেন।কিন্তু চলচ্চিত্রকার হিসেবে তাঁর অনবদ্য অবদান তাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা করেছে। হয়তো এ কারনেই তাঁর সাহিত্য নিয়ে আলোচনা কম করা হয়।তাঁর সাহিত্যগুলো মূলত তার পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত শিশুতোষ “সন্দেশ” পত্রিকার জন্য লেখা, যা পরবর্তীতে বই আকারেও বের হয়েছে।উল্লেখ্য “সন্দেশ”পত্রিকাটি মাঝখানে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ এটি আবারো চালু করেন।সত্যজিৎ এর লেখাগুলো ছিল প্রধানত কিশোর রচনা।তবে তা সব বয়সী পাঠকই পড়তেন এবং এখনো পড়েন।বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা গোয়েন্দা চরিত্র “ফেলুদা” সত্যজিৎ এর এক আশ্চর্য সৃষ্টি।এছাড়া তিনি বিজ্ঞানকল্পকাহিনী ও লিখেছেন।এ ক্ষেত্রে তাঁর আরেকটি বিখ্যাত ও জনপ্রিয় চরিত্র “প্রফেসর শঙ্কু”।এছাড়া তিনি অনেক ছোটগল্প লিখেছেন।করেছেন আনুবাদও।উল্লেখ্য যে এসব বই এর প্রচ্ছদ এবং ভিতরের ছবি সব তাঁর নিজের হাতে আঁকা।চলচ্চিত্র নির্মান এবং শুটিং নিয়েও তিনি লিখেছেন কিছু বই।এগুলো হচ্ছে, “আওয়ার ফিল্মস,দেয়ার ফিল্মস”, “বিষয়ঃ চলচ্চিত্র”, “একেই বলে শুটিং” ইত্যাদি।এছাড়া নিজের ছেলেবেলা নিয়েও তিনি বই লিখেছেন, “যখন ছোট ছিলাম”।

সত্যজিৎ সম্পর্কে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের করা কয়েকটি মন্তব্যঃ

১৯৮৭ সালে তৎকালীন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিঁতেরা[/sb] কলকাতায় এসে সত্যজিৎ কে ” লিজিয়ন অব অনার” এ ভূষিত করে বলেন-

“ভারতের সাংস্কৃতিক জগতে সত্যজিৎ রায় এক অবিস্মরনীয় ব্যক্তিত্ব।চলচ্চিত্র জগতে এই শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ পুরুষ।তাঁর মতো মহান ব্যক্তিকে আমাদের দেশের সর্বোচ্চ সন্মানে ভূষিত করতে পেরে আমি ও আমার দেশ্ বাসী আজ সন্মানিত বোধ করছি”।

১৯৯২ সালে তাঁকে অস্কার এ আজীবন সন্মাননা জানিয়ে বলা হয়,- “In recognition of his rare mastery of the art of motion pictures and for his profound humanitarian outlook,which has had an indelible influence on filmmakers and audiences throughout the world”.

অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী ড.অমর্ত্য সেন বলেন-“The work of Ray presents a remarkably insightful understanding of the relations between cultures, and his ideas remain pertinent to the great cultural debates in the contemporary world,not least in India.

“রশোমন”(১৯৫০) খ্যাত বিশ্বখ্যাত জাপানী পরিচালক আকিরা কুরোশাওয়া বলেছেন-

“Not to have seen the cinema of Ray means existing in the world without seeing the sun or the moon”.

বিখ্যাত পরিচালক Martin scorsese বলেছেন,

“Ray’s magic,the simple poetry of his images and their emotional impact,will always stay with me…His work is in the company of that of living contemporaries like Ingmar Bergman,Akira Kurosawa and Federico Fellini”

শেষ কথাঃ

সত্যজিৎ রায় কে নিয়ে লিখলে কয়েকটা মহাকাব্য হয়ে যাবে তবুও শেষ হবেনা তাকে নিয়ে লেখা।এক জীবনে শেষ করা যাবেনা তাঁকে নিয়ে গবেষনা।এমনই গভীর তাঁর বিদগ্ধতা,এতই বৈচিত্রময় তাঁর জীবনাচারণ।এই লেখায় আমি শুধু তাঁর কিছু তথ্য উপস্থাপন করেছি মাত্র।কোন বিশ্লেষন করিনি।তবে তাঁকে নিয়ে আমার আরো লেখার ইচ্ছা আছে।জানি লিখব শেষ করতে পারবোনা।মহীরুহের ডাল-পালা আর পাতার সংখা কি গুনে শেষ করা যায়?সত্যজিৎ যে মহীরুহ!

সত্যজিৎ রায়ের পৈতিক বাড়ি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র:-

কিশোরগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিঃ মিঃ দুরে কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নে অবস্হিত ভারতীয় উপমহাদেশের বিশিষ্ট চলচিএকার অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতিক বাড়ি ঘিরে গড়ে উঠতে পারে মনোরম নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র।

এই ঐতিহাসিক বাড়িটির পূর্বদিকে রয়েছে সান বাঁধানো ঘাট, পশ্চিমে কয়েক একর জায়গা জুড়ে বাড়িটি, পূর্বে প্রাচীর ও সিংহ দরজা ছিল যা এখন নেই। পশ্চিমে জরাজীর্ণ ভবন, যা এখন মসূয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তার একটু পশ্চিমে গেলেই ডাকঘর।

বাড়ীর ভিতরে রয়েছে কারুকার্য খচিত প্রাচীন দালান, বাগানবাড়ী, হাতীর পুকুর, খেলার মাঠ ইত্যাদি। সত্যজিৎ রায়ের পিতামহের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ীটি এখন সরকারের রাজস্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে আছে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে ২০১২ সালে ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি রেস্ট হাউজসহ বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও রাস্তাঘাট সংস্কার করা হয়।

এই বাড়ীতে ১৮৬০ সালের ১২ মে জন্মগ্রহণ করেন সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী। তিনি ছিলেন বিখ্যাত শিশু কিশোর পত্রিকা ‘সন্দেশের’ (১৯১৩) প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তাঁর বাবার নাম ছিল কালীনাথ রায়। পাঁচ বছর বয়সে নিঃসন্তান চাচা হরি কিশোর রায় চৌধুরী তাঁকে দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। পিতার দেয়া কামদারঞ্জন রায় নাম বদলিয়ে রাখেন উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী।
কিন্তুু

দত্তক পুত্র গ্রহণের বেশ ক‘বছর পর হরি কিশোর রায় চৌধুরী ঔরসে নরেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী জন্মগ্রহণ করায় দত্তক পুত্র উপেন্দ্র কিশোরের গুরুত্ব কমতে থাকে। হরি কিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন জমিদার। তাঁর স্নেহে লালিত উপেন্দ্র কিশোর ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৮৮০ সালে প্রবেশিকা এবং কলকাতা মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট থেকে বি এ পাস করেন।

এদিকে হরি কিশোর রায় চৌধুরী ভবিষ্যতে সম্পদের উত্তরাধিকার নিয়ে ঔরসজাত পুত্র ও দত্তক পুত্রের মাঝে যাতে কোন সংঘাত না বাধে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এজন্য বাড়ীর চার দেয়ালের বাইরে নকশা করে লোহার খুঁটি দিয়ে দত্তক পুত্রের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা বাড়ীর সীমানা নির্ধারণ করে নেন।

লোহার খুঁটিগুলো আজও রয়েছে। সীমানা নির্ধারিত বাড়ীতে উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর উরসে ১৮৮৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন জ্যেষ্ঠ পুত্র সত্যজিৎ রায়ের পিতা শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়। জন্মের পরই সুকুমার রায়সহ উপেন্দ্র কিশোর চলে যান কলকাতায়। মাঝে মাঝে নিজ বাড়ীতে ছেলে মেয়েদের নিয়ে বেড়াতে আসতেন তিনি। তাঁর মেজো মেয়ে পুণ্যলতার অনেক সাহিত্যকর্মের মধ্যে ছোট বেলার দিনগুলোতে সেকালের মসুয়ার বর্ণাঢ্য রায় চৌধুরীর পরিবারের বিবরণী রয়েছে।

হরি কিশোর রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র নরেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী মসুয়ায় জমিদারী লাভ করেন। উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী হয়ে পড়েন কলকাতা কেন্দ্রিক। নাতি সত্যজিৎ রায়ের জন্ম কলকাতাতেই এবং বেড়ে ওঠা সবই হয়েছে কলকাতায়। মসুয়া গ্রামের ভাঙ্গা-চোরা সত্যজিৎ রায়ের এই পৈতৃক বাড়ীটি দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে। বহু জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। সত্যজিৎ রায় কোনদিনই এখানে আসেননি। সবাই জানে এটি সত্যজিৎ রায়ের বাড়ী।

এ অঞ্চলের মানুষ মনেপ্রাণে এখনও ধরে রেখেছেন সেই বিশ্ববরেণ্য অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ঐতিহাসিক পৈতিক বাড়ীটি। একদা এ বাড়ীকে বলা হতো ‘পূর্ব বাংলার জোড়াসাঁকো’। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বুধবার এ ঐতিহাসিক বাড়ীতে অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখী মেলা। মসুয়া গ্রামে সত্যজিৎ রায়ের পরিবারের স্মৃতি চিহ্নটুকু ধরে রাখার জন্য গঠিত হয়েছে সত্যজিৎ রায় স্মৃতি সংসদ। প্রতি বছর ৫ই মে পালন করা হয় সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিবস।

প্রতিদিন বহু দর্শনার্থী সাহিত্যিক-কবি বাড়ীটি পরিদর্শনে আসেন। তাছারা গ্রামের শ্যমল- সবুজ ছায়া ঘেরা শান্ত পরিবেশের দুর্নিবার আকর্ষণ তো রয়েছেই।

এলাকাকাসী ও আগত দর্শনার্থীরা বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দিলে ঐতিহাসিক এই বাড়ী টিকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে মনোরম নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র।