ঢাকা ০২:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপির কেউ ঘরে ফিরতে পারছে না

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ মে ২০১৫
  • ৩৮৯ বার
বিএনপির আন্দোলনের যবনিকা ঘটলেও নেতাকর্মীরা কেউ ঘরে ফিরতে পারছেন না। মামলা আর গ্রেফতার আতঙ্কে এখনো তারা ফেরারি অবস্থায় রয়েছেন। দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত প্রত্যেক নেতার নামেই রয়েছে একাধিক মামলা। কোনো কোনো নেতার নামে মামলার সেঞ্চুরি অতিক্রম করেছে বিগত আন্দোলনে। এমন নেতার তালিকাও এখন দীর্ঘ। আবার এসব মামলায় জামিন সংক্রান্ত প্রক্রিয়া আইনি জটিলতায় থমকে আছে অথবা মামলাজটে দীর্ঘসূত্রতা লাভ করছে। তাই কবে কখন তারা মুক্ত হতে পারবেন এমন নিশ্চয়তা নেই। ফেরারি জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে কবে আসতে পারবেন, প্রিয়জনদের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করতে পারবেন তাও কেউ বলতে পারছেন না।
এমন অসংখ্য তৃণমূল নেতার একজন মাকসুদুল আলম খন্দকার। ডাক নাম খোরশেদ। কেন্দ্রীয় যুবদলের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক। নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক। আবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর থেকে বাড়িছাড়া। চার্জশিটভুক্ত ৮টি মামলার আসামি। এছাড়া অজ্ঞাত মামলার শেষ নেই। নিজের পাশাপাশি তার নেতৃত্বাধীন নেতাকর্মীদের অবস্থাও ভালো নেই। অনেকে কারাগারে, অনেকে আত্মগোপনে। তাদের নামেও রয়েছে মামলার পাহাড়। দলের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা না পেলেও রাজনৈতিক কারণে নিজের সমর্থকদের চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকায় নিজের আয়ের পথ ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে। একইসঙ্গে পারিবারিক জীবনেও চলছে দুর্বিষহ অবস্থা। পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় সন্তানদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে। ব্যাহত ঘটছে  শিক্ষাজীবনের। ছোট কন্যা সন্তান খুশি। বাবার আদর পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেও কিছুই করার নেই বাবার। হয়তো তার জন্য কাঁদতে-কাঁদতেই ঘুমিয়ে পড়েন ছোট্ট শিশুটি। তাকে একটু মানসিক প্রবোদ দেয়ার জন্য আর সন্তানদের এমন ব্যাকুলতায় সপ্তাহে কিংবা মাসে একবার আত্মগোপনস্থলেই নিয়ে আসেন। কিন্তু এখানেও বিপত্তি। বাবাকে ছেড়ে কিছুতেই আর যেতে চায় না পাঁচ বছরের শিশুটি। আর এভাবেই চলছে এক তৃণমূল নেতার হƒদয়বিদারক প্রাত্যহিক জীবন।
রাজধানীর শাহবাগ যুবদলের সাধারন সম্পাদক আমির হোসেন সোহেল। রাজপথ আর আন্দোলনে সামনের কাতারে থাকাটাই এখন তার জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। আধা ঘন্টার ব্যবধানে তাকে স্থান পরিবর্তন করে থাকতে হচ্ছে। নিজের ব্যবসা আর পারিবারিক জীবন এখন হুমকীর মুখে। রাজনীতি করার কারনে আর কতদিন খেসারত দিতে হবে তা যেমন তিনি নিজেও জানেন না, তেমনি তার পরিবারও জানে না। এর মধ্যে রাজনীতির নতুন আতঙ্ক গুম কিংবা নিখোঁজ নিয়ে পরিবার থাকেন সবসময় অজানা আশঙ্কায়। মামলার কারনে এলাকাতো দুরের কথা এর আশেপাশেও অবস্থান করতে পারেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও ওত পেতে থাকেন সবসময়। এভাবেই কাটছে তার বর্তমান চ্যালেঞ্জের রাজনীতি।
বিএনপির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত এ রকমভাবেই বিপর্যস্ত চিত্র বিরাজ করছে। মামলার ভারে ন্যুব্জ অনেক নেতাকর্মী বিগত ৭/৮ বছর ধরেও নিজ বাড়িতে যেতে পারছেন না। এমনকি মা-বাবা কিংবা নিকটাত্মীয়ের দুঃসংবাদেও ছুটে যেতে পারেন না। যাযাবরের মতো প্রতিদিন স্থান পরিবর্তন করে চলতে হচ্ছে তাদের। অনেকে বেঁচে থাকার জন্য বেছে নিয়েছেন কায়িক শ্রমের মতো কষ্টসাধ্য কাজ। কবে সুদিন আসবে এই চিন্তার প্রহর কাটছে তাদের।
বিএনপি দলীয় সূত্র জানায়, ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে দলের নেতাকর্মীদের দুর্দিন শুরু হয়। যা এখনও চলমান রয়েছে। বরং আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। শুরুতে দুর্দশাগ্রস্ত এসব নেতাকে বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য-সহযোগিতা করা হলেও এখন তা ক্ষীণ হয়ে পড়ছে। ফলে দুর্ভোগ আর কষ্ট যেন তাদের নিয়তির বিষয়।
সারাদেশে বিএনপির কত নেতাকর্মীর নামে মামলা রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান দলের কাছেও সংগৃহীত নেই। তবে দলের একটি সূত্র জানায়, গত ৫ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে নাশকতার অভিযোগে ১ হাজার ৭৭৫টি মামলা দায়ের করা হয়। এ সংক্রান্ত মামলায় ১৮ হাজার ৩৮ জনকে গ্রেফতার করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। দায়েরকৃত মামলাগুলোর মধ্যে ১২০টির চার্জশিট দেয়া হয়েছে। অভিযোগপত্র দেয়া মামলার মধ্যে ডিএমপির ৪০টি এবং অন্যান্য মহানগর এলাকার ৮০টি মামলা রয়েছে। একটি মামলার তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তদন্তাধীন ১ হাজার ৬৫৪টি মামলা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত নাশকতার অভিযোগে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৭৭৫টি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ সদর দফতরসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পাঠানো হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা।
রাজনৈতিক কারণে এসব মামলায় আসামির সংখ্যাও কয়েক লাখ ছাড়িয়ে যাবে। বিশেষ করে অজ্ঞাতসংখ্যক আসামি উল্লেখ করে মামলার এজাহার দেয়ার কারণে বিএনপি নেতাকর্মীরা আরো উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা জানান, যে কাউকে-যে কোনো সময়ে এসব মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা যাবে। এক্ষেত্রে শুধু দলীয় নেতাকর্মীই নয়, সাধারণ মানুষকেও হয়রানি করা সম্ভব। তাই চার্জশিটভুক্ত মামলাগুলোতে আদালত থেকে জামিন নিলেও এসব মামলা এখন তাদের জন্য আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আর এসব কারণে চার্জশিটভুক্ত মামলায় জামিন নিয়েও আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে তাদেরকে। আবার অনেকে চার্জশিটভুক্ত মামলার জামিন নিতেও সাহস পাচ্ছেন না। কয়েকজন নেতাকর্মীর নামে এত মামলা যে, প্রতিদিন জামিন নিতে থাকলেও তাদের সব মামলায় জামিন পেতে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাবে।
বিএনপি সূত্র জানায়, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরবের নামে দেড় শতাধিক মামলা রয়েছে। যুবদল ঢকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মামুন হাসান, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনু’র মতো অনেক নেতাকর্মীর নামে মামলার সেঞ্চুরি থাকলেও জামিন নিচ্ছেন না তারা। এসব বিষয়ে তারা জানান, কত মামলায় জামিন  নেব? একটা মামলায় জামিন হলে আরো তিনটি মামলা খেতে হয়। তার থেকে এখন ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। সৃষ্টিকর্তা যদি মুখ তুলে তাকায়। এছাড়া আর উপায় নেই আমাদের।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, সরকার বিএনপিকে ব্যস্ত রাখতেই প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন মামলায় জড়াচ্ছে। রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে চেয়ারপার্সনসহ সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দেয়া হচ্ছে। যাতে জিয়া পরিবারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে না পারেন, সেই কৌশলই নিচ্ছে সরকার। কিন্তু তাদের এই উদ্দেশ্য সফল হবে না।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিএনপির কেউ ঘরে ফিরতে পারছে না

আপডেট টাইম : ০৬:০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ মে ২০১৫
বিএনপির আন্দোলনের যবনিকা ঘটলেও নেতাকর্মীরা কেউ ঘরে ফিরতে পারছেন না। মামলা আর গ্রেফতার আতঙ্কে এখনো তারা ফেরারি অবস্থায় রয়েছেন। দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত প্রত্যেক নেতার নামেই রয়েছে একাধিক মামলা। কোনো কোনো নেতার নামে মামলার সেঞ্চুরি অতিক্রম করেছে বিগত আন্দোলনে। এমন নেতার তালিকাও এখন দীর্ঘ। আবার এসব মামলায় জামিন সংক্রান্ত প্রক্রিয়া আইনি জটিলতায় থমকে আছে অথবা মামলাজটে দীর্ঘসূত্রতা লাভ করছে। তাই কবে কখন তারা মুক্ত হতে পারবেন এমন নিশ্চয়তা নেই। ফেরারি জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে কবে আসতে পারবেন, প্রিয়জনদের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করতে পারবেন তাও কেউ বলতে পারছেন না।
এমন অসংখ্য তৃণমূল নেতার একজন মাকসুদুল আলম খন্দকার। ডাক নাম খোরশেদ। কেন্দ্রীয় যুবদলের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক। নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক। আবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর থেকে বাড়িছাড়া। চার্জশিটভুক্ত ৮টি মামলার আসামি। এছাড়া অজ্ঞাত মামলার শেষ নেই। নিজের পাশাপাশি তার নেতৃত্বাধীন নেতাকর্মীদের অবস্থাও ভালো নেই। অনেকে কারাগারে, অনেকে আত্মগোপনে। তাদের নামেও রয়েছে মামলার পাহাড়। দলের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা না পেলেও রাজনৈতিক কারণে নিজের সমর্থকদের চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকায় নিজের আয়ের পথ ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে। একইসঙ্গে পারিবারিক জীবনেও চলছে দুর্বিষহ অবস্থা। পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় সন্তানদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে। ব্যাহত ঘটছে  শিক্ষাজীবনের। ছোট কন্যা সন্তান খুশি। বাবার আদর পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেও কিছুই করার নেই বাবার। হয়তো তার জন্য কাঁদতে-কাঁদতেই ঘুমিয়ে পড়েন ছোট্ট শিশুটি। তাকে একটু মানসিক প্রবোদ দেয়ার জন্য আর সন্তানদের এমন ব্যাকুলতায় সপ্তাহে কিংবা মাসে একবার আত্মগোপনস্থলেই নিয়ে আসেন। কিন্তু এখানেও বিপত্তি। বাবাকে ছেড়ে কিছুতেই আর যেতে চায় না পাঁচ বছরের শিশুটি। আর এভাবেই চলছে এক তৃণমূল নেতার হƒদয়বিদারক প্রাত্যহিক জীবন।
রাজধানীর শাহবাগ যুবদলের সাধারন সম্পাদক আমির হোসেন সোহেল। রাজপথ আর আন্দোলনে সামনের কাতারে থাকাটাই এখন তার জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। আধা ঘন্টার ব্যবধানে তাকে স্থান পরিবর্তন করে থাকতে হচ্ছে। নিজের ব্যবসা আর পারিবারিক জীবন এখন হুমকীর মুখে। রাজনীতি করার কারনে আর কতদিন খেসারত দিতে হবে তা যেমন তিনি নিজেও জানেন না, তেমনি তার পরিবারও জানে না। এর মধ্যে রাজনীতির নতুন আতঙ্ক গুম কিংবা নিখোঁজ নিয়ে পরিবার থাকেন সবসময় অজানা আশঙ্কায়। মামলার কারনে এলাকাতো দুরের কথা এর আশেপাশেও অবস্থান করতে পারেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও ওত পেতে থাকেন সবসময়। এভাবেই কাটছে তার বর্তমান চ্যালেঞ্জের রাজনীতি।
বিএনপির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত এ রকমভাবেই বিপর্যস্ত চিত্র বিরাজ করছে। মামলার ভারে ন্যুব্জ অনেক নেতাকর্মী বিগত ৭/৮ বছর ধরেও নিজ বাড়িতে যেতে পারছেন না। এমনকি মা-বাবা কিংবা নিকটাত্মীয়ের দুঃসংবাদেও ছুটে যেতে পারেন না। যাযাবরের মতো প্রতিদিন স্থান পরিবর্তন করে চলতে হচ্ছে তাদের। অনেকে বেঁচে থাকার জন্য বেছে নিয়েছেন কায়িক শ্রমের মতো কষ্টসাধ্য কাজ। কবে সুদিন আসবে এই চিন্তার প্রহর কাটছে তাদের।
বিএনপি দলীয় সূত্র জানায়, ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে দলের নেতাকর্মীদের দুর্দিন শুরু হয়। যা এখনও চলমান রয়েছে। বরং আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। শুরুতে দুর্দশাগ্রস্ত এসব নেতাকে বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য-সহযোগিতা করা হলেও এখন তা ক্ষীণ হয়ে পড়ছে। ফলে দুর্ভোগ আর কষ্ট যেন তাদের নিয়তির বিষয়।
সারাদেশে বিএনপির কত নেতাকর্মীর নামে মামলা রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান দলের কাছেও সংগৃহীত নেই। তবে দলের একটি সূত্র জানায়, গত ৫ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে নাশকতার অভিযোগে ১ হাজার ৭৭৫টি মামলা দায়ের করা হয়। এ সংক্রান্ত মামলায় ১৮ হাজার ৩৮ জনকে গ্রেফতার করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। দায়েরকৃত মামলাগুলোর মধ্যে ১২০টির চার্জশিট দেয়া হয়েছে। অভিযোগপত্র দেয়া মামলার মধ্যে ডিএমপির ৪০টি এবং অন্যান্য মহানগর এলাকার ৮০টি মামলা রয়েছে। একটি মামলার তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তদন্তাধীন ১ হাজার ৬৫৪টি মামলা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত নাশকতার অভিযোগে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৭৭৫টি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ সদর দফতরসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পাঠানো হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা।
রাজনৈতিক কারণে এসব মামলায় আসামির সংখ্যাও কয়েক লাখ ছাড়িয়ে যাবে। বিশেষ করে অজ্ঞাতসংখ্যক আসামি উল্লেখ করে মামলার এজাহার দেয়ার কারণে বিএনপি নেতাকর্মীরা আরো উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা জানান, যে কাউকে-যে কোনো সময়ে এসব মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা যাবে। এক্ষেত্রে শুধু দলীয় নেতাকর্মীই নয়, সাধারণ মানুষকেও হয়রানি করা সম্ভব। তাই চার্জশিটভুক্ত মামলাগুলোতে আদালত থেকে জামিন নিলেও এসব মামলা এখন তাদের জন্য আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আর এসব কারণে চার্জশিটভুক্ত মামলায় জামিন নিয়েও আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে তাদেরকে। আবার অনেকে চার্জশিটভুক্ত মামলার জামিন নিতেও সাহস পাচ্ছেন না। কয়েকজন নেতাকর্মীর নামে এত মামলা যে, প্রতিদিন জামিন নিতে থাকলেও তাদের সব মামলায় জামিন পেতে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাবে।
বিএনপি সূত্র জানায়, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরবের নামে দেড় শতাধিক মামলা রয়েছে। যুবদল ঢকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মামুন হাসান, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনু’র মতো অনেক নেতাকর্মীর নামে মামলার সেঞ্চুরি থাকলেও জামিন নিচ্ছেন না তারা। এসব বিষয়ে তারা জানান, কত মামলায় জামিন  নেব? একটা মামলায় জামিন হলে আরো তিনটি মামলা খেতে হয়। তার থেকে এখন ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। সৃষ্টিকর্তা যদি মুখ তুলে তাকায়। এছাড়া আর উপায় নেই আমাদের।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, সরকার বিএনপিকে ব্যস্ত রাখতেই প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন মামলায় জড়াচ্ছে। রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে চেয়ারপার্সনসহ সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দেয়া হচ্ছে। যাতে জিয়া পরিবারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে না পারেন, সেই কৌশলই নিচ্ছে সরকার। কিন্তু তাদের এই উদ্দেশ্য সফল হবে না।