একমাত্র ইসলাম ধর্মে মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার দেওয়া আছে প্রধানমন্ত্রীর

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একমাত্র ইসলাম ধর্মে মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার দেওয়া আছে। কিন্তু সেটি যথেষ্ট হিসেবে দেখছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই সুযোগ থাকলে ইসলামী শরিয়া আইনে কিংবা সম্পত্তি আইনে সংস্কার এনে বাবার সম্পদে মেয়েদের অধিকার সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় আইনগত সংস্করণের জন্য উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

রোববার (২৮ এপ্রিল) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিচারপতি, আইন বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ইসলাম ধর্ম কিংবা মুসলিম আইন মানতে হবে। এটা ঠিক। তারপরেও মেয়েদের যে অধিকারটুকু সম্পদে, বাবা করে গেছেন সেখানে কেন আরেকজন এসে এভাবে কেড়ে নিয়ে যাবে? শুধু এই শরিয়া আইনের দোহাই দিয়ে, মা ও মেয়েকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করে দিয়ে, যার বাবার হাতে কিংবা স্বামীর হাতে সম্পত্তি গড়া সেখান থেকেই বঞ্চিত করে সম্পদ কেড়ে নেয়। এর কোনো সুরাহা করা যায় কি না আপনারা দয়া করে একটু দেখবেন।’

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর একটি মাত্র ধর্ম আমাদের ইসলাম ধর্ম যেখানে মেয়েদের অধিকার দেওয়া হয়েছে সম্পত্তিতে। কিন্তু অনেক সময় মেয়েরাও বঞ্চিত হয়। সম্পত্তি তারা পায় না। ভাইয়েরা দিতে চায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি বস্তি এলাকায় অনেক ছোট ছোট শিশু রাস্তায় ঘুরে বেড়াত। আমি তাদেরকে নিয়ে এসে কেন তারা বস্তিতে থাকে? কী কারণে থাকে? সেসব ছোট ছোট শিশুদের কাছে আলোচনা করি। শিশুদের থেকে শুনি। তখন আমি জানতে পারি সমাজের অনেক অন্ধকার যুগের কথা। সেখানে দেখা যায় যে, ভাই ভাইকে খুন করেছে অথবা আত্মীয় স্বজন খুন করে সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে। তারপর ভাইয়ের ছেলে মেয়ে স্ত্রীসহ তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। তাদের স্থান হয়েছে বস্তিতে। ছেলে মেয়ে হয়ে গেছে টোকাই আর মহিলার ভাগ্য কী হতে পারে আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারেন। এই যে সামাজিক অবিচার এগুলোর দিকেও আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আপনারা জানেন আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। অনেক বুদ্ধিজীবী পরিবারে বাড়িতে একটি মাত্র মেয়ে। ভাইটাকে যে পাকিস্তানী বাহিনী খুন করেছে সেটার দিকে নজর নেই, কিন্তু ভাইয়ের সম্পত্তিটুকু দখল করে ভ্রাতৃবধূ আর মেয়েটিকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার সেই প্রবণতা, এইরকম নিষ্ঠুরতাও আমরা দেখেছি।’

মানুষের যতবেশি ধন সম্পদ বেড়েছে, তত বেশি লোভও বেড়েছে মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা স্লোগান তুলি ‘দুটি সন্তানই যথেষ্ট।’ এখন দুটি সন্তানই যদি মেয়ে হয় তাহলে বাবার সম্পত্তির ভাগ স্ত্রী পাবে যতটুকু, মেয়ে বঞ্চিত হবে, এটা কিভাবে সুরাহা করবেন? আমি শরিয়া আইনে হাত দিতে বলব না কিন্তু সম্পত্তি আইনে এটার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এখানে অনেক আইনজ্ঞ আছেন। তবে আমি বলব, সেখানে (আইনে) মেয়ে ছেলে না লিখে যদি সন্তান লিখে দেন তাহলে সে সন্তান ছেলে হোক মেয়ে হোক অন্তত তার ভাগটা সে পাবে।’

আর এই সংস্কারের ক্ষেত্রে আলেম ওলামাদের বাধা আসার শঙ্কার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি অনেক হুজুররাও লাফ দিয়ে এসে পড়তে পারে। কিন্তু তারপরেও সমস্যার সমাধান করা দরকার। আমি অনেক ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করেছি। তারা বলেছেন যে, মেয়েদের অধিকারটা সংরক্ষণ করা যেতে পারে। কারণ তাদের অনেকেরেই এমন আছে শুধু মেয়েই আছে আর কেউ নেই।’

উল্লেখ্য, ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবছর ২৮ এপ্রিল ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস’ পালন করে আসছে সরকার। অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সকলের জন্য ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠা করাই এর লক্ষ্য।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর