হাওর বার্তা ডেস্কঃ পৃথিবীতে অন্তত তিনশ কোটি মানুষের প্রধান খাবার ভাত। বাঙালিদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ও আরামদায়ক খাবার ভাত। যতই আধুনিক খাবার খাওয়া হোক না কেন, দিন শেষে একটুখানি ভাত না খেলে বাঙালির চলে না। তবে অনেকেই আজকাল মুটিয়ে যাবার ভয়ে ভাত খাওয়া একদম বাদ দিয়েছেন। প্রত্যেক বয়সের মানুষের জন্যই আছে ভাতের নির্দিষ্ট পরিমাপ। যদি প্রত্যেকদিন ভাত খাওয়াটা আপনার অভ্যাস হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই জেনে নিতে হবে এই হিসাবটা।
আর চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যরক্ষায় ভাত খাবার পর পাঁচটি কাজ করতে অনুৎসাহিত করেন। দেখে নিন কি এমন কাজ সেগুলো:
১. ভাত খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে বা ১/২ ঘণ্টা পর ফল খাবেন। কেননা, ভাত খাওয়ার পরপর কোনো ফল খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
২. সারাদিনে অনেকগুলো সিগারেট খেলে যতখানি ক্ষতি হয়, ভাত খাওয়ার পর একটি সিগারেট বা বিড়ি তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি করে। তাই ধূমপান করবেন না।
৩. চায়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ টেনিক এসিড থাকে যা খাদ্যের প্রোটিনের পরিমাণকে ১০০ গুণ বাড়িয়ে তোলে। ফলে খাবার হজম হতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী সময় লাগে। তাই ভাত
খাওয়ার পর চা খাবেন না।
৪. বেল্ট কিংবা প্যান্টের কোমর ঢিলা করবেন না। খাবার পরপরই বেল্ট কিংবা প্যান্টের কোমর ঢিলা করলে অতি সহজেই ইন্টেস্টাইন (পাকস্থলি) থেকে রেক্টাম (মলদ্বার) পর্যন্ত খাদ্যনালীর নিম্নাংশ বেঁকে যেতে পারে, পেঁচিয়ে যেতে পারে অথবা ব্লকও হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের সমস্যাকে ইন্টেস্টাইনাল অবস্ট্রাকশ বলা হয়। কেউ বেশি খেতে চাইলে আগে থেকেই কোমরের বাধন ঢিলা করে নিতে পারেন।
৫. গোসল করবেন না। ভাত খাওয়ার পরপরই গোসল করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে পাকস্থলির চারপাশের রক্তের পরিমাণ কমে যেতে পারে যা পরিপাক তন্ত্রকে দুর্বল করে ফেলবে, ফলে খাদ্য হজম হতে সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী লাগবে।
এদিকে, ওজন বশে রাখতে ডায়েট থেকে ভাত বাদ দিচ্ছেন অনেকেই। অনেকে আবার বুঝে উঠতে পারেন না ঠিক কতটা ভাত খাওয়া উচিত।
কতটা খেলে পেটও ভরবে, অথচ মোটাও হবেন না। নিউট্রিশন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যদি নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে খান তাহলে ভাত খেলে কখনই মোটা হবেন না। সেই সঙ্গেই খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার।
১০০ গ্রাম সাদা ভাতে পুষ্টির পরিমাণ
ক্যালোরি: ৩৫৭ কিলো ক্যালোরি
প্রোটিন: ৮ গ্রাম
ফ্যাট: ০.৫ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট: ৭৮ গ্রাম
ফাইবার: ২.৮ গ্রাম (২ গ্রাম সলিউবল ফাইবার ও ০.৮ গ্রাম ইনসলিউবল ফাইবার)
ভাত খাওয়ার সঙ্গে ফাইবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ডায়াবেটিকদের জন্য। তাই নিরামিষ বিরোধী হলেও অবশ্যই ভাতের সঙ্গে সব্জি, ডাল, দই খান। আবার ভাতের মধ্যে যে প্রচুর পরিমাণ স্টার্চ রয়েছে তা শরীরে সঞ্চিত গ্লুকোজ ভেঙে রক্তে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়ায়। তাই তা সামাল দিতেও ডায়াবেটিকদের ফাইবার খাওয়া প্রয়োজন।
প্রতিদিন ঠিক কতটা ভাত খাওয়া উচিত?
কতটা ভাত খাওয়া উচিত তা নির্ভর করে সেই দিনে কতটা ক্যালোরি প্রয়োজন তার উপর। অর্থাৎ, আপনি কতটা শারীরিক পরিশ্রম করছেন তার উপর। নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যায় না। যদি মনে করেন আপনি বেশি ভাত খেয়ে ফেলছেন, তা হলে সাদা ভাতের বদলে খেতে পারেন ব্রাউন রাইস। যা ক্যালোরির পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে ডায়েটে যোগ করবে ফাইবার। পুষ্টিগুণ একই রেখে।
ভাত শুধু পুষ্টিকর খাবারই নয়, কার্বোহাইড্রেট যেমন আমাদের এনার্জি জোগায়, তেমনই ভাতের সঙ্গে ডাল, সবজি, মাছ, ডিম, চিকেন খেয়ে থাকি আমরা। যা কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে যোগ করে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার। তাই সুস্থ থাকার জন্য মিল হিসাবে ভাত খুবই উপকারি।