হবিগঞ্জ-২ আসনে মাঠে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী, নীরব বিএনপি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওর-বাওর, কৃষি আর মৎস্য সম্পদে ভরপুর দেশের সর্ববৃহৎ উপজেলা বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জকে নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-২ আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকাটিতে বিগত কয়েকটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। এ আসনে মোট ভোটার রযেছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯৫।

এর মধ্যে বানিয়াচং উপজেলায় ২ লাখ ৩০ হাজার ১৫৬ ও আজমিরীগঞ্জে ৭৯ হাজার ৭৫৩ জন ভোটার রয়েছে। জানা গেছে, দীর্ঘ ৯ বছর ধরে শাসনে থাকায় আওয়ামী লীগে গ্রুপিং তৈরি হয়েছে। প্রকাশ্যে গ্রপিং না থাকলেও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে একাধিক গ্রুপ কাজ করছে। বর্তমান এমপি আব্দুল মজিদ খানকে বাদ দিয়ে এককভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মাস্টারকে প্রকাশ্যেই প্রার্থীতা ঘোষণা করে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এছাড়া দলটির আরও ৬ জন প্রার্থী রয়েছে।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা প্রত্যেকেই মাঠে কাজ করলেও বিএনপি প্রার্থীরা নীরব। বিএনপির দাবি, দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হতে দেবে না এমনকি বিএনপিও অংশগ্রহণ করবে না। এমন অনিশ্চয়তার কারণে বিএনপির প্রার্থীরা প্রকাশ্যে কোন ধরনের গণসংযোগ করেনি।

আর জাতীয় পার্টি রয়েছে জোটের সিদ্ধান্তের উপর। জোটবদ্ধভাবে এ আসনটি চায় জাপার প্রার্থীরা।

ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও ওই আসনের সাবেক এমপি ময়েজ উদ্দিন আহমেদ শরীফের ছেলে ময়েজ উদ্দিন রুহেল আগামী নির্বাচনে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে এলাকায় গণসংযোগ করে আসছেন। তিনি সাংবাদিককে বলেন, ‘আমি মনে করি এলাকার একজন যোগ্যপ্রার্থী। এলাকায় আমার বাবার ইমেজের পাশাপাশি আমার দীর্ঘ যোগাযোগ রয়েছে। আমাদের দল বড় যে কারণে অনেক প্রার্থী রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরা তার পক্ষেই কাজ করে যাব।’

অপর প্রার্থী আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির নারী সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মাহফুজা বেগম সাইদা নিজকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে এলাকায় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগসহ ভোটারদের সাথে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।

সাংবাদিককে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। যে কারণে আমি হবিগঞ্জ-২ আসনে প্রার্থী হিসেবে এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে এবং সাধারণ মানুষ আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচন করবে।

হবিগঞ্জ জেলা কৃষকলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির রেজা নিজেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে রয়েছে জেলা কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা। তিনি প্রতিটি এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি গণসংযোগ ও সভা সমাবেশ করেছেন। প্রতিটি সভায় নিজেকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। মনোনয়ন পেলে আসনটি নৌকাকে উপহার দিতে পারবো।’

হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবু বক্কর চৌধুরীও নিজেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে এলাকায় সভা সমাবেশ ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।

এদিকে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মাস্টারও দলীয় শক্তিশালী প্রার্থী। বিগত নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও দলের স্বার্থে তিনি শেষ মুহূর্তে বসেছিলেন। এজন্য তাকে নিয়ে দলের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক আলোচনা। ইতোমধ্যে বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগ ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ তাকে সমর্থন দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। তিনি সাংবাদিককে বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমাকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। তিনি বলেন আমার কর্মকাণ্ডে দল আমাকে মনোনয়ন দিবে বলে আশা করি। আমি দলীয় মনোনয়ন পেলে রেকর্ড ভেঙ্গে বিপুল ভোটে জয়লাভ করতে পারবো।

টানা দুইবার নির্বাচিত বর্তমান এমপি আব্দুল মজিদ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করলেও দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে রয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া। বিগত ৯ বছরে এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে অতীতের কোন এমপি এ ধরনের উন্নয়ন করতে পারেননি বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। যে কারণে আগামী নির্বাচনে আবারো এমপি আব্দুল মজিদ খানকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আহ্বান জানাচ্ছে তৃনমূলের নেতাকর্মীরা।

এ ব্যাপারে আব্দুল মজিদ খান বলেন, আমি দুইবারের এমপি। নির্বাচিত হওয়ার পর আমি এলাকার চেহারা পাল্টে দিয়েছি। আমার সময় যে উন্নয়ন হয়েছে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। আগে আজমিরীগঞ্জে নৌকার মাধ্যমে যেতে হতো আর এখন গাড়ি দিয়ে চলাচল করতে পারে। তিনি বলেন আমার সাথে এলকার সকল নেতাকর্মী ও জনগন সাথে রয়েছে।

এছাড়া একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এলাকায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন সাংবাদিক আফসার আহমেদ রূপক। প্রতিটি দিনই তিনি এলাকায় সভা সমাবেশ ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।

আর বিএনপির একক প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান চৌধুরী জীবন। ‘ক্লিন ইমেজ’ সম্বলিত জীবন প্রকাশ্যে গণসংযোগ না করলেও দলীয় নেতাকর্মীরা তার পক্ষে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। বিএনপির দাবি, দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে কি না সন্দেহ রয়েছে। আগে নেত্রীর মুক্তি পরে নির্বাচন।

এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়ারিশ উদ্দিন খান বলেন আমাদের নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের একক প্রার্থী থাকার কারণে প্রার্থী বাছাইয়ে কোন ঝামেলা নেই। তিনি বলেন, দলীয় প্রধানের মুক্তি ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হবে না। আগে নেত্রীর মুক্তি এরপর নির্বাচনের কথা। তার দাবি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এ আসনে বিএনপি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর