ঢাকা ০১:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হজ বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্বের বন্ধন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৮:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • ৪৫৬ বার

হজ আল্লাহপ্রেম ও বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের অন্যতম পথ। এটি আল্লাহর নির্দেশিত এমন একটি ফরজ বিধান, যা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এবং ইসলামের অপরাপর বিধান থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। হজে আর্থিক ও কায়িক শ্রমের সমন্বয় রয়েছে, যা অন্য কোনো ইবাদতে এক সাথে পাওয়া যায় না। হজ সারা বিশ্বে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও সাম্যের প্রতীক। এ লক্ষ্যে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে ‘পবিত্র কাবা শরিফে হজ করা সব মুসলমানের কর্তব্য, যারা সেখানে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে’ (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)। আলোচ্য আয়াতের শেষ বক্তব্যটি হচ্ছে, যারা সেখানে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। এখানে এই ‘ক্ষমতা’ থাকা দ্বারা আর্থিক ও শারীরিক উভয় দিকের সামর্থ্যরে কথা বলা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে পবিত্র মক্কা শরিফে যাতায়াতের খরচ বহন এবং ওই সময়ে স্বীয় পরিবারের ব্যয়ভার নির্বাহে সক্ষম, দৈহিকভাবে সামর্থ্য, প্রাপ্তবয়স্ক, জ্ঞানবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর জীবনে একবার হজ আদায় করা ফরজ। হজ ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যারা হজব্রত পালন করে না, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। ইহুদি-খ্রিষ্টানদের সাথে তুলনা করা হয়েছে তাদের। হাদিস শরিফে রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কাবা শরিফ সহজভাবে জিয়ারত করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা করে না, এমন ব্যক্তির মৃত্যু হবে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের মতোই’ (বুখারি)। পক্ষান্তরে সঠিকভাবে হজ পালনকারীকে দেয়া হয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘বিশুদ্ধ মকবুল একটি হজ পৃথিবী ও পৃথিবীর মধ্যকার সব বস্তু থেকে উত্তম। বেহেশত ছাড়া আর কোনো কিছুর বিনিময় হতে পারে না’ (বুখারি ও মুসলিম)।

বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টিতে হজের গুরুত্ব অপরিসীম। হজের সময় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলমানেরা একত্র হয়ে জাতিভেদ, বর্ণভেদ ভুলে একই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ হজ মুসলমানদের মধ্যে আন্তর্জাতিক ঐক্য আনয়ন করতে পারে। হজের এ মহাসম্মিলন যেমন মুসলমানদের বৃহত্তর ঐক্যের প্রেরণা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্যের সূচনা করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে এক ইসলামের পতাকাতলে, অপর দিকে তেমনি এটা মুসলমানের ঈমানি শক্তিকে বৃদ্ধি করে। আত্মরক্ষার চেতনা জাগায় এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার দায়িত্ববোধের জন্ম দেয়। মুসলমানদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব দূর করে সবার সমন্বয়ে গঠন করে একটি মাত্র জাতি। মূলত দ্বিধাবিভক্ত মুসলমানদের একই পতাকাতলে পরিচালনার একটি মোক্ষম উপায়। হজে উঁচু বংশীয়, নিম্ন বংশীয়, রাজা-প্রজা, মনিব-ভৃত্য সবাই এক ধরনের পোশাক পরিধান করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, ভেদাভেদের সব প্রাচীর ভেঙে সাম্যের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে মহান প্রভুর বিধান পালন করে থাকে। হজ বৈষম্য দূরীকরণের এক বিধানসম্মত আন্তর্জাতিক কর্মসূচি। এটা মুসলিম মিল্লাতের মধ্যকার সব বর্ণ, গোত্র ও জাতিগত বৈষম্য দূরীভূত করে সবাইকে একই প্লাটফরমে দাঁড়িয়ে সত্যের পথে অবিচল থাকার পথে উৎসাহিত করে। হজ অনুষ্ঠানে সম্মিলিত মুসলমানদের পক্ষ থেকে বলিষ্ঠ কণ্ঠে উচ্চারিত হয়, ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা।’ এই লাব্বাইক ধ্বনির মাধ্যমে আল্লাহপ্রেমিক মুসলমানেরা বজ্রকণ্ঠে এ কথা ঘোষণা করে যে, সব প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর, সারা বিশ্বের রাজত্ব একমাত্র তাঁরই। আমরা তাঁরই ডাকে সাড়া দিয়ে জীবনের সব ক্ষেত্রে তাঁরই বিধান মেনে চলব, ইস্পাত কঠিন সঙ্কল্প নিয়ে চলব। আল্লাহর পথে চলতে গিয়ে আমাদের মাথা দ্বিখণ্ডিত হলেও আমরা কুণ্ঠাবোধ করব না। কেননা আমাদের ইবাদত, আমাদের জীবন ও মরণ সবই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। ইরশাদ হয়েছে ‘বল, আমার নামাজ, আমার ইবাদত (কোরবানি ও হজ), আমার জীবন ও মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে’ (সূরা আনয়াম : ১৬২)। একজন হাজী হেরেমের সীমায় প্রবেশ করার আগে নিজের মূল্যবান সেলাই করা কাপড়গুলো খুলে ফেলে এবং তৎস্থলে সেলাইহীন কাপড়সম সাদা কিছু কাপড় পরে নেয়। যে টুপি-পাগড়ি বা মুকুট ইজ্জতের প্রমাণ মনে করত, সেগুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে বিনয়ের জীবন্ত ছবি হয়, উলঙ্গ মস্তক, উলঙ্গপদ হয়ে আল্লাহর ঘরের উঠানে এসে পড়ে। অতঃপর দেওয়ানার মতো দৌড় শুরু করে এবং কাবা শরিফের চার পাশে চক্কর দিতে থাকে। আবার হেরেমের এক কোনায় একটি পাথর দেখতে পায়, তখন শুরু করে সে দিকে দৌড়। শত ভিড়ের বেড়া ঠেলে সে তাতে চুমু দেয়ার চেষ্টা করে। শত চেষ্টার পর চুমো দিতে না পারলে হাত উঠিয়ে প্রতীকী চুম্বনে নিজের হৃদয়-মন শান্ত করে। এসবের যৌক্তিক প্রমাণ সে পায় না। তবু সে করে যায় প্রেমিকের প্রমাণ দিয়ে। তাওয়াফ থেকে ফারেগ হয়ে সে একটি জায়গায় আসে, যেখানে সাইয়্যিদুনা ইবরাহিম আ:-এর পদরেখা এখনো বিদ্যমান। সেখানে এসে থেমে যায় এবং সেজদাবনত হয়। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা ইবরাহিমের দাঁড়ানো স্থানে নামাজ আদায় করো’ (সূরা বাকারা : ১২৫)।
হজ মুসলমানদের ঐক্য সম্মেলন, অন্য কোনো কারণে এত অধিক মুসলমান কখনো একত্র হয় না। হজ কেবল ঈমানকে বলিষ্ঠ করে না; বরং এটা সমগ্র মুসলিম জাহানকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পন্থা হিসেবে কাজ করে। হজের সময় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মিল, দৃষ্টিভঙ্গির মিল- এই প্রতিটি জিনিসই মুসলমানদের মধ্যে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ উন্নয়নে সাহায্য করে। বিশ্বের সব এলাকার, সব বর্ণের, সব ভাষার এবং ভৌগোলিক জ্ঞানের সীমারেখা সম্প্রসারিত করে জাতীয়তার প্রাচীরকে করে নিশ্চিহ্ন, সৃষ্টি করে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধের অনন্য দৃষ্টান্ত। পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এ নজির খুঁজে পাওয়া যায় না। হজ বিশ্ব মুসলিমের সামাজিক ও আধ্যাত্মিক ঐক্যের এক অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিশ্ব মানবতার মুক্তি উত্তরণে হজের গুরুত্ব অপরিসীম। হজ বিশ্ব মুসলিমের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য সুদৃঢ়করণে হজের আবশ্যকতা সবচেয়ে বেশি। মুসলিম উম্মাহর দুর্গতি অবসান ঘটাতে হজ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। হজের সফরে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে না, কোনো পার্থিব স্বার্থের আকর্ষণ নয়, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আকুতিটুকু কাম্য হয়ে দাঁড়ায়। আর এভাবে হৃদয়ের গভীরে অঙ্কুরিত হয় বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের এক শুচিশুভ্র ফল্গুধারা। দ্বিতীয়ত, হজের এ মহাসমাবেশে সমগ্র বিশ্বমানব এমন একটি কেন্দ্রবিন্দুতে সমবেত হন, যা মানবজাতির প্রথম আবাসস্থল। উম্মুলকোরা মক্কা নগরীতেই যে আদি মানব হজরত আদম আ: প্রথম বসতি স্থাপন করেছিলেন এ তথ্য সন্দেহাতীত। সে আদি বসতির মধ্যেই এক আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগির লক্ষ্যে স্থাপিত প্রথম গৃহ পবিত্র বায়তুল্লাহ। বর্ণিত আছে, হজরত আদম উম্মুলকোরা পবিত্র মক্কায় স্থিত হওয়ার পর মুনাজাত বা প্রার্থনা করেছিলেন, ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতাদের উপাসনাস্থল বাইতুল মামুর অনুরূপ একখানা উপাসনালয় পাওয়ার জন্য। আল্লাহ সে প্রার্থনা মঞ্জুর করেই ফেরেশতা জিবরাইলের মারফতে বায়তুল মামুরের সঠিক বরাবরই মাটির ওপর পবিত্র কাবাঘর নির্মাণের স্থান নির্দেশ করেন। এ ঘরের যে চৌহদ্দিটুকু হরম বা পবিত্রতার সীমারেখায় চিহ্নিত সেটুকুও ফেরেশতার মাধ্যমেই আল্লাহ পাক দেখিয়ে দিয়েছিলেন। ইতিহাসের সে প্রথম গৃহ, মানব সন্তানের জন্য সৃষ্ট প্রথম ইবাদতগাহ বা উপাসনালয়ে আদি মানবের বার্ষিক এ মহাসমাবেশে যে আবেগময় অনুভূতি সৃষ্টি করে সে অনুভূতি সমগ্র বিশ্বমানব তথা আদি সন্তানের একই রক্তের উত্তরাধিকার এবং আত্মীয়তার অবিচ্ছেদ্য বন্ধনকে নবায়িত করার অনুুভূতি। ইবাদতের লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয়েছিল সে ঘরটি। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত হজ। অন্যান্য প্রার্থনা কোনোটা শারীরিক, কোনোটা মানসিক এবং কোনোটা আর্থিক। নামাজ ও রোজা প্রধানত শারীরিক শ্রমপ্রধান। কোনোটা মানসিক এবং কোনোটা আর্থিক। জাকাত, সদকা অনেকটা অর্থনির্ভর; কিন্তু হজের মধ্যে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক- এ তিন প্রকার ইবাদতের অপূর্ব সমাবেশ ঘটেছে। এ তিনটি ক্ষেত্রে যার সমান সামর্থ্য রয়েছে, তার ওপর হজ অবশ্য কর্তব্য করা হয়েছে। ফলে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক দিক দিয়ে সামর্থ্যবান লোকগুলোই হজ করতে যাবেন এটাই প্রত্যাশিত। এ দিক দিয়ে হজের সমাবেশকে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ তওহিদবাদী বিশ্বমানবের একটা সর্ববৃহৎ এবং সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিনিধিত্বশীল বিশ্ব সম্মেলন বলা যায়। এ মহাসম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সাথে আমাদের এ বাংলাদেশেরও লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান মক্কা শরিফে হজ করতে যান। এ সম্মেলনের প্রধান শিক্ষা হচ্ছে, আল্লাহর সামনে বান্দার সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। একই সাথে সমগ্র বিশ্ব মানবের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য এক ভ্রাতৃত্ব বন্ধন গড়ে তোলার জন্য ব্রতী হওয়া। হজরত মুহাম্মদ সা: সর্বশেষ হজের ভাষণে উদাত্ত কণ্ঠে তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন লোক সব, তোমাদের প্রভু এক, তোমাদের আদি পিতাও এক ব্যক্তি। সুতরাং কোনো আরব অনারবের ওপর, কোনো কৃষ্ণাঙ্গ শ্বেতাঙ্গের ওপর কিংবা কোনো কৃষ্ণাঙ্গের ওপর কোনো শ্বেতাঙ্গের প্রাধান্য নেই। সম্মানযোগ্য হবে সে ব্যক্তি যে একনিষ্ঠ খোদাভীরু। মনে রেখ, প্রত্যেক মুসলমান একে অন্যের ভাই। হরমের সীমারেখার মধ্যে বন্যপ্রাণী শিকার অবৈধ করা হয়েছে। এ সফর হিংস্রতার নয়, এ সফর ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধের। মানুষের সৃষ্ট কৃত্রিম ভেদরেখার সব প্রাচীর ধসিয়ে দিলো এক সৃষ্টিকর্তার জীব হয়ে জীবনযাপন করার জন্য। হাদিস শরিফের ভাষায় ‘তোমরা পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অন্যের মর্যাদাহানির চেষ্টা করো না। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ো না। আল্লাহর সব অনুগত ব্যক্তি মিলে ভাই ভাই হয়ে বসবাস করো’ (বায়হাকি)। হজরত নুহ আ:-এর সময়কার মহাপ্লাবনে বিধ্বস্ত কাবা শরিফ পুনর্নির্মাণ হজের সাথে সংশ্লিষ্ট মুখ্য ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন বহুল আলোচিত আল্লাহর নবী হজরত ইবরাহিম আ:। কাবা শরিফ পুনর্নির্মাণ করার জন্য আল্লাহ পাক তার প্রিয় নবী ইবরাহিম আ: তাঁর প্রিয়তম স্ত্রী হাজেরা এবং একমাত্র শিশুসন্তান ইসমাঈলকে মক্কা প্রান্তরে এনে উপনীত করেছিলেন। হজের অন্তত উল্লেখযোগ্য দু’টি অনুষ্ঠান কোরবানি ও সাফা-মারওয়া সায়ী হজরত ইসমাঈল আ: ও তাঁর পুণ্যবতী মা হাজেরার দুটো পুণ্য স্মৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট। মহান পিতা-পুত্র হজরত ইবরাহিম ও ইসমাঈলের অপূর্ব ত্যাগ তিতিক্ষার পরীক্ষা সমাপ্ত হওয়ার পরই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বায়তুল্লাহ শরিফ তৈরির নির্দেশ দেন। কাবাঘরের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হওয়ার পর হজরত ইবরাহিমের প্রতি নির্দেশ হয়, সারা বিশ্বের হজের ঘটনা প্রচার করার। তাকে আশ্বাস দেয়া হলো, ঘোষণা প্রচার করা তোমার কাজ আর কিয়ামত পর্যন্ত ভক্তজনের হৃদয়ের কন্দরে সে ঘোষণা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আল্লাহর। হজরত ইবরাহিমের সে ঘোষণার যেসব বাক্য হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, তাতে দেখা যাচ্ছে বিশেষ দেশ, অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীর প্রতি তাঁর সে আহ্বান ছিল না, এ আহ্বান ছিল সমগ্র মানব জাতির প্রতি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হজ বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্বের বন্ধন

আপডেট টাইম : ১০:১৮:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

হজ আল্লাহপ্রেম ও বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের অন্যতম পথ। এটি আল্লাহর নির্দেশিত এমন একটি ফরজ বিধান, যা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এবং ইসলামের অপরাপর বিধান থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। হজে আর্থিক ও কায়িক শ্রমের সমন্বয় রয়েছে, যা অন্য কোনো ইবাদতে এক সাথে পাওয়া যায় না। হজ সারা বিশ্বে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও সাম্যের প্রতীক। এ লক্ষ্যে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে ‘পবিত্র কাবা শরিফে হজ করা সব মুসলমানের কর্তব্য, যারা সেখানে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে’ (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)। আলোচ্য আয়াতের শেষ বক্তব্যটি হচ্ছে, যারা সেখানে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। এখানে এই ‘ক্ষমতা’ থাকা দ্বারা আর্থিক ও শারীরিক উভয় দিকের সামর্থ্যরে কথা বলা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে পবিত্র মক্কা শরিফে যাতায়াতের খরচ বহন এবং ওই সময়ে স্বীয় পরিবারের ব্যয়ভার নির্বাহে সক্ষম, দৈহিকভাবে সামর্থ্য, প্রাপ্তবয়স্ক, জ্ঞানবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর জীবনে একবার হজ আদায় করা ফরজ। হজ ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যারা হজব্রত পালন করে না, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। ইহুদি-খ্রিষ্টানদের সাথে তুলনা করা হয়েছে তাদের। হাদিস শরিফে রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কাবা শরিফ সহজভাবে জিয়ারত করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা করে না, এমন ব্যক্তির মৃত্যু হবে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের মতোই’ (বুখারি)। পক্ষান্তরে সঠিকভাবে হজ পালনকারীকে দেয়া হয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘বিশুদ্ধ মকবুল একটি হজ পৃথিবী ও পৃথিবীর মধ্যকার সব বস্তু থেকে উত্তম। বেহেশত ছাড়া আর কোনো কিছুর বিনিময় হতে পারে না’ (বুখারি ও মুসলিম)।

বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টিতে হজের গুরুত্ব অপরিসীম। হজের সময় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলমানেরা একত্র হয়ে জাতিভেদ, বর্ণভেদ ভুলে একই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ হজ মুসলমানদের মধ্যে আন্তর্জাতিক ঐক্য আনয়ন করতে পারে। হজের এ মহাসম্মিলন যেমন মুসলমানদের বৃহত্তর ঐক্যের প্রেরণা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্যের সূচনা করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে এক ইসলামের পতাকাতলে, অপর দিকে তেমনি এটা মুসলমানের ঈমানি শক্তিকে বৃদ্ধি করে। আত্মরক্ষার চেতনা জাগায় এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার দায়িত্ববোধের জন্ম দেয়। মুসলমানদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব দূর করে সবার সমন্বয়ে গঠন করে একটি মাত্র জাতি। মূলত দ্বিধাবিভক্ত মুসলমানদের একই পতাকাতলে পরিচালনার একটি মোক্ষম উপায়। হজে উঁচু বংশীয়, নিম্ন বংশীয়, রাজা-প্রজা, মনিব-ভৃত্য সবাই এক ধরনের পোশাক পরিধান করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, ভেদাভেদের সব প্রাচীর ভেঙে সাম্যের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে মহান প্রভুর বিধান পালন করে থাকে। হজ বৈষম্য দূরীকরণের এক বিধানসম্মত আন্তর্জাতিক কর্মসূচি। এটা মুসলিম মিল্লাতের মধ্যকার সব বর্ণ, গোত্র ও জাতিগত বৈষম্য দূরীভূত করে সবাইকে একই প্লাটফরমে দাঁড়িয়ে সত্যের পথে অবিচল থাকার পথে উৎসাহিত করে। হজ অনুষ্ঠানে সম্মিলিত মুসলমানদের পক্ষ থেকে বলিষ্ঠ কণ্ঠে উচ্চারিত হয়, ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা।’ এই লাব্বাইক ধ্বনির মাধ্যমে আল্লাহপ্রেমিক মুসলমানেরা বজ্রকণ্ঠে এ কথা ঘোষণা করে যে, সব প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর, সারা বিশ্বের রাজত্ব একমাত্র তাঁরই। আমরা তাঁরই ডাকে সাড়া দিয়ে জীবনের সব ক্ষেত্রে তাঁরই বিধান মেনে চলব, ইস্পাত কঠিন সঙ্কল্প নিয়ে চলব। আল্লাহর পথে চলতে গিয়ে আমাদের মাথা দ্বিখণ্ডিত হলেও আমরা কুণ্ঠাবোধ করব না। কেননা আমাদের ইবাদত, আমাদের জীবন ও মরণ সবই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। ইরশাদ হয়েছে ‘বল, আমার নামাজ, আমার ইবাদত (কোরবানি ও হজ), আমার জীবন ও মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে’ (সূরা আনয়াম : ১৬২)। একজন হাজী হেরেমের সীমায় প্রবেশ করার আগে নিজের মূল্যবান সেলাই করা কাপড়গুলো খুলে ফেলে এবং তৎস্থলে সেলাইহীন কাপড়সম সাদা কিছু কাপড় পরে নেয়। যে টুপি-পাগড়ি বা মুকুট ইজ্জতের প্রমাণ মনে করত, সেগুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে বিনয়ের জীবন্ত ছবি হয়, উলঙ্গ মস্তক, উলঙ্গপদ হয়ে আল্লাহর ঘরের উঠানে এসে পড়ে। অতঃপর দেওয়ানার মতো দৌড় শুরু করে এবং কাবা শরিফের চার পাশে চক্কর দিতে থাকে। আবার হেরেমের এক কোনায় একটি পাথর দেখতে পায়, তখন শুরু করে সে দিকে দৌড়। শত ভিড়ের বেড়া ঠেলে সে তাতে চুমু দেয়ার চেষ্টা করে। শত চেষ্টার পর চুমো দিতে না পারলে হাত উঠিয়ে প্রতীকী চুম্বনে নিজের হৃদয়-মন শান্ত করে। এসবের যৌক্তিক প্রমাণ সে পায় না। তবু সে করে যায় প্রেমিকের প্রমাণ দিয়ে। তাওয়াফ থেকে ফারেগ হয়ে সে একটি জায়গায় আসে, যেখানে সাইয়্যিদুনা ইবরাহিম আ:-এর পদরেখা এখনো বিদ্যমান। সেখানে এসে থেমে যায় এবং সেজদাবনত হয়। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা ইবরাহিমের দাঁড়ানো স্থানে নামাজ আদায় করো’ (সূরা বাকারা : ১২৫)।
হজ মুসলমানদের ঐক্য সম্মেলন, অন্য কোনো কারণে এত অধিক মুসলমান কখনো একত্র হয় না। হজ কেবল ঈমানকে বলিষ্ঠ করে না; বরং এটা সমগ্র মুসলিম জাহানকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পন্থা হিসেবে কাজ করে। হজের সময় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মিল, দৃষ্টিভঙ্গির মিল- এই প্রতিটি জিনিসই মুসলমানদের মধ্যে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ উন্নয়নে সাহায্য করে। বিশ্বের সব এলাকার, সব বর্ণের, সব ভাষার এবং ভৌগোলিক জ্ঞানের সীমারেখা সম্প্রসারিত করে জাতীয়তার প্রাচীরকে করে নিশ্চিহ্ন, সৃষ্টি করে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধের অনন্য দৃষ্টান্ত। পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এ নজির খুঁজে পাওয়া যায় না। হজ বিশ্ব মুসলিমের সামাজিক ও আধ্যাত্মিক ঐক্যের এক অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিশ্ব মানবতার মুক্তি উত্তরণে হজের গুরুত্ব অপরিসীম। হজ বিশ্ব মুসলিমের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য সুদৃঢ়করণে হজের আবশ্যকতা সবচেয়ে বেশি। মুসলিম উম্মাহর দুর্গতি অবসান ঘটাতে হজ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। হজের সফরে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে না, কোনো পার্থিব স্বার্থের আকর্ষণ নয়, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আকুতিটুকু কাম্য হয়ে দাঁড়ায়। আর এভাবে হৃদয়ের গভীরে অঙ্কুরিত হয় বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের এক শুচিশুভ্র ফল্গুধারা। দ্বিতীয়ত, হজের এ মহাসমাবেশে সমগ্র বিশ্বমানব এমন একটি কেন্দ্রবিন্দুতে সমবেত হন, যা মানবজাতির প্রথম আবাসস্থল। উম্মুলকোরা মক্কা নগরীতেই যে আদি মানব হজরত আদম আ: প্রথম বসতি স্থাপন করেছিলেন এ তথ্য সন্দেহাতীত। সে আদি বসতির মধ্যেই এক আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগির লক্ষ্যে স্থাপিত প্রথম গৃহ পবিত্র বায়তুল্লাহ। বর্ণিত আছে, হজরত আদম উম্মুলকোরা পবিত্র মক্কায় স্থিত হওয়ার পর মুনাজাত বা প্রার্থনা করেছিলেন, ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতাদের উপাসনাস্থল বাইতুল মামুর অনুরূপ একখানা উপাসনালয় পাওয়ার জন্য। আল্লাহ সে প্রার্থনা মঞ্জুর করেই ফেরেশতা জিবরাইলের মারফতে বায়তুল মামুরের সঠিক বরাবরই মাটির ওপর পবিত্র কাবাঘর নির্মাণের স্থান নির্দেশ করেন। এ ঘরের যে চৌহদ্দিটুকু হরম বা পবিত্রতার সীমারেখায় চিহ্নিত সেটুকুও ফেরেশতার মাধ্যমেই আল্লাহ পাক দেখিয়ে দিয়েছিলেন। ইতিহাসের সে প্রথম গৃহ, মানব সন্তানের জন্য সৃষ্ট প্রথম ইবাদতগাহ বা উপাসনালয়ে আদি মানবের বার্ষিক এ মহাসমাবেশে যে আবেগময় অনুভূতি সৃষ্টি করে সে অনুভূতি সমগ্র বিশ্বমানব তথা আদি সন্তানের একই রক্তের উত্তরাধিকার এবং আত্মীয়তার অবিচ্ছেদ্য বন্ধনকে নবায়িত করার অনুুভূতি। ইবাদতের লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয়েছিল সে ঘরটি। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত হজ। অন্যান্য প্রার্থনা কোনোটা শারীরিক, কোনোটা মানসিক এবং কোনোটা আর্থিক। নামাজ ও রোজা প্রধানত শারীরিক শ্রমপ্রধান। কোনোটা মানসিক এবং কোনোটা আর্থিক। জাকাত, সদকা অনেকটা অর্থনির্ভর; কিন্তু হজের মধ্যে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক- এ তিন প্রকার ইবাদতের অপূর্ব সমাবেশ ঘটেছে। এ তিনটি ক্ষেত্রে যার সমান সামর্থ্য রয়েছে, তার ওপর হজ অবশ্য কর্তব্য করা হয়েছে। ফলে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক দিক দিয়ে সামর্থ্যবান লোকগুলোই হজ করতে যাবেন এটাই প্রত্যাশিত। এ দিক দিয়ে হজের সমাবেশকে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ তওহিদবাদী বিশ্বমানবের একটা সর্ববৃহৎ এবং সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিনিধিত্বশীল বিশ্ব সম্মেলন বলা যায়। এ মহাসম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সাথে আমাদের এ বাংলাদেশেরও লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান মক্কা শরিফে হজ করতে যান। এ সম্মেলনের প্রধান শিক্ষা হচ্ছে, আল্লাহর সামনে বান্দার সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। একই সাথে সমগ্র বিশ্ব মানবের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য এক ভ্রাতৃত্ব বন্ধন গড়ে তোলার জন্য ব্রতী হওয়া। হজরত মুহাম্মদ সা: সর্বশেষ হজের ভাষণে উদাত্ত কণ্ঠে তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন লোক সব, তোমাদের প্রভু এক, তোমাদের আদি পিতাও এক ব্যক্তি। সুতরাং কোনো আরব অনারবের ওপর, কোনো কৃষ্ণাঙ্গ শ্বেতাঙ্গের ওপর কিংবা কোনো কৃষ্ণাঙ্গের ওপর কোনো শ্বেতাঙ্গের প্রাধান্য নেই। সম্মানযোগ্য হবে সে ব্যক্তি যে একনিষ্ঠ খোদাভীরু। মনে রেখ, প্রত্যেক মুসলমান একে অন্যের ভাই। হরমের সীমারেখার মধ্যে বন্যপ্রাণী শিকার অবৈধ করা হয়েছে। এ সফর হিংস্রতার নয়, এ সফর ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধের। মানুষের সৃষ্ট কৃত্রিম ভেদরেখার সব প্রাচীর ধসিয়ে দিলো এক সৃষ্টিকর্তার জীব হয়ে জীবনযাপন করার জন্য। হাদিস শরিফের ভাষায় ‘তোমরা পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অন্যের মর্যাদাহানির চেষ্টা করো না। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ো না। আল্লাহর সব অনুগত ব্যক্তি মিলে ভাই ভাই হয়ে বসবাস করো’ (বায়হাকি)। হজরত নুহ আ:-এর সময়কার মহাপ্লাবনে বিধ্বস্ত কাবা শরিফ পুনর্নির্মাণ হজের সাথে সংশ্লিষ্ট মুখ্য ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন বহুল আলোচিত আল্লাহর নবী হজরত ইবরাহিম আ:। কাবা শরিফ পুনর্নির্মাণ করার জন্য আল্লাহ পাক তার প্রিয় নবী ইবরাহিম আ: তাঁর প্রিয়তম স্ত্রী হাজেরা এবং একমাত্র শিশুসন্তান ইসমাঈলকে মক্কা প্রান্তরে এনে উপনীত করেছিলেন। হজের অন্তত উল্লেখযোগ্য দু’টি অনুষ্ঠান কোরবানি ও সাফা-মারওয়া সায়ী হজরত ইসমাঈল আ: ও তাঁর পুণ্যবতী মা হাজেরার দুটো পুণ্য স্মৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট। মহান পিতা-পুত্র হজরত ইবরাহিম ও ইসমাঈলের অপূর্ব ত্যাগ তিতিক্ষার পরীক্ষা সমাপ্ত হওয়ার পরই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বায়তুল্লাহ শরিফ তৈরির নির্দেশ দেন। কাবাঘরের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হওয়ার পর হজরত ইবরাহিমের প্রতি নির্দেশ হয়, সারা বিশ্বের হজের ঘটনা প্রচার করার। তাকে আশ্বাস দেয়া হলো, ঘোষণা প্রচার করা তোমার কাজ আর কিয়ামত পর্যন্ত ভক্তজনের হৃদয়ের কন্দরে সে ঘোষণা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আল্লাহর। হজরত ইবরাহিমের সে ঘোষণার যেসব বাক্য হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, তাতে দেখা যাচ্ছে বিশেষ দেশ, অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীর প্রতি তাঁর সে আহ্বান ছিল না, এ আহ্বান ছিল সমগ্র মানব জাতির প্রতি।