ঢাকা ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাকালুকি হাওরে রাতভর চলে মৎস্য লুটেরাদের তাণ্ডবলীলা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৪৫:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অগাস্ট ২০১৭
  • ২৯৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর এবং দেশের সর্ববৃহৎ মিঠা পানির মৎস্য ভাণ্ডারখ্যাত হাকালুকি হাওরে সারা রাত চলে মাছ লুটপাট। ভোরের আলো ফোটার আগেই ওই মাছ চলে যায় অজানা গন্তব্যে। হাওর তীরের কুলাউড়া জুড়ী ও রাজনগর থানার পুলিশ মাছবোঝাই এসব গাড়ি ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পায় নিয়মিত মাসোহারা। এসব লুটেরাদের কাছে পোনা মাছও রক্ষা পায় না। ফলে হুমকির মুখে দেশের সর্ববৃহৎ এই মিঠা পানির মৎস্য ভাণ্ডার।

হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা মৎস্য অফিসাররা দিনের বেলায় হাওরে ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালান। জাল আটক করেন। তা জনসমক্ষে পোড়ানো হয়। এটা দিনের বেলার ঘটনা। অন্ধকার নামলেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। শত শত অবৈধ জাল নিয়ে লুটেরারা নামে হাওরে। কোনো মাছ যাতে নষ্ট না হয় তা সংরক্ষণের জন্য নৌকায় নেয়া হয় বরফ। পাঁচশ’ থেকে এক হাজার হাত লম্বা একেকটি বেড় জাল। টানার জন্য দুটি নৌকা আর তাতে কমপক্ষে ৮ জন লোক থাকে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জাল টানার জন্য প্রতিটি জালে ভাড়াটে লোক থাকেন ৫-৬ জন। এরা সব ভয়ঙ্কর প্রকৃতির লোক। এরা যতটা না জাল টানার জন্য তার চেয়ে বেশি নির্বিঘে মাছ মারা ও তা বিক্রি নিশ্চিত করার জন্য। জনপ্রতি এসব লোকের পেছনে ব্যয় করতে হাজার টাকারও বেশি। সারা রাত হাকালুকি বুক চিরে লুট করা মাছ ভোরের আলো ফোটার আগেই মৌলভীবাজার জেলা ত্যাগ করে। এসব মাছ কিনতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা আসেন হাকালুকি হাওরে। নৌকার মধ্যে চলে মূল্য পরিশোধ ও মাছ বুঝিয়ে দেয়ার কাজ। মাছ নির্বিঘে নিয়ে যেতে মাসোহারা গুনতে হয় মাছ ব্যবসায়ী এবং মাছ টানার কাজে নিয়োজিত গাড়িচালকদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গাড়িপ্রতি কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা করে পুলিশকে মাসোহারা দিতে হয়। এসব মাসোহারা যায় হাওর তীরের জুড়ী, কুলাউড়া ও রাজনগর থানা পুলিশের পকেটে। এসব থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত।

এদিকে গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এসব মাছ ক্রেতাদের টাকা লুট করতে হানা দেয় ডাকাত দল। গোটা হাওরসহ হাওর তীরের জনপদে বিষয়টি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানাজানি হয়। এতে রাতজুড়ে হাওর তীরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, হাকালুকি হাওরের সবচেয়ে বড় মাছ লুটেরাদের অবস্থান জুড়ী উপজেলার বেলাগাঁও গ্রামে। এ ছাড়া কুলাউড়া উপজেলার সাদিপুর, বড়লেখা উপজেলার বর্ণি, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার আশিঘর এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর এলাকায়। শত শত বেড়জাল রয়েছে একেকটি গ্রামে। হাকালুকি হাওর তীরের মৎস্য অফিসগুলো পুরো বিষয়টি জানলেও নির্বিকার থাকে।

কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য অফিসার সুলতান মাহমুদ জানান, হাওরে দিনে অভিযান চালাতে হলেও অনেক প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হয়। আর রাতে অভিযান চালানো দুষ্কর। চলতি বর্ষা মৌসুমে হাওরে দুই দফা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে। চেষ্টা চলছে এসব লুটপাট বন্ধের।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাকালুকি হাওরে রাতভর চলে মৎস্য লুটেরাদের তাণ্ডবলীলা

আপডেট টাইম : ০২:৪৫:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর এবং দেশের সর্ববৃহৎ মিঠা পানির মৎস্য ভাণ্ডারখ্যাত হাকালুকি হাওরে সারা রাত চলে মাছ লুটপাট। ভোরের আলো ফোটার আগেই ওই মাছ চলে যায় অজানা গন্তব্যে। হাওর তীরের কুলাউড়া জুড়ী ও রাজনগর থানার পুলিশ মাছবোঝাই এসব গাড়ি ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পায় নিয়মিত মাসোহারা। এসব লুটেরাদের কাছে পোনা মাছও রক্ষা পায় না। ফলে হুমকির মুখে দেশের সর্ববৃহৎ এই মিঠা পানির মৎস্য ভাণ্ডার।

হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা মৎস্য অফিসাররা দিনের বেলায় হাওরে ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালান। জাল আটক করেন। তা জনসমক্ষে পোড়ানো হয়। এটা দিনের বেলার ঘটনা। অন্ধকার নামলেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। শত শত অবৈধ জাল নিয়ে লুটেরারা নামে হাওরে। কোনো মাছ যাতে নষ্ট না হয় তা সংরক্ষণের জন্য নৌকায় নেয়া হয় বরফ। পাঁচশ’ থেকে এক হাজার হাত লম্বা একেকটি বেড় জাল। টানার জন্য দুটি নৌকা আর তাতে কমপক্ষে ৮ জন লোক থাকে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জাল টানার জন্য প্রতিটি জালে ভাড়াটে লোক থাকেন ৫-৬ জন। এরা সব ভয়ঙ্কর প্রকৃতির লোক। এরা যতটা না জাল টানার জন্য তার চেয়ে বেশি নির্বিঘে মাছ মারা ও তা বিক্রি নিশ্চিত করার জন্য। জনপ্রতি এসব লোকের পেছনে ব্যয় করতে হাজার টাকারও বেশি। সারা রাত হাকালুকি বুক চিরে লুট করা মাছ ভোরের আলো ফোটার আগেই মৌলভীবাজার জেলা ত্যাগ করে। এসব মাছ কিনতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা আসেন হাকালুকি হাওরে। নৌকার মধ্যে চলে মূল্য পরিশোধ ও মাছ বুঝিয়ে দেয়ার কাজ। মাছ নির্বিঘে নিয়ে যেতে মাসোহারা গুনতে হয় মাছ ব্যবসায়ী এবং মাছ টানার কাজে নিয়োজিত গাড়িচালকদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গাড়িপ্রতি কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা করে পুলিশকে মাসোহারা দিতে হয়। এসব মাসোহারা যায় হাওর তীরের জুড়ী, কুলাউড়া ও রাজনগর থানা পুলিশের পকেটে। এসব থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত।

এদিকে গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এসব মাছ ক্রেতাদের টাকা লুট করতে হানা দেয় ডাকাত দল। গোটা হাওরসহ হাওর তীরের জনপদে বিষয়টি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানাজানি হয়। এতে রাতজুড়ে হাওর তীরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, হাকালুকি হাওরের সবচেয়ে বড় মাছ লুটেরাদের অবস্থান জুড়ী উপজেলার বেলাগাঁও গ্রামে। এ ছাড়া কুলাউড়া উপজেলার সাদিপুর, বড়লেখা উপজেলার বর্ণি, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার আশিঘর এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর এলাকায়। শত শত বেড়জাল রয়েছে একেকটি গ্রামে। হাকালুকি হাওর তীরের মৎস্য অফিসগুলো পুরো বিষয়টি জানলেও নির্বিকার থাকে।

কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য অফিসার সুলতান মাহমুদ জানান, হাওরে দিনে অভিযান চালাতে হলেও অনেক প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হয়। আর রাতে অভিযান চালানো দুষ্কর। চলতি বর্ষা মৌসুমে হাওরে দুই দফা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে। চেষ্টা চলছে এসব লুটপাট বন্ধের।