কোরবানি ঈদের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারে শুরু হবে শুদ্ধি অভিযান। আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় কাউন্সিলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে দলে। ছিটকে পড়তে পারেন বিতর্কিতরা।
সরকারের মন্ত্রিসভা থেকেও বাদ দেয়া হতে পারে নানা কারণে আলোচিত ও সমালোচিতদের। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে শাসক দল। দলের গঠনতন্ত্রে আনা হচ্ছে সংশোধনী। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা ৭৩ থেকে বাড়ানো হচ্ছে ১০১ জনে। পাশাপাশি সাংগঠনিক ইউনিটের সংখ্যাও বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে। অন্য দল থেকে আসা নব্য আওয়ামী লীগার যাদের কেউ কেউ দলের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাদের এবং পরগাছাদের দল থেকে ছেঁটে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কাজে-কর্মে যে আগাছা আছে তা উপড়ে ফেলে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন গড়ে তুলতে হবে’। প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণা দলের জাতীয় কাউন্সিল ও সহযোগী সংগঠনের আগামী সম্মেলনে বড় ধরনের পরিবর্তনের পূর্বাভাস বলে মনে করছেন দলের নীতি-নির্ধারকরা। আগামী শুক্রবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এই প্রতিবেদককে এমন তথ্যই নিশ্চিত করেছেন। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মোট সদস্য ৭৩ জন।
এর মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বাদে প্রেসিডিয়াম সদস্য ১৩ জন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ৩২ জন। একজন কোষাধ্যক্ষ ও সভাপতি মনোনীত সদস্য ২৬ জন। দলটির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংগঠনের আওতা ও কর্মপরিধি বৃদ্ধি, খাতভিত্তিক চাহিদা সৃষ্টি এবং সংগঠনকে জনগণের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দিতেই আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর কথা ভাবছে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির পদ ৭৩ থেকে বাড়িয়ে ১০১টি করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এ ক্ষেত্রে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের পদ ১৩টি থেকে দুটি বাড়িয়ে ১৫টি করা হবে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদও তিনটির স্থলে ৫টি করা হবে। সাংগঠনিক সম্পাদক সাতটি থেকে বাড়িয়ে ১০টি করা হবে। এ ক্ষেত্রে ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে নতুন তিনটি বিভাগীয় ?ইউনিট ঘোষণা করা হতে পারে। এদিকে সাধারণ সম্পাদকের বাইরে সমমর্যাদায় দলের মুখপাত্রের পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। প্রতিনিয়তই দলের পক্ষ থেকে কোনো না কোনো ইস্যুতে বক্তব্য দেয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকেই পদটির কথা চিন্তা-ভাবনা চলছে। দলের বর্তমান গঠনতন্ত্রে মুখপাত্রের বিষয়টি স্পষ্ট না থাকলেও দলের সাধারণ সম্পাদকই মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এর বাইরে নতুন করে তথ্য ও প্রযুক্তি (আইসিটি), প্রশিক্ষণ, মানবাধিকারসহ কয়েকটি সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। দলীয় সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দল গোছাতে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের রদবদলের আলোচনা ছাপিয়ে দলে ‘অভূতপূর্ব সক্রিয়’ হয়েছেন সৈয়দ আশরাফ।
দলের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর ওপর বিশেষ নজর রাখতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আশরাফকে। সে অনুযায়ী সৈয়দ আশরাফ দল গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আশরাফের দরজা এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। সহযোগী সংগঠনসহ জেলার নেতাদের সঙ্গেও সৈয়দ আশরাফের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। বার কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের নিরঙ্কুশ বিজয়েও সৈয়দ আশরাফের বিশেষ ভূমিকা ছিল। আগস্ট মাসে দলের জেলা সম্মেলন স্থগিত ছিল।
এখন আবার শুরু হচ্ছে জেলা সম্মেলন। মেয়াদোত্তীর্ণ যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, আওয়ামী আইনজীবী সমিতি, জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলনও এ বছর করা হবে। এসব সংগঠনের নেতৃত্বে যাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, টাকার বিনিময়ে পদ বিক্রি, দখলবাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তারা কেউই পুনরায় নেতৃত্বে আসতে পারবেন না বলে ইতিমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া নব্য হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতাদের উৎপাত ঠেকাতে নেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। সারা দেশে সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগারের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিতর্কিত কথাবার্তা ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় যারা দল ও সরকারকে বিপাকে ফেলেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিতর্কিতদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ প্রতিবেদককে বলেন, যথাসময়েই সম্মেলন হবে। কারা দলের দায়িত্ব পালন করবে না করবে, বা কাকে নিয়ে দলের কাজ করালে গতিশীলতা বাড়বে সে সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় সভানেত্রী। দলের গঠনতন্ত্রে সভানেত্রীকে সে সুপ্রিম পাওয়ার দেয়া আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রী এই প্রতিবেদককে বলেন, কাজে-কর্মে যে আগাছা আছে তা উপড়ে ফেলে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন গড়ে তুলতে হবে’ দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার একটি ম্যাসেজ দিয়েছেন। এটা যেমন কেন্দ্রীয় কমিটি, মন্ত্রী, এমপি ও সহযোগী সংগঠনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, একইভাবে সরকারের মন্ত্রিসভার ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।
-বিডিপ্রতিদিন