ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি তার বাবার গরু-ছাগলের খামারে কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর তিনি মনোনিবেশ করেন মৎস্যচাষে। এভাবেই তিনি একদিকে একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠছিলেন, অপরদিকে তিনি গরু-ছাগল পালন ও মৎস্যচাষে দক্ষতা অর্জন করছিলেন।
তার এই জানা ও শেখার চেষ্টা এবং শ্রম বৃথা যায়নি। ফলে আজ তিনি মাছ চাষ, রেণু-পোনা উৎপাদন ও গরু-ছাগলের খামার করে সচ্ছলতার দেখা পেয়েছেন। জানাচ্ছিলাম বগুড়া সদরের রাজা মিয়ার কথা।
পরিশ্রমী রাজা মিয়া কেবল নিজেই স্বাবলম্বী হননি— তার খামারে ২০ জন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছেন। শুধু তা-ই নয়, তাকে অনুসরণ করে এলাকার বেকার যুবকরা আজ নিজ পায়ে দাঁড়াতে স্বপ্ন দেখছে, অনুপ্রাণিত হচ্ছে।
সফল মৎস্যচাষী রাজা মিয়া বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের বানদীঘি গ্রামের ডা. মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি পশু চিকিৎসক ছিলেন। এলাকায় পশু চিকিৎসার পাশাপাশি নিজেও পশুর খামার গড়ে তোলেন। তার ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে রাজা মিয়া সবার বড়।
কিশোর বয়সেই রাজা মিয়া পড়ালেখার পাশাপাশি ওই খামারে কাজ শুরু করেন। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর গরু-ছাগল পালনের পাশাপাশি মৎস্যচাষে মনোনিবেশ করেন। সেখানে সফলতা পেয়ে তিনি মাছের রেণু-পোনা উৎপাদনেও মন দেন। এভাবেই তিল তিল করে গড়ে তোলা তার খামার এখন বেকার যুবকদের কাছে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মডেলে পরিণত হয়েছে।
দু’ দশক ধরে রাজা মিয়া গরু-ছাগলের খামার ও মাছ চাষ করে আসছেন। বর্তমানে নিজের ও লিজ নেওয়া ১৮টি পুকুরে রুই, কাতলা, মাগুর শিং, পাবদা, টেংরা, কৈসহ দেশীয় মাছ চাষ করছেন। এভাবেই তিনি দেশী মাছের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
মাছ চাষের সাথে তিনি রেণু-পোনা উৎপাদন করেও ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন রাজা মিয়া। প্রতি কেজি দেশী মাগুর মাছের পোনা ১০০০ টাকা, শিং মাছের পোনা ৮০০ টাকা, টেংরা মাছের পোনা ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া গরু ও ছাগল পালন করে তিনি সফলতা পেয়েছেন— গরুর দুধ বিক্রি করে ভাল উপার্জন হচ্ছে।
সফল চাষী রাজা মিয়া উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে তিনি শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষীর সম্মাননা পেয়েছেন। তবে কিছু সমস্যা তো রয়েই যায়। রাজা মিয়া বললেন সমস্যার কথা, ‘সরকারের মৎস্য বিভাগ ও প্রাণী-সম্পদ বিভাগ নানা পরামর্শ দিলেও ব্যাংকিং সুবিধা দুষ্কর। একবার খামার সম্প্রসারণে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে দিনের পর দিন ঘুরেও ঋণ পাইনি। তাই আর ঋণের জন্য ব্যাংকে যাইনি।’
মাছের ঘাটতি পূরণে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ সফল চাষী বললেন, ‘সরকারি জলাশয় প্রকৃত মৎস্য চাষীদের বরাদ্দ প্রদান, ব্যাংক লোন প্রদান ও মৎস্য বিভাগের নিয়মিত খামার পরিদর্শন ও পরামর্শ প্রদান করলে এ বিষয়ে আরও সফলতা আসবে।’