ঢাকা ০১:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভার্টি শার্দূল আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়ে ইতিহাস গড়লেন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪০:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৮
  • ৫৩৯ বার

জাকির হোসাইনঃ বিশিষ্ট রাজনীতিক ও পার্লামেন্টারিয়ান মোঃ আবদুল হামিদ দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচন কমিশন মোঃ আবদুল হামিদকে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করার ৭৭ দিন পর তিনি আজ মঙ্গলবার শপথ নিলেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করান।

বঙ্গভবনে বর্ণিল সাজ-সজ্জার পাশাপাশি উৎসবমুখর পরিবেশে দরবার হলের মঞ্চে আবদুল হামিদ তাঁর শপথে স্বাক্ষর করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। মন্ত্রিসভার সদস্যসহ প্রায় এক হাজার বিশিষ্ট অতিথি এই শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এ সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

আবদুল হামিককে শপথ বাক্য পাঠ করাচ্ছেন স্পিকার শিরীন শারমিন। ছবি: পিআইডি

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি, সংসদ সদস্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিক, সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক, রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিব এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এই রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন।

রাষ্ট্রপতি আইন ১৯৯১ এর ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এম নূরুল হুদা রাষ্ট্রপতি পদে অন্য কোনো প্রার্থী না পাওয়ায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি মোঃ আবদুল হামিদকে বাংলাদেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন।

১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে মাত্র একবার সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। এর পর থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হচ্ছেন।

জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার আবদুল হামিদ ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একমাত্র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। দলটি ৩১ জানুয়ারি তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়।

চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন থেকে আবদুল হামিদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে। ৫ ফেব্রুয়ারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের অপর একটি প্রতিনিধি দল তা জমা দেয়।

গতকাল, ২৩ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হয়। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

সাংবিধানিক নিয়মের ধারাবাহিকতায় ১৪ মার্চ, ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অসুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুর গমন করার পর তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর, আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২০ মার্চ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগী আবদুল হামিদ দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করছেন।

বঙ্গভবনের একজন মুখপাত্র জানান, স্বাধীনতার পর আবদুল হামিদ সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর থেকে ১৬ ব্যক্তি ১৯ মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকারী ১৭তম ব্যক্তি।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর পরিবেষ্টিত জনপদ যেখানে কাদামাটি সবুজ ফসলে ঘেরা হাওরের পর হাওর এমন এক জায়গা মিঠামইন উপজেলার সদর ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম কামালপুর। হাওর বেষ্টিত হিজল-তমাল ছায়াঘেরা কামালপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন।

তার পিতার নাম মরহুম হাজী মোঃ তায়েব উদ্দিন ও মাতার নাম মরহুমা তমিজা বেগম। আবদুল হামিদের তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। তার জ্যেষ্ঠপুত্র প্রকৌশলী রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক এমপি তার নির্বাচনী এলাকা থেকে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

নিকলী উপজেলার তৎকালীন ইউনিয়ন মিঠামইনে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় ছিল না। ঘোড়াউত্রা নদীঘেঁষা কামালপুর গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে আবদুল হামিদ নিকলী জিসি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। নিকলী জিসি উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে এসএসসি পাশ করে তিনি কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে ভর্তি হন। গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদে প্রথমে জিএস ও পরে ভিপি নির্বাচিত হন।

১৯৬১ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি কারাবরণ হয়েছেন। গুরুদয়াল কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে তিনি ঢাকার সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজে এলএলবি পড়াশোনা শেষ করেন। রাজনীতির পাশাপাশি খ্যাতির সঙ্গে তিনি আইন পেশা চালিয়ে যান। তিনি পাঁচবার কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর তিনি কারারুদ্ধ ও নির্যাতনের শিকার হন।

১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে আবদুল হামিদের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৭৮ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাতবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার অসামান্য গৌরব অর্জন করেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি বিরোধী দলের উপনেতা, ডেপুটি স্পিকার ও স্পিকার হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসছেন।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় তিনি স্বাধীনতা পদক পান। জানা গেছে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী আফতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো আওয়ামী লীগের কোনো শক্ত প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। মিজবাহ উদ্দিন নামে অবসরপ্রাপ্ত এক জেলা জজ ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখালেও মনোনয়নপত্র দাখিলের কিছুদিন আগে তার মৃত্যু হয়।

02

১৯৭০ সালে এলএলবিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ঢাকায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আবদুল হামিদ। ওই সময় জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যোগ্যপ্রার্থী সংকটে বঙ্গবন্ধু সেই সময় ২৫ বছর বয়সী হামিদকেই যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেন। বঙ্গবন্ধু তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে তৎকালীন ময়মনসিংহ-১৮ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম-নিকলী-তাড়াইল) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে তিনি মাঠে নেমে পড়েন।

সাহসী ভূমিকার জন্য ভাটির শার্দুল উপাধি দিয়ে তাকে নিয়ে এলাকাবাসী নির্বাচনী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৭০ সালে কামালপুর গ্রামের অদূরে মিঠামইন পুলিশ ফাঁড়ির সামনে নির্বাচনপূর্ব শেষ জনসভায় বঙ্গবন্ধু তার পক্ষে ভোট চান। মুসলিম লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী আফতাব উদ্দিনকে ধরাশায়ী করে দেশের সর্বকনিষ্ঠ জাতীয় পরিষদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিতহন আবদুল হামিদ। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

কামালপুর গ্রামের কাদামাটি-জলে বেড়ে ওঠা আবদুল হামিদ তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কিশোরগঞ্জের প্রতিটি থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও গ্রাম-গঞ্জ ঘুরে বেড়িয়েছেন। তার নেতৃত্বে এ অঞ্চল গড়ে ওঠে আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য দুর্গ হিসেবে। এখানকার মা-মাটি ও মানুষের সঙ্গে গড়ে ওঠে তার প্রাণের সম্পর্ক। নির্মোহ রাজনীতির পথ বেয়ে কামালপুরের হিজল-তমাল ছায়া থেকে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ভার্টি শার্দূল আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়ে ইতিহাস গড়লেন

আপডেট টাইম : ১০:৪০:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৮

জাকির হোসাইনঃ বিশিষ্ট রাজনীতিক ও পার্লামেন্টারিয়ান মোঃ আবদুল হামিদ দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচন কমিশন মোঃ আবদুল হামিদকে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করার ৭৭ দিন পর তিনি আজ মঙ্গলবার শপথ নিলেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করান।

বঙ্গভবনে বর্ণিল সাজ-সজ্জার পাশাপাশি উৎসবমুখর পরিবেশে দরবার হলের মঞ্চে আবদুল হামিদ তাঁর শপথে স্বাক্ষর করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। মন্ত্রিসভার সদস্যসহ প্রায় এক হাজার বিশিষ্ট অতিথি এই শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এ সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

আবদুল হামিককে শপথ বাক্য পাঠ করাচ্ছেন স্পিকার শিরীন শারমিন। ছবি: পিআইডি

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি, সংসদ সদস্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিক, সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক, রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিব এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এই রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন।

রাষ্ট্রপতি আইন ১৯৯১ এর ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এম নূরুল হুদা রাষ্ট্রপতি পদে অন্য কোনো প্রার্থী না পাওয়ায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি মোঃ আবদুল হামিদকে বাংলাদেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন।

১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে মাত্র একবার সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। এর পর থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হচ্ছেন।

জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার আবদুল হামিদ ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একমাত্র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। দলটি ৩১ জানুয়ারি তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়।

চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন থেকে আবদুল হামিদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে। ৫ ফেব্রুয়ারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের অপর একটি প্রতিনিধি দল তা জমা দেয়।

গতকাল, ২৩ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হয়। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

সাংবিধানিক নিয়মের ধারাবাহিকতায় ১৪ মার্চ, ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অসুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুর গমন করার পর তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর, আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২০ মার্চ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগী আবদুল হামিদ দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করছেন।

বঙ্গভবনের একজন মুখপাত্র জানান, স্বাধীনতার পর আবদুল হামিদ সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর থেকে ১৬ ব্যক্তি ১৯ মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকারী ১৭তম ব্যক্তি।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর পরিবেষ্টিত জনপদ যেখানে কাদামাটি সবুজ ফসলে ঘেরা হাওরের পর হাওর এমন এক জায়গা মিঠামইন উপজেলার সদর ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম কামালপুর। হাওর বেষ্টিত হিজল-তমাল ছায়াঘেরা কামালপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন।

তার পিতার নাম মরহুম হাজী মোঃ তায়েব উদ্দিন ও মাতার নাম মরহুমা তমিজা বেগম। আবদুল হামিদের তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। তার জ্যেষ্ঠপুত্র প্রকৌশলী রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক এমপি তার নির্বাচনী এলাকা থেকে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

নিকলী উপজেলার তৎকালীন ইউনিয়ন মিঠামইনে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় ছিল না। ঘোড়াউত্রা নদীঘেঁষা কামালপুর গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে আবদুল হামিদ নিকলী জিসি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। নিকলী জিসি উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে এসএসসি পাশ করে তিনি কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে ভর্তি হন। গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদে প্রথমে জিএস ও পরে ভিপি নির্বাচিত হন।

১৯৬১ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি কারাবরণ হয়েছেন। গুরুদয়াল কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে তিনি ঢাকার সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজে এলএলবি পড়াশোনা শেষ করেন। রাজনীতির পাশাপাশি খ্যাতির সঙ্গে তিনি আইন পেশা চালিয়ে যান। তিনি পাঁচবার কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর তিনি কারারুদ্ধ ও নির্যাতনের শিকার হন।

১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে আবদুল হামিদের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৭৮ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাতবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার অসামান্য গৌরব অর্জন করেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি বিরোধী দলের উপনেতা, ডেপুটি স্পিকার ও স্পিকার হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসছেন।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় তিনি স্বাধীনতা পদক পান। জানা গেছে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী আফতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো আওয়ামী লীগের কোনো শক্ত প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। মিজবাহ উদ্দিন নামে অবসরপ্রাপ্ত এক জেলা জজ ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখালেও মনোনয়নপত্র দাখিলের কিছুদিন আগে তার মৃত্যু হয়।

02

১৯৭০ সালে এলএলবিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ঢাকায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আবদুল হামিদ। ওই সময় জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যোগ্যপ্রার্থী সংকটে বঙ্গবন্ধু সেই সময় ২৫ বছর বয়সী হামিদকেই যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেন। বঙ্গবন্ধু তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে তৎকালীন ময়মনসিংহ-১৮ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম-নিকলী-তাড়াইল) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে তিনি মাঠে নেমে পড়েন।

সাহসী ভূমিকার জন্য ভাটির শার্দুল উপাধি দিয়ে তাকে নিয়ে এলাকাবাসী নির্বাচনী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৭০ সালে কামালপুর গ্রামের অদূরে মিঠামইন পুলিশ ফাঁড়ির সামনে নির্বাচনপূর্ব শেষ জনসভায় বঙ্গবন্ধু তার পক্ষে ভোট চান। মুসলিম লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী আফতাব উদ্দিনকে ধরাশায়ী করে দেশের সর্বকনিষ্ঠ জাতীয় পরিষদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিতহন আবদুল হামিদ। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

কামালপুর গ্রামের কাদামাটি-জলে বেড়ে ওঠা আবদুল হামিদ তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কিশোরগঞ্জের প্রতিটি থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও গ্রাম-গঞ্জ ঘুরে বেড়িয়েছেন। তার নেতৃত্বে এ অঞ্চল গড়ে ওঠে আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য দুর্গ হিসেবে। এখানকার মা-মাটি ও মানুষের সঙ্গে গড়ে ওঠে তার প্রাণের সম্পর্ক। নির্মোহ রাজনীতির পথ বেয়ে কামালপুরের হিজল-তমাল ছায়া থেকে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন তিনি।