ঢাকা ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছেলে হোটেল মালিক শতবর্ষী বাবার আশ্রয় রাস্তায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৪৬:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৭
  • ৫১৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানুষের বৃদ্ধ হওয়াটাই যেন সবচেয়ে বড় অপরাধ? আমার ঘর-সংসার, ছেলেমেয়ে সব থাকার পরও আজ আমি রাস্তায় পড়ে রয়েছি। সারাদিন জোটেনি কোনো খাবার। নেই কোনো আশ্রয়। জীবনের এই শেষ সময়ে স্ত্রী, ছেলেমেয়েরা কেউ তো ঘরে রাখতে চায় না।’

আজ কাতর কণ্ঠে হাওর বার্তার সব কথাগুলো বলছিলেন নাটোরের সিংড়া পৌর শহরের রাস্তায় পড়ে থাকা শতবর্ষী মনতাজ আলী।

জানা গেছে, তার এ বৃদ্ধ বয়সের অচলাবস্থা দেখে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা কেউ যেন তার আর দায়িত্ব নিতে চায় না। তাই তারা রাস্তায় ফেলে চলে গেছে। অথচ ওই বৃদ্ধের বড় ছেলে আবদুল আজিজ মরুর নিংগইন পেট্রল পাম্পের পার্শ্বে সকাল-সন্ধ্যা চলনবিল হোটেলে খাবারের অভাব নেই।

প্রতিবেশী ছবেজান বেওয়া ও হাসিনা বেগম জানান, গতকাল বিকালে পৌর শহরের চাঁদপুর বাংলালিংক টাওয়ারের পাশে শতবর্ষী ওই বৃদ্ধকে পড়ে থাকতে দেখে তারা মানুষের কাছ থেকে সাহায্য তুলে ভ্যানযোগে বড় ছেলে আবদুল আজিজ মরুর বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে কেউই তাকে আশ্রয় দিতে চায় না। মরুর ছেলে শুভ হোসেন তাদেরকে মারধর করে বের করে দিয়েছে।

পরে মেয়ে মোমেনা বেগম ও মেজ ছেলে মস্তাকের বাড়িতে নিয়ে গেলেও তারা কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। পরে রাত ৮টায় ওই বৃদ্ধকে সিংড়া থানার গেটে ফেলে রেখে চম্পট দেয় ভাড়া করা ভ্যানচালক।

এদিকে খবর পেয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নাটোর জেলা শাখার নির্বাহী সদস্য সাইফুল ইসলাম ও সিংড়া থানার এসআই শাহেদ আলী অসুস্থ শতবর্ষী মনতাজ আলীকে উদ্ধার করে সিংড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।

থানা থেকে রাতেই ওই বৃদ্ধের ছেলেদেরকে খবর দেয়া হলেও আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিংড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো ছেলের দেখা পাওয়া যায়নি।

সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ওয়ার্ডের ভর্তিকৃত কমেদ আলীসহ অন্য রোগীরা জানান, সকাল থেকেই দেখছি ওই অসুস্থ বৃদ্ধের কেউ আসেনি।

সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত সিনিয়র স্টার্ফ নার্স মনোয়ারা বেগম জানান,  বৃদ্ধের আত্মীয়স্বজনের এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ নেই। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি সকালে হাসপাতাল থেকে একটি রুটি, কলা ও ডিম দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বৃদ্ধের বড় ছেলে আবদুল আজিজ মরু বলেন,  তার বাবা সৎমা আলুফা বেগম ও ভাই আরিফুল ইসলামের কাছে থাকেন। তিনি এসবের দায়িত্ব নিতে পারবেন না। ছেলে তো আরও রয়েছে, সবাইকেই ডাকেন।

সিংড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, একজন শতবর্ষী বৃদ্ধকে রাতে রাস্তায় ফেলে চলে যাওয়া অমানবিক বিষয়। ওই বৃদ্ধের চার ছেলেকে থানায় দেখা করার জন্য খবর পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ছেলে হোটেল মালিক শতবর্ষী বাবার আশ্রয় রাস্তায়

আপডেট টাইম : ০৮:৪৬:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানুষের বৃদ্ধ হওয়াটাই যেন সবচেয়ে বড় অপরাধ? আমার ঘর-সংসার, ছেলেমেয়ে সব থাকার পরও আজ আমি রাস্তায় পড়ে রয়েছি। সারাদিন জোটেনি কোনো খাবার। নেই কোনো আশ্রয়। জীবনের এই শেষ সময়ে স্ত্রী, ছেলেমেয়েরা কেউ তো ঘরে রাখতে চায় না।’

আজ কাতর কণ্ঠে হাওর বার্তার সব কথাগুলো বলছিলেন নাটোরের সিংড়া পৌর শহরের রাস্তায় পড়ে থাকা শতবর্ষী মনতাজ আলী।

জানা গেছে, তার এ বৃদ্ধ বয়সের অচলাবস্থা দেখে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা কেউ যেন তার আর দায়িত্ব নিতে চায় না। তাই তারা রাস্তায় ফেলে চলে গেছে। অথচ ওই বৃদ্ধের বড় ছেলে আবদুল আজিজ মরুর নিংগইন পেট্রল পাম্পের পার্শ্বে সকাল-সন্ধ্যা চলনবিল হোটেলে খাবারের অভাব নেই।

প্রতিবেশী ছবেজান বেওয়া ও হাসিনা বেগম জানান, গতকাল বিকালে পৌর শহরের চাঁদপুর বাংলালিংক টাওয়ারের পাশে শতবর্ষী ওই বৃদ্ধকে পড়ে থাকতে দেখে তারা মানুষের কাছ থেকে সাহায্য তুলে ভ্যানযোগে বড় ছেলে আবদুল আজিজ মরুর বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে কেউই তাকে আশ্রয় দিতে চায় না। মরুর ছেলে শুভ হোসেন তাদেরকে মারধর করে বের করে দিয়েছে।

পরে মেয়ে মোমেনা বেগম ও মেজ ছেলে মস্তাকের বাড়িতে নিয়ে গেলেও তারা কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। পরে রাত ৮টায় ওই বৃদ্ধকে সিংড়া থানার গেটে ফেলে রেখে চম্পট দেয় ভাড়া করা ভ্যানচালক।

এদিকে খবর পেয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নাটোর জেলা শাখার নির্বাহী সদস্য সাইফুল ইসলাম ও সিংড়া থানার এসআই শাহেদ আলী অসুস্থ শতবর্ষী মনতাজ আলীকে উদ্ধার করে সিংড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।

থানা থেকে রাতেই ওই বৃদ্ধের ছেলেদেরকে খবর দেয়া হলেও আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিংড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো ছেলের দেখা পাওয়া যায়নি।

সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ওয়ার্ডের ভর্তিকৃত কমেদ আলীসহ অন্য রোগীরা জানান, সকাল থেকেই দেখছি ওই অসুস্থ বৃদ্ধের কেউ আসেনি।

সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত সিনিয়র স্টার্ফ নার্স মনোয়ারা বেগম জানান,  বৃদ্ধের আত্মীয়স্বজনের এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ নেই। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি সকালে হাসপাতাল থেকে একটি রুটি, কলা ও ডিম দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বৃদ্ধের বড় ছেলে আবদুল আজিজ মরু বলেন,  তার বাবা সৎমা আলুফা বেগম ও ভাই আরিফুল ইসলামের কাছে থাকেন। তিনি এসবের দায়িত্ব নিতে পারবেন না। ছেলে তো আরও রয়েছে, সবাইকেই ডাকেন।

সিংড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, একজন শতবর্ষী বৃদ্ধকে রাতে রাস্তায় ফেলে চলে যাওয়া অমানবিক বিষয়। ওই বৃদ্ধের চার ছেলেকে থানায় দেখা করার জন্য খবর পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।